somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের বিয়ের গল্প - পর্ব ১

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের বিয়ের কথাবার্তা পারিবারিক ভাবেই চলছে, আসলে প্রবাসীদের বিয়ের বিষয়টা সাধারনত পরিবারই দেখে।
ঐযে একটা কথা আছেনা, আমার একচোখে পারিবার দেখি আরেকচোখে কাজ, ৩য় চোখ নাই যা দিয়ে নিজেকে দেখব। যার জন্য ৩য় চোখের কাজটা পরিবারই করে।
কয়েকটা মেয়ে দেখে ছবি পাঠিয়ে কিছুটা ডিটেইলস দিয়ে জানতে চাইল কোন মেয়েটা পছন্দ হইছে, ছবিগুলি কয়েকবার দেখে তনির ছবিটা আলাদা করে বল্লাম এর বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন।
পরিবার তাদের মত কথা এগিয়ে নিয়ে আমাকে জানাল দেশে আসার জন্য, আমি কাজের মানুষ কাজ ছাড়া কিছুই বুঝিনা। অফিসে কথা বলে দেশে যাওয়ার তারিখটা জানালাম, এই তারিখ মানে বিয়ে করার জন্য না। একটু কথা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাতের ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে উড়াল দিলাম, পরদিন তনিদের বাড়িতে যাব।
সকালের নাস্তা করে তনিদের বাড়িতে আসলাম, এই একটু পরিচয় হওয়া আর কি। আমাদেরকে রিসিপ করলেন তনির মামা, ভদ্রলোক অনেক অমায়িক এবং মিশুক।
পাত্রী দেখতে এসে মনেহয় একপ্রকার ইন্টারভিউ দিতে বসলাম, এইসেই হাজারও প্রশ্ন করা হলো। আমার যতটুকু ততটুকুই উত্তর দিলাম, মনেহচ্ছে ঘটক বেটা কিছু বাড়িয়ে বলেছিল তাই কোন কোন উত্তরের পরে একজন আরেক জনের দিকে তাকাচ্ছে।
সুন্দর পরিপাটি সাজানো একটা পুতুলের মত মেয়েকে আমার সামনের সুফাতে বসানো হল, সাধারনত কন্যাকে লাল বা উজ্জল রং এর শাড়ি পরানো হয় কিন্তু তনিকে এখটা নীল শাড়িতে আমার সামনে আনা হল। নীল শাড়ির সাথে খুপায় বেলি ফুল চোখে কাজল, হালকা একটু মেকআপ করা হয়েছে, চোঠে কি কালারের জেনো একটা লিপষ্টিক দিয়েছে। আমার কালার চিনতে সমস্যা হয়, আমি কয়েকটা কালার ছাড়া অন্য কোন কালার সহজে চিনতে পারিনা।
ফর্মালিটি বলতে যা জানতে চাওয়ার দরকার তাই জানতে চাওয়া, যদিও কোন প্রশ্ন করার ইচ্ছা আমার ছিলনা কিন্তু মুরুব্বিরা বল্লা কিছুই না জানতে চাওয়া অভদ্রতা তাই কিছু জানতে চাওয়া।
আমি মানুষটা ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে পারিনা, তাই সরাসরি বল্লাম "আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে, আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা বলতে পারেন" তনি নিরব হয়ে বসে আছে। পাশ থেকে মামা বল্ল নিরবতা সম্মতির লক্ষন, আমরা কথা এগিয়ে নিতে পারি।
আমাদের পক্ষ থেকে ফুফা জানতে চাইল কতজন বরযাত্রী আসতে পারব, তবে ২শ এর কম হলে ইজ্জত থাকবেনা। কোন ভেন্যুতে অনুষ্ঠান করবে এটাও জানতে চাচ্ছে। আমাদের পরিবারে যৌতুক এর পচলন নাই তাই যৌতুক নিয়ে কথা উঠবেনা এটাই স্বাভাবিক। মেয়ে পক্ষও দেনমোহর কত এবং মেয়েকে কি কি গহনা দিতে হবে এইসব কথা শুরু করলেন। ২০ লাখের নিচে কাবিনে বিয়ে হলে ইজ্জত বাচবেনা, ইত্যাদি ইত্যাদি
এইসব বিষয়গুলি আমার কাছে অনেকটা অস্বস্থি লাগছে। আমি একটু কাশি দিলাম, এই কাশির মানে যক্ষা না। এটার সরল মিনিং হল আমি কিছু বলতে চাচ্ছি।
আমার কাশি দেখে তনি এগিয়ে এসে এক গ্লাস পানি দিল, গ্লাসটা মনে হয় নতুন অথবা মাত্রই সুকেস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। রেগুলার ইউজ করার গ্লাস হলে কিছু ক্রেচ থাকত, এই গ্লাসটা চকচকে পরিষ্কার।
আমি পানিটা হাতে নিলাম একটু খেয়ে উঠে গিয়ে টেবিলে রাখলাম।
সবার সামনে দাড়িয়ে বলতে লাগলাম, বিয়েতে কোন বরযাত্রী আসবেনা। হইতো বাবা মা এবং ২/৩ জন সাক্ষী থাকবে। যতজন সাক্ষী থাকলে ইসলামে বিয়েকে বৈধ্য বলাহয় ততজন থাকবে। এবং দেনমোহরের বিষয়টা আমি যত ক্যাশ দিতে পারবো ততই হবে, সামর্থের বাহিরে গিয়ে কাগজে লিখে বিয়েটাকে অবৈধ বা হারাম করতে পারবনা।
ভ্যেনুর বিষয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নাই, আমাদের বিয়েটা হবে মসজিদে। এবং মসজিদে নববীতে, রাসুল (সাঃ) এর মসজিদে।
এতটুকু বলে আমি থামলাম, সবাই একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। হইতো আমি দাড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে এতগুলি কথা বলার জন্য অনেকে বেয়াদবও ভাবতে শুরু করেছে। আমি আবার শুরু করলাম, আলেমের সাথে কথা বলে যতটুকু ভাল মনে করেছি ততটুকুই বলেছি, ইসলামের বাহিরে গিয়ে চাকচিক্য বিয়ে করতে পারবনা। সেই বিয়েতে আল্লাহর রহমত থাকেনা।
অধিক কথা বলার জন্য এবার সত্যি সত্যি কাশি আসল, তনির মামা নিজের গ্লাসে পানি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। পাশে দাড়ালেন, অবাক হয়ে আমাকে দেখছেন। সুন্দর করেই জানতে চাইলেন, কি করে এমন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব?
আমি পানি খেয়ে দাড়ালাম, আবার কথা বলতে শুরু করলাম। বিয়েতে মেয়ের বাবা এবং ২জন স্বাক্ষী থাকা বাধ্যতামুলক, আমি চাই তনির বাবা মা পাসপোর্ট করবে তারপর ওমরাহ ভিসা করবে। আমার বাবা মাও সাথে যাবে, একজন মাওলানা আমাদের সাথে যাবে। এর বাহিরে যদি আর কোন ব্যক্তির উপস্থিতি প্রয়োজন হয় তাহলে উনিও যাবেন। তবে বিয়ের বিষয়ে যতজন যাবেন সবার খরচ আমি বহন করবো।
আমার কথা শেষ না হতেই তনির বাবা বল্লেন বিয়ের অনুষ্ঠান করতে টাকা খরচ হত, যেহেতু অনুষ্ঠানের জন্য টাকা লাগছেনা তাই কনেপক্ষের যতজন যাবেন সবার খরচ উনি বহন করবেন। আমি বিনয়ের সাথে উনাকে থামিয়ে দিলাম, বল্লাম মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করতে অনেক খরচ করেছেন। এখন থেকে সবটা দায়িত্বই আমাকে দিন, আল্লাহ আমাকে তৌফিক দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ সবটা খরচ আমি ম্যানেজ করতে পারব।
এখন কাজ হল, যারা যারা যাবে তাদের লিষ্ট করতে হবে, ভিসা করতে হবে, হোটেল বুকিং করতে হবে, এয়ার টিকেট কাটতে হবে। আগে পাসপোর্ট হাতে আসুক তারপর অন্য কিছু।
আমি তাকিয়ে দেখছি তনির চোখে পানি ছলছল করছে, একটু হলেই টুপুস করে সোফার হাতলে পরবে। তনি যেভাবে বসে আছে চোখের পানি ঐখানেই পরার কথা। আমি অপেক্ষা করছি এই দৃশ্যটা দেখার জন্য।
সবাই মোটামুটি একটা কনফার্মেশনে আসলাম বিয়ের অনুষ্ঠান মদিনাতে হবে, কারা যাবে তাদেরও একটা লিষ্ট হল। তনির মামা আমার হাত ধরে বল্ল "বাবা, এমন বরকতময় বিয়ে দেখার জন্য আমি তোমাদের সাথে যাব। শুনেছি সাহাবীদের বিয়েতে অনেকেই হেল্প করতো, আমি যাবো তবে খরচের অংশটা আমি দেবো, তুমি দিতে পারবে জানি তবও এমন বরকতময় কাজে একটু অংশিদার হতে চাচ্ছি, প্লিজ মানা করোনা"
তনির দুলাভাইও একি কথা বল্ল, পিছন থেকে তার চাচাও এমন প্রস্তাব রাখলেন। এখন আমার দায়িত্ব তনি এবং তার বাবা মা এবং আমি আর আমার বাব মায়ের ভিসা টিকেট এবং হোটেলের ব্যবস্থা করা।
তনির বাবা দাড়াল, তনির পাশে দাড়িয়ে বল্লা তুমিতো সবই শুনেছ। এমন বিয়েতে তোমার মতামত কি? তনি ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ে বল্ল "আল্লাহ স্বাক্ষী আপনাদের প্রস্তাবে আমি একমত"
.
হালকা নাস্তার পর্ব শেষ করে আমরা বিদায় নিলাম, তনির বাবা এবং মামা দুজনই আমার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছেনা, ভদ্রলোক কান্না করছে। পকেট থেকে টিস্যু বের করে উনার হাতে দিলাম আর বল্লাম এখন কান্না করবেন না, যদি কোনদিন আমার দায়িত্বে অব হেলা করি তখন নাহয় শাসনের শেষে কান্না কইরেন।
.
আমরা সবাই তনিদের বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি, ঢাকা ফিরে ট্রাভেল্স এজেন্ট এর সাথে কথা বলতে হবে ভিসার জন্য। আমি নিচে দাড়িয়ে থেকেও বুজতে পারছি ৩ তলার বারান্ধা থেকে তনি নিজের দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখ ছলছল করছে।
আমি উপরের দিকে তাকালামনা, চোখের পানির সামনে দাড়ানোর শক্তি আমার নাই.............
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩২
১৬টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×