"ভাই একটু পা রাখার জায়গা হবে?" বাংলা'র বাস, ট্রেইন যাত্রীদের মধ্যে প্রচলিত হিউমার। কিছুদিন আগেও সবাই বলত, "ভাই একটা সিট পাওয়া যাবে?" এখন সেতা চিন্তা করাও দুরূহ এবং অসম্ভব। আখন শুধুমাত্র পা রাখার জায়গা পাওয়াটাই ভাজ্ঞের ব্যাপার। কিছুদিন পরে হয়তো সবাই বলবে, "ভাই, আপনার প্যান্টের বেল্টে তিন আঙ্গুল পরিমাণ জায়গা হবে? আপনার প্যান্টের বেল্টটা ধরতে পারলেই হবে। বাকি রাস্তাটা শূন্যপথে ঝুলতে ঝুলতে চলে যাব।"
ভাই সব, সাবধান হয়ে যান। বাসযাত্রা বা ট্রেইনযাত্রা যে কোন সময় মহাযাত্রা হয়ে যেতে পারে। যে কোন যাত্রায় বেরুবার আগে একটা উইল করার সদুপদেশ পেতেই পারেন। বাস এর মারাত্মক হাতল, তার পেটকাটা দরজা, তার চলা এবং থামার বিচিত্র রীতিনীতি দেখে সহজেই বোঝা যায়, মৃত্যুর উপর মানুশের হাত নেই আর এই সব বাস এর উপর ভগবানেরও হাত নেই। অসুবিধা নেই। এই সব বাসে না চড়লেই যে আমরা নাতি-নাতনি বেষ্টিত হয়ে সত্তর বছর পেরিয়ে বেঁচে থাকব, তার গ্যারান্টি কে দেবে? আর বাস যে হঠাৎ খোশ-মেজাজে ফুটপাতে চড়তে চাইবে না, ওন্য কোন বাসের সাথে বক্সিং করতে চাইবে না বা ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিতে চাইবে না সেই ভরসাই বা কে দিতে পারে?
শেক্সপিয়র এর ফলস্টাফ ভুলে গেছে কতদিন নিজের পা সে দেখতে পারে না। মাঝখানের ভুঁরিটিই অন্তরাল হয়ে দাঁরিয়েছে। আমাদের মধ্যে অর্ধেক জনগনও হয়তো জানেন না যে বাসের ভেতরটা ঠিক কেমন হয়। 'অন্ধের হস্তিদর্শন' এর মত বাসের হাতল, দরজা, জানালা, ফুটবোর্ড আর দুলন্ত ও ঘর্মাক্ত পিণ্ডাকার কতকগুলি মানুষই বাস-ট্রাম এর প্রকৃ্ত রূপ। আজ যদি কোন যাদুমন্ত্রের বলে তাঁদের জন্য বাংলায় সারি সারি ডি-ল্যুক্স বাস আসে, তাঁরা প্রত্যেকে একটা বসার জায়গা পান, গুতোগুতি, মারামারি, গালাগাল, পা মাড়ানো, অলৌকিক উপায়ে ঝুলে থাকা- এগুলো কিছুই যদি না ঘটে, তাঁরা কি তা সইতে পারবেন? হঠাৎ অভ্যাস বদলের ফলে আচমকা কেউ কেউ মারাও পাড়বেন কিনা, তাই বা কে বলতে পারে?
কিন্তু সে রকম কোন মাজিক ঘটবেও না। আমাদের দেশে এমনিতে যে ট্রাফিক জ্যাম তাতে নতুন বাস আনা মাজিসিয়ানের পক্ষেও সম্ভব হবে না। সুতরাং যারা বাস বা ট্যাক্সি করে অফিসে যেতে পারছেন না তাদের নিজের পদযুগলের ওপর নির্ভর করাই ভাল- বেশ এক্সারসাইজ হবে, ক্ষুদা বারবে। রাতে যাদের সহজে ঘুম হতে চায় না অর্থাৎ অনিদ্রা হয় তাদের সুনিদ্রা হবে, মন্দ কি? যাদের অফিস বাড়ি থেকে একটু দুরে তাদের জন্য তো আরো ভাল। ভবিষ্যতে ভ্রমণ প্রতি্যোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হবার সম্ভাবনা আছে।
কিন্তউ আশঙ্কা হচ্ছে, ভ্রমণ চর্চায় হয়তো সকলেই উৎসাহ বোধ করবেন না। চোখের সামনে চলন্ত গাড়ি দেখলেই চাপতে ইচ্ছে করবে। ঘোড়া দেখলেই খোঁড়া হওয়া এদেশের মানুষের সভাব। কিন্তু সবসময় এইসব বাসে সিট ট দূরের কথা পা রাখার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। এখন উপায়? অসুবিধা নেই। নতুন জায়গা আবিষ্কার করা হবে। বাসের নিচতলায় জায়গা নাহলে দোতলায় (এই দোতলা কোন দোতলা বাসের দোতলা না) উঠব। এই দোতলায় ওঠার জন্য অবশ্য সিঁড়ির ব্যাবস্থা থাকবে না। চড়া রোদে বা প্রবল বৃষ্টিতে এই খোলা দোতলা হয়তো খুব আরামও দেবে না। নিচু ওভার-ব্রীজের সংঘর্ষে অফিসে না গিয়ে ভবপারেও যাত্রা করতে পারেন। কিন্তু অফিসে তো যেতেই হবে। তাই পাটিগণিতের সেই তৈলাক্ত বাঁশের বানরের মত পিছলে পিছলে ছাদে ওঠা যেতেই পারে। তাতে আরো সুবিধা আছে, চমৎকার শারীরিক কসরত হয়। এরকম কয়েকদিন প্র্যাকটিস করতে করতে একদিন দেখবেন চোখের পলকেই আপনি কাঠবেড়ালীর মত বাসের ছাদে চড়তে পারবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




