অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।
এস.এস.সি পরীক্ষা ৬ মাস পরেই। সবে মাত্র প্রি-টেষ্ট শেষ হল। যেদিন শেষ হল ঐ দিন ইচ্ছে হল একটা কিছু করার। কিন্তু সে একটা কিছুটা কি সেটা আমার জানা ছিলনা।বিষন্নতায় ভুগছিলাম কিছুদিন যাবৎ। অনেকটা টেনশন ছিল আসল পরীক্ষার জন্য।
প্রি-টেষ্ট শেষ তো কি হয়েছে ? পড়াশোনা তো করতেই হবে। রাতে পড়াশোনা শেষ করে শুতে যাব, এমন সময় মাথায় ইবলিস ভর করলো।
হঠাৎ প্ল্যান করলাম রাতে বাইরে ঘুরাঘুরি করবো। একা না, সাথে বন্ধু থাকবে। ফোন দিলাম ফ্রেন্ড তুর্য্য কে। প্ল্যানের কথা বললাম। সে একপায়ে রাজি।পকেটে মাত্র ২১ টাকা। সিগারেট এর অভ্যাস ছিল একটু আধটু।
রাত বাজে তখন সাড়ে বারোটা। আব্বু আম্মু যথারীতি ঘুম। আমি বাইরের দরজার লক খুলে, লক না টিপে দরজা লাগিয়ে বের হয়ে গেলাম অজানার উদ্দেশ্য। বাসাটা ছিল মালিবাগ সিদ্ধেশরী এলাকায়। আমরা ওখানে ১ বছরের জন্য ভাড়া ছিলাম। কারন ঐ যে ভিকারুন্নিসার স্যার-ম্যাডাম দের কাছে মডেল টেষ্ট দিতাম আরকি
। আমার গন্তব্য বেইলী রোড সার্কিট হাউসের ইস্টার্ন কর্ণার নামক এপার্টমেন্টে। নিচে নেমে দেখি আমাদের বুড়া দারোয়ান আরামে বিড়ি টানটেসে। মন চাইলো তার থেকে একটা বিড়ি নিয়ে ২ টা বাড়ি দেই।
তার কাছ থেকে ১ টা বিড়ি নিয়ে মনের সুখে টানতে লাগলাম। স্বাদ টা ছিল অনেকটা মিষ্টি আবার তেতো।
তার সাথে কিছুক্ষন ফাও আলাপ মারলাম। তারপর হেটে হেটে গেলাম সার্কিট হাউসে। ইন্টারকমে ফোন দিতে বললাম দারোয়ান মামাকে। তুর্য্য নেমে আসলো। তখনকার দিনে বেনসন ৩ টাকা করে ছিল। পাশের একটা ছোট চা এর দোকান থেকে ৭ টা বেনসন কিনলাম। ২ বন্ধু ২ টা বেনসন ধরিয়ে হাটা শুরু করলাম। আহ কি মজাই না লাগছে....... রাতের অন্ধকারে ২ বন্ধু অজানার উদ্দ্যেশে হাটতেসে। ছোটখাট স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম। মন্ত্রীপাড়া দিয়ে চলে আসলাম একদম রমনা পার্কের কাছে। গিয়ে দেখি ২ গ্রুপের গ্যাং ওয়ার শুরু হয়ে গেছে। রিকশাওয়ালা আর হিজড়াদের মধ্যে। ইট পাটকেল থেকে শুরু করে পরনের স্যান্ডেল পর্যন্ত ছোঁড়াছুঁড়ি হচ্ছে। 
ভাগ্য ভালো যে আমরা ছিলাম এই পাড়ে। মানে রাস্তা পাড় হয়ে আমরা রমনা পার্কের সাইডে যাইনি। কারন ঐ সাইডেই ছিল হিজড়াদের গ্যাং।
আর আমাদের পাড়ে ছিল রিক্সাওয়ালারা। আমরা জিগাই " ভাই, কি হইসে?? আপনারা গ্যান্জাম করেন কেন ? " উত্তর শুনে যত না অবাক হই তারচে বেশি হাসতে হাসতে দৌড় লাগাই বেইলী রোডের দিকে।
রিক্সাওয়ালার সরল স্বীকারোক্তি " আমাগো ছদরুইল্ল্যা ওগো একটারে লাগাইয়া টাকা না দিয়া ভাইগ্যা গেসে একটু আগে। "
একদৌড়ে বেইলী রোডে এসে আশ্রয় নেই সিদ্ধেশরী গার্লস কলেজের সামনের ফুটপাতে। ২ বন্ধু মিলে কি যে হাসাহাসি। কি না এক অ্যাডভেন্চার হয়ে গেল। বাকি ৫ টা সিগারেট সাবার করে যে যার বাসার দিকে দে দৌড়। রাত বাজে তখন সাড়ে ৪টা।
বাসায় গিয়ে দেখি সব ঠিকঠাক। লক নিয়ে ভয়ে ছিলাম, কিন্তু না। কিছু হয় নি ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকে কাপড় না ছেড়েই দিলাম এক ঘুম। গল্পটা পরে আমাদের আইডিয়াল স্কুলে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুর্য্য বাবাজি এমন নাম করলো সে আরেক ঘটনা।
