দীর্ঘ ১২ বছর আমি সাময়িক অন্ধ ছিলাম। আমার সামনে ১০ ফুটের পর আমার দুনিয়া কেবলি ঝাপসা ছিলো। এতে সুবিধা অনেক ছিলো। মঞ্চে আমি আল্প বিস্তর কাজ করি। দর্শকদের কোন রকম রি-একশান আমি আমার স্বচোক্ষে দেখতে পেতাম না তাই ভয় ডর গুলো সেইভাবে কাজ করতো না। নির্দিধ্বায় আমি যা খুশি মঞ্চে করে যেতে পারতাম। রাত কে দিন দিন কে রাত বললেও আমার কোন অনুসোচনা হতো না। কেবল আমার ডিরেক্টর আমাকে প্রতি শোয়ের শেষে হুমকি ধামকির উপর রাখতো। আমি বিজ্ঞের হাসি দিয়ে সেই সব হুমকিকে পাশ কাটিয়ে যেতাম।
সাময়িক অন্ধ্ হবার কারনে অসুবিধা যেটা হতো তা খুবি রমনী কেন্দ্রিক। যেহেতু পুরুষ মানুষ রমনীর প্রতি সুতিব্র আকর্ষণ থাকবেই। তাদের দিকে আমেরিকার সূ করে দেয়ার মতো আইন লংঘনীয় মাত্রায় তাকিয়ে থাকাটা এক ধরনের দৈনিক কাজের অংশ। কিন্তু হায় তাহারা সকলেই আমার দৃষ্টি সিমার দশ ফুটের বাহিরে অবস্থান করতো। নারী কুলের বেসিক প্রকাশ ভংগিমা হলো তাদের রসালো সুমিষ্ট ওষ্ঠ যুগল কে কিঞ্চিৎ বাকা করিয়া নিজের ভাব প্রকাশ করা। যদি আমার ভ্যাবলামি তাদের পছন্দ হয় তবে সেই ওষ্ঠ যুগল বাকা না হয়ে নিম্না ওষ্ঠ নিম্নে আর একটু নেমে এসে স্ফোটিকের মতো সুভ্র দাত দেখিয়ে হৃদয় শীতল করা একখানা হাসি প্রদান করা। হায় এই রুপ মনহরা দৃশ্য আমার ভাগ্যে থাকিলেও দেখার ভাগ্য হয় নাই। তাই নিজ গুনে সবই পজেটিভ মনে করে এগিয়ে গিয়ে চপেটাঘাত অনেকবার হয়েছি।
আমাকে অর্থনৈতিক কারনে একটা ব্যাংকে মাসের দশ বারো দিন যেতে হয়। ব্যাংক এর পরিচালক বৃন্দ আমার অবস্থার প্রতি সুবিচার না করে তাদের সর্বোচ্চ সুন্দুরীদের কে ব্যাংকের কর্মকর্তা নিয়োগ দিতেই হবে। আর আমি সময়ের টোকেন তুলে বসে যাই ঝাপসা চোখে তাদের অনুসরণ করার জন্য। এখন তারা বিরক্ত হচ্ছে না কি আমার এক বার সাধিলেই প্রেমের নদীতে ঝাপ দেবে অবস্থার প্রতি আরক্ত হচ্ছে এর কিছুই বুঝি না কারন বেশিরভাগ সময় তাদের মুখশ্রী ঝাপসা বিধায় সবসময় মনে হতো তারা আমার পানে লজ্জা মাখা হাসি হাসছে। তাদের এই হাশি দেখেতে দেখতে প্রায় সিরিয়াল মিস করে ফেলি। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ভাবলাম একজন কে বলবো মনের এই দুরবস্থার কথা। কিন্তু হায় তিনি বদলি হয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেন এবং তার স্থানে অতিব সুন্দরী আর একজন এসে আমার হৃদয় আবার প্রকম্পিত করে দিলো।
যখন চোখের ঝাপসার মাত্রা দশ ফুট থেকে পাচ ফুটে এসে ঠেকলো। আমি নিরুপায় হয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে নিজেকে সমার্পন করে দিলাম। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা সরাবন তহুরা। বিশাল এক দীর্ঘনিশ্বাস আপনা আপনি বুকের জমিন থেকে নাকের চ্যানেল বাইপাস করে বেরিয়ে এলো। যথারীতি উনচল্লিশ নাম্বার সিরিয়াল মিস করলাম না না এই বার রমনী দেখে নয় টি ভি তে স্টাইল চ্যানেল লাগিয়ে রাখা আমরা সকল চোখের রুগী যথাসম্ভব চোখ কুচকিয়ে নানা রকম চোখের কসরত করে সল্পবসনা নারীদের বোঝার চেস্টা করছিলাম। একজন তো কিছুক্ষণ পর পর উঠে গিয়ে টেলিভিশনের পাশ দিয়ে হাটাহাটি করতে লাগলেন। আমরা সকলেই বিরক্ত। উনি আমাদের বিরক্ত বুঝতে পেরে হাশি দিয়ে বললেন বসে থেকে পা ধরে গেছে তাই একটু হাটাহাটি করছি। আসল কাহিনী যে অন্য ব্যাপার তা আমাদের কারই বুঝতে বাকি নেই।
ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকেই দেখি মহা সর্বনাশ। অল্পবয়সী এক অনিন্দ্য সুন্দরী বসে আছে সাদা এপ্রন পরে। আমাকে দেখে একটা প্লেনের মতো চেয়ারে তুলে দিলো। চোখের উপর বিভিন্ন যন্ত্রের কেরামতি চালিয়ে খুব গম্ভীরভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো হেটে এলেন নাকি রিক্সায়। ভাবলাম আমাকে ইনসাল্ট করলেন আমার গাড়ি নাই তা উনি কোন না কোন ভাবে বুঝে গেছেন। আমি গাল ভাড় করে বললাম রিক্সায়। তিনি হেসে বললেন ভাগ্যিস রিক্সায় এসেছেন নতুবা আপনাকে চোখের ডাক্তারের কাছে না এসে পংগু হাসপাতালে যেতে হতো। আপনার চোখের যা অবস্থা তা এতো দিন চশমা নেন নি কেনো? আমি লাজুক গলায় বললাম লাগে নাই তাই। আমার উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে হাতুড়ির মতো কি এক খানা বস্তু নিয়ে আমার উপরে আকর্ষণীয় ভংগিমায় বসে পরে আমার চোখের ওলি গলি দেখতে লাগলেন। আমার তখন একটাই অবস্থা। ও চোখে চোখ পরেছে যখনি আমি হলাম কলংকিনী।
ডাক্তারের চাপে পরে চশমা নামক বস্তু চোখের উপর চেপে বসতেই সমস্যার সুত্রপাত। দুনিয়া একটু বেশি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে গেলো। সব কেমন অতিরিক্ত ঝকঝকে। আমি বড্ড চিন্তায় পরে গেলাম। হাটতে গেলে পা ফেলছি সমান জায়গায় পরছে উঁচু নিচু কোন প্রান্তে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক পা চালিয়ে নিরুপায় হয়ে রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এলাম। এখন আমি সব দেখি। পাশের বাসার জানালার ওপাশের মানুষ কি রঙের সেলওয়ার পরে আছে তাও দেখি দুরের বাসার কোন রমনী গলে হাত দিয়ে আকশ দেখে তাও দেখি। সব থেকে মর্মান্তিক ব্যাংকে যাকে নিয়ে সাতার কাটবো বলে সুইমিংপুল ঠিক করেছিলাম তার ক্ষনেক্ষনে ভ্যাংচি কাটাও দেখি। হৃদয় আমার বড্ড আহত। আমি সব দেখতে পাচ্ছি। তাইবলে সব দেখতে পাওয়াটা যে ঠিক না এটাও বুঝতে পারছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৪৩