somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়ঙ্কর গাইবান্ধা

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশের জেলা গাইবান্ধা হঠাৎ গত কয়েক বছরে হয়ে উঠেছে অশান্ত ও ভয়ঙ্কর। জেলার কমপক্ষে তিনটি উপজেলায় উগ্রবাদীদের তত্পরতা ভাবিয়ে তুলেছে দেশের প্রশাসনকে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই বেরিয়ে আসতে থাকে গাইবান্ধার এ পরিবর্তিত চেহারা। জামায়াতে ইসলামীর ধ্বংসলীলার নানা চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন স্থানে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পড়েও দেখা গেছে একই চিত্র। ভোটকেন্দ্র হিসেবে স্কুল জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে অর্ধ ডজন পুলিশ হত্যা এবং অস্ত্র লুটের ঘটনাও ঘটেছে এ জেলায়। পরবর্তীতে হলি আর্টিজানের বীভৎস হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া জঙ্গিদের একটি অংশকে গাইবান্ধার যমুনার চরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রমাণও পায় গোয়েন্দারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ির বিভিন্ন অংশে বেশ আগে থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ ছিল জামায়াতের একচ্ছত্র আধিপত্য। জামায়াতের এমপিও ছিল সেখানে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এ নেটওয়ার্কের ছত্রছায়াতেই উগ্রমতাদর্শ বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলাশহর গাইবান্ধার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তেমন সচ্ছল না হওয়ায় সহজ হয়েছে উগ্রবাদীদের সদস্যসংগ্রহ। অনেকে পরিবারসহ জড়িয়েছে এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে। যার সর্বশেষ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাড়িতে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের এমপিকে গুলি করে হত্যার ঘটনা। জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। মামলার রায় ঘোষণার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তাণ্ডব শুরু করা হয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। জামায়াত-শিবির কর্মীরা সুন্দরগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, থানা-ফাঁড়ি ও পুলিশের ওপর হামলা করে। তারা বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন, সুন্দরগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি, ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়ে দেয় এবং লুট করে। আগুনে পুড়িয়ে ও নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয় ৪ পুলিশ সদস্যকে। এভাবে পুরো সুন্দরগঞ্জ চলে যায় জামায়াত-শিবিরের দখলে। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে চলে অচলাবস্থা। বেশ কয়েক স্থানে এ সময় রেল লাইনও উপড়ে ফেলা হয়। কয়েকদিনে স্থানীয় প্রায় দেড় শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইউএনও অফিস, উপজেলার বেলকা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ভাঙচুর এবং উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাস ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জের পাশাপাশি গাইবান্ধার অন্য উপজেলাতেও চলে তাণ্ডব। তারা বড় বড় রামদা নিয়ে টহল দেয় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে। বিশেষত গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর মহেশপুর, সাদুল্লাপুরের গোসাইজানি ব্রিজ এলাকা এবং গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের অধিকাংশ এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়কের গাছ কেটে তারা পাহারা বসায়। সে সময়ই সাঘাটা উপজেলায় রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ৪ যাত্রী এবং সদর উপজেলার তুলসীঘাটে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে নয়জন নিরীহ যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। গাইবান্ধার বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুসারে, এরপর পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাবের মুহুর্মুহু অভিযান ও গ্রেফতারের ফলে আপাতত বন্ধ হয় ধ্বংসলীলা। কিন্তু শুরু হয় চোরাগোপ্তা হামলা ও জঙ্গিবাদী তত্পরতা। গত বছর গোবিন্দগঞ্জে তরুণ দত্ত ও দেবেশ প্রামাণিক নামে দুই ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করে জঙ্গিরা। সুন্দরগঞ্জের ডোমেরহাটে গলা কেটে ফেলে রাখা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা মামুনকে। গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার আগে জঙ্গিরা গাইবান্ধার দুর্গম চরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। যমুনা নদীর একটি চরে সাতজনকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন ধরে। এই প্রশিক্ষণ দিয়েছিল কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি রায়হান কবির। দুর্গম এই চরগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনবসতি না থাকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন সহজ হয়েছিল। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এ বিষয়ে বলেন, ২০১৩ সালে বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে চারজন পুলিশসহ ছয়জনকে হত্যা করেছিল জামায়াত-শিবির কর্মীরা। সে মামলার আসামিদের যথাযথ শনাক্ত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে পারলে আজ লিটনের হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটত না। গাইবান্ধা সদরের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে হামলার লক্ষ্যে পরিণত হন সুন্দরগঞ্জের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন। লিটনের শত্রুই ছিল জামায়াত-শিবির। ছাত্র রাজনীতি যখন করতেন তখন থেকে জামায়াতকে প্রতিহত করে সুন্দরগঞ্জে রাজনীতিতে তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। জামায়াতের চক্রান্তের মধ্যেই সংসদ সদস্য পদ ধরে রেখেছিলেন। জামায়াতকে এক ধরনের কোণঠাসা পরিস্থিতিতে রেখেছিলেন তিনি। লিটনের এই মৃত্যুতে কে লাভবান হবে? এতেই তো বোঝা যায়—ঘটনাটা কে বা কারা ঘটিয়েছে। তারা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসলীলা চালানোর অপচেষ্টা এখনো করেই যাচ্ছে।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:১৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×