somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোমানদের দাসপ্রথা-২

০৯ ই মার্চ, ২০১১ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় হলিউড নির্মিত একটি ডেইলি সোপ দেখতাম, নাম রুটস্। তৎকালীন আমেরিকার দাসপ্রথা, ক্রয়কৃত দাসদের প্রতি মনিবদের নির্মম অত্যাচার এই ছিল ধারাবাহিকটির মূল কাহিনী। তখন থেকেই অনেক প্রশ্ন জাগতো মনে, দাস মানে কি? তারা কি আমাদের বাংলাদেশে নিয়োজিত গৃহকর্মীদের মতো? তাদেরকে ক্রয় করে নিয়ে আসা হতো কেন? আর কিনেই যদি আনা হতো তাহলে এতো অত্যাচার করা হতো কেন? এরকম ব্যবস্থা কি শুধু আমেরিকাতেই ছিল? আরও নানা প্রশ্ন। কিন্তু না দাসপ্রথার শুরু মূলত রোমান সভ্যতা থেকে। আজ আমরা রোমান সভ্যতায় দাসপ্রথার ইতিবৃত্ত জানব।

খ্রিস্টীয় ২য় শতকের রোম শহরে কর্মবিমূখ অলস ধনীদের প্রাচুর্য আর অপচয় চোখে পড়ত। এদের কারও কার অধীনে ছিল দেড়শতাধিক দাস। গ্রামেও এদের বিষয়সম্পত্তি ছিল। দাসরা সেখানেও খেটে মরত। একটি রোমান কৃষিখামারে সাধারনত তিন ধরনের যন্ত্রপাতি থাকত। ১. মূকযন্ত্র; লাঙল, কাস্তে, কোদাল; ২.অর্ধ-মূকযন্ত্র; ষাঁড়, গাধা ইত্যাদি। এবং ৩. কথা বলতে পারে এমন যন্ত্র; দাস।

শহরের দাসরা অপেক্ষাকৃত ভাগ্যবান। তারা প্রভুর বিলাসব্যসনের দেখভাল করত। গ্রামীন দাসদের জীবন ছিল কঠোর। তারা জমি চাষ করত। শহরের দাসদাসীর কাজের অবহেলা হলে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হত।
দাসের মৃত্যু হলে নতুন দাস কেনা হত। রোম শহরে বসত দাসবাজার। সেপটা জুলিয়া, ফোরা এবং ভিটা লাটার পোর্টিকো ছিল বিখ্যাত দাসবাজার। এখানে সাদা বোর্ডের ওপর লাল চক দিয়ে ‘দ্বিপদী প্রাণীর’ বৈশিষ্ট্য বিস্তারিত লেখা থাকত, লেখা থাকত কখন নিলাম ডাকা হবে ইত্যাদি ।
গরু-ভেড়ার হাটের মতন দ্বিপদী প্রাণী কেনাবেচা হত দাসবাজারে। দাসবাজারে ভিড়, দাসের গায়ের ঘাম, ক্রেতাদের কনুয়ের গুঁতোগুঁতি লেগেই থাকত। ভিড়ে নানা দেশের লোক দেখা যেত: মিশরীয় তুর্কি আরব সিসিলিও থ্রাসিয় কাপ্পাডোসিয়ানস গ্রিক কেল্ট গল (ফরাসি) ব্রিট (ইংল্যান্ড) ও রাইন নদীর ওপাশের শ্বেতচুলো লোক দাসবাজারের ভিড়ে গিজগিজ করত। ভিড়ে নারীপুরুষ থাকত। তবে কিশোর- কিশোরীর আগমন দাসবাজারে ছিল নিষিদ্ধ । ফিলিস্তিনে তখন ইহুদিরা বিদ্রোহ করত। সম্রাট হাদ্রিয়ান সমর অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ইহুদিদের ধরে এনে দাসবাজারে বিক্রি করা হত।

দাসেরা লাইন করে দাঁড়াত পাথরের ওপর । নগ্নপ্রায়, পায়ে সাদা চক-এর মানে-এখুনি বিক্রি হবে। ক্রেতারা মাংসপেশি টিপেটুপে দেখত। হয়তো দাসেরা বালক। হয়তো এদের কারও বাড়ি ছিল কৃষ্ণসাগরের তীরে। হয়তো ওদের বর্বর অভিবাবকগন বিক্রি করে দিয়েছে। তেমনটাই হত সেই খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের রোমান সাম্রাজ্যে ...

রোমকেন্দ্রিক রোমান সভ্যতায় দাস নির্যাতনের তথ্যপ্রমাণ ঐতিহাসিকের কাছে আছে। তবে দাস নির্যাতন কতটা ব্যাপক ছিল সে সম্বন্ধে কিছু বলা যায় না। অসুস্থ বৃদ্ধ দাসদের ক্যাটো দি এলডার -রোমান রাজনীতিবিদ-বাড়ি থেকে বার করে দিতেন। ক্যাটো দি এলডার-এর কয়েকটি স্মরণীয় বাণী পাঠ করা যাক। ক্যাটো দি এলডার-এর কথা যত ভালো হোক; মনে রাখতে হবে ইনি অসুস্থ বৃদ্ধ দাসদের বাড়ি থেকে বার করে দিতেন।

সম্রাট হাদ্রিয়ান ছিলেন সবচাইতে মানবিক, রোমান সম্রাটদের মধ্যে। তো তিনি একবার লোহার সরু পাত দিয়ে এক দাসের চোখ ...
আর মহিলারা? নির্যাতনের জন্য রোমান রমনীগণ শার্প আয়রন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করত যৎসামান্য ভুলের জন্য ...এমনই যখন অবস্থা তখন রোমের শক্র, পরাজিত সৈন্যরা আত্মহত্যা করত রোমানদের দাস হওয়ার চেয়ে। দাসদের নেতা স্পার্তাকাস (খ্রিস্টপূর্ব ১০৯/৭১) এর নেতৃত্বে দাসবিদ্রোহ রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক অবিস্মরনীয় ঘটনা।

অতিরিক্ত দাস থেকে বিদ্রোহের আশঙ্কা বিরাজ করত রোমে। কঠোর আইন প্রনয়ণ করা হয়েছিল। যদি কোনও দাস প্রভুকে হত্যা করে তো সে বাড়ির সব দাসকে হত্যা করা হত। একে বলা হত ল অব কালেকটিভ রেসপনসিবিলিটি। অশোভন আচরণ করলে পিটানো হত, লোহা গরম করে পোড়ানো হত, কখনও হত্যা করা হত। রোম নগরের বাড়ির বাইরে লেখা থাকত: “অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। শাস্তি বেত্রাঘাত।” অনেক দাসই পালিয়ে যেত। ফেরারী দাস এর আশ্রয় দেওয়া ছিল বেআইনি। সে সময় রোমান সমাজে পেশাদার দাস পাকড়াওকারী ছিল। তারা পলাতক দাসদের ধরে আনত। তাছাড়া বিজ্ঞাপন বিলি করা হত। ফেরারি দাসদের ধরে দিতে পারলে মোটা অঙ্কের পুরস্কার জুটত।

ধরা পড়লে ভয়ানক নির্যাতন চলত দাসদের ওপর। কপালে গনগনে লোহা পুড়িয়ে ‘ফ’ অক্ষর লেখা হত। ফ অর্থ্যাৎ ফেরারি। কখনও গলায় ধাতুর কলার আটকানো থাকত। তাতে লেখা থাকত: “আমি পালিয়ে এসেছি। আমাকে ধর। আমাকে আমার প্রভুর কাছে নিয়ে গেলে পুরস্কার পাবে।”

রোমান দার্শনিক সেনেকা মনে করতেন দাসদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে দাসেরা ভালোভাবে কাজ করবে আর মন্দ ব্যবহার করলে মন্দ কাজ করবে। আর যেন প্রভুরা ভোজসভায় দাসদের না ডাকে। কেন? দাসদের নিম্নমানের খাবার দেওয়া হয় বলে!

৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×