জীবনকে সহজ করে ভাবতে পারাটা একটা যোগ্যতা, কখনও কখনও মনে হয় এটা ইশ্বরের অনুগ্রহ, জটিল করে ভাবতে গিয়ে জীবনের সাবলীল চলার পথ হয়ে উঠে প্রাণহীন, একঘেয়ে। ইদানিং প্রায়ই মানসিকভাবে হাপিয়ে উঠি। এতো এতো অভিযোগ নিজের প্রতি নিজের।তখন নিজেকে আর ভালো লাগেনা তখন খুজি নিজকে কেনো এত ঘৃণা করি, হিসেব করে দেখি- আমার প্রতি আমার এতো চাওয়া যা আমার সাধ্যে নেই বা হাতে নেই কিন্তু এটা আমার চাই এভাবনায় সারাক্ষন অস্থির থাকায় না পারি নিজেকে সময় দিতে, না পারি নিজেকে ভালবাসতে, না পারি জীবনকে সহজভাবে উপভোগ করতে। না পাওয়ার বেদনায় কষ্ট পাচ্ছি, ঘুমুতে পারছিনা, ইমোশন উঠা নামা করে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি সব কিছু অর্জন করতে পারবো আবার কখনও মনে হয় আমার দ্বারা কিছু হবে না। এক জটিল সমীকরণে চলছে জীবন।
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমার সবটুকু শান্তি এখানেই লুকিয়ে আছে তাই এটা আমার চাই, কিন্তু পাওয়ার জন্য কষ্ট করতে গেলে হাপিয়ে উঠি তখন মনে হয় জীবন কেনো এত কষ্টের, তখন মনে হয় আমি অলস। এটা মানতেও পারি না, নিজের অতীতের দিকে তাকালে দেখতেই পাই আমি কত মানুষের অনুপ্রেরণা ছিলাম, অথচ আজ আমি নি:স্ব, একটু মানসিক আশ্রয়ের জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে আছি। এসময় এসে মনে হয় জীবনকে ছেড়ে দেয়াটাই ভালো, ইশ্বর তার ইচ্ছা পূরণ করুন, আমিতো জোর করে কিছু অর্জন করতে পারলাম না। এই ইশ্বরের প্রতি দোষারোপ করে জীবন থেকে পালিয়ে যাবার পথ খুজঁছি এটাও ভাল লাগছেনা।
মানুষ নিরুপায় আর অসহায় তার ভবিষ্যতের কাছে, ভবিষ্যত না জানার কারনে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ, হতাশায় আবেগপ্রবন থাকে, অথচ যেভাবে ভেবেছিল সেরকম হয়নি, এখানেই আমি নিয়ন্ত্রণহীন, মানুষ যত তার বর্তমানের উপর মনযোগ দিবে সে তত সফল। অতীতের আতংক, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা একটা অস্থির জীবন ছাড়া আর কিছু দেয় না, বর্তমানকে অগ্রাধিকার দিলে তার কাজের লক্ষ্য খুজে পায় বা কাজটি কিভাবে করবে তারও নির্দেশনা পাওয়া যায়, কিন্তু বর্তমানে মনোযোগ রাখাটাই একটা যোগ্যতা, এযোগ্যতা সবার সমানভাবে থাকে না।
তবে জীবনটাকে একজন মানুষের জন্য রেখে দেয়ার মতো বোকামি আর নেই। আমি একজন মানুষের ভালবাসার জন্য বা ভালবাসতে পৃথিবীতে এসেছি এ ধারনা করাটা ভুল। এতে তাকে না পেলে মানসিক শান্তি অর্জন করাটা কঠিন হয়ে পরে। অরটারনেটিভ ভাবা ও খোজ পাওয়াটাও কঠিন হয়ে পরে।সাথে সাথে থাকে দ্বিধাগ্রস্থের জীবন।
ইমোশন বের করে দেয়ায় মানসিক শান্তি পাওয়া যায়, ধরুন খুব আহত হয়ে বা অতীতের কষ্টের কথা মনে পড়ে চোখে জল এসে গেলো তখন কাঁদার মতো শান্তি আর কিছুতে নেই।
কাউকে ঘৃণা করার মধ্যে শান্তি আছে, বিরক্তি আছে, প্রেরণাও আছে। জীবনকে নতুন করে বাচার স্বপ্নও আছে। কাউকে ঘৃণা করলে মনে প্রাণে আন্তরিকতার সাথে করা উচিত।এটা না হলে চরমতম দ্বিধাগ্রস্থ মানসিক সংকটে পরার ঝুকি থাকে। শুধু ঝুকি নয় জীবনও থেমে যেতে পারে।
নিজেকে ভালবাসতে না পারলে সফল হওয়া যায় না, এমনকি আত্মবিশ্বাসও অর্জন করা যায় না। নিজেকে ভালবাসতে না পারলে জীবনের লক্ষ্য থাকে না, এক ধরনের ভীতু আর আলসেমির জীবন আপনা আপনি তৈরী হয়ে যায়। এরপর পতন আর পতন। নিজেকে ভালবাসতে গেলে স্বার্থপরের মতো অপরকে তুচ্ছভাবাটাও শিখতে হবে। তারচেয়ে বড় একটা ব্যাপার থাকে সেটা হলো নিজেকে সম্মান করা। নিজেকে ছোটভেবে মানসিকভাবে বড় হওয়া যায় না। মানসিকভাবে বড় না হলে স্বপ্ন দেখা যায় না আর স্বপ্ন না দেখলে পরিশ্রম করা যায় না। পরিশ্রম না করলে পতন ঠেকানো যায় না।
মানসিক দ্বিধাগ্রস্থ জীবন বা থেমে যাওয়া জীবন থেকে মুক্তি পেতে প্রথমেই কিছু স্মৃতি ভুলে যেতে হবে। যেসব স্মৃতি নিজে ভুল করেছি বলে মনে করিয়ে দেয় তা ডিলিট করে দিতে হবে। যেসব স্মৃতি মনে করলে দু:খ বাড়ে, হতাশা আশে তা ভুলে যেতে হবে। ভুলতে হলে- পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে এমন সবকিছুই বর্জন করতে হবে সবার আগে।যাকে বা যাদের বা যা ভুলে যেত চান তার বা তাদের বা তা সম্পর্কে খোজ নেয়াটা বন্ধ করতে হবে। কেমন আছে কিভাবে আছে কোথায় আছে এসব জানা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন অবশ্যই সফল হবেন।এরপরের অংশে নিজের লক্ষ্য স্থির রেখে পরিশ্রম করে যেতে পারলেই সফলতা আসবেই।
হ্যা মাঝে মাঝে ইমোশন নিয়ন্ত্রনহীণ হয়ে পড়বে, তখন যাকে ভুলে যেতে চান তার সাথে যোগাযোগ করতে যাবেন না। তাহলে আর বেরিয়ে আসতে পারবেন না। এরপর ইমোশন নিয়ন্ত্রনে আসলে একধরেনর অপরাধবোধে ভুগতে পারেন। কেনো এটা করেছি এনিয়ে নিজেকে দোষারোপ করবেন, নিজের প্রতি ঘৃণা ও রাগ জন্মাতে পারে, আর এরমতো মানসিকপীড়ন আর কিছু নেই।
জীবনকে সহজভাবার মধ্যে শান্তি আছে, না পাওয়ার বেদনা থাকলেও জীবনে স্থিরতা আসে। আজ যেটাকে জীবনের সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ ভাবছেন সময় গড়িয়ে গেলে সেটা হয়তো ততটা গুরুত্বপুর্ন নাও ভাবতে পারেন। তাই প্রথম ভাবনায় কোন কিছুকে পরম সত্য ভেবে নেয়াটা যুক্তিহীন। যখন দেখছেন নিজে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারছেন না তখন ইশ্বরের হাতে ছেড়ে দেয়াটা ভালো, এতে মানিসক স্থিরতা, শান্তি, কঠোর পরিশ্রমের প্রেরণা পাওয়া যায়, তা না হলে হতাশ হয়ে জীবনকে থামিয়ে দেয়ার মতো ভাবনা চলে আসে। তবে খুব ভালভাবে এটা দেখতে হবে ইশ্বরের হাতে ছেড়ে দিতে গিয়ে এই ভাবনা ভাবছেন কিনা- “এখন থেকে আমি ইশ্বরের হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় থাকলাম, আমার আর করার কিছু নাই, ইশ্বর যা চাইবেন আমি তাই করবো। তিনি একটা মিরকাল ঘটাবেন আর আমার সব দু:খ দুর্দশা দূর হয়ে যাবে। তিনিইতো আমাকে দিয়ে এসব করাচ্ছেন”। এটা ভাবলে আপনার জীবন থেমে যাবে, কোন কিছুতেই আপনার মনযোগ থাকবে না।আপনার উৎসাহ, উদ্যেগী মনটা মরে যাবে। এমনকি জীবন উপভোগের যে অনেক রাস্তা আছে সেটা আপনি খুঁজে পাবেন না। জীবন হয়ে উঠবে নিরস একগুয়ে আর আপনার মনে হবে পৃথিবীতে আপনার আপন বলে কেউ নেই, চরমতম একাকীত্বতে ভুগবেন।
তাই ইশ্বরের হাতে ছেড়ে দেয়াটা হলো- আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হয়নি, হয়তো ভবিষ্যতে এরথেকে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে, যেহেতু আমি ভবিষ্যত জানিনা ইশ্বর জানেন।তাই তিনিই ভাল জানেন এবং তিনি আমাকে ভালটাই দিবেন। এভাবে ভাবলে জীবনে একধরেনর আশার জন্ম নেয় আর এটাই জীবনকে নতুন করে বাচার প্রেরণা দেয়। নতুন করে পরিকল্পনা করার শক্তি দেয়। পরিশ্রম করার মানসিকতা তৈরী করে দেয়।(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




