১ম গল্পঃ
-
আজ আমার নানু মারা গেছেন। কিছুক্ষণ আগে নানুকে কবরে শায়িত করা হলো। খুব আপন কাউকে কবরস্থ করে দেওয়ার পরক্ষণটা হলো পৃথিবীর সবচেয়ে মলিন সময়। কবরস্থান থেকে সবাই একে একে বিদায় নেওয়ার পরও আমি, তুহিন, সিফাত আর নিন্মী মলিন মুখে নানুর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। স্বজন হারানোর দুঃখবোধের সাথে অপরাধবোধও আমাদের মনে কাজ করছে।
নানুর একটা বেশ পুরনো কাঠের বাক্স ছিল। সবসময় তাতে তালা ঝুলিয়ে রাখতেন। আম্মার কাছে শুনেছিলাম, নানা ভাই যখন মারা গিয়েছিলেন নানুর বয়স তখন ত্রিশ পেরোয়নি। তখন থেকেই নানু ঐ বাক্সটা স্বযত্নে নিজের কাছে রাখতেন। কারো খোলাতো দূরে থাক হাত দেওয়াও তাতে বারণ। এমনকি কেউ আদৌ জানে না, এই বাক্সে কী আছে! আমরা কাজিনরা গত ঈদে বেড়াতে এসে বাক্সটা চুরি করি। তারপর তালা ভাঙি। নানু তা জানতে পেরে আমাদের কাউকে কিছুই বলেননি। তবে অভিমান চেপে রেখে আমাদের সাথে এরপর আর তেমন একটা কথা বলেননি।
গঞ্জের হাট থেকে নানা ভাইয়ের এনে দেওয়া নানান রঙের রেশমি চুড়ি, নানু পরম যত্নে ঐ বাক্সে রাখতেন। নানা ভাই চলে যাওয়ার পর বাক্সটাই ছিল তাঁর একমাত্র ভালোবাসার স্মারক।
২১০১১৫
২য় গল্প
-
রঞ্জু নতুন বাইক নিয়েছে। তবে তার ড্রাইভিং হাতটা এখনও খুব একটা পাকেনি। আমাদের বন্ধুমহলের এতে বেশ সুবিধে হয়েছে। যে যেদিকেই যায়, রঞ্জুকে ডাক দিলেই হল। হাত পেকে যাওয়ার লোভে রঞ্জু আর না করে না। কাঁচা হাতের ড্রাইভিংয়ের ভয়ে আমার তার বাইকের পিছনে চড়া না।
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। পিচ ঢালা পথ তখন একটু বেশি পিচ্ছিল থাকে। তবু বাসায় ফেরার তাড়া দেখে প্রথমবারের মত রঞ্জুর বাইকের পিছনে চড়লাম। চলতি পথের মাঝে একটা স্প্রিড ব্রেকার পড়ে। রঞ্জু গতি সামাল দিতে না পেরে রাস্তার মাঝখানে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে আমার কোন কিছু ক্ষতি হয়নি। রঞ্জুরও তেমন কিছু হয়নি। শুধু হাঁটুর দিকটায় প্যান্ট ছিঁড়ে চামড়ায় আঁচড় লাগে। একটুখানি রক্তপাতও হয়। রঞ্জু বেশ লজ্জা পায়। ও হুড়মুড় করে বাইকটা তুলে আবার স্টার্ট দেয়।
বাসায় ফেরার পর আমার মনে হল আমি কী যেন হারিয়ে ফেলছি! পরক্ষণেই টের পেলাম আমার চোখে লাল ফ্রেমের চশমাটা নেই। ওটাই ছিল আমার কাছে সেমন্তির শেষ চিহ্ন!
১৯০১১৫