বন্ধুত্ব : শৈশব
বন্ধুত্ব : কৈশোর
এর পর
কৈশোর পেড়িয়ে কলেজে এসে পা রাখলাম। স্কুলের বন্ধুদের বেশির ভাগই কলেজে পাইনি। অনুপম চলে গোলো ঢাকাতে। আমরা যারা বরিশালে ছিলাম তাদের কয়েকজন ভর্তি হলাম অমৃত লাল দে কলেজে, বি. এম. কলেজে ইন্টার মিডিয়েট বন্ধহয়ে যাবার পরে এটাই ছিলো বরিশালের এক নম্বর কলেজ (ইন্টার মিডিয়েটের জন্য)। এখনও এক নম্বরে।
এখানেও স্কুলের মতো কো-এডুকেশন কিন্তু স্কুলের মতো পরিবেশ ছিলো না। মেয়ে ছিলো হাতে গোনা কয়েকজন, তাদের ধারে কাছে ঘেসতাম না। চার দেয়ালে বন্দী কলেজ, সময় বেঁধে ক্লাস, অনেকটা যান্ত্রিক। এজন্য প্রথম ইয়ারে ক্লাস করলেও সেকেন্ড ইয়ারে তেমন কলেজে যেতাম না। কলেজ লাইফ মনেহয় কেটেগেলো চোখের নিমেষেই। তাই কলেজের নতুন কেউই আমার ফ্রেন্ড হয়ে ওঠেনি। কলেজের পড়াতে গ্যাপ পড়লে আমার কাজিন সন্দীপনের কাছে যেতাম। কোনো কোনো সময় সন্দীপনের বাসায় সারাদিন সারা রাত থেকে যেতাম। এজন্য ওই সময় সন্দীপনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একবার আমারা দুজন মিলে বর্ষার দিনে মটর সাইকেল নিয়ে বেড়াতে বের হলাম, কিছু দূর যাবার পর রাস্তায় সাইড দিতে গিয়ে কলা গাছের পাতার জন্য মটর সাইকেল গেলো পিছলে, পড়লাম দুজনে। আমার তেমন চোট না লাগলেও সন্দীপরের অনেক জায়গা কেটে গিয়েছিলো। তার পর হাসপাতাল থেকে ব্যান্ডেজ করে দুজন চোরের মতো বাসায় ফিরলাম। এর পর থেকে মটর সাইকেল চালানো বন্ধ হয়ে গেলো।
ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরে সন্দীপনও দূরে চলে গেলো ঢাকাতে এ্যাডমিশন কোচিং করতে, আমি বরিশাল রয়ে গেলাম আমার তাহার জন্য যে আমার সব সময়ের বন্ধু। সন্দীপন তো কয়েক মাস পরে বরিশাল মেডিকেলে চান্স পেয়ে বরিশাল ফিরে এলো কিন্তু আমি বরিশাল ছেড়ে চলে এলাম ঢাকায়, যদিও বরিশালের বি. এম. কলেজে ইংরেজীতে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু আমার আই.টি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা তাই সব ছেড়ে ছুড়ে ঢাকাতে এলাম। এক বছরের একটা মাল্টিমিডিয়া কোর্সে ভর্তি হলাম। সেখানে এসে বুঝলাম এটা করে আমার পোষাবে না আমাকে তাই একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে চার বছর মেয়াদী কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স কোর্সে ভর্তি হলাম।
এখানে লাইফ আরও যান্ত্রিক, ঘড়ির কাঁটা ধরে বাস ধরা, ক্লাস, খাওয়া, এ্যসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়াল, ক্লাস টেস্ট। এর মাঝেও অনেকের মধ্যে কঠিন বন্ধুত্ব দেখতাম। হয়তো অন্যরা মেসে থাকতো আর আমি হস্টেলে থাকতাম বলে হয়তো। অনেকেই আমার ফ্রন্ড ছিলো হায়-হ্যালো টাইপের, তারপরও অভি মনেহয় একটু আলাদা ছিলো অনেক সময় কাটিয়েছি ওর সাথে। সবার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা হতো না আমার কিছু নীতির কারনে। যেমন আমি দলা দলি একদমই পছন্দ করতাম না। একবার সবাই দল করে ঠিক করলো যে কোনো এক স্যারের ল্যাব করবে না, কারন হিসেবে তারা দেখালো সেই স্যার প্রচন্ড কড়া। আমি বললাম, কোনো স্যারকে বয়কট করা মানে সেই স্যারকে অপমান করা। আমি একা অন্য সেকশনে ট্রান্সফার হয়ে গেলাম। কাউকে দেখানো বা কারওটা দেখা দেখি করে পরীক্ষা দেয়া এই দুটোই ছিলো আমার স্বভাব বিরুদ্ধ, এটাও হয়তো একটা কারন ছিলো। বড় জোড় রেজাল্টটা টুক করে জানানো বা জেনে নেয়া যেতে পারে নিশ্চিত হবার জন্য যে ঠিক হলো কি-না, তা বলে হুবুহু দেখানো বা দেখে দেখে লিখবো কেনো? হয়তো আমি সেরকম শিক্ষা পাইনি বলে। সেকশন চেন্জ করার পরে আমি মায়বী নামের একজন বান্ধবী পেলাম, তার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো এই কারনে যে সে অনেক হেল্প করেছে আমাকে যে লেকচার গুলো মিস করতাম সেগুলো বুঝানো জন্য। সে এখন স্বামী-সন্তান সহ অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। কথাহয় ফেসবুকে মাঝে মাঝে।
হয়তো চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ সকাল ১১:০৯