somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেসুরা আমি

১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ কেউ বলে আমার ভেতরে সুর নাই, বেতাল আমি, তাল লয় এই শব্দগুলি আমার থেকে বেশ দুরত্ব বজায় রেখে চলে, মাঝেমাঝে আমরো এমন মনে হয়।

আজ থেকে দশ কি এগারো বছর আগে আমি একটা গবেষনা মুলক কাজের সাথে জড়িত ছিলাম, কাজটা আমাকে নেশায় ফেলে দিয়েছিলো, ভ্রমনের নেশা আমার বাল্যকাল থেকেই কোথাও যাওয়ার সুজুগ আমি কোন কালেই ছাড়ি নাই তা সে মামাবাড়ি হোক আর অচেনা জায়গায় হোক যেতে হবে শুনলেই আমার ভেতরে সকল এনার্জিগুলি আমাকে প্রচন্ড বেগে ধাক্কা দিয়ে সচল করে তোলে তো সেই গবেষণার কাজ আমাকে বাংলাদেশের প্রত্নত আঞ্চলে ভ্রমনের এক অভাবনীয় সুজগ করে দিলো, যতনা গবেষনার কাজ নিয়ে আমি উত্তেজিত তার থেকে নতুন জায়গা দেখার নেশা, বাসে ছুটে চলে, নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানো, নতুন ধরনের খাবার নতুন মানুষের সাথে পরিচয় এই সবই আমাকে উন্মাদের মতো আকর্ষণ করে।

আমার গবেষনার কাজের রিপোর্ট যদি হোতো ৪০০ পাতার ভ্রমন সংক্রান্ত পাতা গুলো থাকতো ১৫০ পাতার, তাই আমার সন্মানিত বস বড় ভাই প্রতিবারই আমাকে মনে করিয়ে দিতেন ভ্রমন সংক্রান্ত আলোচনা কমিয়ে গবেষণার তথ্য উপাত্ত বেশি বেশি লিখতে। বয়রা কি শোনে ধর্মের কাহিনী আমি কষ্টেশিষ্টে ১৫০ পাতা থেকে ১৪৫ পাতায় এনে সস্ত্বির নিশ্বাস ফেলতাম যাক এইবার নিশ্চয়ই ভাই খুশি হয়ে আমার প্রমশন দিয়ে দেবে, রিপোর্ট পাঠানোর বিশ মিনিটের মধ্যে বড়ভাই কাম বসের ফোন পাচ পাতা কমিয়ে তো তুমি বিশ্ব জয় করছো এখন আমাকে বলো এই যে কাইট্টা মাছ তুমি খাইছো এটাও উল্লেখ করা জরুরী, এই জগৎ সংসারে কাইট্টা মাছ কে খায় এবং কয়জন খায়, আমি হাসি মুখে বলতাম ভাই দেখেন এই সুজুগে কাইট্টা মাছের উপর একটা গবেষণার দুয়ার খুলে গেলো ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়ার হৃদয় পোড়ানো টুং আওয়াজ শুনে নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম মনে মনে।

তো এমনি এক গবেষণার কাজ শেষ করে ঢাকায় এসে দুই দিন শান্তির ঘুম দিলাম, ঘরের সামনে নটিশ টানিয়ে দিলাম নো খোচাখুচি। নাকের সপ্তসুরের প্রদর্শন সবে মাত্র শুরু করলাম ওমন সময় বেরসিক ফোন খানা ঘ্যানঘ্যান করে বেজে উঠলো, ওপাশ থেকে বস ভাই মিহি সুরে গাওয়া ঘি মিসৃত গলায় রসগোল্লার রস মিশিয়ে যা বললো তা শুনে ঘুম পালাতক, গবেষনার কাজে যেয়ে যেই সব জিনিস আমি সংগ্রহ করেছি তার উপরে তিনদিনের প্রদর্শনী এবং তা অতি শিগগিরী শুরু করতে হবে ইচ্ছা হলো গবেষনা কে গু বেসোনা বানিয়ে তার মাথায় ছুড়ে মারি। পেটের দায় তাই ওই পথে না গিয়ে ঘুম কে জলাঞ্জলি দিয়ে নটিশ ছিড়ে ফেলে কাজের মধ্যে ঝাপ দিলাম।

প্রদর্শনীর তৃতীয় দিন একজন দোতরা বাদক আসলেন তিনি সন্ধ্যা থেকে তার দোতরার সুরে ক্লান্ত প্রান কে স্বস্তির এক প্রশান্তি দিলেন। তার দোতরার সুর এত্তটাই শক্তিশালী ছিলো বুকের ভেতর হৃদয় খানা গলে পাকস্থলীতে গিয়ে টুপটুপ করে পরতে লাগলো ক্ষুধা তৃষনা সব ভুলে গেলাম এমনি এক মুহূর্তে আমার বোধদয় হলো আমাকে দোতরা শিখতে হবে আমি শিতল মনে শান্ত হয়ে বাদক সাহেবের কাছে গিয়ে অনুনয়ের গলায় বললাম জনাব আমি দোতরা শিখতে চাই আপনি কি শেখাবেন। তিনি স্বর্গীয় এক খানা হাসি দিয়ে শুভ্র দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন অবশ্যই তিনি তার বেহালা খানা আমার হস্তে তুলে দিলেন বললেন বাজান, আমি কম্পিত হস্তে হৃদয় কে শান্ত করে দোতারা ধরতে গিয়ে ঠাস করে ফেলে দিলাম, দোতরা বাদক অগ্নীবান সমৃধ্য দ্রিষ্টি নিক্ষেপ করে দোতারা খানা তুলে নিয়ে যা বললেন তা খুবই অপমান জনক ও শ্লীলতাহানির পর্যায় পরে, নিজেকে ধর্ষিতা মনে হতে লাগলো। আমি ওই দিনই বুঝতে পারলাম একজন ধর্ষিতার মানুষিক অবস্থা কেমন হতে পারে।

নিজেকে আরো বেশি পরিমানে সাহসী মানুষ মনে করে আবার তার হস্ত হতে দোতরা খানা নিলাম যদিও বাদক সাহেবের কোন রুপ ইচ্ছাই ছিলো না খানিকটা কেড়ে নেয়া গোছের মতো করেই নিলাম আয়জক যেহেতু আমি খানিকটা দাপট দেখাতেই পারি। এরপর চোখ বন্ধ করে দোতরার তারে আংগুল চালিয়ে দিলাম সাথে সাথে পুর অডিটোরিয়াম জুড়ে সুরের প্রলয় ঘোটে গেলো, দর্ষনার্থিদের ত্রাহিমধুসূদন অবস্থা তাদের মনে হলো স্বর্গ থেকে আচমকা তাদের কেউ নড়কে প্রবেশ করিয়ে দিলো, বাদক সাহেব আমার কাছ থেকে তাহার বাদ্যযন্ত্র খানা ছিনিয়ে নিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করলেন, শ্লেষমিসৃত স্বরে বললেন আপনার মনে সুর নাই বাজান।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×