somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিব খেরা- তুমিও জিতবে-০৯ (তাইপকাড়ক -স্রোত)

০৮ ই মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বোত্তম দানঃ
সমস্ত জীবজন্তুর মধ্যে শারীরিকভাবে মানুষই সবচাইতে অসহায়।
মানুষ পাখির মতো আকাশে উড়তে পারে না;
একটি ছোট কীটও তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে,
নেকড়ের মতো দৌড়াতে পারে না,
কুমীরের মতো সাঁতার কাটতে জানে না,
বানরের মতো গাছে চড়তে পারে না,
বেড়ালের মতো চোখের দৃষ্টি নেই।
বুনোবেড়ালের মত থাবা এবং দাঁত নেই।
শারীরিক দিক দিয়ে খুবই অসহায় এব অরক্ষিত,কিন্তু প্রকৃতি যথেষ্ট বিবেচক এবং দয়াশীল বলে মানুষকে দিয়েছেন চিন্তা করার ক্ষমতা ।
তাই সে নিজেই তার পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারে। অন্য জীবজন্তুদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। দুঃখের বিষয় খুব কম লোকই প্রকৃতির এই মহৎ দান,চিন্তার ক্ষমতা সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে থাকে।


অসফল মানুষেরা সাধারণত দু’রকমের : যারা চিন্তা না করে কাজ করে অসফল হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যারা চিন্তা করে কিন্তু কখনো কোন কাজ করেনি। জীবনের পথে চলতে গিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতাকে ব্যবহার না করা, লক্ষ্যস্থির না করে গুলি ছোড়ার মত অর্থহীন।

জীবন একটি ‘কাফেটেরিয়া’র মতো। একটি ট্রে হাতে নিয়ে খাবার পছন্দ করে নিন তারপর দাম মিটিয়ে দিন। যদি আপনি খাবারের দাম দিতে প্রস্তুত থাকেন, আপনি যে কোন খাবারই নিতে পারেন। “কাফেটরিয়া” যদি আপনি অপেক্ষা করেন যে ওয়েটার এসে আপনাকে খাবার দিয়ে যাবে, আপনি অপেক্ষাই করবেন, খাবার পাবেন না। জীবনও এই রকম, আপনি পছন্দ করুন এবং দাম মিটিয়ে আপনার প্রাপ্য জিনিস নিয়ে নিন।

জীবনে পছন্দ করতে হয় এবং আপোসও করতে হয়ঃ
উপরের কথাটিতে পরস্পর-বিরোধিতা আছে। জীবনে যদি আপনি পছন্দমত পথ বেছে নেওয়ার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবকাশ থাকে তাহলে সমঝোতা করার প্রশ্ন কোথায়? এখানে স্মরন রাখা দরকার পছন্দ বা নির্বাচন করতেও আপস করতে হয়। বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা যাক।

জীবন কিভাবে পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়া যায়ঃ
যখন আমরা বেশী খাই,তখন আমরা জানি আমরা মোটা হবই। যখন বেশি মদ খাই তখন নিশ্চিত জানি পরিদিন সকালে মাথা ধরবেই। যখন মদ্যপান করে গাড়ি চালাই,তখন আমরা বেছে নিই যে দুর্ঘটনায় হয় নিজে মারা যাব কিংবা কাউকে চাপা দিয়ে মারব। যখন অপরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি তখন জানি যে সেও সুযোগ পেলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে। যখন আমরা অন্য মানুষের তোয়াক্কা করি না, তখন আমরা বুঝেই নিই যে তারাও আমাদের তোয়াক্কা করবে না।

কোন বিশেষ ধরনের জীবন বেছে বা পছন্দ করে নেওয়ার কিছু ফলাফল আছে। স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়া যায়, কিন্তু একবার বেছে নেওয়ার পর যে কারণে বেছে নিয়েছি সেই কারণগুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে। নিজ নিজ জীবনযাত্রা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সমান সুযোগ আছে, কিন্তু আমাদের নির্বাচিত জীবনযাত্রা অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা এক অন্যের থেকে ভিন্ন হয়ে পড়ি। জীবন কুমোরের মতো, মাটি থেকে অনেক আকারের হাঁড়ি, কলসী, পাত্র তৈরি করতে পারা যায়। একইভাবে আমরা যেভাবে চাই সেভাবেই জীবন গড়ে তুলতে পারি। কিন্তু বিভিন্ন পাত্র তৈরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনে কৌশলের প্রয়োজন।


জীবনে আপস করতে হয় কেনঃ

জীবন কেবল আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড় নয়, জীবনের অনেক যন্ত্রণা ও হতাশা আছে। অনেক অচিন্তনীয় ঘটনা ঘটে। অনেক সময় সববিষয় ওলটপালট হয়ে যায়। ভালো লোকেরাও অত্যন্ত কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়েন। কোন কোন ঘটনা মানুষের ক্ষমতার বাইরে, যেমন শারীরিক অক্ষমতা কিংবা জন্মগত ক্রটি। আমরা আমাদের পিতামাতা নির্বাচন করতে পারি না কিংবা জন্মের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। সেই ক্ষেত্রে যদি কোনও দুর্ভাগ্যের কারন ঘটে তবে তা দুঃখজনক নিশ্চয়ই। কিন্তু তার জন্য কি আমরা কেবল আক্ষেপ করব, না যা আছে তাই নিয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করব ? এই সিদ্ধান্তই নিতে হবে।

একটি পরিষ্কার দিনে লেকের জলে শত শত নৌকা বিভিন্ন দিকে ঘুরে বেড়ায়। যদিও বাতাস একদিকেই বয় তবুও পালতোলা নৌকাগুলি ভিন্ন ভিন্ন দিকে যাতায়াত করে। কিভাবে করে? এটা নির্ভর করে কিভাবে তাদের পালগুলি লাগোনো হয়েছে তার উপর। এবং যিনি নৌকা চালান তিনি পালগুলিকে নির্দিষ্ট দিকে যাবার জন্য সেইভাবে ঘুরিয়ে ধরেন। এই অবস্থা আমাদের জীবনের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা বাতাসের গতিপথ বদলাতে পারি না কিন্তু আমরা জীবনের পালকে কিভাবে লাগাব যাতে বাতাসের গতির সুবিধা নিতে পারি , তা আমরা নির্ধারণ করতে পারি।

আমরা পছন্দমত পারিপার্শ্বিক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারি না, কিন্তু আমাদের মনোভাবকে আমাদের পছন্দমত কাজের উপযোগী করে নিতে পারি । সেই মনোভাব হবে সমস্ত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বিজয়ীর মনোভাব, পরাজিতের মনোভাব নয়। আমাদের মনোভাবই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে।

মেঘ ও রৌদ্র এই দুইয়ে মিলেই তৈরি হয় রামধনু। আমাদের জীবনও কোন ব্যতিক্রম নয়। সেখানেও আছে সুখ এবং দুঃখ,ভালো এব মন্দ,অন্ধকার এবং আলো । আমরা যদি প্রতিকূলতাকে ‘উপযুক্ত’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অতিক্রম করতে পরি তাহলে আমাদের শক্তিবৃদ্ধি ঘটে । জীবনে যেসব ঘটনা ঘটে তাদের সবগুলিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। কিন্তু আমরা কিভাবে ঐ ঘটনার মোকাবিলা করব, সেই পদ্ধতিটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি । রিচার্ড ব্লেসনীডেন ১৯০৪ সালে সেন্টলুই বিশ্বমেলায় ভারতের চা কে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি চা খাওয়াতে গিয়ে দেখলেন যে গরম বলে কেউ বিশেষ চায়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। বরং অন্য ঠান্ডা পানীয়গুলি বেশ জাকিঁয়ে ব্যবসা করছে। তখন তিনি ঠিক করলেন যে চাকেও ঠান্ডা পানীয়রূপে বিক্রি করা যায়। তিনি ঐভাবে চা বিক্রি শুরু করলেন এবং লোকে তা পছন্দ করল। এইভাবে পৃথিবীতে ঠান্ডা চা পানীয় হিসাবে প্রথম প্রচলিত হল।

জীবনে যখন কোন বিপর্যয় ঘটে তখন আমরা হয় দায়িত্বশীলভাবে কিংবা ক্ষোভের সঙ্গে তার মোকাবিলা করতে পারি। ওক বৃক্ষের ফলের যেমন কোন বেছে নেওয়ার শক্তি নেই, মানুষ কিন্তু সেরকম নয়। ওক বৃক্ষের বীজ ঠিক করতেপারে না সে দৈত্যাকার ওক গাছ হবে না কাঠবিড়ালির খাদ্য হবে। এ সম্পর্কে বীজ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানুষের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। প্রকৃতি যদি আমাদের হাতে একটি পাতিলেবু দেয় তাহলে আমরা বেছে নিতে পারি, প্রকৃতির কৃপণতায় হা হুতাশ করব, না পাতিলেবুটাকে লেমোনেড তৈরিতে ব্যবহার করব।

(চলবে বোধ হয়!)
স্রোত

শিব খেরা- তুমিও জিতবে-৮
Click This Link
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×