আর... যত দ্রুত পেরেছে মিলান নিজেকে সামলে নিয়েছে । এভিন সম্ভবত ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তাই তাকে এত উদভ্রান্ত দেখাচ্ছে । না, আজ আর তাদের মৎস শিকার ভাল জমল না । না না, চিন্তায় ডুবে যেতে লাগল সবার মন । কোনভাবে বাড়ি পৌছতে পারলেই হয় । বাড়িতে আসার পর মিলান এই ব্যাপার দ্্বিতীয় বার কোন কথা বলল না, কারউ সাথে । সবার এই অবস্থা থেকে রুয়ানা কিছুই বুঝতে পারল না । সবাই যার যার রাতের খাবার শেষে বিছানায় শুয়ে পড়ল । রুয়ানা তার স্বামীর এই অবস্থার কারণ জানার জন্য বিছানায় শুয়ে তার দিকে মুখ ফিরে তাকাতেই দেখল, সম্পূর্ণ ঘুমে অচেতন । কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মিলান তার স্ত্রীর প্রশ্নবান থেকে বাচাঁর জন্য ঘুমের ভান করছে । অনেক পুরনো পদ্ধতি যখনই তাদের কোন প্রকার ঝগড়া হত মিলান তাই করত ! তবে, হয়ত আজকের ব্যাপারটা অনেকটা ভিন্ন । তবু এই ব্যাপারে সে একা ভাবতেই আগ্রহী ।এদিকে রিকার্ড এর মাঝে অনেক ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছে । স্কুল থেকে যা পড়ছে, জানছে তা থেকেই বিভিন্ন প্রশ্নের উৎপাত করছে । এভিন এর অবস্থা তো মারাত্নক আকার ধারণ করেছে । রুয়ানা সারারাত ছেলের পাশে বসে ছিল, কারণ রাতে এভিনের খুব জ্বর হয় । জ্বর এর পরিমাপ 103-104 ডিগ্রীর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে । ভোরে জ্বরের পরিমাপ কমে আসলে মিলান আর রুয়ানা দুই জনেই সস্তির নিশ্বাস ফেলে । রুয়ানা এখন অনেকটা রেগেমেগই ঘটনার বিবরণ জানতে চায় । অনেকটা নিরুপায় হয়েই মিলান সব পুংখানুপুংখরূপে বর্ণনা করে । মিলান চায়নি এই ঘটনা নিয়ে তার স্ত্রী চিন্তা করুক । এই চিন্তা পড়ে দুশ্চিন্তায় রূপান্তরের আশংকাই ছিল তার মনে ।
আজ সকালে এলিনা(হাসপাতালের প্রধান পরিচালক ও মিলান এর বাল্য বান্ধবী) ঘরে ফোন করেছে । সে আজ তার বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ঘুরতে আসতে পারে । মিলান এলিনাকে পছন্দ করলেও রুয়ানেকে নিয়ে ভয় হয়, কারণ রুয়ানা মনে হয় এলিনাকে সহ্য করতে পারে না । যদিও এলিনাকে রুয়ানা কোন দিনও কথা তুলে নি । রুয়ানার কথা বার্তায় কোন সময়ই এলিনার প্রতি বিদ্্বেষী মনোভাব কখনোই প্রকাশিত হয়নি তবুও মিলানের সন্দেহ দূর হয় না । এতো গেল স্বামী স্ত্রী কথা কিন্তু তাদের বড় ছেলে এভিন কোন সময়ই বাবার বান্ধবী এলিনাকে দু'চক্ষুতে দেখতে পারে না, এর ব্যাপারে কারোরই ধারণা নেই । কারণ ছোটকালে এভিন এলিনাকে তার বাবার সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখেছিল । কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা ছিল না, তাদের বন্ধুত্ব ছিল, সাধারণ বন্ধুত্বের মত, এতে কোন পরকীয়া প্রেমের অস্তিত্ব ছিল না । কিন্তু এভিন তা সহজে গ্রহণ করতে না পারায়, তার মনের মধ্যে এলিনা বিদ্্বেষী মনোভাব বেড়ে উঠেছে ।
খুব হইচই এর মধ্য দিয়ে এলিনা তার বাচ্চাদের নিয়ে মিলানের বাসায় উপস্থিত হয় । মিলান ও রুয়ানা তাদের অতিথিদেরকে সাদঁর সম্ভাষণ জানায় । এলিনা বিবাহের আগে থেকেই মিলানের বাসায় যখন আসত, তখনই কোন না কোন ধরনের উপহার ঘরের সবার জন্য নিয়ে আসত । এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি । রিকার্ড তো তার এলিনা আন্টি(রিকার্ড ছোট কাল থেকেই এলিনাকে এলিনা আন্টি বলে ডাকে) থেকে একটি নেভিগেশন মেশিন ও সাথে সফটওয়্যার পেয়ে দারুণ খুশী । এলিন জানে যে, রিকার্ড সব সময় যন্ত্রপাতি ও কম্পিউটার সম্পকির্ত ব্যাপার-স্যাপার এর উপর আগ্রহ আছে । এভিনের জন্য একটি দামী শার্ট ও কিছু গানের সিডি আনে । এভিন তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি না জানালেও, খুব তাচ্ছিল্যএবং ঘৃণার সাথে তা হাতে নেয় । মিলান, রুয়ানা এবং তাদের কোলের শিশু রিয়ানা পর্যন্ত উপহার থেকে বাদ যায় নি । উল্লেখ্য যে, তাদের শিশু 'রিয়ানা'র নামটি এলিনাই দিয়েছে । মধ্যহ্নভোজনের পর এলিনা , রুয়ানা এবং মিলান খোশ গল্পে মেতে উঠল । এলিনার স্বামী মিলানেরই দু:সম্পর্কের ভাই হারভি এবং এই দ্্বীপের শেরিফ । কথার ফাকেঁ হঠাৎ রুয়ানাই মুখ ফস্কে ঐ জলাশয়ের কথা তুলে ফেলে । মিলান নিজেও চেয়েছিল ব্যাপারটা নিয়ে এলিনার সাথে কথা বলে কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সে চায় নি আর রুয়ানাও চায়নি কথাটা কাউকে জানানোর জন্য তবে কেন জানি মুখ থেকে বেড়িয়ে গেল ! তখন মিলান ব্যাপারটা এড়িয়া যাবার চেষ্টা করলেও এলিনা জোকেঁর মত চেপে বসল, পুরো ঘটনার বিবরণের জন্য । শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই মিলান সব কথা উগলে দেয় । তখন এলিনা এই ব্যাপারে তার স্বামীকে জানানোর কথা ব্যক্ত করে । মিলান এই ব্যাপারে অসম্মতি জানায় । এলিনা অনিচ্ছা সত্ত্বে মিলানের কথায় সায় দেয় । মিলান চায় এই ব্যাপারে তারা দুইজনে পর্যবেক্ষণ করবে । কিন্তু ঘটনাটা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও রুয়ানা ঘটনাটাকে নিছক ভ্রান্ত ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে চায় । যদিও রুয়ানা সত্যিকারে ভিতরে ভিতরে চিন্তায় মগ্ন কিন্তু এই ব্যাপারে তার স্বামীকে জড়িত হতে দিতে চায় না, ভবিষ্যতের অজানা আশংকায় ! রুয়ানার বিরোধীতা তাদের আগ্রহকে দমিয়ে রাখতে পারবে না, রুয়ানা তা ভাল করেই জানে । আর তখনই ....।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৬ ভোর ৫:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



