আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দমকল বাহিনী অগ্নিনির্বাপণের সরঞ্জাম নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। আর গণমাধ্যমকর্মীরা ঝাপিয়ে পড়েন ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, নোটবুক। আশুরার কারণে ২৭ নভেম্বর মুদ্রণ সংবাদ মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায়, তারা এবার সংবাদ পরিবেশনে সুবিধা করতে পারেনি। তবু পত্রিকাগুলো অনলাইন সংস্করণ সচল রেখে সংবাদটি পরিবেশনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। অন্যদিকে টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমগুলো বিরতিহীনভাবে অগ্নিকান্ডের নানা সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরকার ও পোশাককল মালিকদের মুন্ডুপাত চলছে একযোগে। এতে আবার ঘি ঢেলে যাচ্ছে সস্তা জনপ্রিয়তা প্রত্যাশী গণমাধ্যমগুলো। আমাদের প্রধান রপ্তানিখাত অচল থাকলেই যেন, দেশটা বেঁচে যায়!
এদিকে ২৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর, আরেক দফা ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমগুলোয়। ২৬ নভেম্বর বিকেলে একটি অনলাইন গণমাধ্যমে জানায়, ২৫ নভেম্বর রোববার আশুলিয়ার দেবনায়ার ফ্যাশনসে আগুন লাগানোর চেষ্টার ঘটনায় ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা নিজেই স্বীকার করেন সুমি বেগম নামের এক শ্রমিক। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সুমি বেগম জানান, কারখানার কর্মকর্তা জাকির হোসেনের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে নিচ তলায় ফিনিশিং সেকশনের একাংশে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। রাতে জাতীয় সংসদে সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২৫ নভেম্বর রাতে আশুলিয়ার দেবনায়ার ফ্যাশনসে আগুন লাগানোর চেষ্টার ঘটনা তুলে ধরে এর আগের দিন তাজরিনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে সংসদে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
তবে প্রথম আলো অনলাইন প্রধানমন্ত্রীর সংসদের ভাষ্য প্রথমে ভুল ভাবে উপস্থাপন করে। তাদের প্রথম শিরোনাম ছিলো, ‘সংসদে প্রধানমন্ত্রী/ আশুলিয়ার আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত, দুজন আটক’। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত। এ ঘটনায় সুমি বেগম এবং জাকির হোসেন নামের দুই জনকে পুলিশ আটক করেছে। এ বিকৃত খবরটি ঘন্টাখানেক প্রথম আলো অনলাইনে ছিলো। পরে তা সরিয়ে নেয়া হয়। এর প্রায় আধ ঘন্টা পরে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ-ভাষ্যের সঠিক খবরটি প্রকাশ করে। তবে আগের ভুলের কথা বেমালুম চেপে গেছে। অথচ ভুল খবরটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমে। ভুল খবরের লিঙ্কটি এখনো গুগুলে চলে আসে। কিন্তু পরে অবশ্য খবরটি আর পাওয়া যায় না, শুধু শিরোনাম দেখা যায়।
অবশ্য এখন আশুলিয়ার দেবনায়ার ফ্যাশনসে আগুন লাগানোর চেষ্টার ভিডিও ফুটেজ অনলাইন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে। আর আমজনতা এ ফুটেজকে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনের বলে ধরে নিচ্ছে। সাধারণ পাঠক ও দর্শকদের সংবাদের হুজুগ থেকে রক্ষায় গণমাধ্যমকে আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। আর সংবাদ পরিবেশনে কোথাও ভুল হলে তা সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করতে হবে। কারণ ভুল খবর, খবর চেপে যাওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।
-তায়েব মিল্লাত হোসেন: সাংবাদিক