somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেরেম্ব বাবু

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আমি আজ যে গল্প খানা বলবো বা লিখবো তা অতি পরিচিত একটা গল্প । আমি আমার ঢং এ তা বলে যাবো । কেউ যদি এসে বলেন মশাই আপনি চৌর্যবৃত্তি করে অন্যের গল্প নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন । তাহলে তার জন্য প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থি । ভোট কিন্তু চাই নাই । ক্ষমা চেয়েছি । আজকাল শুনেছি ভোট আগানে বাগানে পড়ে থাকতে দেখা যায়, যেহেতু পড়ে থাকে চাইলে কেউ দু একটা দিতেও পারেন কিন্তু ক্ষমা নাকি পাওয়া মুশকিল। দামী জিনিস চেয়ে ফেললাম বলে ক্ষমা করবেন। এই দেখ আবার ক্ষমা চেয়ে ফেললাম । দুই দুইটা জবরদস্ত দামী বস্তু চেয়ে বড্ড অন্যায় করে ফেললাম । ক্ষমা , না থাক মার্জনা করবেন। মার্জনা মনে হয় এই নাভিশ্বাসের বাজারে সস্তা হতে পারে।

দেখুন তো ধান ভানতে শীবের গল্প জুড়ে দিয়েছি । আসল ঘটনায় আসি । হেরেম্ব বাবু । নিপাট ভদ্র লোক । কুলীন বংশে জন্ম বিধায় তার সারা অঙ্গে কৌলিন্ন বেয়ে বেয়ে পরছে । কেউ আবার চেয়ে বসবেন না । উহা আমার ভান্ডে নেই দিতেও পারবো না । যাই হোক , ভদ্রলোক কেবল কুলীন নয় নীতিতে অটল । বাজারে পটল তুলতে গেলে ধুস তুলতে নয় কিনতে গেলে ছ পয়সার হিশেব তিনি গুনে গুনে দেন । সরকারি অফিসের চাকুড়ে । বিদ্যা বুদ্ধির কমতি ছিলেন না । এন্ট্রাস পাশের বদৌলতে তার বেশ উঁচু স্থানে চাকরী লেগে গিয়েছিলো । তো সেই চাকুরীর সুবাদে দুটো টেলিফোন তিনি পেতেন । অন্যান্য সরকারী ফোনের ফাঁকে ফাঁকে বাড়িতে এক পুত্র ও এক স্ত্রীর খোঁজ নিতেন মাঝে মধ্যেই । এই খোঁজ নেবার সময় কাল তিনি তার নোট বুকে তুলে রাখতেন । প্রপিতামহের দানকৃত বুক পকেটে আরামে যে ঘড়ি খানা দিনাতিপাত করতো সেই ঘড়ির সাহায্যে মিনিট সেকেন্ডের হিশেব পাই পাই করে লিখে রাখতেন । টেলিফোনের বিল এলে হিশেব করে নিজের ব্যবহৃত সময়ের বিল পরিশোধ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে চোখ বুজে ঝিমিয়ে নিতেন খানিক । ভাববেন না উনি কাজে ফাঁকি দেন । ওনার ঝিমানোর সময় অফিস সময়ের বাহিরে ধার্য ছিলো ।

স্কুলের পরিক্ষা শেষ হলে , স্ত্রী পুত্রের বারংবার অনুরোধে তিনি একবার কাশ্মীর যাবার দু খানা টিকেট কাটলেন । লম্বা ভ্রমনে সবাই বেশ উৎসুক । ট্রেন আপন গতীতে ছুটে চলছে স্বর্গের দেশে । স্ত্রী পুত্রের দিকে খানিক চাহিয়া তিনি নিজেও ঘুমিয়ে গেলেন । রাত বারোটার কাটায় ঘটাং করে ঘড়ির কাঁটা এসে থেমে যেতেই হেরেম্ব বাবুর ঘুম ভাঙ্গিয়া চৌচির । তিনি ধরমর করে জেগে উঠলেন । ট্রেনের তিন তলা বিছানা থেকে গাছা বাওয়ার মতো করে বেয়ে লোক জনার ঘাড় মাথা মাড়িয়ে ধুতির কাছা ধড়ে ছুট লাগালেন । সবাই ভাবলো হেরেম্ব বাবুর পেচ্ছাপ লেগেছে । কেউ একজন তাকে পেচ্ছাপ খানার দড়জা দেখিয়ে দিলো তিনি পেচ্ছাপ খানা কে অতিক্রম করে চেঁচাতে লাগলেন টিটি কই টিটি কই । এমন মধ্যরাতে টিটির দেখা পেতে সবাই নাও চাইতে পারে তাই অনেকেই বিরক্ত ও সন্ত্রস্ত হয়ে হেরেম্ব বাবু কে এড়িয়ে গেলেন । কিন্তু হেরেম্ব বাবু ও ছাড়ার পাত্র নহে , তিনি টিটির সন্ধানে পুর ট্রেন দৌড়িয়ে বেড়ালেন । এর ঘাড়ে পরেন তো ওর কোলে চেপে বসেন । টিটির দেখা পান না । তার এমন উতলা দশা দেখে টিটি তার কাঁচা ঘুম জলাঞ্জলি দিয়ে স্বয়ং প্রকট হলেন । জ্বী মশায় বলুন, আমায় কি দরকার । হেরেম্ব বাবু হাপাতে হাপাতে পঞ্চাশ টাকা টিটির দিকে বাড়িয়ে দিলেন , টিটি হতোবম্ব হয়ে বললেন টিকেট ছাড়া উঠলে দুশো টাকা জরিমানা । বাকি দেড়েশো কে দেবে ? হেরেম্ব বাবু মাথা নেড়ে বললেন না, উহা আমার পুত্রের ভাড়া, সে যখন এই ট্রেনে ওঠে তার বয়স নয় ছিলো কিন্তু কিছুক্ষন আগে তার বয়স দশ হলো । আজ তার জন্মদিন । টিটি পঞ্চাশ টাকা হাতে নিয়ে রিসিট কেটে দিলেন । তিন তার রেল জীবনে এমন দেখেছেন কি না তা বুঝে পাচ্ছে না । হেরেম্ব বাবু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে গেলেন ।

এহেনো পিতার পুত্র দিনে দিনে সাবালক হয়ে বংশের মুখ উজ্জ্বল করার নিমিত্তে সাদাদের দেশের উচ্চ মহাবিধ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ফেরত এলেন । যে তাকে দেখে সেই বলতে বাধ্য হয় আহা হেরেম্ব বাবুর পুত্র বটে । রুপে গুনে তার নাম মেয়ে মহলে মুরগীর দানার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো । স্বাভাবিক ভাবেই ভিড় লেগে গেলো গুন মুগ্ধ রুপে কুপকাত তরুনী ত্বন্নিদের । পাড়ার রাস্তা থেকে ক্লাবের চৌকাঠ কোথাও তার একা চলার জো থাকলো না । বগলবন্দী একজন না একজন আছেই । ততকালীন সময় কিন্নরকন্ঠী কাননবালার বেশ নাম ডাক হচ্ছে । আমি বনফুল গো, মাধবী লতা আমি এমন সব ইন্দ্রীয় কে উত্তেজিত করা গান ও শুরের ঝঙ্কারে ঝাঙ্কারিত করে পুরুষ হৃদয় কে কুপকাত করছিলেন । আমাদের হেরেম্ব বাবুর পুত্র ও সেই ডাকে সারা না দিয়ে আর পারলেন না । তিনি দিন রাত কাননবালার গানে মত্ত থাকলেন । বাড়িতে বনফুল, মাধবী লতার চাড়া লাগালেন , পানিপ্রার্থী কন্যাগন হতাশ হয়ে কাননবালা কে শত কুকথায় অভিশাপ্ত করতে লাগলো । হেরেম্ব বাবুর পুত্র তাতেও হুশ ফেরান না । তার মাধবী লতাই যে চাই । অবশেষে বন্ধুরা কোলকাতার বিখ্যাত বউ বাজার পল্লীর কাপালিতলা লেনে কাননের বাড়ির সামনে অর্ধ উন্মাদ অর্ধ মাতাল কে ফেলে রেখে এলো ।

কানন বালা দেবী । প্রাত্যহিক গলার অনুশীলন করে যার যেমন প্রনাম দরকার তা সেরে ঘরের দরজা খুলে দেখেন তার দরোজায় সুদর্শন গ্রিক দেবতার শরীর ধুলায় লুটায় । তিনি তৎক্ষণাৎ তাহার মাথা খানা নিজের কোলে নিয়ে বসে পরলেন আর এদিক ওদিক চেয়ে বুঝতে চাইলেন এই দেবতার ধুলায় গড়াগড়ি খাওয়ার হেতু খানা কি। কিন্তু তখন অমন ভোরে হেতু বলে দেবার মতো কেহই ছিলো না । কানন দেবী সযতনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন । তরুন তখন নেশায় আসক্ত । আধো চোখে চেয়ে হাতের ইশারায় বললেন চলে যাও দেবী আমি এখন কাননের কোলে , আমার স্বপ্ন টা ভেঙ্গে দিও না । কানন দেবী মুচকি হেসে সুদর্শন তরুন কে বুকে জড়িয়ে ধড়ে ঘরে তুলে নিলেন । সেই যে ঘরে তুল্লেন তারপরে আর তরুন ঘরের বাহিরে যাবার নাম টি পর্যন্ত নিলো না । এতে কাননের যে অস্মমতি তাও না ।

শুরু হলো নতুন প্রেম কাহিনী । দুজনেই প্রেম পরলেন । তরুন প্রেমে মজে থাকেন, কানন তরুনের প্রেমে মজে দিকবিজয়ী গান গেয়ে চলেন । দুজনার যুগলবন্দী বেশ চলছিলো । কিন্তু এই যুগলবন্দী হেরেম্ব বাবু বেঁচে থাকা পর্যন্ত পরিনতি পাচ্ছিলো না । কারন কোলকাতার কুলীন সমাজের সকল কৌলিন্ন ধারকের পক্ষে সম্ভাব ছিলো না বৌবাজারের মেয়ে কে পুত্রবধু হিশেবে মেনে নেয়া । তবে এই মিলন সম্ভব হয়েছিলো হেরেম্ব বাবুর মৃত্যুর পরে।


** এই গল্প খুবি প্রচলিত । আমি আমার ভাষায় লিখলাম । কারো কাছে কপি দোষে দুষ্ট মনে হলে কিচ্ছু করার নাই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×