somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি-১

১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রামে পৌঁছেই জানতে চাইলাম নাইখ্যংছড়ি বিডিআর রিজিওনের দায়িত্বে কে আছে? আমার অভিযান শুরু। সময় নেই। ফোন করলাম চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর জিওসি অফিসে আমার সোর্সকে। জানালো..লে: কর্নেল আওয়াল। নামটা আমার বেশ চেনা চেনা লাগছে। কোথায় যেন শুনেছি। স্মৃতি হাতরাতে থাকলাম। স্মৃতি হাতরালে নানা জনের নানা কিছু হয়। আমার হাত চলে যায় মাথার চুলে। আমি চুল টানতে টানতে স্মৃতিকে টেনে বের করলাম। হ্যা। একজন আওয়াল কে আমি চিনতাম। তার নামের শেষে বীরপ্রতিক আছে। সেই না তো! আবার ফোন করলাম সোর্সকে। না তিনি সিটে নেই। যাক যেই হোক আমি নাইখ্যংছড়ি গিয়েই বের করবো। বিডিআরের সাথেই আমার কাজ। আমি যে আওয়ালকে চিনতাম তিনি মহালছড়িতে ছিলেন। মহালছড়ি সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন।
:::::::::::::::
সে বার আমার অ্যাসাইনমেন্ট খাগড়াছড়িতে। দূরন্ত এসাইনমেন্ট। পাহাড়িদের ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে বাঙালীরা। তাই নিয়ে বেশ উত্তেজনা। যুগান্তরে আমি তখন। আমাকে ইনভেস্টটিকেটিভ রিপোর্ট করার জন্য পাঠানো হলো। আমি সবুজ পাহাড়ের সোদা গন্ধ গায়ে মেখে লক্কর ঝক্কর মার্কা বাসে চড়ে যখন খাগড়াছড়ি পৌছালাম তখন বিকেল। প্রেসক্লাবের ছোট অতিথি ঘরে আমি আমার ব্যাগ রেখে একটি মোটর সাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম। সঙ্গে আযম ভাই। যুগান্তরের করসপডেন্ট। প্রথমেই যেতে মহালছড়ি। গেলাম সেখানে। কথা বললাম লোকজনের সঙ্গে। নানা জনের নানা মত থেকে আসল কাহিনী বের করার চেষ্টা। কিছু ক্লু পেলাম। এই ক্লু নিযেই সেনাবাহিনীর বয়ান নিতে হবে। আমি গেলাম সেনা দফতরে। সেখানে গিয়ে জানলাম সেখানকার মুল কর্তা খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্টে গেছে। আজ রাতে আর ফিরবে না। ফিরবে কাল বিকালে। অনেক মিটিং সিটিং আছে।
রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমরা আবার মোটর সাইকেল চালু করলাম। অনেকটা পথ যেতে হবে। বেশী সমস্যা হলে পথে কোন বাড়িতে থেকে যাবো। তাই হলো। কুয়াশা আর রাতের ভয়ংকর নিস্তব্দতা আমাদের সামনে এগুতে দিলো না। আমরা একটা বাড়িতে আম্রয় নিলাম। আশ্চার্য এই বাড়ির কাউকে আমি বা আযম ভাই... কেউই চিনি না। পাহাড়ি ভদ্রলোক যখন জানলেন আমরা সাংবাদিক। কি যে আদর করে আমাদের থাকতে দিলেন। একটি স্কুলের শিক্ষক তিনি। মনের গহীন থেকে নিয়ে আসা কথাটি আমাদের সঙ্গে দোচোয়ানির গ্লাসে গ্লাস ঠুকরে বললেন....
: জানেন আমারো না সাংবাদিক হবার ইচ্ছে ছিল। সে ইচ্ছে আর পূরণ হবে না কোন দিন। চুরয়ে যাওয়া আলোয় আমাদের এটা সেটা এগিয়ে দিতে দিতে তার মেয়েটি হেসে বললো
: বাবা এমুনি। ঐ যে দেখেন বুক সেল্ফের তাকের উপরে রাখা অনেক অনেক খাতা... তার সব পৃষ্ঠা জুড়ে পাবেন নানা কাহিনী। প্রতিদিন এ তল্লাটে যা ঘটছে, তাই তিনি লিখে রাখছেন। শিক্ষক ভদ্রলোক এই কতায় একটু লজ্জা পেলেন।
আমি একটা খাতা নিয়ে এলাম।
১৯৮২.. ১৭ এপ্রিল
শান্তিবাহিনীর ছেলেরা এ এলাকায় ঘাটি গেড়েছে। পাশের সেনা চৌকি আক্রমন করবে। ১৩ জনের এ গ্রুপের সবচেয়ে ছোটটির বয়স ১৫। কথা প্রসঙ্গে আমাকে জানালো জুম্মল্যান্ড না হলে কোন লাভ নেই। জানালো এই জায়গায় থাকবে তাদের সরকার। তারাই ট্যাক্স আদায় করবে। মানুষের চিকিতসা করবে। পড়াবে। কলকারখানা গড়বে। .... কিন্তু ওদের আশা কি বাস্তবায়িত হবে কোনদিন। যতটুকু খবর জেনেছি এরশাদ সরকার ওদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। এই ব্যবস্থা কি সরকার মেনে নেবে।
১৯৮২.. ১৮ এপ্রিল
শান্তিবাহিনীর ছেলেরা আগ ভোররাতে সেনা চৌকিতে আক্রমন করেছে। বেশ ভারী গোলার শব্দ শুনেছি। জানা যাচ্ছেনা সেখানে কি হয়েচে। হেলিকপ্টার ওড়াওড়ি করছে। এখান থেকে ঐ ক্যাম্পের দূরত্ব তিন মাইল তো হবেই। খোঁজ লাগাতে হবে সেখানে কি হলো তা জানান জন্য। মানুষ খুব ভয়ে আছে।

আমি পড়ছি। আর অবাক হচ্ছি। এত সুন্দর করে প্রতিদিনের খোরো খাতা লেখা।
অতিথি ঘরে আমাদের থাকতে দেয়া হলো। কাল সকাল সকাল চলে যেতে হবে।
আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছি। ছোট্ট ক্যাসেট প্লেয়ারে গান ছেড়েছি মৃদু করে। ঝিঝি পোকার শব্দ। বুনো গাছ গুলো রাতে বিশেষ গন্ধ ছড়ায়। এখনো ছড়াচ্ছে। আমাকে ঘুমুতে হবে.... এ বাড়ির মালিক আমাদের সঙ্গে দোচোয়ানি টেনে ঘুমিয়ে গেছেন। আমিও ঘুমুবো।


: সাগর সাহেব কি ঘুমিয়ে গেছেন ?
দরজার কড়া নড়ছে........
(ক্রমশ)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৪:৪৩
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×