somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলী আর আমি

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো বাসায় বেড়াতে গেলে আমি মনে মনে বই খুজি। অ্যাকাডেমিক বই না আউট বই। ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি তখন। বড় বোনের তখন বিয়ে হয়েছে। শ্বশুরবাড়ি দিনাজপুর। আমার বয়সী কেউ না থাকায় সেখানে গিয়ে খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আলমারি ভর্তি বই আর পুরাতন অনেক পত্র-পত্রিকা। এর মধ্যে বিচিত্রার একটা সংখ্যা পেয়েছিলাম পুরোটাই মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে লেখা। বাংলাদেশে আসা আলীর অনেকগুলো ছবি ছিল ওখানে। আমার দেশকে তিনি এতটাই ভালবেসে ফেলেছিলেন যে একবার তিনি বলেছিলেন দুনিয়াতে স্বর্গ কোথাও থাকলে তা বাংলাদেশে। এসব কারনে আমার ছোটবেলার অন্যতম হিরো ছিলেন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বি সনি লিস্টন, জর্জ ফোরম্যান, জো ফ্রেজিয়ার নাম গুলো এখনও মনে আছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা ডুয়েট লড়াই 'ফাইট অব দ্যা সেঞ্চুরি' 'রাম্বল ইন দ্যা জাঙ্গল' প্রভৃতির সাথে জড়িত আলী আর এই নামগুলি। ভয়ঙ্কর বক্সিং খেলাটাকে শিল্প বলা যাবে না কোনভাবেই কিন্তু বক্সিং রিংয়ের শিল্পী বলা যায় আলীকে....."আমি প্রজাপতির মত উড়ে উড়ে মৌমাছির মত হুল ফোটাই"-এরকম কথা তো শিল্পীরাই বলতে পারেন। আলী নিয়ে ক্ষুদে এক এনসাইক্লোপিডিয়া ছিলাম আমি। আলীর জন্য আমার কাছে থাকা সুন্দরী রাজবধু ডায়ানাকে পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছিলাম এক ক্লাসমেটের কাছে। সে যদিও আলীকে দিতে চাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাকে পটিয়ে প্রিন্সেস ডায়ানার বিনিময়ে মোহাম্মদ আলীর একটা ডাকটিকিট পেয়েছিলাম। স্কুলের পরীক্ষা,বৃত্তি পরীক্ষায় অপেক্ষায় থাকতাম কখন পরীক্ষায় রচনা আসবে 'ইয়োর ফেভারিট স্পোর্টসম্যান' আর আমি আলীকে ঢালিয়া আসব পরীক্ষার খাতায়। দুঃখের বিষয় ছাত্রজীবনের কোন সময়ই আমার এই জ্ঞান কাজে লাগেনি। এতদিনে সুযোগটা পেলাম!
লিজেন্ডারি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। সম্ভবত সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী স্পোর্টস পারসোনালিটি ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একাধারে মুষ্টিযোদ্ধা,লেখক,অভিনেতা,গায়ক সর্বোপরি অসাধারন মানুষ। তার চিরবিদায়ে তার সময়ের বক্সিং রিং এর চিরশত্রু জর্জ ফোরম্যান বলেছেন আরেকজন আলী আর কখনই আসবে না। তার দেখা অন্যতম সেরা মানুষ ছিল সে। নিজের আত্মজীবনী বইতে আলী লিখেছিলেন "আমি সবার সেরা ছিলাম কিন্তু সবচেয়ে স্মার্ট ছিলাম না।" এই কথাটা মানুষকে এতই প্রভাবিত করেছিল যে হিউম্যান সাইকোলজিতে পারস্পরিক তুলনা করার এরকম ব্যাপার মোহাম্মদ আলী অ্যাফেক্ট নামে পরিচিত।
গেল শতাব্দীর শেষে বিবিসি কর্তৃক এক টা জরিপ হয়। এতে শতাব্দির সেরা খেলোয়ার নির্বাচিত হন মোহাম্মদ আলী ম্যারাডোনা,পেলে, ব্রাডম্যানদের হারিয়ে। আলী প্রথম প্লেয়ার হিসেবে পরপর তিনবার ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশীপ জিতেছিলেন। তিনি মোট ৬১ প্রফেশনাল লড়াইয়ে মধ্যে ৫৬ টিতেই বিজয়ী হয়েছেন যার মধ্যে প্রতিপক্ষকে নক আউট করেছেন ৩৭ বার। ৫ বার পয়েন্টের ব্যবধানে পরাজিত হলেও কোন ম্যাচেই নক আউট হননি...শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবার লড়ে যাবার অনন্য উদাহরন তিনি। আলীর জীবনী বর্তমান সময়ের জন্য অনুপ্রেরনার গল্প হতে পারে। শুনতে ক্রেইজি মনে হলেও প্রতিপক্ষকে ডজ দেয়ার টেকনিকটা বাড়াতে তিনি তার সহকারিকে পাথর ছুড়তে দিতেন সোজা তার মুখের দিকে। সহকারী পাথর ছুড়ত আর তিনি পাথরকে ডজ দিতেন। তার সহকারির ভাষায়" হি ওয়াজ সো ফাস্ট দ্যাট আই নেভার কুড হার্ট হিজ ফেস উইথ দ্যা রক"। তিনি একবার মজা করে বলেছিলেন"I was so fast that last night i turned off the light switch in hotel room and go out before the room was dark" । সেনাবাহিনীতে ট্রেনিংয়ে একটা জিনিস বলা হয়..."কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ"। এরকম শতশত ছুটন্ত পাথরকে সবসময় ডজ দিতে পেরেছেন,বক্সিং রিংয়ে ডজ দিতে দিতে তাদের নকআউটই করে দিয়েছেন। তিনি জীবনের লড়াইয়ে অবশেষে নকআউট হয়ে গেলেন।
শুধু খেলোয়ার হিসেবে নয় মানুষ হিসেবে এতটাই অসাধারন ছিলেন যে খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ কখনো শান্তিতে নোবেল পেলে সম্ভবত সেটা তিনিই পেতেন। আমেরিকা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে তিনি ভিয়েৎনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধকে অপ্রয়োজনীয় আর অনুচিত ভেবেছিলেন। এজন্য তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। মাত্র ১৮ বছর বয়সে জেতা অলিম্পিক স্বর্ণপদক নদীতে ছুড়ে ফেলেন বর্ণবাদের প্রতিবাদ স্বরুপ। এরকম মানসিকতার আদর্শ খেলোয়ার এখন কি কেউ আছেন? প্রতিভার বিচারে আমার আর দুজন পছন্দের খেলোয়ার ম্যারাডোনা আর ব্রায়ান লারা। কিন্তু আমার আদর্শ খেলোয়ার ছিলেন বা থাকবেন একজনই। তিনি মোহাম্মদ আলী।
ট্রিবিউট টু মোহাম্মদ আলী,মাই চাইল্ডহুড হিরো....
(জুন ০৪, ২০১৬, ঢাকা।)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×