দৈনিক সংবাদ/২৫-০৮-১২
কুষ্টিয়ার চলমান রাজনীতি
দৌলতপুরে আওয়ামী লীগ চলছে দুই কমিটি দিয়ে
জাফর আহমদ কুষ্টিয়া থেকে ফিরে
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ চলছে দুই কমিটি দিয়ে। একটি হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ অনুমোদিত সদ্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটি। অন্যটি সাবেক কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে। আহ্বায়ক কমিটি কোন ইউনিয়নে কমিটি করলে সেখানে সাবেক সভাপতির নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে আরেকটি কমিটি। দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ফিলিপ নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মো. শামসুল আলম 'সংবাদ'কে বলেন, বোঝা যাচ্ছে না একই থানায় দুই কমিটি কিভাবে বৈধ হতে পারে। একদিকে জেলা কমিটি থেকে আহ্বায়ক কমিটি কাজ করছে, অন্যদিকে আগের কমিটির সভাপতিও নিজেকে বৈধ বলে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উনি কী কাজের পরিধি সম্পর্কে ভুলে গেছেন। এভাবে চলতে থাকলে তো সংগঠনের ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, সাবেক সভাপতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি না হওয়ার পরও নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এ ধরনের কাজ করছেন। অথচ তিনি সংগঠনের ভিশন বাস্তবায়নে এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে পারতেন।
নানা কারণে দেশের পশ্চিম সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা দৌলতপুর পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বিরোধিতাকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান এখানকার এমপি ছিলেন। এ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলীসহ জাসদ নেতা ও অন্য অনেক রাজনৈতিক হত্যাকা- সংঘটিত হয়।
উপজেলার চিলমারী, বাজুমারা ও আল্লার দর্গা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনে বর্তমান এমপি সরকার দলীয়। এ নির্বাচনী এলাকায় ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছেন পালাক্রমে বিএনপি বা জাতীয় পার্টি। প্রায় তিন যুগ পর আওয়ামী লীগের তৎকালীন উপজেলা সভাপতি আফাজ উদ্দিনের মাধ্যমে এ আসনটি ফিরে পায়। কিন্তু তারপর থেকে আফাজ উদ্দিন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় এমপির ছেলে আরিফের নামে হাট, ঘাট দখল ও কমিশন বাণিজ্যসহ নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে জাতীয় কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদপত্রে তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর আওয়ামী লীগ নড়েচড়ে বসে। একই সঙ্গে উপজেলা কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জেলা কমিটি পুরাতন উপজেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর আলী 'সংবাদ'কে বলেন, দৌলতপুর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার মেয়াদ শেষে হওয়ার প্রেক্ষাপটে কর্মতৎপরতাহীন পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সরওয়ারজাহান বাদশাহকে। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন ও রেজাউল চৌধুরীকে। খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
এক উপজেলায় দুই কমিটি কাজ করছে, উভয়েই নিজেদের বৈধ বলে দাবি করছে_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের একমাত্র কমিটি আছে এবং তা হলো আহ্বায়ক কমিটি। কেউ আওয়ামী লীগ করলে এ কমিটির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করার কারণে ইতোমধ্যে সাবেক সভাপতি আফাজউদ্দিনকে কারণদর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সরওয়ারজাহান বাদশাহ 'সংবাদ'কে বলেন, আহ্বায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর দলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সব ইউনিয়নে আহ্বায়ক ও বেশ কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়েছে। শীঘ্রই আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ভিশন-২১ বাস্তবায়নে যোগ্য কমিটি গঠন করবো।
ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য হওয়ার পরও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আফাজউদ্দিন 'সংবাদ'কে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমাকে মেইল করে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছেন। সেই মোতাবেক কাজ করছি। তিনি বলেন, জেলা কমিটি অন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। জেলার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা আমাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




