somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশাল আফসুস

১০ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইহা ২০০৬ সালে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনা। সে বত্‍সর বাংলাদেশে জাতিসংঘের কার্যক্রমের ২৫ বছর পূর্তি হইয়াছে। এই উপলক্ষে তাহারা বিভিন্ন ইস্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করিতেছে। আমাদিগের ইস্কুলও সেই প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হইল। ইস্কুলে সে সময় আয়োজনের মহাযজ্ঞ। প্রায় একমাস আগে থাকিয়া পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া শুরু করিয়াছে। স্কুলের ভাঙা দরজা-জানালা-বেঞ্চি ঠিকঠাক করা হইতেছে। দেওয়ালের ভাঙাচুরা জায়গায় সিমেন্টের আস্তর পড়িতেছে, রঙিন হইতেছে। শিক্ষক মহোদয়গণ আমাদিগকে নতুন করিয়া আদব লেহাজ শিখানো শুরু করিল। সব কিছুতেই নতুন নতুন গন্ধ। ষষ্ঠ শ্রেণী বাদে বাকি সব শ্রেণীর প্রথম দশজন করিয়া নিয়া কুইজের জন্য রেডী করা হইতেছে। সব মিলায়া প্রায় সত্তর জন। এই অধম তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। মোটামুটি মানের ছাত্র হওয়াতে শিক্ষকেরা আমার নামও লেখিয়া নিল।

প্রতিদিন প্রথম ঘন্টার পরে আলাদা করিয়া আমাদিগকে কুইজ ক্লাশে পাঠানো হইত। টিফিনের আগে পর্যন্ত প্রায় দুইঘন্টা চলিত সেই ক্লাশ। জাতিসংঘের জন্ম-জন্মান্তরের কাহিনী আমাদিগকে গিলানো হইতে লাগিল। আমরাও দিস্তার পর দিস্তা খাতা লিখিয়া লিখিয়া শেষ করিতে লাগিলাম। সেইসাথে মনে অন্যরকম একখানা ভাব আসিল। আমাদিগকে বলা হইল কুইজে জিতিতে পারিলে বেশ ভাল মানের পুরস্কার আছে। সাথে জাতিসংঘের সিলমোহর সহিত একখানা ওজনদার সনদপত্র মিলিবে। আমাদিগের খুশি আর দেখে কে? সনদপত্র আর পুরস্কারের জন্য দিনরাত খালি ছোট ছোট নৈর্ব্যচনিক প্রশ্ন পড়িতে লাগিলাম। ক্লাশের পড়া ভুলিয়া বসে আছি।

আমাদিগের প্রথম ক্লাশ নিত মোহাম্মদ আলী স্যার। তিনি আবার আমাকে না মারিলে সারাদিন শান্তি পাইতেন না। প্রতিদিন আসিয়া আমারে পড়া ধরিতেন আর আমিও ভাঙা রেকর্ড বাজাইয়া দিতাম "স্যার, কুইজ পড়তে গিয়া ক্লাশের পড়া পড়তে পারি নাই ।" পুরা একমাস অনেক শান্তিতে ছিলাম।
তো অনেক প্রতীক্ষার পর সেই কাঙ্খিত দিন আসিল। আমাদিগকে জানানো হইয়াছিল যে যাহারা এইদিন অনুপস্থিত থাকিবে তাহাদের ৫০ টাকা করিয়া ফাইন হবে। সাথে আদর-সোহাগ ফ্রি। আমি শার্ট-প্যান্ট ধুইয়া ফুলবাবু ষ্টাইলে ইস্কুলে রওয়ানা দিলাম। কিন্তু শ্লার বেরসিক কাক! অব্যর্থ নিশানার সহিত আমার তিনবার ধোয়া শার্টের ওপর প্রাকৃতিক কর্ম সাধন করিল। রাগে গজরাইতে গজরাইতে আবার বাসায় যাইয়া সেইটা পরিস্কার করিলাম। তারপর ইস্ত্রি দিয়া ভিজা যায়গা শুকাইয়া পুনরায় স্কুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলাম। কিন্তু পৌছাইতে পনের মিনিট লেট হইয়া গেল। মোহাম্মদ আলী স্যার আমার দিকে চশমার ফাঁক দিয়া সেই বিখ্যাত লুক দিয়া জিজ্ঞাসিলেন, "তুমি কে হে?" হায় হায় ! কয় কি? বুঝিলাম স্যারের বয়স হইয়াছে। তাহার প্রিয়(!) ছাত্রটিকে তিনি আর চিনিতে পারিতেছেন না। অতঃপর কিছু সময় ব্যয় করিয়া আমি আমার পরিচয় তাহার সামনে পেশ করিলাম। সবশেষে বলিলাম তিনি যেন আমার এটেন্ডেন্স দিয়া দেন। স্যারও তাহার ভিলেন মার্কা মুচকি হাসি দিয়া বলিলেন, "আপ লেট আয়ে হে, হাম নেহি দে সাক্তে।" খাইছে, এখন আমার কি হপে? এরপর অনেক অনুনয় করিয়া হাতে পায়ে ধরিয়া আমার চাহিদামত জিনিশ আদায় করিয়া লইলাম।

জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিরা আধাঘন্টা দেরী করিয়া আসিলেন। তাহাদের উপস্থিতিতে আমাদিগের পিটি শুরু হইলো। মাঠে উপস্থিত ছাত্র সংখ্যা দেখিয়া আমি ঘাবড়াইয়া গেলাম। ইহারা কি আদৌ ইস্কুলে পড়ে, নাকি ইস্কুল কতৃপক্ষ ইহাদের ভাড়া করিয়া আনিয়াছে। যাহা হৌক, সেইদিন আমাদিগকে পৌনে একঘন্টা মাঠে দাড়া করাইয়া জীবনের বিভিন্ন দিকের সহিত পরিচয় করানো হইল। প্রধান শিক্ষক একদিনের জন্য ভাড়া করা মাইকে নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিলেন। ইহার পর বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক হইতে শাশ্বত বাণী পাঠ করিয়া শোনানো হইলো। আমাদের ইস্কুলের দুই সাংবাদিক কাম শিক্ষক সেইদিনকার পত্রিকা হইতে প্রধান খবরের শিরোনামগুলি পাঠ করিয়া শোনাইলেন। অতঃপর আমরা ড্রিল টিচারের নেতৃত্বে কিয়ত্‍ক্ষণ অদ্ভুত উপায়ে শরীরখানা ঘুরাইয়া উল্টাইয়া নাচা কুদা করিয়া ছাড়া পাইলাম।

ক্লাশে বসিয়া পুনরায় একবার নাম ডাকা হইল। এইবার আর ভুল করিলাম না। ঠিকঠিক উচ্চকন্ঠে নিজের উপস্থিতি জানান দিলাম। অতঃপর আমাদিগের সেই কয়েকজন ভাবধরা বিশেষভাবে মনোনীত সত্তর জনকে সুবিশাল হলরুমে স্থান দেওয়া হইল। শিক্ষকেরা আসিয়া আমাদিগকে একখানা কলম আর প্রশ্নপত্র ধরাইয়া দিলেন। যাহা প্রশ্নপত্র, তাহাই উত্তরপত্র। মোট ২৫ টি প্রশ্ন ছাপানো হইয়াছে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় এতদিন এত এত কাগজ ফাড়িয়া কলম উল্টাইয়া যে হাজারখানেক প্রশ্ন গলাধঃকরণ করিয়াছিলাম তাহার একটিও হাতের কাগজটিতে দেখিতে পাইলাম না। ভাগ্যকে গাল পাড়িতে পাড়িতে নিজের নাম রোল নাম্বার লিখিয়া ফেলিলাম। যাক বাবা, খালি খাতা তো আর জমা দিতে হইবে না। কিন্তু এখন কি উপায়? কিছুই যে আমি পারি না। আশেপাশে তাকাইলাম যদিবা কোন সাহায্য পাওয়া যায়। কিন্তু আমার সে আশায় গুড়েবালি। "যা হয় হইবে, এত চিন্তা করিবার কি আছে?" এই বলিয়া চোখ বন্ধ করিয়া দাগানো শুরু করিলাম। সময় শেষ হইলে পরে শিক্ষকেরা আমার খাতা নিয়া গেল আর একখানা সহীহ উত্তরপত্র হাতে ধরাইয়া দিল। কিন্তু আমি কি দাগাইয়াছি তাহা আমার মনে নাই। সুতরাং কয়টা হইল না হইল তাহা মিলাইতে পারিলাম না।

প্রায় দুইঘন্টা পরে রেজাল্ট এবং পুরস্কার দেওয়ার সময় আসিল। কিন্তু রেজাল্ট পাইয়া আমরা হতবাক। প্রথম হইয়াছে তিনজন, দ্বিতীয় হইয়াছে পাঁচজন এবং তৃতীয় হইয়াছে বারজন। আরো অবাক করা বিষয় এই যে, প্রথম তিনজনের নাম ঘোষণা করিবার সময় ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাহারা আমার নামটি জানাইয়া দিলেন। আমি অবাক হইয়া ভাবিলাম ঝড়ে তাহলে ঠিকই বক মরে।

পুরস্কার আনিতে যাইয়া একটা ধাক্কা মতন খাইলাম। তৃতীয় স্থানীয় ব্যক্তিরা পাইয়াছে একখানা করিয়া দেওয়াল ঘড়ি, দ্বিতীয়রা একখানা করিয়া চীনামাটির বাসন আর আমি অভাগা পাইলাম একখানা চীনামাটির কফিমগ। আমার যে দেওয়াল ঘড়ির প্রতিই আগ্রহ বেশি ছিল। এতকিছু থাকিতে একখানা কফিমগ? বিশাল আফসুস :((
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৫৭
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×