somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের খন্ডগল্প

০২ রা মে, ২০১১ রাত ১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“Life is beautiful”,জীবন অনেক সুন্দর।অদ্ভুত সব বিচিত্রতার লাল-নীল পসরা সাজানো জীবন যেন প্রতিনিয়ত যুগিয়ে চলে বেঁচে থাকার প্রেরণা।ভাবিয়ে চলে সুখের অমোঘ দিনরাত্রির ক্ষণিক চাওয়া পাওয়ার খন্ডকাহিনী আর গল্পগুলোকে।

ভাবায় সুখ আর দুখের সমকালীন দোলাচল আর হাসি-কান্নার যুগপৎ সহবাসের চিরায়ত রীতিময়তাকে।ভাবতে শেখায় সুখের চিরপ্রত্যাশী আগমন ঘটে অযাচিত জ্বালাময়ী দুঃখগুলোকে ঘিরেই।

সুন্দর এই জীবন।তাইতো অনেক সুন্দর!দুঃখ আছে বলেই সুখের এত মর্ম!সুখ প্রত্যাশী জগতের প্রতিটি জীবন আর জীবনের প্রতিটি খন্ড!

দুঃখ আসে,জীবনের হাত ধরেই।বয়সের কড়িপাথর গোনার বিলম্বিত অবকাশে ধীরপায়ে আসা দুঃখগুলো যেন ভীর করে জীবন আকাশে।বয়স বারার সাথে সাথেই যেন কলেবরে বাড়তে থাকে কড়িতে গোনা দুঃখগুলোর আকৃতি অবয়ব!মাঝে মাঝে খুব অভিমান হয় দুঃখগুলোর উপর!কেন এত দুঃখ?!!এতটা আকাশ বোঝাই করা কালো মেঘের আঁধার কেন শুধু আমার জীবনেই আসে?আর ভাল্লাগেনা…এ জীবন অসহ্য!!
কিন্তু জীবনের মায়াবি রূপের ক্ষণিক চাহনি মুহূর্তেই ফিরিয়ে দেয় জীবনের মানে!!কষ্টগুলোর পাথরভার যেন সহসাই আশিটনি বোঝার কঠিন গুরুভার থেকে রূপ নেয় ভারহীন রঙ্গিন ফানুসে!!!আত্নবিস্মৃত মনের বিবর্ণ ক্যানভাসে শতরূপী রঙের প্রলেপ (!)যেন নিমেসেই বইয়ে দেয় চিরায়ত আনন্দের নিঃসীম ফল্গুধারা!!

এইতো জীবন!!বিচিত্রতার শেষ নেই যাতে!প্রতিনিয়ত চমকিত হই জীবনের হঠাৎ আগত এইসব অজানা ভালোলাগার সুখানুভবগুলোকে ঘিরেই।

ভালোলাগছিলনা একলা বসে থেকে অলস সময় কাটাতে।সাথে চা,হাতে উপন্যাস।আর বাইরে পাগল করা বাতাসের উদাসীন দমকা হাওয়া,ভিজে বাতাসের ঠান্ডা পরশ যেন একলা ভাবার ভাবনাটাকেই বারিয়ে তুলছে প্রতিক্ষণ।কেন কেউ নেই আজ?কেউ কি মনে রাখেনা আমায়?ভাবতে ভাবতেই বইটা পাশে রেখে বাতাসের নিবিড় নিঃসঙ্গ আলিঙ্গনের দিকে নির্মোহ যাত্রা। সাথে বৃষ্টির আগমনী গান আর অবাঞ্ছিত ঝটকাগুলোর তুমুল আলিঙ্গন! পাশে আছে বৃষ্টিই,থাকবেও সারাজীবন!না হোক অন্য কেউ।কিন্তু হঠাৎ করেই যেন বেজে উঠল ফোনটা!!ওহহ,শেষ পর্যন্ত মনে পরলে আমায়?!!কেউতো আছে,মনে রেখেছে আমাকে।হঠাৎ করেই মন ভাল হয়ে গেল,এইত আমি দোকা,একলাটি নই!জীবনটা যে কত সুন্দর!!বৃষ্টির ধারায় সতেজ হয়ে যাওয়া ঝকঝকে সবুজের মতই যেন জীবন,এক চিরায়ত রডোডেনড্রন!!

উফফ,কারই কি মনে ছিলনা?সত্যি কিভাবে পারে মানুষ!আজ সারাটা দিন মন খারাপ করে বসে থাকা,অথচ আজকের দিনেই মন খারাপ করতে হলো!আজকে আমার জন্মদিন।একটু মনে রাখবেনা কেউ!এতটাই অদৃশ্য আমি!অদেখা অজানা এক হীন যাযাবর! ধুর,এভাবে আর ভাববোনা,কি হয়েছে তাতে?আমি এভাবেই বেশ আছি।কিন্তু মুহুর্তেই অভিমান আর আক্ষেপের বোঝা ছুঁয়ে ফেললো পাহাড় চূড়া,আর দরদর করে ফেটে পরল লোনা ঝরনার উষ্ণ ধারা!!তারপর!হঠাৎ দেখি কে বা কারা এসে বলছে,”শুভ জন্মদিন,চিরকাল বেঁচে থাক ধরিত্রীর মানসপটে!”আরে,তোরা!!!আমাকে মনে পরার ফুরসত মিললো তোদের!যা,তোদের সাথে আমার আমরণ অভিমান।ভুলেই গেছিস আমায়।কিন্তু তাই কি পারা যায়! মুহূর্তেই মনে প্রফুল্লতার উষ্ণতর জলস্রোত বইয়ে দিয়েছিস তোরা!ভালবাসি তোদের,ভালবাসি আজীবন।জীবন যেন তোদের দেয়া রঙের পরশে খুব করে রঙ্গিন হয়ে গেছে আবার!

আর ওই যে ফুল বিক্রি করে মেয়েটা?আজ তার ভীষণ মন খারাপ।যে আপুটার কাছে প্রায় প্রতিদিনই ফুল বেচতো সে,আজ তার দেখা মিলছে না।উফফ,আজকে তো বেচা বিক্রিও হয়নি তেমন!কিভাবে হবে তাহলে?ছোট ভাইটারও যে আবার অসুখ করেছে।ওদিকে মাও কাজে যেতে পারছে না,ভিষণ পেট ব্যাথা,ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছে মা!আর ভাইটার জন্যও তো ওষুধ কিনতে হবে,পয়সা পাবে কোথায়?.........এভাবেই চিন্তার ভারে চাপা পরা মেয়েটা আরো কিছুক্ষণ ভাইয়া আপুদের কাছে ফুল বেচার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে গেলো।নাহ,কেউ কিনছে না।হঠাৎ চোখে পরে গেল সেই আপুটার চিরচেনা মায়াবি চেহারা,যার কাছে প্রায় প্রতিদিনই ফুল বেচে সে !!দৌড়ে গিয়ে বলল,”আফা,ফুল নিবেন?ভাইডার অনেক অসুখ,ওষুধ কিনমু আফা!!”
যাক,সাথে সাথে ওষুধ কেনার মত টাকার বন্দোবস্ত হয়ে গেল,সাথে এক্সট্রা টিপ্স,ফুল লাগবেনা!তারপরো ফুলটা আপুকে দিল সে।আজকের মত তার দুঃশ্চিন্তার অবসান।এখন সে নিঃশ্চিন্তে বাড়িতে ফিরতে
পারে,ভাইয়ের জন্য ওষুধ যে কেনা হয়ে গেছে তার!!!

ওইযে আবার,অসহায় ক্লান্ত ছেলেটা থেকে থেকেই জীবনের প্রতি হয়ে পরে বিতশ্রদ্ধ।আর কত?এভাবে আর কতদিন?পারছেনা সে।অতটুকুন কাঁধে বোঝার ভারটা যেন বড্ড বেশিই হয়ে গেছে। বাবা মারা যাবার পর মায়ের আঁচল যে স্নেহের শীতল ছায়ায় বাঁচিয়ে রেখেছিল ওদের কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রাণ,আজ সেই প্রাণগুলি কঠিন ভুবনের বাঁচা-মরার লড়াই সইছে শতগুনে।ওরা মোট তিনজন, একদম ছোট্টটা মাত্র কথা বলে,হাঁটে।বাকি দুইজন ,বর ভাই নিয়মিত রিকশা চালায়,ইট ভাঙ্গে,অথবা খুঁজে নেয় কোন হোটেলে পার্টটাইম বয়ের কাজ।মাঝে মাঝে কাজ থাকেনা কোন,জীবন যেন খুব কঠিন হয়ে পরে তখন,বাঁচার লড়াইয়ে আরেকবার কঠোড় আঘাত আসে।আর যেই ২ বছরের বোনটা,সেও বসে নেই,নিয়মিত ময়লা টোকায়,ফুল বিক্রি করে,নতুবা জীবনের প্রয়োজনে বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তি।তবু ছোট্টভাইটার মুখের হাসি যেন কেড়ে নেয় ওদের জীবনের সব কষ্টের আঁচড়।ওরা হাসে ,খেলে।সুখ আসে ওদের জীবনেও,সুখ নামের সোনার হরিণ যেনো ধরা দেয় ওদের ভাঙ্গা কুটিরে,চাঁদের আলোয় সব শান্তি নেমে আসে ওদের নিষ্পাপ ঘুমন্ত চোখের তারায়।

এভাবেই চলে জীবন,কখনো সুখের আলতো ক্ষণিক পরশ,কখনো দুঃখের নিঃসীম আঁধার। কখনো বা পাগল করা সুখের মাতাল স্রোতে ভেসে যাওয়া,কখনোবা তীব্র কষ্টগুলোকে বুকে নিয়ে হীম হওয়া,এগিয়ে চলে জীবন।পাওয়ার খাতায় হয়তো পরে থাকে কতগুলো অতুলনীয় স্মৃতি,যার মুল্য কিছু দিয়ে মাপা যায়না ।অমুল্য সেই স্মৃতিগুলোই জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে,আমাদের হৃদয়ের ক্যানভাসে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১১ রাত ২:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×