somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুউম্বার মাঠ ঘাট: ব্রিসবেন ভ্রমন-৩

২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীএল এ বাড়ীতে ডিনার এর আড্ডা আমার খুব ভাল লাগলো, পাহাড়ের উপরে একটা বাড়ী, বসবার ঘরের মধ্যে বাগান, গাছ গুলোকে বাচিয়ে রাখবার জন্য ছাদে আলো আসবার ব্যবস্থা, কৃত্রিম আলো সবই ভালো লাগবার মতন।কিছুক্ষনের মধ্যেই নিএল এর স্ত্রী জোয়েন এর সাথে আমার খুব ভাব হয়ে গেল, একে একে আরো ডিনারে এল পেরী, ব্রেট-এবং তার স্ত্রী। আগামী সময় গুলোতে পেরী,ড নিএল এবং ব্রেট পালা করে আমাদের সাথে কাজ করবে....

চলল ছোট ছোট গ্রপে আড্ডা...এক এক গ্রপের আড্ডার বিষয় এক এক রকম, নানা দিকে মোড় নিচ্ছে...বাঙালীদের মতন এখানেও মহিলাদের সাজুগুজু, অন্য মেয়েরা কি করছে, বাচ্চারা কি করছে না করছে এইসব ই আড্ডার বিষয়.......আবার যখন কলিগরা একসাথে বসছি, দেখা যাচ্ছে কাজ নিয়েও তুমুল আড্ডা...নিএল এর ছেলে মেয়েরা সামনে বিয়ে করবে....এসব নিয়েও কথা হয়..........চিরাচরিত পিতা মাতার উতকন্ঠা দেখি সন্তানের সংসারের সুখ সম্ভাবনা নিয়ে.........মানুষ আসলে একই...সে যে দেশেরই হোকনা কেন।

এর মধ্যে চলছে হালকা খাওয়্ দাওয়া...এক সময় ডিনার শেষ হোল...আরো আড্ডার পর নিএল আমাদের পৌছে দিল মোটেলে, বাইরে বেড়িয়ে বুঝলাম বেজায় ঠান্ডা পড়েছে...এরপর থেকে দেখেছি বিকেল নামতেই টুউম্বাতে শীত নেমে আসে, মেলবোরন এর মতন!

পরদিন সকাল থেকেই মূলত শুরু হয় আমাদের কাজ, প্রথম দুতিন দিন আমরা এখানকার ক্রপিং সিস্টেম সম্পরকে একটা ধারনা নেব...তাই মাঠে মাঠে ঘুরতে হবে। মাঠে মাঠে ঘোরই তো আমাদের কাজ, তাই ভালই লাগে..প্রথমেই সিএসআইআরও এরে একটা জটিল একসপেরিমেন্ট দেখি...মুগ্ধ হবার মতন। এত এত টাকা এরা খরচ করছে, তারপরও বলছে বাজেট কম...অথচ আমরা কাজ করতে চাইলে শুধু বাজেট কাটে...গরীব দেশ বলে আমাদের কাজেও বাজেট পাইনা.


বাংলাদেশের মতন এখানেও রিসারচার রা কৃষক সিলেক্ট করে, তাদের মোটিভেশন করে তাদের প্লটে এক্সপেরিমেন্ট অথবা ডেমোনসেট্রশন করে।



সরগাম আমি এই প্রথম দেখলাম, দেশে নাকি এখন একটু একটু হচ্ছে, তবে এখানকার সরগাম মূলত পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে। সরগামের পাশেই আছে তুলা..........এখানে দুটো ফসল পাশাপাশি লাগানো.......যাতে একটা কাটা হয়ে গেলে অন্যটা মাঠে থাকে.......এতে করে মাঠ কখনোই পুরোটা খালি থাকবে না, যার ফলে বৃষ্টি হলে মাটির ইরোশন হবে না, কারন এলাকাটা পাহাড়ী ঢালু.......দারুন আইডিয়া...


এই প্রথম তুলার ক্ষেত ও দেখলাম..........তুলার ফুল এবং বীজটা ফেটে তুলা বেড় হয়ে আসা....অসাধারন! মেলবোরনের বাসায় এসে জাফনাকে দেখানোর পরে সেও খুব মজা পেল এবঙ পরদিন তুলার ফুল এবঙ তুলা একে ফেলল.......তার যা কাজ আরকি!





পরদিন অবশ্য বড় বড় কৃষকদের দেখা পেলাম........এরা এত বড় কৃষক, আসলে কৃষক না বলে এদের এগ্রোবিজনেসমেন বলা ভাল...এক এক জন বিশাল বিশাল জমির মালিক....তাদেরই জমিতে দেখলাম....যেদিকে দুচোখ যায় মুগডালের ক্ষেত..............অথবা দিগন্ত বিস্তৃত তুলার ক্ষেত...........এ যে কি অসাধারন দৃশ্য!





তবে এখানে বৃষ্টি খুব কম হয়, তাই পানি ধরে রাখবার জন্য বিশাল বিশাল পুকুর করে রেখেছে...নাম দিয়েছে রিঙ টেংক...এখানে মটির নিচের পানিও আছে তবে সরকার ব্যবহারের লিমিট ঠিক করে দিয়েছে......যা এলকেশন, তারও পঞ্চাশ থেকে আশি ভাগ শুধু ব্যবহার করতে পারবে..........যাতে আগামী একশত বছর পরের জেনারেশনও পানি পায়...কি পরিমান দূরদরশী পরিকল্পনা ভাবা যায়! অন্তত আমাদের দেশের সাথে তুলনা করলে!



বৃষ্টি কম হবার কারনে বিজ্ঞানীরা এখানকার কৃষকদের শিখিয়ে ছেড়েছেন মাটির কনার ফাকে ফাকে লুকিয়ে আছে যেটুকু পানি তা দিয়েই তারা একটা কি দুটো ফসল করতে পারবে.........কৃষকরা্ও এখন এই ভাষাতেই কথা বলে যেটা আমার জন্য ছিল বিরাট বিস্ময়! আমাদের গবেষকদেরই এই কথা বুঝাতে গেলে পারবো না.........কৃষক তো অনেক দূরের কথা, তবে আমাদেরও মনে হয় বেশী দুর নেই সেই দিনের...তাই ভাবনার অথবা কাজের অনেক খোরাক পা্ওয়া গেল...

এরপর চলল আরো কিছু টেকনিক্যাল কাজ.............ল্যাব ঘুরে দেখা...........দুনিয়ার যত আধুনিক যন্ত্রপাতি....মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখলাম আর ছবি তুললাম.........থাক, নিজের দেশের সাথে আর কি তুলনা করবো!

আগের পোস্ট
রোমাঞ্চকর ভ্রমন...স্বপ্নের দেশ অস্ট্রেলিয়াতে
ব্রিসবেন থেকে টুউম্বা পাহাড়ের কোলে
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ ভোর ৫:১০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×