
আলহামদুলিল্লাহ!
ডাকসু এবং জাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভূমিধ্বস বিজয় এসেছে আল্লাহর তরফ থেকে। এই বিজয় শিবির এবং বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। জেন – জি এই বার্তা দেশবাসীকে দিতে পেরেছে যে চাঁদাবাজি, দখলদারি, খু_নো*খু-নী, ধর্ষন, মামলাবাজি, পেশি শক্তি প্রদর্শনভিত্তিক রাজনীতির দিন শেষ! তরুণরা সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব চায়, যারা দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করবে। ধারণা করছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল মোটামুটি এরকমই হবে।
এই অপ্রত্যাশিত ফলাফলের সুফল শিবির ভালই পাচ্ছে। কারণ, বিএনপি’র বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে আওয়ামী ঘেষা টক শোজীবীরাও এখন অকপটে ছাত্র শিবিরের গুণ গান শুরু করেছে, তাদের ভাল বৈশিষ্টগুলো পুংখানুপুংখভাবে বিশ্লেষণ করে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে!
কিন্তু জামায়াতের ইসলামীর কি অবস্থা? তাদের গ্রহণযোগ্যতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে? এটা নিয়ে জামায়াতকে বড় ধরণের কর্ম পরিকল্পনা নিতে হবে।
৫ অগাস্টের পর খুব নিবিড়ভাবে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশ্লেষণ, আলোচনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। জামায়াতকে রাজনীতির মাঠ থেকে উচ্ছেদ করার একটা হাতিয়ার বিরোধীরা সব সময় ব্যবহার করেছে। সেটা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধ। এই প্রসংগে জামায়াতের ব্যাপারে যে আওয়ামী মিথ্যা বয়ান আছে, সেগুলো তথ্য প্রমাণ দিয়ে পিনাকী বা ইলিয়াস এর মত এক্টিভিস্ট/সাংবাদিকরা খন্ডন করেছেন। কিন্তু, এখনো অনেক বাংগু সুশীল সেই বয়ানগুলো দিয়ে জামায়াতকে ঘায়েল করতে চায়। এমন কি অনেক সাধারণ মানুষও ছোট বেলা থেকে মাথায় গেথে যাওয়া বয়ানগুলো নিয়ে প্রশ্ন করে। আমরাও ছোট বেলা থেকে জেনেছি, রাজাকারের দাড়ি টুপি থাকতে হয়। কিন্ত, এখন জানি সেটা সত্য না।
জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইসলামিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করে, তাই দেশের ৯০% মুসলমানের একটা বড় অংশের সমর্থন প্রয়োজন ভোটে জিতে পর্যাপ্ত আসন পেয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে। তাই নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে জামায়াতের নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন তারা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করেন।
ক) BCFCC বা অন্য কোন সুবিধাজনক জায়গায় একটা ৫ দিন ব্যাপী সম্মেলন করেন। এই সম্মেলনে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত প্রশ্ন আছে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সেগুলোর উত্তর দিন। আমি জানি এর আগেও বহুবার এ ব্যাপারে জামায়াত নেতৃত্ব কথা বলেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কিন্তু আরেকবার একটা জাতীয় পর্যায়ের সম্মেলন করে বিষয়টি পরিস্কার করুন এবং চুড়ান্ত ঘোষনা আপনাদের ওয়েবসাইটে লটকে দিন। জাতীয় দৈনিকগুলোতে ঘোষনা প্রকাশ করুন যাতে এটি বাকী জীবনের জন্য ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকে।
খ) এই সম্মেলনে কওমী/হেফাজতে ইসলাম, আহলে হাদিস/সালাফি, তাবলীগ এরকম সকল ঘরানার ওলামা/মুরুব্বীদের দাওয়াত দিন। মওদুদী সাহেবের যেসব লেখনি নিয়ে অন্যান্য ঘরানার আলেমদের আপত্তি আছে সেগুলো প্রকাশ্যে/লাইভ আলোচনা করুন এবং ঐক্যমত্যে পৌঁছান। প্রয়োজনে আপত্তির জায়গাগুলো বই থেকে বাদ দিন। রাসূল (সঃ) এর পরে যারা এসেছেন, তারা কেউ ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না, ভুল হতেই পারে, সেগুলো বাদ দিন। এই দেশে ইসলাম কায়েম করতে গেলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নাই, তাই বিভেদের জায়গাগুলো দূর করুন। আপনাদের দলীয় প্রোগ্রামগুলোতে শুধু মওদুদী সাহেবের বই না পড়ে অন্যান্য ওলামাদের বই পড়ার অভ্যাস শুরু করুন। আপনারা inclusive হন।
গ) চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, সরওয়ার কামাল আজিজীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, অন্যান্য ইসলামিক পার্টি এবং সর্বোপরি এনসিপি কে নিয়ে একটি নির্বাচনী ঐক্য জোট গড়ে তুলুন এবং জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যান।
ঘ) সম্মেলন থেকে অমুসলিম ভাই/বোনদে প্রতি এই বার্তা প্রদান করুন যে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় অমুসলিমদের সকল অধিকার সংরক্ষিত এবং তাদের নিরাপদ জীবন এর জন্য মুসলিম সমাজ এবং সরকার দায়বদ্ধ।
ঙ) নিম্ন কক্ষে PR পদ্ধতির কথা একেবারে ভুলে যান। কারণ, এর মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট কোন দলের সাথে লিয়াজো করে তাদের প্রার্থী ঢুকিয়ে দিবে এবং সংসদে অনেকগুলো আসন দখল করে ফেলবে। জগন্নাথ হলের ভোটের প্যাটার্ণ দেখে আশা করি আপনারা ব্যাপারটা বুঝে গিয়েছেন।
আর উচ্চ কক্ষ বাদ দিতে পারলে ভাল হত, ১০০ জন সাংসদের পেছনে জনগণের করের টাকা ব্যয় করার কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না!
সর্বোপরি, বাংলাদেশের মানুষ যে ইনসাফ, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র এবং সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে, সেটি বাস্তবায়নে ইসলামী দল এবং জুলাই বিপ্লবের প্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। সর্ববৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের ওপর সবচেয়ে বেশী দায়িত্ব এই ঐক্য প্রতিষ্ঠায়। আশা করছি জামায়াত বিচক্ষণভাবে তার রাজনীতি এগিয়ে নিবে এবং আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করবে, ইংশাআল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


