পড়ুন শেষের পাতা http://www.sangbad.com.bd
জাফর আহমদ
গার্মেন্টস কারখানা মালিকরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামের তালিকা না দেয়ায় ৬৫ হাজার নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন সরকারি সহায়তা জেলা শহরগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় গার্মেন্টস কারখানাসহ কম আয়ের মায়েদের জন্য কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মহিলাদের জন্য গঠিত তহবিল থেকে ২ বছর জেলা শহরে এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এ খবর নারী ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রের।
সরকার ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫ হাজার টাকার কম আয়ের নারী গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সময়ের জন্য ৩শ' ৫০ টাকা সহায়তা দেয়। প্রথম অথবা দ্বিতীয় সন্তানের যে কোন একটির জন্মদান সময়ের ২ বছরের জন্য এ সহায়তা দেয়া হয়। কম আয়ের মা ও শিশু স্বাস্থের সেবা দেয়ার জন্য এ বরাদ্দ দেয়া হয়। মহিলা বিষয়ক অধিদফতর এ ব্যাপারে বিজিএমইএ'র অধীনে ৪০ হাজার ও বিকেএমইএ'র কাছে এ ধরনের ২৭ হাজার নারী শ্রমিকের তালিকা চায়। বিজিএমইএ ১৮ হাজার ও বিকেএমইএ ১০ হাজারের তালিকা সরবরাহ করতে সম্মত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজিএমইএ তালিকা সরবরাহ করে ৪ হাজার ৬১৬ জনের ও বিকেএমইএ ৬ হাজার ১৯৮ জনের। তাই সরকার শেষ পর্যায়ে ফেরত আসা টাকা জেলা শহরগুলোতে স্থানান্তর করে।
সরকার ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রথমে বরাদ্দ করে ৩০ কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত বছরে মোট ৬৭ হাজার ৫শ' মাকে এ সুবিধা দেয়া হয়। এ বছর আরও ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার সুবিধাভোগী মায়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৭ হাজার ৬২৫-এ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এ বছর বরাদ্দের পরিমাণ ৩২ হাজার ৬০ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এ ধরনের তালিকা প্রণয়নের জন্য আমরা মাত্র একমাস সময় পেয়েছিলাম। এ সময় এর বেশি নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বছর মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে, আমরা এ ধরনের ১২ হাজার শ্রমিকের তালিকা তৈরি করেছি।
এ ব্যাপারে মহিলা অধিদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে যাদের এই সহায়তার অধীনে আনা হয়েছে নতুন করে তাদের কাছ থেকে ওই সহায়তা ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থা নেই। তবে এ বছর অতিরিক্ত যে ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০ হাজার ১শ' জনের সহায়তা বৃদ্ধি হওয়ার কথা ওই পরিমাণই নতুন গার্মেন্টস শ্রমিকদের তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনব হাফিজ বলেন, অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানায়ই নারী শ্রমিকদের সন্তান-সম্ভবা দেখলেই চাকরিচ্যুত করা হয়। অনেক সময় মালিকপক্ষের লোকজনের খারাপ আচরণ সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। তিনি বলেন, মালিকরা যদি গার্মেন্টস কারখানায় সন্তান-সম্ভবা নারী শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুত করতে না পারেন তাহলে একই সময় জেলা শহর থেকে কিভাবে তালিকা প্রণয়ন করে সহায়তা দেয়া হয়? মূল কথা কিছু গার্মেন্টস মালিক আছে যারা নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয় না। এ ধরনের তালিকা তৈরি করে সরকারের কাছে দিলে ওই কারখানা মালিককেও আইন অনুযায়ী ৪ মাসের সবেতন ছুটি দিতে হবে। এজন্য তারা সময়মতো সরকারকে তালিকা দেয়নি।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, এটি দুঃখজনক ঘটনা। মালিকরা ইচ্ছা করলে এ কাজটা করতে পারতেন। এটি তো মালিকদের পকেট থেকে দেয়া হয় না। সরকার দেবে, এটিও যদি শ্রমিকদের কাছে পৌছে দিতে সহায়তা না করে তাহলে খুবই অমানবিক হবে। মালিকরা ঝামেলা এড়ানোর জন্য এ কাজ থেকে বিরত থেকেছে। আবার তাদের অনিচ্ছার কারণেও এমন হতে পারে। তবে এ ধরনের সুবিধা আদায় করে নেয়ার জন্য শ্রমিকদেরও সচেতন হতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার সচেতন হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, অল্প খরচে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে সরাসরি সুবিধাভোগীদের হাতে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার এ প্রকল্প হাতে নেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




