আমাকে মেরো না প্লিজ,
আমাকে মেরো না।
আমাকে মেরে ফেলে লাভ কি তোমার???
আমার কোন কথাই লোকটি শুনছে না বরং মিনতি গুলো তার হাতের চাপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার গলায়....।
একটা সময় আমার মনে হতে লাগলো যে আমি মারা যাচ্ছি....।।
কারন ঠিক তখন চোখে ভেসে উঠছিলো, এই পৃথিবীতে আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন যে তার মুখ...
আর সে হচ্ছে "আমার স্ত্রী অনু"
নিভে যাওয়ার আগে পিদিম যেমন ধপ করে একবার জ্বলে উঠে তার অস্তিত্ব জানিয়ে দেয়...
আমিও ঠিক তেমনিই যেন মরে যাওয়ার আগে এক ঝটকা দিয়ে উঠে বসে গেলাম....
বসেই চারপাশে তাকালাম...
নাহহ আমিতো আমার রুমেই আছি,
লোকটাও নেই,
বুঝতে পারলাম যে আমি দুঃস্বপ্ন দেখেছি...
মনে মনে কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে পাশে ঘুমিয়ে থাকা আমার বউয়ের দিকে তাকালাম....
বেঘোরে ঘুমাচ্ছে পাগলীটা...
ঘুমের মধ্যে যেকোন মানুষকেই অসম্ভব সুন্দর আর নিষ্পাপ দেখায়...
মেয়েদের একটু বেশিই সুন্দর আর নিষ্পাপ দেখায়...
ঘুমের মধ্যে কোন মেয়েকে একবার দেখলে যেকোন পুরুষই ঐ মেয়ের প্রেমে পড়বে...পড়তে বাধ্য।
কিন্তু অনুর ঐ নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম...
এ কেমন স্বপ্ন দেখলাম আমি...???
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নেমে পড়লাম বিছানা থেকে...
রাত বাজে ৪টা....
আমি গিয়ে দাড়ালাম বারান্দায়.....
সত্যিই যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার অনুর কি হবে????
আমি ছাড়া যে ওর জন্য আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়.....
আমাদের সম্পর্কটাকে অনুর বাবা প্রথমে কিছুতেই মেনে নিতে চাননি...
অনুর মুখে প্রথম যখন শুনলাম যে,
-বাবা আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছেন না রাজ...
কথাটা শুনে খুব রাগ রাগলো...কেন উনি মেনে নিবেন না!!!
আমি একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ...
বিয়ের পর একটা মেয়েকে সুখী করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই দেওয়ার সামর্থ আমার আছে....
অনুর একরোখা জেদ আর চোখের পানির কাছে হার মেনে অনুর বাবা আমার সাথে কথা বলতে চাইলেন....
দিনক্ষন ঠিক করে দেখাও হলো,
সেদিন আমি কথা শুরুই করেছিলাম ওনাকে প্রশ্ন করে যে,
-কেন আপনি আমাদের মেনে নিচ্ছেন না???কি নেই আমার????
ওনার জবাবটা শুনে আমি কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়েছিলাম..
উনি বলেছিলেন,
-বাবা তোমার সবই আছে শুধু বাবা মা নাই...
অনুর জন্মের পরেই অনুর মা মারা যান তারপর থেকে আমিই অনুকে বড় করেছি....
আমি আর কতদিনইবা বাঁচবো বল????
আমি যদি মারা যাই...
আমার মেয়েটা এতিম হয়ে যাবে আর পাশে থাকা তুমি,
তুমিও এতিম।
তোমাদের আশ্রয়স্থলটা কোথায় বলতে পার???
তোমরা হচ্ছো ঘুড়ি আর আমরা মা বাবারা হচ্ছি তোমাদের নাটাই....
আমার মৃত্যুর পরতো তোমরা দুজনেই নাটাই হীন ঘুড়ি হয়ে যাবে বাবা....
আমার মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছিলো না...
অনেক কষ্টে বলেছিলামঃ বাবা আপনি যেমন ছোটবেলা থেকেই অনুর বাবা মা ছিলেন তেমনি এখন থেকে আমাদের দুজনেরই বাবা মা হতে পারবেন না???
আমাকে আবার নতুন করে পিতৃ-মাতৃহীন করবেন না প্লিজ...
তারপর আমাদের বিয়েতে উনি আর বাঁধা দেননি...
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,
আমাদের বিয়ের ৬ মাসের মাথাতেই একদিন আমরা সত্যিই নাটাইহীন ঘুড়ি হয়ে গেলাম....
সেই থেকে আজ অবদি আমরা একে অন্যকে আকড়ে ধরেই গড়ে তুলেছি আমাদের জীবন...
আমার চোখের সামনেই তিলে তিলে অনু গড়ে তুলেছে আমি কেন্দ্রিক অনুর জীবন....
সেই আমিই যদি হারিয়ে যাই অনুর জীবন থেকে!!!!
ঠিক এই ভয়টাই কি অনুর বাবা পাচ্ছিলেন তখন???
হঠাৎ পেছন থেকে একটি হাত স্পর্শ করলো আমার কাঁধ....
পেছনে না তাকিয়েই প্রশ্ন করলাম....
-তুমি উঠলে কেন??
অনু বললো,
-আমার পৃথিবীতে তুমি ছাড়া যে আর কেউ নেই তাই তুমি আমার সঙ্গ ছাড়লেই আমি টের পাই কারন আমার ভেতরে তখন অস্থির অস্থির লাগে...
অনুর কথাটা শুনেই বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো...গুমরে কান্না আসতে চাইলো।
অনেক কষ্টে কান্না সংবরন করে অনুর দিকে ফিরে অনুকে জড়িয়ে ধরলাম।
অনুকে বুকে নিয়েই মনে মনে বলতে লাগলামঃ
-আমরা যে দুই নাটাইহীন ঘুড়ি অনু।
আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুমি আমার স্মৃতি গুলোকে নিয়ে একা একা উড়তে পারবে তো???
ভয় পাবা না তো????
আমি যেখানেই থাকি,
হোক এপারে কিংবা ওপারে...
কথা দিলাম আমি কখনোই তোমার সঙ্গ ছাড়বো না....
তোমাকে দেখে দেখে রাখবো,কখনো বাতাস হয়ে,কখনো বা পাখি...
কখনো হয়তো সবার অলক্ষ্যে তোমাকে ঠিক এখন যেভাবে জড়িয়ে আছি এভাবে জড়িয়ে ধরবো,
আচ্ছা তুমি তখন অনুভব করবে কি, ঠিক এখন যেভাবে অনুভব করছো????
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৩৯