১.
আপনি আমাকে অদ্ভুতভাবে অবাক করেন। আপনাকে দেখলে মনে হয় সে আপনি না, আপনার ভাবনাগুলো আঁটোসাটো হয়ে আপনি হয়ে আছেন! এই যেমন আপনি একটা জঙ্গলের কথা বলেন, সে জঙ্গলের গাছগুলো কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়ায়। আমি কৌতূহলী হয়ে বললাম, তবে মানুষরা নিশ্চয় অক্সিজেন ছাড়ায়? আপনি বললেন, জঙ্গলে বসবাসকারী অন্যরা গাছগুলোকে মানুষ নামে চেনে।
২.
- do you love me?
- no i don't, kill yourself
ফোনে আমার সাথে শেষ এ কথাটুকু হয়েছিল তার। আমি ছিলাম প্রশ্নকর্তা। অথচ আজও আমি বেঁচে আছি সেই উত্তরটুকু নিয়ে। আমি প্রচন্ড পুড়ি তার এভাবে পাপ হয়ে হারিয়ে যাওয়া ভেবে। আইন আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তার শেষ উত্তরের লাইন ধরে। তার পোস্টমর্টেমে নাকি ওরা খুঁজে পেয়েছিলো শুধু আমার প্রতি তার প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ভালোবাসা, ছুরি বেয়ে হৃদপিণ্ডের রক্তক্ষরণ তখনো তরতাজা ছিলো, সেই বেয়ে পড়া রক্তে আমি মিশে ছিলাম শুধু। ফরেনসিক রিপোর্টে উজ্জ্বলভাবে আমিই শুধু। ওর আষ্টেপৃষ্ঠে আর কোন রহস্য নেই আমি ছাড়া। এই ছোট্ট রুমের সব দেয়াল শেষ হয়ে গেছে লিখতে লিখতে। আইন আমাকে ছাড়ছে না, ফাঁসির আদেশও দিচ্ছে না, এই রুমটাও পাল্টে দিচ্ছে না।
৩.
ঘর থেকে বের হয়ে রশিদ মিয়া আকাশের দিকে তাকালো। সে ঘামছে খুব, হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। মাঝে মাঝে সূর্য মেঘ থেকে বেরিয়ে এসে জানান দিচ্ছে আমি আছি! রশিদ মিয়া বের হয়ে গেল। সেদিন বিকেলে এক বাড়িতে একদল মানুষ জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশের তাদের ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। তাদের সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা লাশ রাখা। লাশের মা পাশে বসে কাঁদছে আর বলছে, ও তো মেয়ে ছিলো না, ওর কেন এমন সর্বনাশ হলো, ও আমার মানিকরে...
রশিদ মিয়া ভীড় ঠেলে দেখার চেষ্টা করছে তার দিকে কেউ তাকাচ্ছে কী না।
৪.
মিতু প্রতিদিন লুকানো চিঠিগুলো খুঁজে নিয়ে পড়ে। গত কিছুদিন ধরে চিঠিগুলো মিতু তার ঘরে পাচ্ছে। সায়ান অফিসে চলে গেলে মিতু ঘর উলটপালট করছে নতুন কোন চিঠি এসেছে কি না! নতুন চিঠি পেলেই মিতুর মন খুশিতে ভরে উঠে, সে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। চিঠির লেখা, কথামালা মিতুকে বিমোহিত করে তুলে। সায়ানকে সে এখনো ব্যাপারটা বলে নি। যদি পরে আর চিঠি না আসে এই ভয়ে। মিতু চিঠিগুলো তার সিক্রেট ড্রয়ারে রেখে দেয়। এখন পর্যন্ত ড্রয়ারে বাইশটা চিঠি জমা হয়েছে। তার মাঝে মাঝে মনে হয় চিঠিগুলো সায়ান লেখে। সায়ান বাসায় আসলে সে সায়ানের গতি প্রকৃতি লক্ষ করে কিন্তু সায়ানের মধ্যে তেমন কোন লক্ষণ খুঁজে পায় না মিতু। এছাড়াও সায়ানের হাতের লেখা এমন নয়। মিতু সায়ানের অনেকগুলো খাতা ডাইরী ঘেটেছে কিন্তু কোনকালেই সায়ানের এমন হাতের লেখার অস্তিত্ব মিতু খুঁজে পায় নি।
কয়েক বছর পরের ঘটনা। মিতু তার ফেইসবুক ওয়ালে দেখতে পায় সায়ান কিছু ছবি শেয়ার করেছে সেগুলোয় তাদের মিউচুয়াল এক ফ্রেন্ড লাইক দিয়েছে। সে ছবিগুলো দেখতে ক্লিক করে। এক ছবিতে সায়ান আর তার স্ত্রী একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছে, আরেক ছবিতে তারা কেক ছোড়াছুড়ি করছে। এরপরের ছবিটা দেখে মিতু বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়েই থাকে শুধু, যেন ছবিটা তাকে জাদু করে পেলেছে! এই ছবিতে একটা চিঠি। মিতু আজও পাগলের মত ঘর উলটপালট করছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:০১