সেই ১৯৮৮ হতে পথ চলা, এখন ২০১০ । দীর্ঘ ২১ বছরের পথ পরিক্রমায় শচীন রমেশ টেন্ডুলকার নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে নিজেকে তুলেছেন এভারেষ্টের চূড়ায়, তবে এখানেই ্যন্ত নন তিনি । না জানি কোন এক অজানা গন্তব্যের পথ পানে তিনি ধেয়ে চলেছেন । এ ধেয়ে চলার পথ কোথায়, কখন আর কবেই বা শেষ হবে তাও এখনো অনিশ্চিত। তবে অনিশ্চিত নয় তার রেকর্ডের বরমালা। নিশ্চিত করছেন করছেন একের পর এক রেকর্ডকে । ওয়ানডে থেকে শুরু করে টেষ্ট সব ধরনের ক্রিকেটেই সবাইকে ছাপিয়ে এখন এভারেষ্টের চূড়ায় অবস্থান ; তবুও অমলীন তিনি। আরও জানাচ্ছেন ---- তানভীর রানা
ক্রিকেটে বরপুত্র যদি লারা হয়ে থাকেন তাহলে শচীনকে অবশ্যই রেকর্ডের বরপুত্র বলা যায়। একের পর এক সব রেকর্ড যেন শচীনের কদম চুমছে। যেখানে যে ক্যাটাগরী থাকুক না কেন শচীনই সবার শীর্ষে। যদিও কিছু অধারার মিশন এখনো শচীনের শেষ হয় নি। তবু বেশীর ভাগ রেকর্ডই শচীনের। স¤প্রতি দনি আফ্রিকার বিপে শচীন তার ক্যারিয়ারের সেঞ্চুরীরর হাফ সেঞ্চুরী পূর্ণ করেছেন। যদিও দল জেতে নি তবুও ১১১ রানে শচীন ছিলেন অপ্রতিরোধ দূর্গের মতন।
টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডটি অনেক দিন থেকেই ছিল শচীনের। আর যদি প্রতিটি ইনিংসের কথা বলা হয় তবে ম্যাচের প্রথম আর দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডও শচীন টেন্ডুলকারের। টেষ্টে প্রথম ইনিংসে শচীনের রেকর্ড ২০টি সেঞ্চুরীর সঙ্গী অজি কাপ্তান রিকি পন্টিং, দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি একাই সবার শীর্ষে অবস্থান করছেন। আর দনি আফ্রিকার বিপে ৫০তম সেঞ্চুরিটিতে তৃতীয় ইনিংসের রেকর্ডটাও চলে গেল লিটল মাস্টার শচীনের ঝুলিতে। এত দিন তৃতীয় ইনিংসে ৯টি সেঞ্চুরি নিয়ে শচীন যুগ্নভাবে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডারের সঙ্গে। তবে ১০টি সেঞ্চুরি নিয়ে এখন যুগ্নভাবে শীর্ষে আরেক অস্ট্রেলীয় ম্যাথু হেইডেনের সঙ্গে। সময়ের সাথে ঝরে পড়েছেন বোর্ডার-হেইডেনরা, তবে টেন্ডুলকারকে টক্কর দেয়ার জন্য জন্য আছেন আফ্রিকান জ্যাক ক্যালিস। তৃতীয় ইনিংসে আফ্রিকান এই অলরাউন্ডারের সেঞ্চুরি ৮টি। সমান সেঞ্চুরি আছে সাবেক কিউই অধিনায়ক মার্টিন ক্রুররেও। তবে চতুর্থ ইনিংসে সবোর্চ্চ (৪টি) সেঞ্চুরির রেকর্ডটি এখনো টেন্ডুলকার আপন করে নিতে পারেন নি। । চতুর্থ ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরি আছে টেন্ডুলকারের। চারটি করে নিয়ে শীর্ষে যথাক্রমে ভারতের সুনীল গাভাস্কার, পাকিস্তানের ইউনুস খান, অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং ও উইন্ডিজের রামনরেশ সারওয়ান। তবে এটিও শচীনের হয়ে যেতে পারে যেকোনো দিন । এখন তারই প্রহর গুনছেন শচীন।
১৯৯০ সালে ইংলিশদের বিপে ১১৯ রানের অপরাজিত টেষ্ট সেঞ্চুরী দিয়ে শুরু করেছিলেন শচীন। একই দলের বিপে শচীন তার ৫ম (১৬৫ রান) ও ১০ম (১৭৭ রান) টেষ্ট সেঞ্চুরী পূর্ণ করেছিলেন। ১৫তম অষ্ট্রেলিয়ার বিপে ১৭৭ রান, ২০ তম কিউইদের বিপে ১২৬* রান, ২৫তম অষ্ট্রেলিয়ার বিপে ১২৬ রান, ৩০তম ইংল্যান্ডের বিপে ১৯৩ রান, ৩৫তম শ্রীলংকার বিপে ১০৯ রান, ৪০তম অষ্ট্রেলিয়ার বিপে ১০৯ রান, ৪৫তম বাংলাদেশের বিপে ১৪৩ রান এবং সর্বশেষ ৫০তম টেষ্ট সেঞ্চুরী করেছেন দনি আফ্রিকার বিপে অপরাজিত ১১১ রান।
টেষ্টে শচীনের ধরা-অধরা রেকর্ডগুলি ঃ
ক্স ৫.৭২ গড় টেস্টে শচীন টেন্ডুলকারের একটি সেঞ্চুরি। ওপরে আছেন শুধু ডন ব্রাডম্যান (২.৭৬)।
ক্স টেন্ডুলকারের ঠিক পরে ম্যাথু হেইডেন (৬.১৩)।
ক্স শচীন প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন নবম টেস্টে, দশম সেঞ্চুরি ৪১তম টেস্টে, ২০তম সেঞ্চুরি ৬৯ টেস্টে, ৯৯ টেস্টে ৩০তম সেঞ্চুরি, ৪০তম সেঞ্চুরি ১৫৪ টেস্টে, ১৭৫তম টেস্টে এল ৫০তম সেঞ্চুরি।
ক্স ৫০ সেঞ্চুরির ২২টি ভারতে, ২৮টি দেশের বাইরে। উপমহাদেশে ১০৮ টেস্টে সেঞ্চুরি ৩৩টি। দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি ৬টি সেঞ্চুরি অস্ট্রেলিয়ায়, ৫টি করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়।
ক্স টেস্ট খেলুড়ে সব দেশের বিপে সেঞ্চুরি আছে। সবচেয়ে বেশি, ১১টি অস্ট্রেলিয়ার বিপ,ে শ্রীলঙ্কার বিপে ৯টি। সেঞ্চুরির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশের বিপে (৭ টেস্টে ৫টি), পাকিস্তানের বিপে সবচেয়ে কম (১৮ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি)।
ক্স দলের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ৩৭টি, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩।
ক্স ম্যাচের প্রথম (২০), দ্বিতীয় (১৭) ও তৃতীয় ইনিংসে (১০) সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির বিশ¡ রেকর্ড টেন্ডুলকারের।
চতুথর্ঞ্চ ইনিংসে টেন্ডুলকারের (৩) চেয়ে একটি বেশি সেঞ্চুরি গাভাস্কার, সারওয়ান, ইউনুস ও পন্টিংয়ের।
ক্স এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি সাতটি সেঞ্চুরি করেছেন এ বছরই, ১৯৯৯ সালে করেছিলেন ৫টি সেঞ্চুরি।
[ টেস্ট অভিষেকের চার বছর পর প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন দেশের মাটিতে। তবে সেটি ছিল দেশের মাটিতে তাঁর
মাত্র তৃতীয় টেস্ট!
ক্স এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি পাননি এখনো। টানা সবচেয়ে বেশি চার টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন এ বছরেই খেলা প্রথম চার টেস্টে।
ক্স সবচেয়ে বেশি ৪৩টি সেঞ্চুরি চার নম্বরে ব্যাট করে, পাঁচ নম্বরে সেঞ্চুরি ৫টি, ছয়ে ২টি।
ক্স সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি সবচেয়ে বেশি ১৯টি, প্রথম টেস্টে ১৮টি।
ক্স টেন্ডুলকারের ২০ সেঞ্চুরিতে জিতেছে দল, হেরেছে ১১টিতে। ড্র ম্যাচে সেঞ্চুরি ১৯টি।
ক্স বাংলাদেশের বিপে ৫ সেঞ্চুরি ছাড়া আর কোনো ফিফটি নেই, ফিফটির চেয়ে সেঞ্চুরি বেশি শ্রীলঙ্কা ও দণি আফ্রিকার বিপওে ।
শচীন সম্বন্ধে তাঁদের মতামত ঃ -
সোনিয়া গান্ধী : এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। শচীন টেন্ডুলকার প্রত্যেক ভারতীয়কেই গর্বিত করল।
ম্যাথু হেইডেন : ক্রিকেটের প্রতি ওর দায়বদ্ধতা আর পুরো ভারতবাসীর সমর্থনের জন্যই সম্ভব হয়েছে এটা। তবে ডন ব্রাডম্যানের সঙ্গে তার তুলনা করব না। কেননা দুই প্রজন্মের দুই ক্রিকেটারের তুলনা করা সম্ভব নয়।
কার্টলি অ্যামব্রোস : ইংল্যান্ডে টেন্ডুলকারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা দেখেছি। তখনই বলেছিলাম, এ ছেলে অনেক রেকর্ড ভাঙতে এসেছে। ভালো লাগছে আমার কথাটা সত্যি হওয়ায়। এখন টেস্ট-ওয়ানডে মিলিয়ে ওর কাছ থেকে ১০০ সেঞ্চুরি চাই।
গ্যারি কারস্টেন: শেখার আগ্রহ আর সব সময় আরো ভালো করার প্রচেষ্টাই সাফল্যের রহস্য টেন্ডুলকারের। দুই দিন আগে থেকেই টেস্টের প্রস্তুতি শুরু করে ও। আর যত বেশি সম্ভব বল খেলার চেষ্টা করে নেটে।
আবদুল কাদির: ১৬ বছর বয়সে অভিষেক টেস্টেই ওর টেকনিক আর মানসিকতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই ছেলে অনেক ইতিহাস গড়বে, বুঝেছিলাম তখনই।
কুমার সাঙ্গাকারা: এককথায় কিংবদন্তি টেন্ডুলকার। তিনি ছাড়া ক্রিকেটের দূত আর কে?
শ্রীকান্ত : ক্রিকেটের ঈশ¡র ও। ২১ বছর ধরে যে দায়বদ্ধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, এককথায় অসাধারণ এটা।
রবি শাস্ত্রী : বিশ¡ ক্রিকেটে এমন মুহূর্ত আর ফিরবে না। আমি ভাষা হারিয়েছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ব্যাপারটা বিশ¡াস করার জন্য নিজেদের চিমটি কেটে দেখবে, টেন্ডুলকার নামের কোনো ক্রিকেটার পৃথিবীতে সত্যি সত্যিই হেঁটে চলে বেড়িয়েছেন কি না। এবার চাইব বিশ¡কাপটা ভারতকে এনে দিক ও।
সৌরভ গাঙ্গুলী : টেন্ডুলকারের সঙ্গে ড্রেসিং রুমে ১২-১৩ বছর কাটাতে পারাটা সম্মানের। টেস্টে ৫০তম সেঞ্চুরি, অবিশ¡াস্য অর্জন রীতিমতো। আমার কাছে সে-ই সর্বকালের সেরা। ৎধহধথশৎরৎধলধমধঃ@ুধযড়ড়.পড়স
৫০তম সেঞ্চুরি পূরণ হওয়ার পর ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ছিল একটি দৃশ্য, দাঁড়িয়ে 'স্যালুট' দিচ্ছেন শ্রীশান্ত। এক নিঃশব্দ প্রতীকী ছবি। গোটা ক্রিকেট-বিশ¡ই যেন এমন একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের ভঙ্গিতে বরণ করে নিতে চাইছিল শচীন টেন্ডুলকারকে। এমন কীর্তিতে লিটল মাস্টারকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সবাই ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




