somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাষ্টমার ভাগ্য

১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের মৌসুমে সবাইতো কমবেশি শপিং করেন। শপিংএ যাওয়ার আগে পারলে একটা ব্লগ পোষ্ট অথবা নিদেনপক্ষে একটা ফেবু ষ্ট্যাটাস। সাথে একটা "কমেন্টের জবাব বাসায় আইসা দিমু" টাইপের লাইন। বাসায় আইসা আবার শপিং এর ফিরিস্তি দিয়া একটা পোষ্ট অথবা একটা ষ্ট্যাটাস। বেশিরভাগ সময় আপুরা "এইটা কিনলাম, ঐটা কিনলাম, সেইটা পছন্দ হইছে কালকে আবার যামু" টাইপ আর ভাইয়ারা দেয় "পাঞ্জাবী কিনতে গেছিলাম, এক আপুরে পছন্দ হইছে" টাইপ ষ্ট্যাটাস। জুকা যখন সুযোগ দিছে "থামাইব আমারে কেঠা?" ভাব। সকল প্রশংসা জুকা আর জানা আপার।


তো এইবার আমার শপিং লিষ্ট আর সবার সামনে না ই দিলাম। তারচেয়ে কিছু উল্টা পাল্টা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। রোজার মাসে অন্য সব পুলাপাইনের মত আমিও সারারাত নেটে টাইম পাস কইরা আর বইয়ের সাথে পুরানা প্রেম জোড়া দেয়ার চেষ্টায় রাত কাবার করি। একেবারে সেহরী খেয়ে রাম ঘুম, আর এক ঘুমে অর্ধেক দিন শেষ। "অর্ধেকটা না হয় ঘুমায়া পার করলাম, বাকী অর্ধেকটা কেমনে কাটামু?" এই চিন্তায় যখন ক্ষুধা বাড়ার অবস্থা তখন আমারে চিন্তামুক্ত করার জন্য এক ফ্রেন্ড সামনে আসলো। তার আবার জামা-কাপড়ের দোকান আছে। তো সে আমারে বলল তার দোকানে সময় দিতে। আমি ভাবলাম কাজ যখন নাই তখন এইটাই বা কম কি? সুতরাং অবসর সময় পার করার জন্য এবং দোকানদায়গ্রস্থ ফ্রেন্ডরে হেল্প করার জন্য আমিও বিনা বেতনে গতর খাটা শুরু করলাম। (আসলে সুন্দরী কাষ্টমারের সাথে ভাব জমানো এবং ফেবু রিলেশনশিপ ষ্ট্যটাস চেঞ্জ করাই উদ্দেশ্য। কিন্তু আপনে সেইটা নিয়া মাথা ঘামান ক্যাঁ? ঐটাতো দুষ্টলোকের কাজ।)


প্রথমদিন ফ্রেন্ড তার দোকানের সিক্রেট কোডগুলা বুঝায়া দিল। কাষ্টমারের ভীড় মোটামুটি। একেকজন আসে আর আমরা পুরা দোকানের সব জামাকাপড় মেলে ধরি। আর তখনই আমি আবিষ্কার করলাম জামাকাপড়ের ভাঁজ নষ্ট করা যত সহজ সেটা পুনরায় ভাঁজ করা তত কঠিন। প্রথম দুই-চারদিন নিজেই কিছু ভাঁজ করা শিখলাম। তারপর থেকে আমি খুলি আর আরেকজনের দিকে সেইটা আগায়া দেই ভাঁজ করার জন্য।

আমার কাছে প্রথম যে কাষ্টমার আসলো তার বয়স মোটামুটি আমার কাছাকাছি। দোকানে ঢুইকাই বিশাল এক হাসি দিয়া কইলো ভাই চায়না প্যান্ট দেখান। আমিও তার সামনে উসাইন বোল্ট গতিতে আট দশটা প্যান্ট মেলে ধরলাম। অনেক দেখেটেখে সে পছন্দ করলো একটা। আগের চেয়ে দুই ইঞ্চি লম্বা হাসি দিয়া দাম জিজ্ঞাসা করল। আমি দেখলাম দাম আছে সাড়ে বারশো টাকা। ফ্রেন্ডের শেখানো সূত্রমতে চাইলাম তিনহাজার টাকা। সাথে সাথে তার মুখের হাসি দপ করে নিভে গেল। কুইক রেন্টাল আর তৌফিক ই এলাহীর চৌদ্দগোষ্ঠিরে কিছু সেন্সরড গালি দিয়া দোকানের কর্মচারীটারে বললাম, "ঐ হাসান জেনারেটর লাইন দাও।" হাসান উত্তর দিল, "কারেন্ট যায় নাই তো ভাই।" "বল কী? তাইলে ভাইয়ের মুখ অন্ধকার দেখায় ক্যান?" শিওর হওয়ার জন্য ফ্রেন্ডরে প্যান্টটা দেখায়া বললাম, "তিনহাজার চাইছি।" এইবার ফ্রেন্ডের মুখও দেখি অন্ধকার হয়ে গেছে। যাক কি আর করা। এতো অন্ধকারেই বহুত মুলামুলি করার পর আড়াই হাজার টাকায় দফারফা হইলো। Bingo!! প্রথম দানেই সাড়ে বারশো টাকা লাভ। (আহারে! দোকানদারগুলা বড়ই খারাপ। আমারেও বাগে পাইয়া না জানি কত বেশি রাখছে।)


এরপর পাইছিলাম এক ষোড়শী আপু আর তার বয়ফ্রেন্ডরে। মনে হয় নতুন প্রেম। অনেক ভাব নিয়া দোকানে ঢুকলো, এটা সেটা দেখলো। তারে দেখাইতে গিয়া আমি কাহিল হয়া গেলাম। যা ই দেখাই কিছুই তার পছন্দ হয় না। শেষ পর্যন্ত প্রায় আধা ঘন্টা পরে পছন্দ করলো এক দেড়শো টাকা দামের টি-শার্ট। দাম জিজ্ঞাসা করার পরে আমি মনে মনে বললাম, "চান্দু, এতক্ষণ আমারে পেইন দিছ। নাউ দিস ইজ মাই টার্ন।" এই ধরনের ছেলেরা গার্লফ্রেন্ডের সামনে ফুটানি দেখাতে পছন্দ করে। তাই ঝোপ বুঝে কোপ মারলাম, সাড়ে নয়শো টাকা। এটা থেকে শিক্ষা পাইলাম গার্লফ্রেন্ড নিয়ে শপিং এ যাওয়া ঠিক না, নতুন গার্লফ্রেন্ড হইলে আরো আগে না।


আরেকজন পাইছিলাম, পাঞ্জাবী কিনতে আসছে তার হাজব্যান্ডের জন্য। প্রথমে ভালো ষ্ট্যান্ডার্ডের জিনিস দেখানো হল। কিন্তু সে পছন্দ করছিলো মোটামুটি মানের একটা। এইটা অবশ্য আমার ফ্রেন্ড হ্যান্ডেল করছে। তার কাছ থেকেও একটা বড় দাও মারা হৈছে। সাড়ে চারশো টাকার জিনিস তেরশ টাকায়।


প্রথমদিন আমাকে কিছু নিয়ম শিখায়া দেওয়া হইছে।
১. যে কোন বয়সের মানুষ আসুক তাকে ভাই/আপা ডাকতে হবে।
২. খারাপ ব্যবহার করা যাবে না।
৩. অতি অবশ্যই কাষ্টমারকে ফাপড়ের উপর রাখতে হবে।
...আরো অনেক কিছু।


পোষ্ট শেষ করি বিব্রতকর একটা ঘটনা দিয়া। বাইশ তেইশ বছরের ভীষণরকম সুন্দরী একটা আপু আসছিল। ঢুইকাই সে এদিক ওদিক তাকানো শুরু করছে। আমরা তো ভাবলাম না জানি কত্তবড় লিষ্ট নিয়া আসছে। আপু দেখি এটা ওটা দেখে আর মুচকি মুচকি হাসে। তার হাসি দেইখা আমরা ভড়কে গেছি। অনেকক্ষণ এমাথা ওমাথা ঘুরার পরে আমার সামনে এসেই দাড়ালো। কাজল দেয়া চোখ আর মুখে লাজুক হাসি দেখে আমার গলা শুকায় গেছে। তারপর অনেক কষ্টে হাসি আটকায়া বলল, "ভাই কেমন আছেন?" আমিতো শেষ। মনে মনে ভাবতাছি তারে ফ্রেন্ডের হাতে ছাইড়া দেই। এর মাঝে কিন্তু আপুর হাসি বন্ধ হয় নাই, উল্টা সময়ের সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়তেছে। আমি খালি অসহায় চোখে তার দিকে তাকায়া আছি, নড়তে চড়তে পারছি না বা কিছু বলতেও পারছিনা। এক সময় হাসি থামায়া সে ই প্রথম বলল, "ভাই অন্তর্বাস আছে?" (আমি বইয়ের ভাষায় লেখলাম। তবে সে কিন্তু চলতি ভাষায় ই বলছিলো।)

আমি তখন পুরা ষ্ট্যাচু হয়ে গেছি। কারন এ টাইপের ঘটনার সামনে এই প্রথম। আমি ঢোক গিলে কোনমতে বললাম, "আছে আপু। আপনার কত সাইজের লাগবে?" "আমি তো সাইজ জানি না। আপনার কাছে ফিতা আছে না? একটু মেপে দেখেন।" পুরাই আবুল হয়ে গেলাম। কোনমতে ঢোক গিলে উদাস নয়নে সিলিং এর দিকে তাকায়া বললাম, "আমার দোকানে অন্তর্বাস নাই।"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×