somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড়দিনের শুভেচ্ছা-‌‌‌''শুভ বড়দিন''

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ শুভ বড়দিন। যিশুখ্রিষ্টের পবিত্র শুভ জন্মদিন।বড়দিন, ক্রিসমাস বা এক্সমাস যাই বলা হোক না কেন, ২৫ ডিসেম্বর মানেই অনেক অনেক অনন্দ আর ভালবাসা।আজকের এই শুভদিনে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী শান্তিপ্রিয় সকলকে বড়দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা। যিশুখ্রিষ্টের ত্যাগ ও মহিমায় সবার জীবন উজ্জ্বল হয়ে উঠুক, ত্যাগের শিক্ষা উজ্জীবিত করুক সকলকেই এই প্রত্যাশায়।



পবিত্র বড়দিন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব।এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে, শুধু মানুষকে পাপের বোঝা থেকে মুক্তি দিতে যীশুখ্রিষ্ট মহামানব হওয়া সত্বেও জন্ম নিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের বেথেলহেমের এক জীর্ণ গোশালায়।



পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠাই যিশু খ্রিস্টের জীবনের মহান ব্রত ছিল।যিশু অনাহারক্লিষ্ট দুঃখী, নির্যাতিত ও গরিব মানুষের জীবনে শান্তি স্থাপন ও বিশ্বময় শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

“যারা তোমাদের জুলুম করে তাদের ক্ষতি চেয়ো না বরং ভাল চেয়ো। যারা আনন্দ করে তাদের সঙ্গে আনন্দিত হও;...যারা কাঁদে তাদের সঙ্গে কাঁদ। তোমাদের একের প্রতি অন্যের মনভাব যেন একই রকম হয়।…”

এই হলো যিশুখ্রিষ্টের মহান বাণী-এই মহান ব্রতকে তিঁনি লালন করেছেন।মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিঁনি স্বর্গবাসী হন, তিঁনি সারাটা জীবন মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। উর্ধে তুলে ধরতে চেয়েছেন মানব আত্নার শ্রেষ্ঠত্বকে। মানুষে মানুষে বাঁধতে চেয়েছেন প্রেমের বাঁধন। যেখানেই মানুষ কষ্টে আছে, রোগে শোকে আছে, কুঃসংস্কারে পড়ে আছে, তিঁনি ছুটে গেছেন সেখানেই।যথাসাধ্য ভুলিয়ে দিয়েছেন মানুষের কষ্ট, রোগ শোক থেকে মুক্তি দিয়েছেন, মানুষের কষ্ট দেখে কেঁদে উঠেছে তাঁর মহৎ অন্তঃপ্রাণ। মানুষকে তিঁনি ভালোবাসতেন নিজের সন্তানের মত করে। মানুষকে দেখিয়েছেন সত্যিকারের মুক্তির পথ।



প্রতি বছর বড়দিন ফিরে আসে আমাদের মাঝে ভাতৃত্ব, ভালবাসা, সহমর্মিতা, উদারতা, কৃতজ্ঞতা-এই সব মানবিক গুণাবলির প্রকাশের মধ্যদিয়ে।সংযম, সহিষ্ণুতা, ত্যাগ ও ভালবাসার মধ্যদিয়েই আমরা স্মরণ করি এই মহান শ্রষ্টাকে।

সারা বিশ্বে, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ঐতিহ্যগত পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে বড়দিন উৎসব উদযাপনের রূপটিও ভিন্ন হয়ে থাকে।বড়দিনের উৎসব আয়োজনের চেহারা দেশে দেশে কালে কালে ভিন্নতা পায়।১৬ শতকে পর্তুগীজরাই অবিভক্ত বাংলায় খৃস্টধর্ম নিয়ে আসেন ।বাংলাদেশে প্রথম চার্চটি তৈরি হয় ১৫৯৯ সালে পুরাতন যশোরের কালিগঞ্জের কাছে সুন্দরবন এলাকায়। এই উপমহাদেশে কোলকাতার প্রতিষ্ঠাতা জোব চার্নকই প্রথম এই দিবসটি উদযাপন করেন। ১৬৬৮ সালে হিজলির পথে যাবার সময় সুতানুটি গ্রামে বড়দিন উৎসব পালনের জন্য তিনি যাত্রা বিরতি করেন। এই অঞ্চলে ইংরেজদের সেই প্রথম বড়দিন পালন।

বড়দিনের আগের দিনকে বলা হয় প্রাক বড়দিন।যদিও বড়দিনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর রাতেই কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বড়দিনের আমেজ শুরু হয়ে যায় ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে আর চলে নতুন বছরের শুরুর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।বড়দিনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হল ক্রিসমাস ট্রি সাজানো আর সবার প্রিয় শান্তা ক্লজের উপহার পাওয়া।



সবুজ ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে তোলা হয় বর্ণিল সজ্জায়, নানা অর্নামেন্ট তার সঙ্গে থাকে টকটকে লাল রিবনে তৈরি বো, অথবা সান্তা ক্লজের লাল স্টকিংস, অথবা সান্তার মাথার লাল টুপি। গাছের গায়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ছোট ছোট সুদৃশ্য ঘণ্টা, সান্তা ক্লজের এক জোড়া মোজা, সান্তার মাথার টুপি, হাতের দস্তানা, ক্যান্ডি কেইনসহ আরও কত কিছু। এ ছাড়া রাস্তাঘাট সাজানো হয় ছোট ছোট টুনি লাইট দিয়ে। টুনি লাইট দিয়ে বানানো হয় ক্রিসমাস ট্রি অথবা শান্তা ক্লজের আদল, এমন কি সান্তার সঙ্গে আসা রেইন ডিয়ার, ছোট ছোট এঞ্জেলও সাজানো হয়।

ক্রিসমাস ট্রি ছাড়া ক্রিসমাস উৎসবের সবচেয়ে বড় আইকন হচ্ছে শান্তা ক্লজ। শান্তা ক্লজ বলতে ছোট ছোট শিশুরা অজ্ঞান। তারা মনে করে, সান্তা ক্লজ বাচ্চাদের পরম বন্ধু, শান্তা ক্লজ খুব দয়ালু। ক্রিসমাসের সময় সুদূর উত্তর মেরু থেকে সান্তা বুড়ো তার পিঠে বাচ্চাদের জন্য উপহারের বোঝা নিয়ে আসে। প্রতি বাড়ি বাড়ি যায়, সে বাড়ির বাচ্চাটির জন্য উপহারটি রেখে দিয়ে চলে যায়।কোথায় যায় সান্তা? সান্তা কোথাও থামে না, পৃথিবীর যত শিশু আছে, তাদের প্রত্যেকের কথা সান্তা জানে। কাজেই সান্তাকে দৌড়ের উপর থাকতে হয়।



তবে ভাগ্য ভালো, সান্তা আসে শ্লেজ গাড়িতে চড়ে। নয়টি রেইন ডিয়ার চালায় সান্তার শ্লেজ। তাই ভারী শরীর নিয়ে সান্তাকে হাঁটতে হয় না। সান্তা এত মোটা কেন? এ প্রশ্ন যে কোনো বাচ্চাকে করা হলে খুব সহজে উত্তর দেয়,সবার বাড়িতে গিয়ে সান্তাকে 'দুধ আর কুকি' খেতেই হয়, তাই সান্তা অমন মোটা হয়ে গেছে। শিশু মনের আধুনিক উত্তর।

শুরুতে ক্রিসমাস শুধু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা পালন করত। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ক্রিসমাসের আনন্দ উদযাপনে শরিক হয়। সান্তা ক্লজও তার ভুবনজয়ী 'হো' হো' হো' হাসি ছড়িয়ে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত চষে বেড়ায়। ধর্ম-বর্ণ,জাতি-গোত্র নির্বিশেষে সব বাড়ির চিমনি বেয়ে রান্নাঘরে ঢুকে, ক্রিসমাস ট্রির নিচে বাড়ির বাচ্চাদের জন্য গিফট রেখে, তার জন্য সাজিয়ে রাখা দুধের গ্লাস এক চুমুকে সাবাড় করে দিয়েই আবার চিমনি দিয়ে বের হয়ে যায়। এভাবেই কোমলমতি শিশুদের মনে সান্তা উদারতা,মমতা, পরমতসহিষ্ণুতা, ভদ্রতা, অসাম্প্রদায়িকতা, সবাইকে ভালোবাসার মন্ত্রবীজ দিয়ে যায়।

ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এই মহামন্ত্রকে সামনে রেখে সকলকে আবারও বড়দিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা। প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমাদের শিক্ষা দেয় মানবতার আর মূল্যবোধের। প্রতিটি ধর্মই আমাদের প্রকৃ্ত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষা প্রদান করে। জয় হোক বিশ্ব মানবতার, জয় হোক বিশ্ব ভাতৃত্বের।
:) শুভ বড়দিন :)

তথ্য সূত্র: বড়দিন-উইকিপিডিয়া
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×