আমার দোভাষী রুশ বান্ধবীটা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছে তার কোম্পানীর কাজে। বিমানে ভ্রমনের সূত্রে পরিচয়। ইউরোপে কয়েক বছর থাকার কারণে আচ করতে পারি বিদেশীরা পরদেশে নুন্নতম কি কি প্রত্যাশা করে।
বিমানবন্দরে নেমে ওর কাছে বিদায় নিয়ে গেটের দিকে যেই পা বাড়াবো, দেখি ইউনিফর্ম ধারি বিমানবন্দরের কর্মচারীরা ধান্দাবাজী করতে শুরু করেছে।
"আফা কই যাইবেন"
একজন বিদেশীনি কিভাবে বাংলা বুঝবে? চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম ঘাবরে গিয়েছে। ভিসার আবেদনের জন্য কাউন্টারে দাড়ালো, সেখানে জানানো হলো আগে টাকা জমা দিতে হবে। এরপর শুরু হলো উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটাছুটি। এই টেবিল থেকে বলা হচ্ছে ওই টেবিলে যাও, সেখান থেকে পাঠাচ্ছে অন্য আরেক টেবিলে। বিষয়টা দুরে থেকে দাড়িয়ে অনেক্ষন পর্যবেক্ষন করছিলাম।এবার এগিয়ে গিয়ে এক কর্মকর্তাকে বললাম, টাকাটা কোথায় গেলে জমা দিতে পারবেন সেটা দয়া করে বলুন। শেষে সন্ধান পেলাম টাকা জমার কাউন্টারের।
সেখানে নতুন নাটক, বিদেশীদের ভিাসা ফি ৫০ মার্কিন ডলার কিন্তু তার সাথে ভ্যাট বাবদ যে ৭ টাকা তা আবার দিতে হবে বাংলাদেশী টাকায়। রুশী বান্ধবী আমাকে বলল তার বাকী ডলার গুলো বড় লাগেজে রাখা, রুশী টাকা দিলে হবে কিনা। আমার কাছেও সব ব্রিটিশ পাউন্ড যা ভাঙাতে প্রথমে ইমিগ্রেশন পার করতে হবে। শেষে ব্যাংকের সেই কর্মচারী বলল ভ্যাটের টাকার না দিলে হবে।
এরপর সাক্ষী হতে হলো সবচেয়ে জঘন্য দৃশ্যের। টেবিলে ফাইলপত্র নিয়ে বসে আছেন এক পুলিশ কর্মকতা এবং তার ইংরেজী ভাষা জ্ঞান মাঝে মাঝে চিত্র নায়ক "অনন্ত" কে হার মানায়। এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি বসে ছিল, তো আমাদের সেই দেশ সেবক পুলিশ কর্মকর্তাটি কলম উচিয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাক করছিল আর বলছি..
“How many, how many days you need VISA”
প্রতি উত্তরে ভদ্র মহিলা বললো,
“Six days will be enough”
তো আমাদের পুলিশ বাহাদুর কিছুটা রাজার ভঙ্গিতে কলম উচিতে ভদ্রমহিলার দিকে তাক করে বলল...
“I am giving you 10 days, OK”
জাতি হিসেবে আমরা কি এতোটাই দেউলিয়া যে বিমান বন্দরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ন জায়গাতে কিছু শিক্ষিত-ভদ্র-মার্জিত কর্মীকে নিয়োগ দিতে পারি না???????
নাজাহালে আরে কিছু পর্ব বাকি আছে...
যদিও আমার রুশী বান্ধবীকে দুসাপ্তাহের ভিসা পাসপোর্টে দেয়া হয়ে গেছে, অপ্রয়োজনে ইমিগ্রেশন গেটে আবার হয়রানী, নানা প্রশ্নবানে তাদেরকে বিদ্ধকরা হচ্ছে। আমি দুর থেকে দাড়িয়ে গনা দশেক বিদেশী-বিদেশীকে সওয়াল জবাব করতে দেখলাম। বিদেশী অতিথীদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম তারা কতোটাই না বোকা বনে গেছে এই অসভ্যদের মুল্লুকে এসে। প্রতিটি বিদেশীনীদের দিকে তাকানো ভোঙ্গি যে কতটা অশ্লীল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লাগেজ নিতে গিয়ে দেখি আমার তালাটা ভাঙ্গা, আর কিছুক্ষন পর যখন আমার রুশ বান্ধবীর লাগেজটা পেলাম সেটার ও একই চিত্র। ও অভিযোগ লিখাতে চাইলো আমি তাতে বাধ সাধলাম। আমি তো জানি, এই শকুন গুলোর সব গুলোর ধর্ম এক। শেষে না "লিমন" এর মতো আরেকটা গল্প ফেদে ফেলে। সেখানে এই রুশী মেয়েটা হয়ে যাবে আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের রুশী সদস্য আর আমি তারই সহায়ক। দিনের শেষে তার বিদেশী নাগরিকত্বের কারণে শেষ রক্ষা হলেও আমাকে তো আমার রাষ্ট্র নিজদেশে বাচাতে আসবে না বরং ক্রসফায়ারে প্রাণটাও যেতে পারে।
ফোন কোম্পানী গুলো মুদি দোকান খুলেছে, সিম তাদের শেষ হয়ে যায়। ফোন বুথ দু:প্রাপ্য, সেখান থেকে ফোন করা বিদেশীদের জন্য খুব সহজসাধ্য তো নয়ই। আমরা না গরমে ভিজে অভ্যাস্ত কিন্তু এই জনা-বিশেক বিদেশীদের জন্য কি একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ওয়েটিং রুমের ব্যাবস্থা করা যেতো না???? কেউ স্বামীর নাম, আর কেউ বাপের নামে বিমানবন্দর করছে। কিন্তু কেউ কি এটা ভেবে দেখেছে দুদিন পরে যখন এইসব বিদেশীরা দেশে গিয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা গুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে তখন এই সকল বিমানবন্দরের "আন্তর্জাতিক" শব্দটা তার অস্তিত্ব হারাবে?
অবশ্য বিমানবন্দর দর্শন করিয়েই যদি হালকা ধারনা দেয়া যায় পরে ঢাকার রাস্তায় নেমে আতকে উঠতে হবে না।
অতত্রব, কোথায় খুজে পাবে না .............
সকল দেশের রানী সেজে আমার জন্মভূমি (বাংলাদেশ)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





