টিউশনি পর্ব - ১
জমজ যন্ত্রণা অধ্যায় শেষ হলে পরের টিউশনি টাতে তে আমি একটু অভিজ্ঞ(!) । প্রথম দিন পরিচয় পর্ব শেষে নতুন পিচ্চি আমাকে জিজ্ঞেস করে একই প্রশ্ন। " ম্যাম , আপনার বয়ফ্রেন্ড নাই? " এবার মান সম্মান বাঁচাতে বিশাল ভাব নিয়ে বলে ফেললাম ,অবশ্যই বয়ফ্রেন্ড আছে।ভাবটা এমন, এইটা কোন প্রশ্ন হইল?কার না বয়ফ্রেন্ড থাকে ! কিন্তু এই কথা এবং ভাবের ফলাফল হিসেবে পরে যেভাবে ওই মেয়ে একের পর এক ওই বিষয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছিল ,মনে হইল, কোন দুঃখে যে কইসিলাম বয়ফ্রেন্ড আছে...
পরে একদিন আমাকে ওই পিচ্চি অনেক গদগদ হয়ে বর্ণনা করল তার ক্লাস টিচারের ছেলেটা কি মারাত্মক ব্রিলিয়ান্ট। এইস এস সি তে অনেক ভাল রেজাল্ট করসে দেখে "অমুক" প্রাইভেট ভার্সিটিতে( বাংলাদেশের একটা নাম করা প্রাইভেট ভার্সিটি) ফুল ফ্রী স্কলারশিপ পাইসে । আমিও কৃত্রিম আহ্লাদিত হয়ে চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করলাম, অমা তাই ! কি ভাল ! পিচ্চি তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করল,মিস আপনি কি "অমুক ভার্সিটি" তে চান্স পান নাই যে বুয়েট এ ভর্তি হইসেন? "অমুক ভারসিটির" ক্যাম্পাস টা যে কি সুন্দর...সেন্ট্রালি এয়ার কন্ডিশন্ড ! আমি তখন বুয়েট ক্যাম্পাস অত সুন্দর আর সেন্ট্রালি এয়ার কন্ডিশন্ড না হওয়ায় ব্যাপক লজ্জা পাইলাম ( ব্যাপক লজ্জিত হয়ে কান্দাকাটির ইমো )
ছোট ভাইবোন নিয়ে ঝামেলা এইখানেও আমার পিছ ছাড়লনা,এই মেয়ের আবার বিচ্ছূ একখান ক্লাস থ্রী পড়ুয়া ভাই ছিল। ওইটা একদিন কোন ফাঁকে যে আমার মোবাইল হাতে পাইসে আল্লাহ মালুম। সেই বিচ্ছু আমার ফোনবুকে ইচ্ছামত নাম্বার এ মেসেজ পাঠায়ে দিসে। মেসেজ এ লিখা ছিল-“ oi shala, toke ami chor marbo” । যারা এই ভয়াবহ মেসেজ পাইছে ওই লিস্টে এ আমার থিসিস এর সুপারভাইজার, আমার মামা, জুনিয়র,ফ্রেন্ড অনেকেই ছিল।পরে যে কিভাবে সবার কাছে অপদস্থ হইসি তা আর নাই বা বললাম।
একদিন হন্তদন্ত হয়ে ক্লাস শেষ করে গেসি টিউশনিতে। তখন গরমকাল, পিপাসাও পাইসিল সেইরকম। গিয়েই কিছুক্ষন পর ওদের বাসার কাজের মেয়েটাকে বললাম পানি দিতে। মেয়েটা একটু দয়া পরবশ হয়ে আমাকে ঠাণ্ডা ট্যাং দিসে । দেখেই তো আত্মা ঠাণ্ডা হয়ে গেসে আমার। মুখে তুলতে যাব, এই সময় পিচ্চি বলে, ছি ছি আপু,তোমার মিস মানুষের বাসায় গিয়ে চেয়ে চেয়ে খাবার খায় !!! আমি হাসব না কাঁদব নাকি পিচ্চিটারে একটা থাবড়া লাগাব কিছুই বুঝতে না পেরে বেকুবের মত কেলাইতে থাকলাম।
আমার পরিচিত মানুষজন আর বন্ধু বান্ধব সবাই আমার ইস্পিশাল ভয়েস নিয়ে বহু আগে থেকেই আমারে নকল করে জ্বালা যন্ত্রণা দেয়। একদিন মেজাজ এমনিতেই খারাপ ছিল। তার উপরে দেখি পিচ্চি টারে যেই হোম ওয়ার্ক দিসিলাম,কিচ্ছু করে তো নাই,আবার একশ একটা অজুহাত দেখায় ! একটা রাম ঝাড়ির দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করলাম, " ইয়ারকি পাইছ নাকি ? নাকি আমাকে বেকুব পাইছ? ফাঁকি দিবা ইচ্ছামত আর আমাকে যা বুঝাবা তাই বুঝব?... হঠাৎ শুনি পিচ্চি ভাইটা নাকি সুরে আমার সাথে সাথে বলতেছে - অ্যাঁই ইযাঁরকি পাইছ.........
এরপর আরেকটা মেয়ে কে পড়াইতাম। এই মেয়ে আবার সাত চড়ে রা করেনা টাইপ। পড়া জিজ্ঞেস করলে এমন ভাবে তাকায় যেন এইমাত্র আমি ভিন গ্রহ থেকে ল্যান্ড করলাম। আর যখন কোন ম্যাথ অথবা জ্যমিতি একেবারে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অতি কষ্টে অনেকক্ষন বকবক করে বুঝিয়ে শেষ হত,তখন ওই মেয়ে বলত,মিস আরেকবার প্রথম থেকে বলেন, বুঝতে পারিনি। দুই সপ্তাহ টানা বকর বকর করে আমি বুঝলাম, এই মেয়ে কে পড়াইতে গেলে আমি টাক হয়ে যাব ,কারন রাগে মাথার চুল ছিঁড়া টাইপ অবস্থা হয়। এই পিচ্চির পুরা পরিবার ই এক অবস্থা । একদিন ওই মেয়ের মাকে আধাঘণ্টা ধরে বুঝালাম যে ,সন্ধ্যায় আমি পড়াতে পারবনা,কারন সন্ধ্যায় হলে ফেরা সমস্যা। আমার ব্যাপক বাক্য ব্যয় শেষ হলে উনি আবার বললেন, কাল তাহলে সন্ধ্যায় আসতেছ তো ?
আরেক টা কথা না বললেই না,ওই বাসায় একদিন পিরিচে করে শুধু আলুভাজি খাইতে দিসিল। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই না কিন্তু, রুটির সাথে যে আলুভাজি খায়,ওই আলুভাজি, সাথে এনার্জি প্লাস বিস্কুট। উল্লেখ্য, ঐ মেয়েরা কিন্তু হুলস্থূল টাইপ বড়লোক। পাক্কা আটদিন উলুবনে শুধু মুক্তা না, হীরা মানিক সব ছড়িয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম, নাহ , এই মেয়েকে পড়ানো আমার কম্ম না । বের হতে যাওয়ার আগে মেয়ের বাবার সাথে দেখা। উনি আমাকে দেখে চোখ কপালে তুলে বললেন, তুমি কে? আমি বললাম,আপনার মেয়ের টিচার, আপনি ই তো সেদিন আমার সাথে কথাবার্তা বলে পড়ানোর ব্যাপারটা ফাইনাল করলেন ! উনি নির্বিকার ভাবে বলল, ওহ, ভুলে গেসি ! আমি তখন বুঝতে পারলাম ,আমি খামাখাই মাইয়াডার উপর চেইতা ফায়ার। মাইয়াডা যে হাবলাকান্ত,ওর কুনু দোষ নাই । এইডা তো জেনেটিকাল প্রবলেম !