somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনে যা পড়েছি-৯ (আল মাহমুদের কবিতাসমগ্র)

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(বিগত কয়েকদিনের আল মাহমুদ সংক্রান্ত ব্লগীয় মারামারির সাথে এ লেখার কোনই সম্পর্ক নেই)

আমার বয়স তখন সবে চৌদ্দ। নবম শ্রেনীতে উঠেছি। দুনিয়াটাকে মাত্র রঙিন রঙিন লাগা শুরু হয়েছে। সেবা'র পেপারব্যাক আর হুমায়ুনের বালক-বালিকার প্রেমের জগৎ ছেড়ে কাব্যের রাজপথে হাঁটাহাঁটি করতে মনস্থ করেছি। ব্যাপারটা এমন নয় যে তখন কবিতার প্রতি ততটা ভালোবাসা জন্মেছে। আসল ঘটনা ছিলো, বাঙালীর সে বয়সের স্বাভাবিক নিয়মেই, 'তুমি-আমি', 'খাই-যাই' কিংবা 'করি-ধরি' টাইপের ছন্দবিক্ষুব্ধ (!) কবিতা লিখবার জোর প্রচেষ্টা (অপচেষ্টা) চালাচ্ছি। কিন্তু, স্কুলের পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন একটা কবিতা পড়া না থাকায় কলম হতে লেখাই বেরুচ্ছিলো না!

ভেবে দেখলাম কিছু কবিতা পাঠ আবশ্যক। পাশেই থাকতেন শ্যামল ভাই (এখন চাঁদপুর জেলা জজ)। শিল্প-সাহিত্যের সাথে তাঁর বেশ যোগাযোগ ছিল দেখতাম। অতএব, তাঁর কাছে গিয়ে ধর্ণা দিলাম, একটা কবিতার বই চাইলাম। তিনি ধরিয়ে দিলেন 'নির্মলেন্দু গুণ কবিতাসমগ্র'। 'প্রেমাংশুর রক্ত চাই' কিংবা 'হুলিয়া' পড়ে ভালো লাগলে ও সে বয়েসে এ সব বিপ্লবী কবিতার মর্মার্থ উদ্ধার আমার পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব ছিল না! তার উপর ছন্দ-মাত্রার আগা মাথা নেই।

যাই হোক, শেষ করে আবার গেলাম। এবার, এক কাঠি সরেস! ধরিয়ে দিলেন 'আল মাহমুদ কাব্যসমগ্র'।

গল্পটি আমি আগেও একবার আমার রবীন্দ্র পাঠ, সঞ্চয়িতা এবং একটি স্পর্শকাতর ইস্যু শীর্ষক পোষ্টে বলেছি।

হ্যাঁ, আজ আল মাহমুদের কবিতার সাথে আমার সখ্যতার গল্প।

‘কবিতার আসন্ন বিজয়’ ঘোষনা করে যিনি বাঙলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়েছেন, তিনি আল মাহমুদ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লোক-লোকান্তর’(১৯৬৪)-এ তিনি বললেন, ‘আমার চেতনা যেন শাদা এক সত্যিকারের পাখি/ বসে আছে সবুজ অরণ্যে এক চন্দনের ডালে;...... লোক থেকে লোকান্তরে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি/ আহত কবির গান।’ আবদুল মান্নান সৈয়দ স্বাগত জানালেন, “তাঁর নিচু কন্ঠস্বরে তিনি তাঁর অনুভবের কথা, তাঁর পারিপাআরশ্বিক কম্পমান অগ্রসরমান জীবনের কথা বলে গেছেন”। পরবর্তী গ্রন্থ ‘কালের কলসে’(১৯৬৭) এ চেতনা অনেক পরিণত; লোকজ উপাদানের ব্যবহারে আরো সিদ্ধহস্ত। ‘....এই দলকলসের ভীড়ে ঝোপে আমার কাফন পরে আমি কতকাল/ কাত হয়ে শুয়ে থেকে দেখে যাবো সোনার কলস আর বৃষের বিবাদ?’ গোলাম মুরশিদ বললেন, “জসীমউদ্দীন যেখানে লোকসাহিত্যের উপাদানের উপর তাঁর কুটির তৈরী করেন, আল মাহমুদ সেখানে আধুনিক এক প্রাসাদের কারুকার্যে লৌকিক উপাদান ব্যবহার করেন।”

১৯৩৬ সালে ব্রাক্ষনবাড়িয়া শহরে এক ধর্মপ্রান ব্যবসায়ী পরিবারে কবি আল মাহমুদের জন্ম। ১৯৫৪ সাল হতেই ঢাকা-কোলকাতার নামী সাহিত্য সাময়িকীতে তাঁর সদর্প বিচরন। মাত্র দু’টি কাব্যগ্রন্থই ১৯৬৮ সালে তাঁকে এনে দেয় বাঙলা একাডেমী পুরষ্কার।

বছর তিনেক পরের ‘সোনালী কাবিনে’ আল মাহমুদ অলখের দেখা পেলেন; অধরাকে ধরে ফেললেন। চৌদ্দটি সনেটের সমন্বয়ে এ কবিতাগুচ্ছ বাঙলা সাহিত্যের এক মাইলফলক।
“সোনার দিনার নেই, দেন মোহর চেয়ো না হরিনী
যদি নাও , দিতে পারি কাবিনহীন হাত দুটি
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি ; ”
(সনেট ১)

“তারপর তুলতে চাও কামের প্রসঙ্গ যদি নারী
খেতের আড়ালে এসে নগ্ন করো যৌবন জরদ
শস্যের সপক্ষে থেকে যতটুকু অনুরাগ পারি
তারো বেশী ঢেলে দেবো আন্তরিক রতির দরদ ।“
(সনেট ১০)

বোরহানউদ্দীন জাহাঙ্গীর সোনালী কাবিনের বিশ্লেষন করেন এভাবে, “এই দীর্ঘ কবিতার মধ্যে আছে প্রতীকী ভাষন; নিখুঁত বর্ণনা; আবেগ স্পন্দিত স্তবক; বিচ্ছিন্ন সুন্দর লাইন।...... বাঙালি, কবি, আবহমান মানুষ, ইতিহাসের মধ্যে হৃদয়ের ইতিহাস গেঁথে দিয়েছেন, জনপদ, শস্য, হৃদয় সবই এক মহা সত্যের বিভিন্ন দিক। আর শব্দ আবহম্না, চিরকালীন গ্রামীন এবং লোকজ।”

ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ডাক আসে। কবি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে যান কোলকাতায়। সেখানে অবস্থানকালে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বেশী তর্কে না গিয়ে এটুকু বলাই ভাল হবে, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী ছিলেন না, পক্ষেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে ইত্তেফাকে কর্মরত থাকলেও ১৯৭২ সালে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সাথে থেকে ‘দৈনিক গণকন্ঠ’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব হাতে তুলে নেন৷ এ সময়ের বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতি, দুর্ভিক্ষ, সর্বহারা আন্দোলন ও রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার ইত্যাকার পরিস্থিতিতে দেশ যখন বিপর্যস্ত তখন গণকন্ঠের নিঃশঙ্ক সাংবাদিকতা এ দেশের পাঠক সমাজের কাছে ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়৷ বিশেষ করে আল মাহমুদের সংবাদ প্রকাশের স্টাইল ও সাহসী সম্পাদকীয় দেশবাসীর হৃদয় স্পর্শ করে৷ বিপরীত দিকে, পত্রিকাটি পরিণত হয় শাসক গোষ্ঠীর চক্ষুশূলে৷ ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালে তিনি কারাবরণ করেন৷ তাঁর আটকাবস্থায় সরকার দৈনিকটিও বন্ধ করে দেয়৷ ১৯৭৫ এ তিনি মুক্তি পান৷

এই ‘৭৩ থেকে ’৭৫ সালটাই কবির জীবনের এক সুবিশাল টার্নিং পয়েন্ট। আজীবনের সমাজতন্ত্রী, বাম রাজনীতির প্রতি সহনুভূতিশীল আল মাহমুদ ঝুঁকে পড়েন ইসলামের শ্বাশত সৌন্দর্যের দিকে। ’৭৫ সালে যখন তিনি কারামুক্ত হন তখন তাঁর মনে অন্য এক বিপ্লবের পদধ্বনি। সিদ্ধান্তহীনতার এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিলেন কবি। কোথায় যেন ‘সেই মায়াবী পর্দা দুলে উঠলো’, যার মধ্য দিয়ে কবি অন্য জগতের হাতছানি অনুভব করছিলেন। দ্বিধাদ্বন্দ্বের সুযোগে ‘চক্রবর্তী রাজার অট্টহাসি’ থামে না। কবি তবু পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’(১৯৭৬) তে এভাবেই ধরা পড়লেন কবি।

ইতিমধ্যে তাঁর কবিখ্যাতি পৌঁছে গিয়েছে রাষ্ট্রপতির বাসভবন পর্যন্ত৷ কারামুক্তির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে ডেকে শিল্পকলা একাডেমীর প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেন৷ ১৯৯৩ সালে তিনি ওই বিভাগের পরিচালকরূপে অবসর নেন।
‘অদৃষ্টবাদীর রান্নাবান্না’ (১৯৮০) কাব্যগ্রন্থে কবি মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটাই কাটিয়ে উঠে নিজের বিশ্বাসকে ডানপন্থার দিকে টেনে নিয়ে এলেন। মহানবী হযরত মোহাম্মাদকে(স) নিয়ে লিখলেন,
“গভীর আঁধার কেটে ভেসে ওঠে আলোর গোলক
সমস্ত পৃথিবী যেন গায়ে মাখে জ্যোতির পরাগ;
তাঁর পদপ্রান্তে লেগে নড়ে ওঠে কালের গোলক
বিশ্বাসে নরম হয় আমাদের বিশাল ভূভাগ।”
(হযরত মোহাম্মদ)
আর ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’(১৯৮৫), ‘আরব্যরজনীর রাজহাঁস’(১৯৮৭) এবং ‘প্রহরান্তরের পাশফেরা’(১৯৮৮)- এই তিনটি গ্রন্থে কবি নিজের নতুন বিশ্বাসগত পরিচয়কে নির্দ্বিধায় মেলে ধরলেন। চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদেই অন্তিম তৃপ্তি;
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।”
(বখতিয়ারের ঘোড়া)

এ সময়ের আফগানিস্তানকে নিয়ে লেখা ক’টা পংক্তি আজো কত নিদারুন সত্য!
“আফগানিস্তান আজ কার দেশ নয়? আফগানিস্তান
সব স্বাধীন মানুষের অপহৃত মাতৃভূমি। শুধু
হত্যাকারীদের কোন মানচিত্র থাকে না, নেই।”
(হত্যাকারীদের মানচিত্র)

এরপরের কাব্যগ্রন্থগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত থাকে, যা তাঁকে শেষ পর্যন্ত কোন কোন মহলের কাছে মৌলবাদী কবি অভিধায় অভিযুক্ত করে তোলে। কিন্তু, মজার কথা হলো, এত কিছুর পরেও কবি কাব্যের ক্ষেত্রে তাঁর মৌলিকত্ব বিসর্জন দেন নি। শহুরে কথকতায় গ্রামীন উপাদান আজো তাঁর কাব্যের অবিচ্ছেদ্য অনুসঙ্গ। আজো নারীর প্রতি তাঁর অনতিক্রম্য প্রেম। ফ্রয়েডীয় যৌন চেতনাকে বেঁধেছেন শৈল্পীক রূপে। কবি নিজেই বলেন, “দেহগত মিলনের আগে যে সম্পর্ক তৈরি হয় সেটা আসলে আকর্ষণ। যৌন আকর্ষণ থেকে সেটা হয়। কোনো নারী যখন কোনো পুরুষকে দেহ দিয়ে খুশি করে তখন এরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নাম হলো প্রেম। সামগ্রিক অর্থে ভালোবাসা হলো মানুষের প্রতি মানুষের একটা আকর্ষণ। একজন মানুষকে পছন্দ করি সেটা তো এমনিতেই করি না। আর দশজনের চেয়ে আলাদা বলেই তো পছন্দ করি। তার কিছু গুণ থাকে, কিছু প্রতিভা থাকে।” অর্ধশতাব্দী আগে তিনি লিখেছিলেন,
“আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখো বুকের গঠন
লুকানো যায়না তবু অনিবার্য যৌবনের ফুল
প্রতীকের মত যেন জেগে থাকে তোমার জঘন ।”
(অহোরাত্রঃ লোক লোকান্তর)

আর এখনো তিনি লিখেন,
“রাত্রে এসে রাতেই যেও চলে
উদোম হাওয়া এখন চরাঞ্চলে।
..........
একলা জাগি চরের ঘোরে রাত
তোমার জন্য ঢাকা গরম ভাত
কৌটা ভরা রাখা গাওয়া ঘি
কতকাল তো ফিরতে পার নি।
তোমার শাড়ি ভিজবে না ঐ জলে
রাত্রে এসে রাতেই যেও চলে।”
(চিরকূটঃ বারুদগন্ধী মানুষের দেশ)

আল মাহমুদের কাব্যসমগ্র আমার কাছে এক অবিশ্বাস্য বিবর্তনের স্বাক্ষী বলে মনে হয়। যে পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন তাঁর ঠিক বিপরীত জীবনবোধ নিয়ে কাব্যসাধনা শুরু করে স্বল্পসময়ে দুই বাঙলায় তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা অর্জন; অতঃপর হঠাৎ বাঁক নিয়ে জীবনবোধের পরিবর্তন এবং বিতর্কিত হয়ে ওঠা- এই পুরো ব্যাপারটাই যেন তাঁর কাব্যে ধরা পড়েছে। এ সব কারনেই পঞ্চাশের দশকের বাঙলা কবিদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী এবং শামসুর রাহমানের অবর্তমানে সমকালীন বাঙলা সাহিত্যের অবিসম্বাদিত প্রধান কবি আল মাহমুদকে নিয়ে কথা-অপকথার শেষ নেই।

ব্যক্তি আল মাহমুদ কেমন তা নিয়ে আমার খুব বেশী মাথাব্যাথা নেই। মাথাব্যাথা নেই শামসুর রাহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায় আর তাঁর মাঝে কে বড় কবি তা নিয়ে। তাঁদের নিজেদের মাঝে যখন এ নিয়ে মারামারি ছিল না তখন আমরা কে? জিয়া এবং এরশাদ সরকারের আনুকূল্য লাভ করেছেন, সংগ্রামমুখর পরিবেশ থেকে দূরে থেকেছেন- এ নিয়েও তাঁর নিজস্ব বিশ্লেষন রয়েছে। তিনি সরকারী চাকুরে ছিলেন, বামপন্থী কবিদের ভীড়ে কোনঠাসা ছিলেন- ইত্যাকার কৈফিয়ত অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে- এ সবও আমার বিবেচ্য বিষয় নয়।

আমি বিবেচনা করি, তাঁর কবিতা আমায় কতটা আলোড়িত করে; তাঁর কাব্য ভবিষ্যতের বাঙলা কবিদের কীভাবে পথ দেখায়। ব্লগার মাহবুব লীলেনের মত করেই বলি, “আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা রাজনীতিবিদদের বিচার করি পরিবারের ইতিহাস দিয়ে আর কবিদের বিচার করি তার রাজনীতি দিয়ে এবং এটা শুধু করি আমাদের হতভাগা বাংলাদেশের জন্যই অথচ আমরা এজরা পাউন্ডকে বর্জন করি না ফ্যাস্স্টি হিসেবে শেক্সপিয়রকে বর্জন করি না সাম্প্রদায়িক এবং মানবতা বিরোধী হিসেবে ড়্যাবোকে বর্জন করি না দাস ব্যবসায়ী হিসেবে।”

তারপরেও কথা থেকে যায়। অনেকেই বলেন, ডানপন্থী চিন্তাধারা তাঁর কবিত্বকে নষ্ট করে দিয়েছে। ভিন্নমত থাকতেই পারে। তবে, কথাটা আমার একপেশে বলেই মনে হয়। সুনীল যখন বলেন,

“চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়-
আমি এখনও প্রস্তুত হতে পারি নি, আমার অনবরত
দেরি হয়ে যাচ্ছে
আমি এখনও সুড়ঙ্গের মধ্যে আধো-আলো ছায়ার দিকে রয়ে গেছি,
আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে
চে, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়!”


তখন আমরা হাততালি দিই। আর মাহমুদের কন্ঠে যখন উচ্চারিত হয়,
বেড়ালের পায়ের সতর্কতা নিয়ে লোকটা গোলার্ধ থেকে গোলার্ধে
ঘুরে ফিরে সংবাদপত্রের ছবি হয়ে থাকে।......
..........................., এই পার্বত্য উপত্যকার
প্রতিটি পাহাড়চুড়ো এবং পবিত্র স্তম্ভগুলোর শপথ, শপথ
পবত্র কাবা তাওয়াফকারী এখানে উপস্থিত প্রতিটি
নর-নারীর। যদি দলবদ্ধভাবে একবার, শুধু একবার। এমনকি
নিরস্ত্রভাবেও একবার। যদি
আমার দেশ প্যালেস্টাইন। শত্রু অধিকৃত একটা শহর। আপনাদের
প্রথম কেবলা। একবার যদি ভাইগণ।
আল কুদ্‌সের দিকে মুখ ফেরান, একবার।.......”
(মীনার প্রান্তরে ইয়াসির আরাফাত)
তখনি আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়; ফলশ্রুতিতে, তাঁকে মৌলবাদী গালাগালে জর্জরিত হতে হয়! সত্যিই সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ! অথচ, তিনি এখনো রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসেন। বলেন,
“পূণর্জন্ম নেই আর। অথচ, পেকে উঠেছে বাঙলা ভাষা
আরও একজন রবীন্দ্রনাথের জন্য। এই ঢাকায়।”
(রবীন্দ্রনাথঃ বারুদ্গন্ধী মানুষের দেশ)
‘পানকৌড়ির রক্ত’, ‘কাবিলের বোন’ আর ‘উপমহাদেশ’- তাঁর শক্তিশালী গদ্য আর ভিন্নধর্মী সমাজ দর্শনের সাক্ষ্য বহন করে। এখনো তিনি ‘দশ দিগন্তে উড়াল’ দিতে চান। ‘বিচূর্ণ আয়নায় এখনো কবির মুখ’ দেখতে পাওয়া যায়।

এ সব মিলিয়েই আল মাহমুদ অসাধারণ- বিতর্কের ক্লেদ ছাপিয়ে যাঁর কাব্য প্রতিভা বাঙলার সাহিত্যাকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এবং থাকবে।

অনুপ্রেরণাঃ আল মাহমুদের কবিতার চিত্রকল্পে নারীর সৌর্ন্দয ও যৌনতা- নুরুজ্জামান মানিক

সহায়িকাঃ
১. কবি আল মাহমুদের সাক্ষাতকার –মাহবুব মোর্শেদ
২. আল মাহমুদ ও জয় গোস্বামীর সঙ্গে আলাপ -ব্রাত্য রাইসু
৩. শামসুর রাহমান আল মাহমুদ তফাৎ ও সাক্ষাৎ
৪. বাংলা কবিতার একটা মোড় ফেরা উচিত- আল মাহমুদ
৫. আল মাহমুদ
৬. কবিতা সমগ্র- আল মাহমুদ (অনন্যা প্রকাশনী)
৭. কবি আল মাহমুদ কি আদৌ মুক্তিযোদ্ধা?- আরিফ জেবতিক

………………………………………………
……………………………………………..
আগের লেখা।
জীবনে যা পড়েছি-৮ (অগ্নিপুরুষ- মাসুদ রানা)

জীবনে যা পড়েছি-৭ (নিমাই ভট্টাচার্যের মেমসাহেব)

জীবনে যা পড়েছি-৬ (শীর্ষেন্দুর দূরবীন)

জীবনে যা পড়েছি-৫ (মানিকের পুতুল নাচের ইতিকথা)

জীবনে যা পড়েছি-৪ (তারাশংকরের কবি)

জীবনে যা পড়েছি-৩ (পথের পাঁচালী)

জীবনে যা পড়েছি-২ (লোটাকম্বল)

জীবনে যা পড়েছি-১ (লা মিজারেবল)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০৭
৫১টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×