somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগের সূচনা ও বাংলা ব্লগ (তৃতীয় পর্ব)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব

বাংলা ব্লগের জনপ্রিয়তা পর্ব

বাংলা ব্লগের জনপ্রিয়তা পর্ব শুরু হয় সামহ্যোয়ারইন ব্লগের মাধ্যমে। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠে সামহ্যোয়ারইন ব্লগ। এসময় ব্লগার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি পোস্ট ও পোস্টে মন্তব্যের সংখ্যা বাড়ে। এ সময় বাংলা ব্লগ কমিউনিটি গড়ে উঠে। এসময় অনেকেই ব্যক্তিগত ব্লগসাইটও চালু করেন। ২০০৭ সাল নাগাদ ব্লগ হয়ে উঠে লেখালেখির জনপ্রিয় মাধ্যম। ২০০৭ সালে আরও দুইটি নতুন কমিউনিটি ব্লগ চালু হয়। ২০০৮ সালে চালু হয় কয়েকটি কমিউনিটি বাংলা ব্লগ সাইট। এভাবেই বাংলা ব্লগিং জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।

কমিউনিটি বাংলা ব্লগের বিস্তার

সামহ্যোয়ারইন ব্লগের পরে আরও বেশ কয়েকটি কমিউনিটি বাংলা ব্লগসাইট গড়ে ওঠে। তবে দ্বিতীয় বাংলা কমিউনিটি ব্লগসাইট নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। সচলায়তন ব্লগ অনানুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালের মে মাস থেকে। তবে সচলায়তনের আনুষ্ঠানিক শুরুর তারিখ হিসেবে ২০০৭ সালের ১ জুলাই চিহ্নিত। অন্যদিকে প্যাঁচালী ব্লগ ২০০৭ সালের মে মাসে চালু হয়। অবশ্য প্যাঁচালী ব্লগ এখন আর চালু নেই। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ‘আমার ব্লগ’। অন্যদিকে দৈনিক প্রথম আলোর ব্লগসাইট হিসেবে ‘প্রথম আলো ব্লগ’ যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর। পরবর্তীতে আরও অনেকগুলো কমিউনিটি বাংলা ব্লগসাইট তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে, নাগরিক ব্লগ, বিডিনিউজ ব্লগ, দৃষ্টিপাত, নির্মাণ, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, কম্পজগৎ ব্লগ, টেক টিউনস, নগরবালক ব্লগ, চতুর্মাত্রিক, মুক্তমনা, আমরা বন্ধু, মুক্তব্লগ, একুশে ব্লগ, সরব, শব্দনীড়, বকলম, ব্লগ বাংলা ইত্যাদি।

বর্তমান ধারা

বর্তমানে বাংলা ভাষায় প্রায় ৪০ টির মতো কমিউনিটি ব্লগ সাইট রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত ব্লগসাইট রয়েছে অনেক। ব্লগের বর্তমান ধারা একেক ব্লগে একেক রকম। তবে বিকল্প সংবাদমাধ্যম হিসেবে ব্লগের পরিচিত বাড়ছে। ব্লগের লেখালেখিও সেদিকেই যাচ্ছে। ব্লগের বর্তমান ধারা যেমন সম্ভাবনার কথা বলে, তেমনই কিছু কিছু ক্ষেত্রে হতাশার ইঙ্গিত দেয়। অবশ্য ব্লগারদের সম্মিলিত চর্চার মাধ্যমেই ঠিক হয়ে থাকে বাংলা ব্লগিংয়ের ধারা। সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বড় বাংলা ব্লগ প্ল্যাটফর্ম সামহ্যোয়ারইন ব্লগ। সামহ্যোয়ারইন ব্লগের পোস্ট এবং মন্তব্যের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে সা¤প্রতিক ব্লগিং ধারা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যাবে। ব্লগার ফিউশন ফাইভ সামহ্যোয়ারইন ব্লগের ২০১১ সালের রিভিউ প্রকাশ করেছেন তার ব্লগে। তাতে তিনি সামহ্যোয়ারইন ব্লগে ২০১১ সালে সর্বাধিক মন্তব্য পাওয়া ১০২টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে লেখাগুলোর মন্তব্য প্রবণতা সম্পর্কে লেখেছেন, “সামহোয়্যারের প্রবণতা যা, তাতে ভালো লেখায় মন্তব্য বরং কম পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের পোস্ট কিংবা সাধারণ আড্ডামূলক পোস্টে মন্তব্য মেলে বেশি। এমন অনেক ব্লগার আছেন, যারা শুধু অর্থবহ মন্তব্য লিখে লিখেই ব্লগে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। আবার এমনও আছে হাজার তিরিশেক 'ভাল্লাগছে', 'কিমুন আছো?' টাইপের মন্তব্য উগড়ে দিয়েও ব্লগে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেননি, পাঠক তাদের মনে রাখেনি। অনেকের আবার মন্তব্যের উত্তর দিতেই চরম অনীহা। এই বছর সর্বাধিক মন্তব্য পাওয়া পোস্টগুলো একনজর দেখে মনে হয়েছে বেশিরভাগই অর্থহীন চটুল মন্তব্যে ভর্তি। যা নিশ্চিতভাবেই ব্লগ সম্পর্কে বাইরে ভুল বার্তা পৌঁছাবে। তবে ভালো পোস্টে চিন্তাশীল মন্তব্যের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। অনেক পোস্ট আবার স্টিকি হওয়ার সুবাদেও মন্তব্য এসেছে তুলনামূলক বেশি।” অন্যদিকে সামহ্যোয়ারইন ব্লগে ২০১১ সালে সবচেয়ে বেশি পঠিত ১০০টি পোস্ট বিশ্লেষণ করে লেখাগুলোর প্রবণতা সম্পর্কে ফিউশন ফাইভ লেখেছেন, “গড়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে একটি করে লেখা পোস্ট হয় সামহোয়্যারইন ব্লগে। ফলে অনুমান করা কঠিন নয়, প্রতিদিন কী পরিমাণে লেখা পোস্ট হচ্ছে বাংলাভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ব্লগটিতে। চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি পঠিত ১০০ পোস্টের তালিকা থেকে ব্লগাররা ধারণা পাবেন পাঠক কোন ধরনের লেখা পড়তে বেশি আগ্রহী। তবে বলে রাখা ভালো, ব্লগিংয়ের মূল ধারণার সঙ্গে যায়, এমন পোস্টের সংখ্যা তালিকায় খুব বেশি নয়। বেশিরভাগই ব্লগিংবহির্ভূত বিষয়আশয় নিয়ে লেখা। প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী পোস্টের প্রতি এমনিতেই পাঠকের বেশ আগ্রহ দেখা যায়, তালিকাও সে কথাই পুনর্বার জানান দিল। প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন টিপস নিয়েও ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে পাঠকদের। সমসাময়িক ঘটনাবলি ছাড়াও বিকল্প মিডিয়া উপযোগী খবরের প্রতি পাঠক আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। সর্বাধিক পঠিত পোস্টের প্রথম তিনটিই এই ধারার। তবে ব্লগে গল্প-কবিতার ছড়াছড়ি থাকলেও সর্বাধিক পঠিত পোস্টের তালিকায় সাহিত্যের অবস্থা বেশ করুণ।”

সম্ভাবনা

বাংলা ব্লগের দৃশ্যমান সম্ভাবনার দিক সমন্ধে ব্লগার মুনীর উদ্দীন শামীম ২০০৮ সালে লেখেছিলেন, “প্রথম দিকে অনলাইনভিত্তিক ব্যক্তিগত দিনপঞ্জি লেখার ধারণা থেকে ব্লগের যাত্রা শুরু হলেও অল্প দিনের মধ্যে রূপ আর মাত্রিকতায় ভীষণ বৈচিত্রময় হয়ে উঠে। মূলধারার গণমাধ্যম থেকে ব্লগের উৎকর্ষতা ও জনপ্রিয়তার প্রধান সূত্রটি এখানেই। ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া নানা খুনসুটি থেকে শুরু করে সমাজ, সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি, কী নেই এখানে। সবই আছে। ফলে বিষয় আর মতের এতো বৈচিত্র সমাহার অন্য কোথাও নেই বললে চলে। মূলধারার সংবাদপত্রে যেখানে একটি লেখা পাঠিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়, এবং জাত্যাভিমানের ব্যাকরণে নির্মিত সম্পাদনা নামের ছুরির কবলে অনেক সৃষ্টিই কোন দিন আর সৃষ্টি হয়ে উঠে না, সেখানে প্রচলিত ব্যাকরণে হয়তো অতি সাধারণ চিন্তক-লেখকও তার সৃষ্টিকে অনায়াসে তুলে ধরতে সক্ষম হন ব্লগের মাধ্যমে। মান-নিম্নমান ধারণার আড়ালে শিল্প-সাহিত্যের জগতেও যে একটি কেন্দ্র-প্রান্ত মেরুকরণ প্রক্রিয়া ঐতিহাসিকভাবে টিকে আছে ব্লগ সে প্রক্রিয়াকেই চ্যালেঞ্জ করে প্রান্তিক লেখক-চিন্তকদের জন্য একটি পাটাতন তৈরি করেছে। ফলে বাংলাদেশের যেকোন অঞ্চলের যেকোন অপ্রচলিত লেখক শুধু ইন্টারনেট সুবিধায় প্রবেশাধিকারের সুবাধে তুলে ধরতে পারছেন নিজের চিন্তা, মতামত এবং সৃজনশীলতা। এ ভাবেই বাংলা ব্লগ ইতোমধ্যে লেখালেখি জগতের প্রচলিত শহরকেন্দ্রিকতাকে, আরও সুস্পষ্টভাবে বললে ঢাকাকেন্দ্রিকতাকে অনেকখানি ভেঙে দিয়েছে, বিপরীতে ঢাকা, ঢাকার বাইরের জেলা এবং প্রবাসের বাংলা ভাষাভাষী লেখক-পাঠকদের মধ্যে নিয়মিত মিথস্ক্রিয়ার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার জায়গাটাকে আরও বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে একটি সুসংবাদ। একই সাথে ব্লগারদের মধ্যে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ার সুবাদে ভার্চুয়াল জগত এবং ভার্চুয়াল জগতের বাইরে সমচিন্তার মানুষদের মধ্যে সমাজরূপান্তরের আকাঙ্খাভিত্তিক এক্টিভিজমেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে”। (মুনীর উদ্দীন শামীম, বাংলা ব্লগ: ভাষা, সংস্কৃতি চর্চা ও এক্টিভিজমের নতুন পাটাতন, সামহ্যোয়ারইন ব্লগ, ১০ নভেম্বর ২০০৮)। এই পর্যবেক্ষণগুলোর ফলাফল আমরা পরবর্তীতে ব্লগ থেকে পেয়েছি। বাংলা ব্লগ এখন লেখালেখির মাধ্যমে মত প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

[একুশে বইমেলা ২০১২ তে শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত 'বাংলা ব্লগের ইতিবৃত্ত' বই থেকে]
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×