somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্মা ! কিছু প্রশ্নের কিছু উত্তর। পার্ট ১

০৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১. আত্মা কি?

- আমরা জানি,

শরীর + আত্মা = জীব।

শরীর - আত্মা = জড় ।

অর্থাৎ কোনও শরীরের সাথে আত্মার যোগসূত্রের নামই জীবন। শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরা, অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ, স্নায়ুতন্ত্রসহ সবকিছুকেই সক্রিয় রাখার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন পরে সেটাই হল আত্মা।

আত্মাকে এনার্জি বা শক্তির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। তাপ শক্তি, আলোক শক্তি, বায়বীয় শক্তির মতো আত্মাও একধরনের আত্মিক শক্তি। আবার শক্তির ধ্বংস নেই, শক্তি শুধু এক রুপ থেকে অন্য রুপে রুপান্তরিত হতে পারে। তাই পৃথিবী ধ্বংস হলেও এই শক্তির ধ্বংস হবে না কখনোও।

২. আত্মা যদি জীবের শরীরে থেকেই থাকে তবে তা শরীরের কোথায় অবস্থান করে?

- আত্মা কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ নয় যে তা শরীরের কোন নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করবে। আত্মা হলও শক্তি, আর এই শক্তি জীবের পুরো শরীরেই বিদ্যমান।

৩.আত্মার কি নিজস্ব কোন শক্তি আছে?

- আত্মাতো নিজেই একপ্রকার শক্তি, এই শক্তি শুধুমাত্র জীবের শরীরেই নিজের ধর্মকে কাজে লাগাতে সক্ষম। জীবের শরীর ছাড়া আত্মা কিছুই না।

৪.অনেকের মতে জীবের মনই নাকি ওই জীবের আত্মা, কথাটি কতটুকু সত্য?

- মন বা হৃদয়কে আত্মার সাথে তুলনা করলে সেটা মস্তবড় ভুল হবে। কারন মন হল মস্তিস্কের স্নায়ুতন্ত্রের কাজ কর্মের ফল। তাই মনও জীবের শরীরেরই একটা অংশ, আত্মার নয়। আর জীব যেটা চিন্তা করে, যেটা মনে রাখে, যা স্বপ্নে দেখে সেসবকিছুই জীবের মস্তিস্ক থেকে আসে।

৫.একই দেহে কি একের অধিক আত্মার বাস করা সম্ভব?

- অনেক ভাল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আত্মাকে আসলে কখনও সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। পানি, বাতাস ইত্যাদির মতো আত্মাকেও কখনোও গোনা যায় না। আপনার শরীরে আত্মা আছে, কিন্তু কয়টা আত্মা আছে এই প্রশ্নটি বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

৬. আত্মার কি কোনো আকার আছে?

- আত্মা যেহেতু একপ্রকার শক্তি আর শক্তির কোন আকার থাকে না, তাই আত্মারও নির্দিষ্ট কোন আকার নেই।

৭. আত্মা কি স্বেচ্ছায় কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে?

- না, পারে না। আত্মার শুধু একটাই কাজ আর সেটা হল জীবের শরীরে নিজেকে ধারন করে রাখা। আত্মা জীবের শরীরে বিদ্যমান থাকলে জীবের শরীর ও আত্মা দুটোই সক্রিয় থাকে। তখন শরীরে কাজ করার মতো ক্ষমতা থাকলে শরীর সেই কাজটি সম্পন্ন করে।

৮. সকল জীবের আত্মাই কি এক?

- হ্যাঁ, সকল জীবের আত্মাই এক। এক দেহের আত্মার সাথে অন্য দেহের আত্মার কোন পার্থক্য থাকেনা। পার্থক্য থাকে জীবের শরীরে, জীবের মন মানসিকতায়। আর একারনেই পৃথিবীর প্রতিটি জীব একে অপরের থেকে আলাদা, কিন্তু আত্মা একই।

৯. আত্মা কি প্রত্যেক জীবের ভেতরেই অবস্থান করে?

- হ্যাঁ অবশ্যই, শরীর আর আত্মার যোগসূত্রের নামই জীব। আত্মা যদি শরীরে বিদ্যমান না থাকে তবে তাকে কোনভাবেই জীব বলা যাবেনা।

১০. আত্মা আর ভূত কি এক জিনিস?

- ভাবছিলাম ভূত সম্পর্কিত কোন আলোচনাই এই নোটে শেয়ার করবো না। কিন্তু প্রশ্ন যখন উঠেছে তখন বলছি-

ভূত আর আত্মা কখনই এক জিনিস নয়। ভূত হল ভয় আর আত্মা হল শক্তি। এখন আপনারাই বলেন শক্তি আর ভয় কি এক জিনিস হতে পারে কখনও।

ভুতকে উপলব্ধি করা যায় ভয়ের মাধ্যমে, কিন্তু আত্মাকে কখনই উপলব্ধি করা যায় না।

আবার ভুতকে শুধুমাত্র ৪টা উপায়ে দেখতেও পাওয়া যায়-

১. দৃষ্টিভ্রম হলে,

২. অতিরিক্ত ভয় পেলে,

৩. স্বপ্নে, এবং

৪. মিথ্যা কথা বলে (অনেকে কিছু না দেখলেও আমাদেরকে বলে বেড়ায় আমি এটা দেখছি, সেটা দেখছি, এজন্যই বললাম যে মিথ্যা বলেও ভূত দেখা সম্ভব)

কিন্তু আত্মাকে দেখা সম্ভব নয়। কারন আত্মা শক্তি, শক্তির কোন রূপ নেই, শক্তির কোন আকার নেই। তাই কোন শক্তিকে চোখ দিয়ে দেখতে চাওয়াটাই বোকামি।

এখানে আরেকটা উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে যে আমরা কেন ভূতকে দেখতে পারবো, কিন্তু আত্মাকে নয়।

ভূতকে দেখা সম্ভব কারন ভুত সম্পর্কে আপনার একটা ধারনা আছে। যে ভূত কোথায় থাকে, ভূতেরা কি করে, তারা দেখতে কেমন হয়, তারা কখন আপনাকে আক্রমন করে, আর এসব ধারনা আপনার হয়েছে টিভিতে হরর মুভি দেখে, রুপকথার কাহিনী শুনে, এবং কেউ মিথ্যা বলে আপনাকে ভয় দেখাতে চাইলে।

কিন্তু আত্মাকে দেখা সম্ভব নয়, কারন আত্মা সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই নাই, আপনি জানেন না আত্মা দেখতে কেমন, আত্মা কি মানুষ আকৃতির নাকি অন্য কোন আকৃতির হয়, আত্মা কি ভয়ানক নাকি কিউট হয়, আর এসব আরও ধারনা আপনার থাকলে ভূতের মতো আত্মাকেও আপনি উপরোক্ত ৪টা উপায়ে দেখতে পেতেন।

তাই ভূতের মতো আত্মাকে কখনোই উপলব্ধিও করা যায় না আবার দেখতেও পাওয়া যায় না।

১১. অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আত্মারা কষ্ট পায় কেন?

- মৃত্যু সাধারনত ২টি উপায়ে ঘটে থাকে।

এক, স্বাভাবিক মৃত্যু যেটা কাঙ্ক্ষিতভাবেই ঘটে থাকে।

দুই, অস্বাভাবিক মৃত্যু যেটা শরীরের ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত অথবা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই ঘটে থাকে।

এখানে স্বাভাবিক মৃত্যুতে শরীরের চাওয়া পাওয়া অনেকটাই পূর্ণ থাকে, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ফলে জীবের শরীরের তার পার্থিব জীবনের কিছু ইচ্ছা, কিছু স্বপ্ন, কিছু চাওয়া পাওয়া, প্রতিশোধ অপূর্ণ থেকে যায় যেটা আসলেই কষতদায়ক।

কিন্তু এর মানে এটা নয় যে আত্মা তার অপূর্ণ চাওয়া-পাওয়া কিংবা প্রতিশোধ পূরণের চেষ্টা করবে।

আর এর কারন হল আত্মার নিজস্ব কোন শক্তি নেই।

আত্মার চোখ নেই তাহলে দেখবে কিভাবে?

আত্মার কান নেই তাহলে আমাদের কথা শ্রবন করবে কিভাবে?

আত্মার চিন্তাশক্তি নেই তাহলে কিভাবে আত্মা অতীতের সব স্মৃতি মনে রাখবে, পূর্বজন্মের কথা মনে রাখবে?

আত্মা স্বেচ্ছায় কোনকিছুই করতে পারবে না। শরীর থেকে বের হয়ে আসার পর আত্মার একটাই কাজ থাকে আর সেটা হল নতুন কোন শরীরে নিজেকে ধারন করা।



আজ আপাতত এতটুকুই পার্ট ২ এ আরও অনেক প্রশ্নের সাথে অনেক উত্তর নিয়ে হাজির হব। ততোদিন সবাই ভাল থাকবেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×