somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগে ১ মাস এর কম ২৭ দিনের ০ দিন আগে মাত্র ৪২৭ হিটকে সঙ্গী করে একটি লোভী ও স্বার্থপর জীবনের কিছু কথা:|

১২ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজেকে ছোটবেলায় সবার থেকে আলাদা মনে করতাম।আমাদের নাফিস ইফতেখার এর মতো মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে কিছু পাইনি, অপূর্ণতাগুলো খোঁচা দেয় অবস্থা। নাফিস এর ব্লগে ১০ মাস ১০ দিনের ৭ দিন আগে, ২ লক্ষ হিটকে সঙ্গী করে একটি লোভী ও স্বার্থপর জীবনের কিছু কথা পোষ্ট টা এত্তটাই আমার সাথে মিলে যা বলার মতো না।

বয়স তখন খুবই কম, বলা যায় ৬ বছর। এক বিকেলে আব্বু কোথায় থেকে যেন একটা বড়দের সাইকেল কিনে নিয়ে আসলেন। আমাদের টিনের বাড়ীর পাশেই যে আমগাছ টা ছিল, ঠিক ওখানটায় দাঁড় করিয়ে রাখলেন। আমাকে আর পায় কে। খুশিতে নাচার মতো অবস্থা। আব্বু আমাকে পিছনের সিটে বসিয়ে কিছুক্ষন এর জন্য ঘুরিয়ে আনলো। মন টা খুব ভালো ছিল আমার। সন্ধ্যায় আসলেন আমার মেজ ফুফা। আব্বুর সাথে সাইকেল বিষয়ক কি সব কথা বলে রাতে সাইকেল নিয়ে চলে গেলেন। সে রাতে আমার সেকি কান্না। কেন নিল?? আম্মু আব্বু তাঁদের একমাত্র সন্তান কে কি বলে বুঝ দিবে, সেটা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তাঁরা বলেছিলেন যে ২ দিনের জন্য নিয়ে গেছে। ২ দিন পরে ফিরে আসবে। ফিরে আসেনি সেটা। মেজ ফুফার বাসার নিচেই দেখতাম ওটা পড়ে রয়েছে। সাইকেল এর জন্য মায়া লাগত শুধু এই ভেবে যে, বিকেলে আব্বুর অফিস শেষে ওটা টে চড়ে আমরা ২ বাপ-বেটা ঘুরবো। কিন্তু আর হয়ে উঠেনি। আমার বাবার কোনো জিনিস মানুষের কাছে ভালো লাগলে সেটা বাবাকে পটিয়ে নিয়ে যেত কেমন করে যেন।


বয়স তখন ৭ কি ৮, এমন সময় সুদূর ফ্রান্স থেকে আসলেন চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ এর স্ত্রী আনা ইসলাম। সম্পর্কে আমার বড় ফুপুর মেয়ে। মানে আমার ফুফাত বোন।:P বিদেশ থেকে আসলে যা হয়। বাচ্চাদের জন্য চকলেট :P । আমাদের সবার জন্য নিয়ে আসলেন M&M'S এর চকলেট। জিনিসটা ছিল অনেকটা এরকম -




খেয়াল করে থাকবেন এই চকলেটের প্যাকেটের ক্যাপ এ মাসকট টি। এটাই ছিল মূল আকর্ষন। M&M'S এর চকলেট শেষ করার পরে আমি মাসকটটি রেখে দেই। জিনিসটি ছিলো নিরেট প্লাষ্টিকের। আমার কাছে ছিল সাত রাজার ধন এর মতো। এক দুপুরে আসলো আনা ইসলাম এর মেজ বোন এনি ইসলাম। ইনিও একজন চিত্রশিল্পী( অখ্যাত নাকি বিখ্যাত জানি না) । চারুকলার শিক্ষক ছিল হয়তো। আমার মা কে, কি যেন বলে মাসকটটি নিয়ে যেতে চাইলেন, তার নাকি কি সব শিল্পকর্মের জন্য লাগবে। আমি তো নাছোড়বান্দা। কিছুতেই দিবনা। মা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন এই বলে যে, মাসকট টি কেউ নিবে না। বিকেলে ঘুম ভাংতেই দেখি মাসকট সোনা মানিকটি নেই আমার। মা কেন দিলেন মা নিজেই বলতে পারলেন না। হয়তো আমার মা, পরিবার এর ছোট বউ ছিল বলে আদরের ভাগনিকে নিজের অনিচ্ছা সত্তেও দিয়েছিলেন। অতসত মিথ্যে বলে আমাকে ঠান্ডা করলেন। ২ দিন পরেই নাকি ফিরে আসবে। আসেনি সেটা। আমার বোন এর বাসায় বেড়াতে গেলে দেখলাম, ধইন্যা পাতা সহকারে শুকেসে সাজাইয়া থুইসে আমার বইন এনি আফায়। বইন টার কি একটুও লাগলো না ৮ বছরের একটা বাচ্চার কাছ থেকে তাকে কাঁদিয়ে, কেমনে করে নেই ??? অথচ আমার চাইতে ৬ বছরের বড় আমার মেজ ফুফুর ছেলের থেকে মাসকট টা নিল না, কারন সে তার আপন মেজ খালার ছেলে। বাহ বাহ।

আরো বড় হলাম। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়, ম্যারিকা থেকে আমার বড় ফুফুর ছেলে মেজ ফুফুর ২ ছেলের জন্য পাঠালো নাইক, আডিডাস নামক ব্রান্ড এর স্পোর্টস স্যু, নাইক, আডিডাস এর টি-শার্ট। আমার আর আমার চাচাত ভাই এর জন্য কিছুই না। "সাত কোটি মানুষ কম্বল পাইলে , আমার কম্বল গেল কই" এর মত অবস্থা।:P

বড় হইতেই থাকলাম, বৈষম্য কমলো না।

আব্বু আম্মু আর আমার আদরের একমাত্র ছোট বোন ৯৭ এর দিকে ইন্ডিয়া ট্যুরে গিয়েছিলেন ২০ দিন এর জন্য। আব্বু আমার জন্য নিয়ে আসলেন জি.এম ব্রান্ড এর ক্রিকেট ব্যাট এবং কিছু কুকাবুরা এর কাঠের বল।
মেজ ফুফুর ছেলে বললো, " অয়ন তোর ব্যাট এ নতুন গ্রিপ লাগায়ে দিব "। এই বলে কিছুদিন এর জন্য নিল আমার জি.এম এর ব্যাট। ওটা আজ ও পড়ে আছে তাদের বারান্দায় নাহলে চিলেকোঠার কোন এক কোনায়।


৯৯ সালের দিকে আমার প্রাণপ্রিয় বোন আনা ইসলাম বিরাট অংকের টাকা পাঠাইলো আমার মেজ ফুফুকে, যাতে ফুফাত ভাইরা গণক যন্ত্র মানে জাদুর বাক্স মানে কম্পিউটার কিনতে পারে।:P আর আমি চেয়ে চেয়ে নিরব চোখে দেখলাম। মাইক্রোসেল নামক একটা কোম্পানি তখন খুব নাম করেছিল। তাদের কাছ থেকেই কেনা হল। আমাদের নাফিস এর মতো আমার অবস্থা হল। ফুফাত ভাইদের ধারণা আমি পিসিতে ভাইরাস ধরিয়ে ফেলবো!:-*
ভালোই তো। ২০০০ সালে আব্বু আমাকে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার সুবাদে সিংগাপুর থেকে কমপ্যাক এর ব্রান্ড পিসি কিনে দিলেন। এর পরে কত পানি গরাইল ঠিক নাই। ৬ মাস এর মাথায় হার্ডওয়্যার সফ্টওয়্যার এর সাথে আমার একাএকা পরিচয়, ডায়াল আপ ইনটারনেট ব্যবহার, ব্লা ব্লা। কম্পিউটার নিয়ে আমাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। বরং কাজিনদের পিসি ঠিক করা থেকে শুরু করে নতুন পিসি কনফিগারেশন সেটআপ আমাকেই করতে হয়েছিল। সত্যিই সেলুকাস।:P

আমার বাবা, তাঁর ভাগনে ভাগনির জন্য পারলে জানটা দিয়া দেয় অবস্থা ছিল। আমি ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমার ছোট খালু আমার বাবার জন্য সিংগাপুর থেকে ২ টা মোবাইল সেট এনেছিলেন। নকিয়া ৩৩০০ নামক একটা মডেল ছিল ওটাতে। সাইজ এবং শেইপ আমাকে এতটাও মুগ্ধ করেছিল যে আমি আবদার এর সুরে বলেই ফেললাম- " আম্মু আমি কিন্তু এস.এস.সি এর পরে ঐটা ব্যবহার করবো। আম্মু বললো ঠিক আছে। মেজ ফুফুর বড় ছেলেটা এসে বললো "মামা একটা আবদার ছিলো। আমাকে একটা মোবাইল দিতে হবে, সেট টা কিন্তু ৩৩০০ লাগবে"। ব্যাস দিয়ে দিল আব্বু, সাথে গ্রামীন সিম ফ্রী। ৭ টাকা কলরেট তখন। কাঁদতে পারতাম না বলে নিরবে নিভৃতে মন কেঁদে যেত। আমার স্বপ্নের সেট নকিয়া ৩৩০০। আহ.......................। ক্লাস টেনে ই কিনলাম ইজিগোল্ড। একসপ্তাহ হয়নি বাজারে ইজিগোল্ড আসলো, সাথে সাথে কিনে নিলাম। কিন্তু অভাগার ভাগ্য কাকে বলে। সব সেকেন্ডহ্যান্ড সেট পেলাম আব্বুর নাহলে আম্মুর। নতুন সেট কপালে জুটলো না।ছোট খালুর দেয়া ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহার করা সেট( সনি এরিকসন টি৬১০ ) সেই থেকে যে ব্যবহার করছি আজো টিকে আছে। আগে আমার নতুন সেট ব্যবহার করতে ইচ্ছা করতো অন্যকে দেখানোর জন্য, যেটা ঐ সময় বেশিরভাগ টিনেজাররা করত।:P এখন আর করতে ইচ্ছে করেনা, কারন ঐ বয়সটাই চলে গেছে আমার। এখন মানে হয় কথা বলার জন্যই মোবাইল। শো ডাউন এর জন্য না।

ছোটফুফু কানাডায় চলে গিয়েছিলেন ২০০১ এ। আসলেন আমার এস.এস.সি এর পরে। লাগেজ নিয়ে উঠলেন মেজ ফুফুর বাসায়। গেলাম তাকে দেখতে, সেকি, সেখানে দেখি বড় ফুফুর দুই মেয়ে ( মেজ আর ছোট ) সাথে মেজ ফুফুর দুই ছেলে দরজা আটকিয়ে নিজের রুমে লাগেজ খুলতে ব্যস্ত। এক ঘন্টা পরে বেড়িয়ে এল সবাই। নিজেরা নিজেরা যে যার পছ্ন্দ মত জিনিস ভাগাভাগি করার পরে খাবার এর জুঠা হিসেবে যা থাকে, সেরকম ভাবে কিছু চকলেট আর কি যেন পেলাম মনে হয়। পরে ফুফু কানাডা চলে যাবার পরে দেখলাম যত্তসব ভালো ভালো গিফট গুলো সাজিয়ে রাখতে নাহয় ব্যবহার করতে। ২০০৭ এও আবার আসলেন ছোট ফুফু, এবার একই কান্ডের পুনরাবৃত্তি দেখার ইচ্ছে ছিলনা বলেই, ছোট ফুফুর সাথে সারা ট্যুর দেখা করিনি। ঐ বাসায় ও যাইনি।/:)

আরো আছে স্টকে। লিখে শেষ করা যাবে না।

নাফিস মিয়ার পোষ্টটি আমাকে এই পোষ্ট লিখতে অনুপ্রেরনা যোগাইয়াছে।:P

* আশা করিতেছি আমার সুপ্রিয় আত্মীয়-স্বজনগণ আমার এই পোস্টখানি পড়িয়া দেখিবেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করিবেন।


ব্লগ হালখাতা::|

পোস্ট করেছেন: ৩টি
মন্তব্য করেছেন: ৩৫টি
মন্তব্য পেয়েছেন: ১৩টি
ব্লগ লিখেছেন: ৩ সপ্তাহ ৫ দিন
ব্লগটি মোট ৪৩৭ বার দেখা হয়েছে


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৪:২৫
২০টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×