somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘‘আমি আশরাফুল মাখলুকাত, নাম আমার গরু’’

১০ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গরু-ছাগলের রেশ থাকতে থাকতেই একটা গরু-কথা লিখতে চাচ্ছিলাম। মনির হাসান তো রীতিমত চোখরাঙানী {গত সকালের আল্টিমেটাম} দিয়ে ঢাকান্তর হলেন। কি কি যেন ভেবেছিলাম, তাড়াহুড়োয় সব গুবলেট পাকিয়ে গেছে। মাফ করবেন।
‘মনের মধ্যে বন, বনের মধ্যে ঘর, ঘরের চারপাশে ঘুরছে শ্বাপদ। আমি কেমন করে দেখবো সবুজ?’
জন্ম থেকেই ভেজ। খড়, ঘাস যা জোটে, তাই গিলি। সেদিন জাবর কাটতে কাটতে মনডা বড়ই উচাটন হইলো।
সকালে আমারে দেখিয়ে মালিক বড়ই আনন্দিত মুখে তার বউরে বলতেছিল-‘এই কোরবানীতে এইডারে বেশ ভালো দামে বিকোনো যাবে’।
মা’র কথা মনে পড়লো। প্রতিদিন দুধ দিছে- আমারে আর মালিকরে। শরীরডা খুব খারাপ থাকলেও লাঙ্গল টাইনা গেছে, ধান মাড়াইছে, মালিক যখনই যা চায়ছে। শপাং শপাং লাঠির বাড়িতে একটা কথাও কয়নি। গাড়ী ভরা ধান এবং আরও কত কি টাইনা আনছে মালিকের বাড়ী। দুধ খাইতে খাইতে মায়ের থির চোখগুলান দেইখা আমি উদাস হইছি কতদিন। একদিন মা’রে মালিক আরেক গ্রামে বেইচা দিয়া আসলো। ততদিনে আমারে কাজে নামানো হইছে।
মাটির মানুষের কত কথা জানছি সেসময়ে।
আজ আমারে ঢাকা নিয়া যাইবো। একবার মালিকের গলাতেই একটা গান শুনছিলাম-
‘ঢাকা শহর আইসা আমার, আশা পূরাইছে...’
আমার মনে ঢাকার রূপকথা ভাইসা উঠলো।
ঠাসাঠাসি কইরা ট্রাকে তোলা হইলো আমাগো বেশ কয়েকজনরে। ডিরাইভারের মাথার উপরে দেখলাম, মাথায় গামছা আর মাফলার প্যাচানো কয়েকজন বিড়ির ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে মনের সুখে গান ধরছে। আরো কয়েকজনরে দেখলাম ট্রাকের দুই পাশে পাছা ঝুলাইয়া বইছে।
ট্রাক ছাড়লো, আমরা যারা ট্রাকের একদম পিছনে মুখের পাশে মুখ লাগাইয়া দাড়াইয়া ছিলাম, ফেলে আসা পথ, মুখ সব দেখতে দেখতে চোখের কোনে পানি এলো। পরিচিত বাতাসের, ঘাসের, গাছের গন্ধ ফেলে আসতে আসতে শচীনের ‘বিরহ, বড় ভালো লাগে’ গানডা গাইতে ইচ্ছা করতেছে। {এই লাইনটা একজন সম্মানিত ব্লগারের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত}
আইজ সকালে আমাগো দারুণ খানা দিছে। আচ্ছা, শরৎ বাবুর মহেশ, ঘাস পাইতো না ক্যা?
পথে কত্ত রকম গাড়ী...সামনেরগুলারে তো আর দেখতে পারিনা, তাই যারা আমগো ওভারটেক কইরা যাচ্ছে, জানালার ফাক দিয়া, পিছন দিয়া কত রংবাহারি দৃষ্টিতে আমগো দেখতে দেখতে যায়। একবার এক বাচ্চার বিস্ময়মাখা চেহারা দেইখা টাসকি খাইলাম। আমগো দেইখা হেতের চোখ ছলছলে। বুঝলাম না, আমাগো কার চোখে এখন্ও পানি বইতাছে।
গোধূলীর মুখে শহরে ঢুকতেছি। শহরের কত্ত কথা শুনছি। এইখানে নাকি যে যত বেশি মিথ্যুক, বেশি ধূর্ত, সে তত বেশি সম্মানিত, বেশি বড়লোক, আর বড় বেশি ভদ্দরনোক এবং চালাক। বোকা মানুষগো এইখানে আমাগো নামেই ডাকা হয়।
ট্রাক থেইকা নাইমা ঝলমইল্যা আলো আর হাজার কিসিমের মানুষের ভিতর, কখন যে আমরা আলাদা হইয়া গেছি, টের পাইনি।
একটা বিশাল বিল্ডিং-এর {এ্যাপার্টমেন্ট হাউজ না কি কয় য্যান} নিচে নিজেরে আবিষ্কার করলাম আরো ৫/৬ জন স্বজাতির সাথে। শহুরে মানুষের সোশ্যাল স্ট্যাটাসের সাথে, আমাগো ভাইটাল স্ট্যাট-এর নাকি একটা দারুণ ব্যাপার আছে।
সকালে প্রার্থনা শেষে আমাগো স্বর্গে পাঠানো হইবো। রাতভর মাথার ভিত্রে খালি দার্শনিক চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাইলো।
সারা পৃথিবীতে মানুষের পশুত্ব আর বিকৃতির কত শত কাব্যকথা, আহা..
উৎসর্গের মর্মকথা নিয়াও উল্টাপাল্টা ভাবনা খেললো।
অলরেডি ৪জন আমার পাশে ছটফট করতাছে। একটারে দেখলাম কাটা গলা নিয়াও জোরপ্রয়াসে দাড়াইবার চেষ্টা করতাছে। একজন মানুষ তাহার গলায় পুনর্বার ছুরি চালাইলো। স্বজাতিগণের রক্তস্রোত দেইখা, ঈমানে কই, আমার মাঝে একটুও মায়া বা বিপ্লব জাগলো না।
এইবার আমার পালা। শেষবারের মত মা’র মুখটা আমার সামনে ভেসে উঠলো। আমগো তো আর ধর্ম টর্ম নাই, তাই কোন ঈশ্বর বা মহান সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করতে পারলাম না।
শুধু মনে হইলো, আমগো দিয়া কাম করাও, দুধ খাও, মাংস খাও, গোবর দিয়া সার বানাও, চামড়া দিয়া ডুগডুগি বানাও, বেচো যা ইচ্ছে তাই করো। ধর্ম রক্ষার্থে বলি দাও, নো আপত্তি। তয় তোমরা নাকি মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত... তাই কামটা আরেকটু মানবিক কায়দায় করলে হয় না? দয়া কইরা কোন সিস্টেম দ্যাহেন না...
আমার কথা: জবাই দেখতে হয়না, তাজা রক্ত দেখতে হয়না- দারুণ সুবাসে সোজা পেটে চালান। গরুর মাংস আমার অতি পছন্দের খাদ্য।
একটা অপারেশনের পর যদ্ওি আর সেভাবে খাওয়া হয়না, তবুও..
কারোর ধর্মপালনের ধরন নিয়ে আমার আপত্তি নেই। বলছিলাম এই জবাই-উৎসবের ব্যাপারটা একটু সহনীয় মাত্রায় পালন করা যায় না? এই যেমন কোন শিশুর সামনে নয়, একটি পশুর সামনে আরেকটি পশুকে নয়, যেখানে সেখানে নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনাদের কোন সাজেশনস?
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×