somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউ: হুমায়ুন আহমেদ এর দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই

০৯ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“হুমায়ূন আহমেদ—নামটা একসময় মানেই ছিল একরকম জাদু। যে নামের সঙ্গে তর্ক মিশত না, সমালোচনা আসত না। বাংলাদেশের মানুষ—সে বই পড়ুক আর না পড়ুক—প্রায় সবার মুখে মুখে ঘুরত সেই নাম, ‘হুমায়ূন আহমেদ’।

তারপর একদিন সবকিছু বদলে গেল। ২০০৪ সাল। মানুষ ভাগ হয়ে গেল দুই দলে— একদল ভালোবাসল, আরেকদল অপছন্দ করল। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, ভালোবাসা—সব মিলিয়ে যেন এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। তাকে নিয়ে কথা বলা মানে, যেন এক অন্তহীন পথচলা। শেষ নেই, কোনো সিদ্ধান্তও নেই।

আমি ব্যক্তিগতভাবে লেখক হুমায়ূন আহমেদ-কে গভীর শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। ‘ব্যক্তি’ হুমায়ূন আহমেদকে ভালোবাসি কি না—সেটা এখানে বড় কথা নয়। কারণ আমি লিখছি লেখক হুমায়ূন আহমেদ-এর এক বই নিয়ে। বইটির নাম—
“দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই।”

প্রথমেই বইটি পড়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ জাগে — এটা আসলেই কি হুমায়ূন আহমেদের লেখা? যে ভাষা, যে বর্ণনা—কেমন যেন অচেনা, অস্বস্তিকর।

গল্পের মূল কাহিনি—একটা স্কুল পড়ুয়া মেয়ে, তার বাবার বন্ধুকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে ফেলে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ এবং তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন। বিয়ের দিনে শাওন নিজ হাতে সাজিয়ে দেন সেই মেয়েটিকে।

বইটা শেষ করতে করতে মনে হলো, এটা আসলেই কি হুমায়ূন আহমেদের লেখা? আমি ভীষণভাবে হতাশ হয়েছি। মনটা খারাপ হয়ে গেল—ঠিক যেমন হয়, যখন খুব প্রিয় কোনো লেখকের লেখা হঠাৎ চিনে উঠতে পারা যায় না।

রকমারির বইটির সারসংক্ষেপে লেখা ছিল…
ফ্ল্যাপে লেখা কথা
কানন বালা দেবীর বিখ্যাত পাণ- ‘যদি লাগে তো দিও না মন।’ মানব প্রজাতির একটি সমস্যা হলো, ভালো না লাগলেও তারা মন দিয়ে বসে থাকে। এ রকম একটি সমস্যা নিয়ে উপন্যাস লিখতে বসে লিখে ফেললাম, ‘দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই।’ এই প্রেমের উপন্যাস নাকি অপ্রেমের বুদবুদে পারিনি না। লেখকরাও সব সময় বুঝেশুনে লেখেন তা কিন্তু না।


বইটা পড়ে এমন একরকম বিরক্তি কাজ করল, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল। রাগ, হতাশা—সব মিলিয়ে যেন মনটা ঘোলাটে হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত কিছু না ভেবে রকমারিতে গিয়ে রিভিউটা লিখেই ফেললাম। তারিখটা ছিল ১৬ই জুন, ২০২৫। রেটিং দিয়েছিলাম ১।

" একটা ষোলো বছরের মেয়ে, তার বাবার বন্ধু—বয়স পঞ্চান্ন—তাকে চালাকি করে, কৌশলে বেকায়দায় ফেলে বিয়ে করে ফেলে। জানি না, হুমায়ূন আহমেদ এই বইটা লিখে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।ভালোবাসা? নাকি বিভ্রান্তি?"

রিভিউটা লেখার পর ভাবলাম, দেখি অন্যরা কী বলেছে। কিছু রিভিউ পড়ে আমি থমকে গেলাম। মনে হলো, আমি কি আসলেই ঠিক লিখেছি? নাকি কোথাও আমি ভুল বুঝেছি? তারপরও, কিছু রিভিউ হুবহু তুলি নি— মূল লেখার বিষয়বস্তু না বদলে, সামান্য সম্পাদনা করে এখানে তুলে ধরলাম।

1. রেটিং দিয়েছেন ৫, ২০২১ সালের রিভিউ।

"লিপি মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে, বয়স কম হলেও যেখান থেকে বুদ্ধি আছে সেখানে খুব কিছু জায়গাতে খুব ভালো মতো এই বুদ্ধি খরচ করে, কিন্তু আহসান সাহেবকে নিয়ে কিছু কিছু জায়গাতে বোকামি করলেও তার বয়সের ক্ষেত্রে এই বোকামি করাটা স্বাভাবিক।"

2. রেটিং দিয়েছেন ৫, ২০১৯ সালের রিভিউ।

আমার কাছে বইটি ভালো লেগেছে। বইয়ের মূল চরিত্র, গল্পের নায়িকার সাথে তার ভালোবাসার মানুষের বয়সের বিশাল ফারাক। কিন্তু মেয়েটা এসব কিছুই মানেনা। তাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে। নানা রকম গোপনীয়তা করে। অভিমান করে।এই বইটি পড়ার পর কিছুদিন আমারও অমন বেশি বয়সের মানুষ ভালো লাগতে শুরু করেছিলো। সত্যিই হুমায়ূন স্যারের গল্প মানুষকে প্রভাবিত করে!

3. রেটিং দিয়েছেন ৫, ২০২৪ সালের কমেন্ট।

সাবলীল ভাষা ছাড়াও মাঝে মাঝে কিছু কিছু টুইস্ট থাকা প্রয়োজন। বইটিতে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়েছে। অসাধারণ ভালো লেগেছে। উপন্যাসে সবসময় সাবলীল ভাষা আর দুঃখের কাহিনি থাকবে এমনটা নয়। হাস্যরসাত্মক এবং সাবলীল ভাষার কিছুটা বাইরে থেকেও বইকে নন্দনিক রূপ দেওয়া যায়। তারই উদাহরণ এই বইটি। অসাধারণ ভালো লেগেছে

মূল বই থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলাম। দেখে বলবেন, এটা আসলেই তার লেখা কিনা। যে অংশটা তুলেছি, সেটা হলো—লিপি আর আহসান সাহেবের বিয়ের দিন।"

"মজার কথা কী জানেন? দাওয়াত না করার পরেও হুমায়ূন স্যার এবং শাঁওন ম্যাডাম দুজনই এসেছিলেন। মনে হয় মোস্তফা ভাইয়ের কাছে শুনে এসেছেন।
আমাকে কে সাজিয়ে দিয়েছে বলুন তো?
শাঁওন ম্যাডাম।
সাজ শেষ হওয়ার পর আমাকে দেখে হুমায়ূন স্যার বললেন, এই মেয়েটো ট্রু নাগরীর হেলেনের চেয়েও রূপবতী।
বাসর রাতে আহসান আমাকে কী বলল শুনতে চান? সে বলল, আমি তব মালঞ্চের হব মালাকার। "



আমি শুধু মাত্র রিভিউ তুলে ধরলাম, পড়া না পড়াটা আপনাদের ব্যাপার
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:২৪
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×