প্রতিবছর এই সময়ে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে ৫/৬ দিন ব্যাপী চলে লালনমেলা। সারাদেশ ও বিদেশ থেকেও লালন ভক্তরা এখানে আসে। তবে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুরে আজও উপেক্ষিত বাউল সম্রাট লালন শাহের বসতবাড়ি। তার জন্মভূমি সংরক্ষণ ও সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে হরিণাকুণ্ডু বাউল একাডেমি সোচ্চার হলেও জন্মভূমি সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি কেউ। এখন আর কেউ জানেন না বাউল সম্রাট লালন এ গাঁয়েরই দরিদ্র গরিবুল্লা দেওয়ান ও আমেনা খাতুনের ঘরে জন্মেছিলেন। লালনের জন্মস্থান ও পৈতৃক ভিটা বাঁশ বাগানের নিচে বন-জঙ্গলে ঢেকে গেছে। ১৯৮৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ লালনের বাস্তুভিটায় একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করে। সে বেদিও আজ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। লালনের দীক্ষাগুরু এ গাঁয়েরই আরেক বাউল সাধক দরবেশ সিরাজ সাঁই ও পাঞ্জু শাহর মাজারও রয়েছে হরিশপুরে।
বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে, লালন শাহর জন্মস্থান হরিশপুরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ আবু তালিব ও লালন গবেষক ড. খন্দকার রিয়াজুল হক তাদের গবেষণায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছেন লালনের জন্মস্থান হরিশপুরেই। বিশিষ্ট লালন গবেষক মুহম্মদ আবু তালিব ১৮৮১ ও ১৮৮২ সালে তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার অধীন শৈলকুপা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে লালন শাহর অনুকূলে সম্পাদিত হওয়া দুটি দলিল উদ্ধার করেন। উল্লেখ্য, তৎকালীন সময়ে হরিণাকুণ্ডুতে কোনো সাব রেজিস্ট্রার অফিস ছিল না। হরিণাকুণ্ডু থানার যাবতীয় জমি কেনাবেচা ও রেজিস্ট্রি হতো শৈলকূপা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে।
লালন সম্পর্কে বিভিন্নভাবে গবেষকরা লিখেছেন, ‘লালন নিজের থেকেই তার নিজ গ্রাম হরিশপুরের স্বনামধন্য বাউল সাধক দরবেশ সিরাজ সাঁইয়ের শিষ্যত্ব লাভ করেন। এক সময় বসন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার সঙ্গীরা তাকে ত্যাগ করেন। তখন তিনি কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় কালী নদীর ধারে যান। এরপর লালন ছেঁউড়িয়াতেই অবস্থান করেন এবং এখানেই তিনি সাধনকর্মের মাধ্যমে প্রতিভার বিকাশ ঘটান।’ দিন দিন ছেঁউড়িয়া লালন তীর্থে পরিণত হয়। বর্তমানে সারাবিশ্বের বাউলদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র হচ্ছে কুষ্টিয়ার এই ছেঁউড়িয়া।
ইংরেজি ১৭৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন লালন শাহ। ১১৬ বছর বয়সে ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর রাতে তিনি মারা যান। বর্তমানে লালন উৎসব ছেঁউড়িয়াকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। লালনের জীবদ্দশায় প্রতি বছর বসন্তের অন্তে শীতকালে একটি মহোৎসব দিতেন তিনি। সেখানে লালন শিষ্য ও তার সম্প্রদায়ের লোকেরা সবাই একত্রিত হয়ে সাঁইজির সঙ্গে সংগীত ও অলোচনায় মিলিত হতেন। এখনো প্রতি বছর এ সময় ছেঁউড়িয়াতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় লালন উৎসব পালিত হয়। সমাগম ঘটে লাখো ভক্তের। কিন্তু কালের বিবর্তনে লালনের জন্মস্থান হরিশপুর লালন তীর্থভূমি থেকে হারিয়ে গেছে। এখানে পালিত হয় না লালন উৎসব। তবে গত বছর হরিণাকুণ্ডুতে হয় লালন মেলা। হরিশপুরের প্রবীণদের মুখে শোনা যায়, দেশ স্বাধীনের পর কয়েক বছর এখানে লালন স্মরণ উৎসব হয়েছিল। এক সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে দেশ-বিদেশের লালন গবেষকরা এ বাউল সম্রাটের স্মৃতি খুঁজে পেতে মাঝে মধ্যেই হরিশপুরে আসেন এবং বাউল সম্রাটের জন্মস্থানের দৈন্যদশা দেখে হতাশ হন।
সরেজমিন হরিশপুরে লালনের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাওয়ায় এখন মুশকিল, শুধু মাজার ও স্মৃতিফলক আছে। গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের মুখে শুনতে শুনতে বাঁশ বাগানের মধ্যে জঙ্গলাবৃত স্থানে খুঁজে পাওয়া যায় একটি জরাজীর্ণ বেদি। এখানেই লালনের পৈতৃক ভিটা ছিল বলে চিহ্নিত করেন গবেষকরা। লালনের দীক্ষাগুরু দরবেশ সিরাজ সাঁইয়ের মাজার আছে হরিশপুর স্কুলের পাশে। সিরাজ সাঁইয়ের বংশধর পঞ্চম পুরুষের কয়েকজন বাস করেন গ্রামটিতে। তারা হলেন বারেক সর্দার, নজির সর্দার, আক্কাস সর্দার, আবুল সর্দার, গনি সর্দার ও মকবুল সর্দার। তাদের অবস্থাও করুণ, দরিদ্রতার মধ্যে বসবাস করছেন তারা। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দরবেশ সিরাজ সাঁইয়ের পঞ্চম পুরুষ বারেক সর্দার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যে লালনকে নিয়ে সারাবিশ্বে তোলপাড় চলছে সেই লালনের দীক্ষাগুরুর খোঁজ কেউ রাখে না। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর সম্প্রতি লালন গুরু সিরাজ সাঁইয়ের কবরটি পাকা করা হয়েছে। মাজার বলতে যা বোঝায় সেরকম কিছুই হয়ে ওঠেনি এখানে। লালনের নিজের বাস্তুভিটাটিও সংরক্ষণ করার উদ্যোগ কেউ নেয়নি।
হরিশপুরের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, লালন যে বটগাছের নিচে বসে দরবেশ সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা নিতেন এবং সাধন করতেন সম্প্রতি সেই গাছটি ঝড়ে উপড়ে গেলে এখানে একটি স্মৃতিফলক করার জন্য উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটে গিয়েছেন তারা। কিন্তু সাধারণ একটি স্মৃতিফলকও এই ঐতিহাসিক স্থানে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, সিরাজ সাঁই ও পাঞ্জু শাহসহ অনেক স্বনামধন্য বাউল সাধক ছিলেন হরিশপুর ও আশপাশের গ্রামে। এক কথায় হরিশপুর ছিল বাউলদের পুণ্যভূমি। তাদের লেখা অনেক আধ্যাত্মিক গান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু সেগুলো সংগ্রহের উদ্যোগ নেই বাংলা একাডেমিসহ সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে। ক্ষুব্ধ হরিশপুর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলাবাসী।
হরিণাকুণ্ডু বাউল একাডেমির আহ্বায়ক আতিয়ার রহমান চান্দু জানান, হরিশপুরে লালন ভাস্কর্য ও গ্রামটির সরকারি স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি। বিভিন্ন লালন গবেষকরা বলেছেন লালনের জন্মস্থান হরিশপুরে। হরিণাকুণ্ডু সরকারি লালন শাহ কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদ আবু বক্কর জানান, এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। হরিণাকণ্ডুর বাউল একাডেমির সদস্য হামিদ, জিহাদ, রাসেল, মিরা, ছমির, সেলিম সহ অনেকেই জানান, মানববন্ধনের মাধ্যমে একটি নতুন আন্দোলনের সূচনা করা হলো। হরিশপুর গ্রামটি পৃথিবীর মধ্যে দর্শনীয় স্থান করার আন্দোলন চলবে।
আলোচিত ব্লগ
পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়
আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।