বেশ জমজমাটি শীত পড়েছে এবার । আর আমাকে একটু বেশী করেই জানান দিয়েছে তার উপস্থিতি । অবশ্যই কবিতা শোনানোর জন্য নয় । জ্বর কাশিতে নাজেহাল করার জন্য । তবুও শীত মানেই নস্টলজিয়া । দিদিমার দেওয়া সোযেটারে হাত দিয়ে তাঁর আদরের ওম পাওয়ার দিন ।পুরোনোকে ছোঁয়ার দিন ।এই সর্দি-জ্বরের কাহিল অবস্থায় আমিও পুরানো গান শুনছি দিনরাত । সেই সাথে এসব গানের পিছনের কিছু গল্পও শুনলাম । তারই কিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করার ইচ্ছে হোলো ।
ললিতা গো ওকে আজ চলে যেতে বল না
এক ঘরোয়া আসরে মান্না দে ভজন গাইছিলেন ঘুংঘট কে পট খোল রে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিতাঁকে গানটি আবার গাইবার জন্য অনুরোধ জানালেন। মান্না দে গাইলেনও । তারপর পুলকবাবু সেখানেই একজনের কাছ থেকে খাতা জোগাড় করে কী যেন লিখতে শুরু করলেন। সেদিন তিনি লিখেছিলেন। আর তাতে সুর দিয়ে গেয়েছিলেন মান্না দে ।
ও শাম কুচ অজীব থি
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় হারমোনিয়াম নিয়ে অলস ভাবে বসে আছেন। সামনে কবি গুলজার।হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন ' কিছু বলো। আমার যে কিছুই আসছে নাহ। ' একটু পরেই গুলজার বলে উঠেছিলেন ও শাম কুচ .......
এভাবেই গানের মুখরা লেখা হয়েছিল । বাকিটা তিনি পরে লিখেছিলেন। তবে সেদিনই এই পুরো সুরটা তৈরী করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । আর সেই সুর অনুযায়ী কথা লিখতে হয়েছিল গুলজারকে।
চৌদভিঁ কা চাঁদ হো
এই গানের কম্পোজার ছিলেন রভি । একবার তিনি রাতের বেলা বাড়ি ফিরছিলেন। তখন গাড়িতে বসে ভাবলেন এখন তো মুভিতে টাইটেল সং হচ্ছে ( সে সময়ে টাইটেল সং এর চল ছিল )এই ফিল্মেরও টাইটেল দিয়ে একটা গান শুরু করলে কেমন হয়! যেমন ভাবা তেমনি কাজ। মাথায় সুর খেলে গেলো তাঁর। বাড়িতে এসেই শাকিল সাহাবকে ফোন করে ওনার বাড়ি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। শাকিল সাহেব আসতেই বললেন সব কথা। তারপর চৌদভিঁ কা চাঁদ হো
- এইটুকুর সুর শোনালেন। এবার রভি বললেন এই দিয়ে তুমি কী কিছু লিখতে পারো? শাকিল সাহেব মাত্র ২ সেকেন্ডের মধ্যে বললেন ইয়া আফতাব হো। সাথে সাথে সুর হোলো। এর পরেই তিনি বলে উঠলেন যো ভি হো খুদা কি কসম লা জবাব হো।
এভাবেই মাত্র পাঁচ, সাত মিনিটের এই সুবিখ্যাত গানটি তৈরী হয়ে গিয়েছিল।
ও কেনো এতো সুন্দরী হোলো
একবার পূজো এসে যাচ্ছে, তবু পুলক বাবু কিছুতেই আর গান লিখে উঠতে পারছেন নাহ।একদিন তিনি এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছেন। সাথে মান্না দে। কিন্তু বিপত্তি। বাড়ি চিনতে পারছেন নাহ। একজায়গায় গাড়িতে বসিয়ে তিনি একটা বাড়িতে খোঁজ করতে গেলেন। তারপর মান্না দে তাঁকে হাসতে হাসতে ফিরে আসতে দেখে ভাবলেন ' যাক বাড়ি পাওয়া গেলো '। কিন্তু নাহ। তিনি এসে বললেন যে তিনি পুজোর গান পেয়ে গেছেন। গান লেখা হয়ে গেছে। মান্না দে হতবাক হয়ে বললেন ' আমি তো এখান থেকে দেখলাম তুমি বাড়িটাতে গিয়ে বেল বাজালে। একজন মহিলার সাথে কী কথা বললে, তারপর চলে আসলে! এরমধ্য গানটা লিখলে কখন? '
এবারে পুলক বন্দোপাধ্যায় হেসে বললেন যে ওই ভদ্রমহিলা দরজা খুলে বলেছিলেন যে ওটা ভুল বাড়ি।তবে উনি খুব সুন্দরী। আর সাথে সাথে আরও একটা কথা যোগ করলেন। আমি তো মানুষ।তারপরই ও কেনো এতো সুন্দরী হোলো ...
এভাবেই লেখা হয়েছিল এই বিখ্যাত গানটা । তবে এটা জানা নেই যে ঐ ভদ্রমহিলা এই গানের পিছনের কাহিনীটা জানতেন কিনা!
তথ্যসূত্র - গুগুল , রেডিয়ো , গাতা রহে মেরা দিল
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৭