রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ওবায়দুল হক (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। রবিবার রাত দেড়টার দিকে দনিয়ার ৫৭৬ নম্বর বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানায়, নিহতের স্ত্রী রেহানা বেগম ও তার প্রেমিক লাভলু পরিকল্পিতভাবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পুলিশ রাতেই রেহানাকে আটক করে।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আবুল কাশেম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসা থেকে ওবায়দুলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। লাশের মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের জখম পাওয়া যায়। ওই সময় স্ত্রীর বক্তব্যে নানা অসঙ্গতি পাওয়ায় তাকে আটক করা হয়। স্ত্রী ও তার প্রেমিক লাভলু ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। লাভলু ঘটনার পর থেকে পলাতক। এদিকে রেহানা জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে গতকাল থানায় এ প্রতিবেদককে জানান, রাত ১১টার দিকে স্বামীর বন্ধু লাভলু তাদের এক রুমের বাসায় যান। এরপর তার স্বামীর সঙ্গে লাভলু ঘরের মেঝে বসে গল্প করছিলেন। এক পর্যায়ে রেহানা চার বছরের মেয়ে নিপাকে নিয়ে খাটে ঘুমিয়ে পড়েন। দেড়টার দিকে হঠাৎ 'ধুপ-ধাপ' শব্দ শুনে জেগে উঠে দেখতে পান খাটের নিচে তার স্বামী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন এবং লাভলু একটি দা হাতে ঘরের বাইরে বের হয়ে যাচ্ছেন। তিনি চিৎকার দিয়ে পাশের ভাড়াটিয়াকে ডাকেন। তবে কী কারণে লাভলু হত্যা করবেন তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি রেহানা। এক প্রশ্নের উত্তরে রেহানা বলেন, স্বামীর মাধ্যমে দুই বছর আগে লাভলুর সঙ্গে তার পরিচয়। ওবায়দুল ও লাভলু উভয়েই দনিয়ায় রিকশা চালাতেন। মাঝে-মধ্যে স্বামীর সঙ্গে লাভলু তাদের বাসায় যেতেন। একবার গ্রামে তার বাবার বাড়িও লাভলু গিয়েছিলেন। তবে লাভলুর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। ১৩ বছর আগে তাদের বিয়ে হয় এবং দুটি কন্যাসন্তান আছে। বড় মেয়ে মুন্দিরাকে (৯) গ্রামে রাখা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার ঘোষগাতি গ্রামে। লাভলুর বাড়ি বগুড়ায়। গতকাল দুপুরে দনিয়া এ কে স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুবপাশে গিয়ে দেখা যায়, তিন কক্ষের হলুদ রঙের পুরনো একটি বাড়ির পশ্চিমের কক্ষটিতে থাকতেন তারা। ঘরে খাটের নিচে দক্ষিণপাশে বেশকিছু জায়গাজুড়ে জমাটবদ্ধ রক্ত। ঘরের অন্য সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক। কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন সেখানে ছিল না। সংলগ্ন পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া অমল চন্দ্র সেন জানান, ঘটনার সময় তিনি তার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি আগে-পরে কিছুই টের পাননি। নিহতের স্ত্রী তার দরজায় শব্দ করে তাকে ডাকাডাকির পর উঠে দেখেন বাইরের প্রধান গেট খোলা, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন ওবায়দুল। তবে রাতে ঘুমানোর সময় তিনি নিহতের ঘরে লাভলুর গলার আওয়াজ শুনেছিলেন বলে জানান।
ঘরের ভেতরে এ রকম একটি ঘটনা অথচ স্ত্রী কেন আগে চিৎকার করলেন না তা রহস্যজনক। যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অবনী শঙ্কর কর জানান, রেহানাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও তার কথা থেকে মনে হচ্ছে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে রেহানা ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। লাভলুকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বি:দ্র: খবরটি বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্রিকা থেকে নেওয়া ০৪-০১-২০১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





