মৌলিক মানবীয় চরিত্র বলতে বুঝায় সেসব গুণবৈশিষ্ট্য যার উপর মানুষের নৈতিক সত্তার ভিত্তি স্থাপিত হয়। দুনিয়ায় মানুষের সাফল্য লাভের জন্য অপরিহার্য যবতীয় গুণ-গরিমাই অন্তর্ভূক্ত । মানুষ কোন সৎ উদ্দেশ্যের জন্য কাজ করুক, কি ভুল ও অসৎ উদ্দেশ্যে -সকল অবস্থায় তা একান্তই অপরিহার্য । মানুষ আল্লাহ, অহী, রাসূল এবং পরকাল বিশ্বাস করে কি করে না, তার হৃদয় কলুষমুক্ত কিনা, সদুদ্দেশ্যে কাজ করে অসুদুদ্দেশ্যে Ñউল্লেখিত চরিত্রের ক্ষেত্রে সে প্রশ্ন একে বারেই অবান্তর । কারো মধ্যে ঈমান থাকুক কি না থাকুক, তাদের জীবন পবিত্র হোক কি অপবিত্র, তার চেষ্টা- সাধনার উদ্দেশ্য সৎ হোক কি অসৎÑ এসব প্রশ্নের উর্ধে থেকে পার্থিব জগতে সাফল্য লাভের জন্য অপরিহার্য গুণগুলো কেউ আয়ত্ত করলেই সে নিশ্চন্তরূপে সাফল্যমন্ডিত হবে এবং ঐসব গুণের দিক দিয়ে পশ্চাদপদ, প্রতিদ্ব›িদ্বতায় তারা প্রথম ব্যক্তির পশ্চাতে পড়ে থাকবে। ঈমানদার কাফের , নেককার , বদকার কুসংসকারাচ্ছন্ন, বিপর্যয়কারী প্রভৃতি যে যাই হোক না কেন, তারমধ্যে যদি ইচ্ছাশক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ শক্তি, প্রবল বাসনা উচ্চাসা ও সাহস, সহিষ্ণুতাও দৃঢ়তা তিতিক্ষা ও কৃচ্ছসাধনা, বীরত্ব ও বীর্যবত্তা, সহনশীলতা ও পরিশ্রম প্রিয়তা, উদ্দেশ্যের আকর্ষন এবং সে জন্য সবকিছুরই উৎসর্গ করার প্রবণতা, সতর্কততা, দূরদৃষ্টি ও অন্তরদৃষ্টি বোধশক্তি ও বিচার ক্ষমতা, পরিস্থিতি যাচাই করা এবং তদুনুযায়ী নিজকে ঢেলে গঠন করা ও অনুকুল কর্মনীতি গ্রহণ করার যোগ্যতা নিজের হৃদয়াবেগ, ইচ্ছা বাসনা, স্বপ্ন সাধ ও উত্তেজনার সংযমশক্তি এবং অন্যান্য মানুষকে আকৃষ্ট করা, তাদের হৃদয়মনে প্রভাব বিস্তার করা ও তাদেরকে কাজে নিযুক্ত করার দুর্বার বিচক্ষণতা যদি কারো মধ্যে পুরোপরি ভাবে বর্তমান থাকে, তবে এই দুনিয়ায় তার জয় সুনিশ্চিত। সেই সঙ্গে এমনগুণও কিছু না কিছু থাকা অপরিহার্য , যা মনুষ্যত্বের মুল --যাকে সৌজন্য ও ভদ্রতামূলক স্বভাব - প্রকৃতি বলা যায় এরই দৌলতে এক একজন লোকের সম্মান - মর্যাদা, মানব সমাজে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। আতœসম্মান জ্ঞান, বদান্যাতা দয়া- অনুগ্রহ, সহানুভুতি, সুবিচার, নিরপেক্ষতা, ঔদার্য ও হৃদয়মানের প্রসারতা, বিশালতা দৃষ্টির উদারতা, সত্যবাদিতা ও সত্যপ্রিয়তা, বিশ্বাসপরায়ণতা, ন্যায়- নিষ্ঠা, ওয়াদাপূর্ণ করা, বুদ্ধিমত্তা, সভ্যতা, ভ্যবতা, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা এবং মন আতœার সংযম শক্তি প্রভৃতি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কোন জাতির বা মানব গোষ্ঠীর অধিকাংশ লোকের মধ্যে যদি উল্লেখিত গুনাবলীর সমাবেশ হয়, তবে মানবতার প্রকৃত মূলধনই তার অর্জিত হয়েছে বলে মনে করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সমাজ সংস্থা গঠন করা তার পক্ষে অতীব সহজসাধ্য হবে। কিন্তু এই মূলধন সমাবিষ্ট হয়ে কার্যত একটি সদৃঢ় ও ক্ষমতাসম্পন্ন সামাজিক রূপলাভ করতে পারে না- যতক্ষণ পর্যন্ত না তার সাথে আরো কিছু নৈতিক গুণ এসে মিলিত হবে। উদাহরণ স্বরূপবলা যায়, সমাজের সমগ্র কিংবা অধিকাংশ মানুষই একটি সামগ্রিক লক্ষ্যকে নিজেদের চরম লক্ষ্যরূপে গ্রহণ করবে। সেই লক্ষ্যকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ-এমনকি, নিজের ধন-প্রাণ ও সম্পদ সন্তান হতেও অধিক ভালবাসবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে প্রেম ভালবাসা ও সহানুভূতির মনোভাব প্রবল হবে, তাদের মধ্যে পরস্পর মিলেমিশে কাজ করার মনোভাব থাকবে । সুসংগঠিত ও সংঘ বদ্ধভাবে নির্র্দিষ্ঠ উদ্দেশ্যে চেষ্টা - সাধনার জন্য যতখানি আতœদান। অপরিহার্য, তা করতে তারা প্রতিনিয়ত প্রস্তুত থাকবে। ভাল ও মন্দ নেতার মধ্যে পার্থক্য করার মত বুদ্ধি- বিবেচনা তাদের থাকতে হবে - যেন যোগ্যতম ব্যক্তি তাদের নেতা নিযুক্ত হতে পারে। তাদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অপরিসীম দূরদৃষ্টি ও গভীর ঐকান্তিক নিষ্ঠা এবং এছাড়া নেতৃত্বের জন্য অপরিহায্য অন্যান্য গুনাবলীও বর্তমান থাকা দরকার । সামাজের সকল লোককে নিজেদের নেতৃবৃন্দের আদেশ পালন ও অনুগমনে অভ্যস্থ হতে হবে। তাদের উপর জনগণের বিপুল আস্থা থাকতে হবে এবং নেতৃবৃন্দের নির্দেশে নিজেদের সমগ্র হৃদয়, মন, দেহের শক্তি এবং যাবতীয় বৈষয়িক উপায় - উপদান; লক্ষ্যস্থলে উপনীত হওয়ার জন্য যে কোন কাজের সামগ্রিক জনমত এত সজাগ - সচেতন ও তীব্র হতে হবে যে সামগ্রিক কল্যাণের বিপরীত ক্ষতিকারক কোন জিনিসকেই নিজেদের মধ্যে এক মুহূর্তের তরেও টিকতে দেবে না। বস্তুত এগুলোই হচ্ছে মৌলিক মানবীয় চরিত্র। এগুলোকে আমি “মৌলিক মানবীয় চরিত্র বলে এজন্য অভিহিত করছি যে, মূলত এ নৈতিক গুণগুলোই হচ্ছে মানুষের নৈতিক শক্তি ও প্রতিভার মূল উৎস । মানুষের মধ্যে এই গুণাবলীর তীব্র প্রভাব বিদ্যামান না থাকলে কোন উদ্দেশ্যের জন্যই কোন সার্থক সাধনা করা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব হয় না। এই গুণগুলোকে ইস্পাতের সাথে তুলানা করা যেতে পারে। ইস্পাতের মধ্যে দৃঢ়তা, অক্ষয়তা ও তীব্রতা রয়েছে, এরই সাহায্যে একটি হাতিয়ার অধিকতর শাণিত ও কার্যকারী হতে পারে। অতপর তা ন্যায় কাজে ব্যবহৃত হবে কি অন্যায় কাজে - সে প্রশ্ন অপ্রাসংগিক। যার সৎ উদ্দেশ্য রয়েছে এবং সে জন্য কাজ করতে চাহে, ইস্পাত নির্মিত অস্ত্রই তার জন্য বিশেষ উপকারি হতে পারে, পঁচা কাঠ নির্মিত অস্ত্র নয়। কারণ, আঘাত সহ্য করার মত কোন ক্ষমতাই তাতে নেই। ঠিক এই কথাটি নবী করীম (সাঃ) হাদীস শরীফে এরশাদ করছেন ঃ “তোমাদের মধ্যে ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগের উত্তম লোকগণ ইসলামী যুগেও উত্তম ও শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হবে।” অর্থাৎ জাহেলী যুগে যাদের মধ্যে যোগ্যতা ও বলিষ্ঠ কর্মক্ষমতা এবং প্রতিভা বর্তমান ছিল ইসলামের মধ্যে এসে তারাই যোগ্যতম কর্মী প্রতিপন্ন হয়েছিল। তাদের কর্মক্ষমতা উপযুক্ত ক্ষেত্রে স্বতস্ফুর্ত হয়েছে । পার্থক্য শুধূু এতটুকু যে, পূর্বে তাদের প্রতিভা ও কর্মক্ষমতা ভুল পথে ব্যবহার হতো, এখন ইসলাম তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছে। কিস্তু অকর্মণ্য ও হীনবীর্য লোক না জাহেলিয়াতের যুগে কোন কার্য সম্পাদন করতে পেরেছে না ইসলামের কোন বৃহত্তম খেদমত আঞ্জাম দিতে সমর্থ হয়েছ। আরব দেশে নবী করীমের (সাঃ) যে বিরাট অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ হয়েছিল এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তার সর্বগ্রাসী প্রভাব সিন্ধু নদ শুরু করে . আটলান্টিক মহাসাগরের বেলাভূমি পর্যন্ত - দুনিয়ার একটি বিরাট অংশের উপর বিস্তারিত হয়েছিল তার মূল কারণ এটাই ছিল যে, আরব দেশের সর্বপেক্ষা উত্তম ও প্রতিভা সম্পন্ন মানুষ তাঁর আদর্শানুগামী হয়েছিল। তাদের মধ্যে উক্ত রূপ চরিত্রের বিরাট শক্তি নিহিত ছিল। মনে করা যেতে পারে, আরবের অকর্মণ্য, অপদার্থ, বীর্যহীন, ইচ্ছাশক্তি বিবর্জিত, বিশ্বাস- অযোগ্য লোকদের একটি বিরাট ভীড় যদি নবী কারীমর (সাঃ) চারপাশে জমায়েত হতো, তবে অনুরূপ ফল কখনোই লাভ করা সম্ভব হতো না । একথা একেবারেই স্বতসিদ্ধ। ইসলামী নৈতিকতা নৈতিক চরিত্রের দ্বিতীয় প্রকারÑ যাকে আমি ইসলামি নৈতিকতা বলে অভিহিত করেছি Ñ এ সম্পর্কেও আলোচনা করতে হবে। মূলত এটা মৌলিক মানবীয় চরিত্র হতে স্বতন্ত্র ও ভিন্নতর কোন জিনিস নয়, বরং তার বিশুদ্ধকারী ও পরিপূরক মাত্র। ইসলাম সর্বপ্রথম মানুষের মৌলিক মানবীয় চরিত্রকে সঠিক ও নির্ভূল কেন্দ্রের সাথে যুক্ত করে দেয়। অতপর এটা সম্পূর্ণ রূপে কল্যাণকর ও মঙ্গলময় পরিণতি হয়। মৌলিক মানবীয় চরিত্র একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় বস্তুুনিরপেক্ষ নিছক একটি শক্তি মাত্র। এই অবস্থায় তা ভালও হতে পারে, মন্দও হতে পারে , কল্যাণকরও হতে পারে, অকল্যাণের হাতিয়ারও হতে পারে। যেমন, একখানি তরবারি একটি তীর শাণিত অস্ত্র মাত্র।এটা একটি দস্যুর মুষ্টিবদ্ধ হলে যুলুম-পীড়নের একটি মাত্মক হাতিয়ারে পরিণত হবে। আর আল্লাহর পথে জিহাদকারীর হাতে পড়ে এটা হতে পারে সকল কল্যাণ ও মঙ্গলের নিয়ামক। অনুরূপ ভাবে মৌলিক মানবীয় চরিত্র কারো মধ্যে শুধু বর্তমান থাকাই তার কল্যাণকর হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং নৈতিক শক্তি সঠিক পথে নিয়োজিত হওয়ার উপরই তা একান্তভাবে নির্ভর করে। ইসলাম একে সঠিক পথে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে মাত্র। ইসলামের তাওহীদী দাওয়াতের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করা। এই দাওয়াত গ্রহনকরী লোকদের পার্থিব জীবনের সমগ্র চেষ্টা-সাধনা ও শ্রম মেহনতকে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্যই নিয়োজিত হতে হবে। (ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু) “হে আল্লাহ! আমাদের সকল চেষ্টা-সাধনা এবং সকল দুঃখ ও শ্রম স্বীকারের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তোমার সন্তোষ লাভে। ” ইসলামের দওয়াত গ্রহণকারী ব্যক্তির চিন্তা ও কর্মের সকল তৎপরতা আল্লাহ নির্ধারিত সীমার মধ্যে আবদ্ধ হবে। (ইয়্যাক না’বুদু ওয়া ইলাইকা নাস আ) “হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি এবং তোমার জন্য আমরা নামায ও সিজদায় ভুলুণ্ঠিত হই” । ইসলাম মানুষের সমগ্র জীবন ও অন্তর্নিহিত শক্তি নিজেকে এভাবেই নিয়ন্ত্রিত ও সংশোধিত করে। এই মৌলিক সংশোধনের ফলে উপরোল্লিখিত সকল বুনিয়াদি মানবীয় চরিত্রই সঠিক পথে নিযুক্ত ও পরিচালিত হয় এবং তা ব্যক্তিস্বার্থ, বংশ পরিবার কিংবা জাতি ও দেশের শ্রেষ্ঠত্ব বিধানের জন্য অযথা ব্যয়িত না হয়ে একান্তভাবেই সত্যের বিজয় সম্পাদনের জন্যই সংগতরূপে ব্যয় হতে থাকে। এর ফলেই তা একটি নিছক শক্তি মাত্র হতে উন্নীত হয়ে সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি কল্যাণ ও রহমতের বিরাট উৎসে পরিণত হয়। দ্বিতীয়ত, ইসলাম মৌলিক মানবীয় চরিত্রকে সুদৃঢ় করে দেয় এবং চরম প্রান্তসীমা পর্যন্ত এর ক্ষেত্র ও পরিধি স¤প্রসারিত করে। উদাহরণ স্বরূপ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার উল্লেখ করা যেতে পারে। সর্বাপেক্ষা অধিক ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু ব্যক্তির মধ্যেও যে ধৈর্য ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায়, তা যদি নিছক বৈষয়িক স্বার্থের জন্য হয় এবং শিরক ও বস্তুু বাদী চিন্তার মূল হতে রস গ্রহণ করে, তবে তার একটি সীমা আছে, যে পর্যন্ত পৌঁঁছিয়ে তা নিঃশেষ হয়ে যায়। অতপর উহা কেঁপে উঠে , নিস্তেজ ও নি®প্রভ হয়ে পড়ে। কিন্তুু যে ধৈর্য ও তিতিক্ষা তাওহীদের উৎস মূল হতে ‘রস’ গ্রহণ করে এবং যা পর্থিব স্বার্থ লাভের জন্য নয় --- একান্তভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যেই নিয়োজিত ---- তা ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও তিতিক্ষার এক অতল স্পর্শ মহাসাগরে পরিণত হবে। দুনিয়ার সমগ্র দুঃখ-কাষ্ট ও বিপদ- মুসিবত মিলিত হয়েও তাকে শূন্য ও শুষ্ক করতে সমর্থ হয় না। এজন্যই ‘অমুসলিমদের’ ধৈর্য খুবই সংকীর্ণ ও নগন্য হয়ে থাকে। যুদ্ধের মাঠে তারা হয়ত গোলাগুলির প্রবল আক্রমনের সামনে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্রতিরোধ করেছে। কিন্তুু পর মূহুর্তেই নিজেদের পাশবিক লালসা চরিতার্থ করার সুযোগ আসা মাত্রই কামাতুর বৃত্তির সামান্য উত্তেজনার আঘাতে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তুু ধৈর্য ও সহিষ্ণুতাকে জীবনের বিশাল ক্ষেত্রে বিস্তারিত করে দেয় এবং সামান্য ও নির্দিষ্ট কয়েকটি দুঃখ - কষ্টও বিপদ -মুসিবত প্রতিরোধের ব্যাপারেই নয়, সকল প্রকার লোভ- লালসা, ভয়, আতঙ্ক ও আশাংকা এবং প্রত্যেকটি পাশবিক বৃত্তির মোকাবিলা স্থিতিলাভের জন্য এটা একটি বিরাট শক্তির কাজ করে । বস্তুত ইসলাম মনুষের সমগ্র জীবনকে একটি অচল-অটল ধৈর্যপূর্ণ পর্বত প্রায় সহিষ্ণু জীবনে পরিণত করে। জীবনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপের সঠিক পন্থা অবলম্বন করাই হয় এহেন ইসলামী জীবনের মূলনীতি তাতে সীমাহীন দঃখ - দুর্দশা, বিপদ- মুসিবত, ক্ষতি - লোকসান বরদাশত করতে হলে ও এই জীবনে এর কোন সুফল পাওয়া না গেলেও জীবনের গতি ধারায় একবিন্দু পরিমাণ বক্রতা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। অভাবিত পূর্ব সুযোগ –সুবিধা লাভ, উন্নতি এবং আশা -ভরসার শ্যামল সবুজ বাগিচা দেখতে পেলেও নয়। পরকালের নিশ্চিত সুফেলের সন্দেহাতীত আশায় দুনিয়ার সমগ্র জীবনে অন্যায় ও পাপ হতে বিরত থাকা এবং পুণ্য, মঙ্গল ও কল্যাণের পথে দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হওয়ারই নাম হচ্ছে ইসলামী সহিষ্ণতা ইসলামী সবর । পরন্তু, কাফেেেদর জীবনের খুব সংকীর্ণতম পরিবেশের মধ্যে ততধিক সংকীর্ণ ধারণা অনুযায়ী সহিষ্ণতার যে রূপ দেখতে পাওয়া যায়, মুসলামানদের জীবনে তাও অনিবার্যরূপে পরিলক্ষিত হবে। এই উদাহরণের ভিত্তিতে অন্যান্য সমগ্র মৌলিক মানবীয় চরিত্র সম্পর্কের ধারণা করা যেতে পারে এবং বিশুদ্ধ ও নির্ভুল চিন্তা ও আদর্শ ভিত্তিক না হওয়ার দরুণ কাফেরদের জীবন কত দর্বল এবং সংকীর্ণ হয়ে থাকে তাও নিসন্দেহে অনুধাবন করা যেতে পারে। কিন্তু ইসলাম সেইসবকে বিশুদ্ধ ও সুষ্ঠু ভিত্তিতে স্থাপিত করে অধিকতর মজবুত এবং বিস্তৃত ও বিশাল অর্থদান করে। তৃতীয়ত, ইসলাম মৌলিক মানবীয় চরিত্রের প্রাথমিক পর্যায়ের উপর মহান উন্নত নৈতিকতার একটি অতি জাকজমকপূর্ণ পর্যয় রচনা করে দেয় । এর ফলে মানুষ সৌজন্য ও মাহাতেœ্যর এক চুড়ান্ত ও উচ্চ পর্যায়ে আরোহণ করে থাকে । ইসলাম মানুষের হৃদয়মনকে স্বার্থপরতা, আতœম্বরিতা, অত্যাচার, নির্লজ্জতা ও অসংলগ্নতা উশৃঙ্খলতা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করে দেয় এবং তাতে আল্লাহর ভয়, তাকওয়া, আতœশুদ্ধি, সত্যপ্রিয়তা জাগিয়ে তোলে । তার মধ্যে নৈতিক দায়িত্ববোধ অত্যন্ত তীব্র ও সচেতন করে তোলে । আতœসংযম তাকে সর্বতোভাবে অভ্যস্ত নিখিল সৃষ্টি জগতের প্রতি তাকে দয়াবান, সৌজন্যশীল, অনুগ্রহ সম্পন্ন , সহানুভুতিপূর্ণ, বিশ্বাসভাজন, স্বার্থহীন, সদিচ্ছাপূরণ, নিষ্কলুষ নির্মল ও নিরপেক্ষ, সুবিচারক এবং সর্বক্ষণের জন্য সত্যবাদী ও সত্যপ্রিয় করে দেয় । তার মধ্যে এমন এক উচ্চ পবিত্র প্রকৃতি লালিত - পালিত হতে থাকে, যার নিকট সবসময় মঙ্গলেরই আশা করা যেতে পারে - অণ্যায় এবং পাপের কোন আশংকা তার দিক হতে থাকতে পারে না। উপরন্তুু ইসলাম মানুষকে কেবল ব্যক্তিগতভাবে সৎ বানিয়েই ক্ষ্যান্ত হয় না। -তা যথেষ্টও মনে করে না। রাসূলের বাণী অনুযায়ী তাকে ঃ কল্যানের দ্বার উৎঘাটণ এবং অকল্যাণের পথ রোধকারীও বানিয়ে দেয় । অন্য কথায় গঠনমূলক দষ্টিতে ইসলাম তার উপর ন্যায়র প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ ও মূলোৎপাটনের বিরাট কর্তব্য পালণের দায়িত্ব অর্পণ করে। এরূপ স্বভাব - প্রকৃতি লাভ করতে পারলে এবং কার্যত ইসলামের বিরাট মহান মিশনের জন্য সাধনা করলে এর সর্বাতœক বিজয়াভিযানের মোকাবিলা করা কোন পার্থিব শক্তিরই সাধ্যায়ত্ত হবে না। নেতৃত্ব সম্প র্কে আল্লাহর নীতির সারকথা দুনিয়ার নেতৃত্ব কর্তৃত্ব দানের ব্যাপারে সৃষ্টির প্রথম প্রভাত হতেই আল্লাহ তায়ালার একটি স্থায়ী নিয়ম ও রীতি চলে এসেছে এবং মানব জাতি বর্তমান প্রকৃতির উপর যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন তা একই ধারায় জারী থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই। এখানে প্রসংগত সেই নিয়মের সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। পৃথিবীর বুকে ইসলামী নৈতিকতা ও মৌলিক মানবীয় চরিত্রে ভূষিত এবং জাগতিক কার্যকারণ ও জড় উপায়-উপাদান প্রয়োগকারী কোন সুসংগঠিত দল যখন বর্তমান থাকে, তখন আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নেতৃত্বর চাবিকাঠি এমন একটি দলের হাতে ন্যাস্ত করেন যে দল অন্তত মৌলিক মানবীয় চরিত্রে ভূষিত এবং জাগতিক উপায়-উপাদান সমূহ ব্যবহার করার দিক দিয়ে অন্যান্য তুলনায় অধিকতর অগ্রসর । করণ, আল্লাহ তায়ালা তার এই পৃথিবীর শৃংখলা বিধান করতে দৃঢ় সংকল্প । এই শৃংখলা বিধানের দায়িত্ব ঠিক সেই মানব গোষ্ঠীকেই দান করেন, যারা সমসমায়িক দলসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা যোগ্যতম প্রমাণিত হবে। বস্তুত দুনিয়ার নেতৃত্বদান সম্পর্কে এটাই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার স্থায়ী নীতি । কিন্তু পৃথিবীতে এমন কোন সুসংগঠিত দল যদি বাস্তবিকই বর্তমান থাকে, যা ইসলামী নৈতিকতা ও মৌলিক মানবীয় চরিত্র উভয় দিক দিয়েই অবশিষ্ট সকল মানুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ট ও বিশিষ্ট প্রমাণিত হবে এবং জাগতিক উপায় – উপাদান ও জড় শক্তি প্রয়োগেও কিছুমাত্র পশ্চাৎপদ হবে না তবে তখন পৃথিবীর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের চাবিকাঠি অন্য কোন দলের হাতে অর্পিত হওয়া একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার । শুধু অসম্ভবই নয় তা অস্বাভাবিকও বটে, তা মানুষের জন্য নির্ধারিত আল্লাহর স্থায়ী নিয়ম –নীতিরও সম্পূর্ণ বিপরিত । আল্লাহ তায়ালা সত্যপন্থী ও নিষ্ঠাবান ঈমানদার লোকেদের জন্য তার কিতাবে যে প্রতিশ্রে“তি উল্লেখ করেছেন, এটা তারও খেলাফ হয়ে পড়ে । দুনিয়ার বুকে সৎ সত্যাশ্রয়ী ও ন্যায়পন্থী, আল্লাহর মর্জী অনুযায়ী বিশ ¦পরিচালনায় যোগ্যতাসম্পন্ন একটি একনিষ্ঠ মানব দল বর্তমান থাকা সত্তেও তিনি দুনিয়ার কর্তৃত্ব তার হাতে অর্পণ না করে কাফের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ও আল্লাহদ্রোহী লোকদের হাতে ন্যস্ত করবেন - একথা কিরূপে ধারণা করা যেতে পারে ? কিন্তুু বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে, এরূপ অনিবার্য পরিণাম ঠিক তখনি লাভ করা যেতে পারে যখন উল্লেখিত গুনাবলী সমন্বিত একটি দল বাস্তবিকই দুনিয়াতে বর্তমানে থাকবে। এক ব্যক্তির সৎ হাওয়া এবং বিচ্ছিন্নভাবে অসংখ্য সৎ ব্যক্তির বর্তমান থাকায় দুনিয়ার নেতৃত্বলাভের আল্লাহর নীতিতে বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম সৃষ্টি হতে পারে না- সেই ব্যক্তিগণ যতবড় অলী আল্লাহ - পয়গম্বরই হোক না কেন । আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নেতৃত্বদানের যে ওয়াদা করেছেন, তা বিক্ষিপ্ত ও অসংঘবদ্ধ কয়েকজন ব্যক্তি সম্বর্কে নয় ; এমন একটি দলকে এটা দান করার প্রশ্রি“তি তিনি দিয়েছেন যা কার্যত ও বাস্তব ক্ষেত্রে নিজকে (খায়রু ইম্মাহ)“সর্বোত্তম জাতি” ও (উম্মাুতাওয়াসাতা) “মধ্যম পন্থানুসারী জাতি” বলে প্রমান করতে পারবে। একথা স্মরন রাখতে হবে যে উক্তরূপে গুণে ভুষিত একটি দলের শুধু বর্তমান থাকাই নের্তত্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটার জন্য যথেষ্ট নয়, তা এমন নয় যে এদিকে এরূপ একটি দল অস্তিত্ব লাভ করবে, আর ওদিকে সঙ্গে সঙ্গেই আকাশ হতে কিছু সংখ্যক ফেরশতা অবতরণ করে ফাসেক –কাফেরদেরকে নেতৃত্বর গদি হতে বিচ্যুত করে দিবে এবং এই দলকে তদস্থলে আসীন করবে । এরূপ অস্বাভাবিক নিয়ম মানব সমাজে কখনই কোন পরিবর্তন সুচিত হতে পারে না । নেতৃত্ব ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন সৃষ্টি করতে হলে জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে ও বিভাগে, প্রত্যেক কদমে পদক্ষেপে কাফের ও ফাসেক ও ফাসেকী শক্তির সাথে দ্ব›দ্ব ও প্রত্যক্ষ মোকাবিলা করতে হবে । বস্তুুত এটা এমন একটি অনিবার্য শর্ত যা নবীদের উপরও প্রযোজ্য হয়েছে । অন্য কারো এই শর্ত পূরণ না করে সমাজে নেতৃত্বে কোনরূপ পরিবতর্ন সৃষ্টি করতে পারার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। মৌলিক মনবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিক শক্তির তারতম্য জাগতিক জড়শক্তি এবং নৈতিক শক্তির তারতম্য সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের গভীরতর অধ্যয়নের পর আল্লাহর এই সুন্নাত বা রীতি আমি বুঝতে পেরেছি যে, সেখানে নৈতিক শক্তি বলতে কেবল মাত্র মৌলিক মানবীয় চরিত্রই হবে, সেখানে জাগতিক উপায়-উপাদান ও জড়শক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি, একটি বৈষয়িক জড়শক্তি যদি বিপুল পরিমাণে বর্তমান থাকে তবে সামান্য নৈতিক শক্তির সাহায্যেই সে সারাটি দুনিয়া গ্রাস করতে পারে। আর অপর দল নৈতিক শক্তিতে শ্রেষ্ঠতর হয়েও কেবলমাত্র বৈষয়িক শক্তির অভাব হেতু সে পাশ্চাৎপদ হয়ে থাকবে। কিন্তু যেখানে নৈতিক শক্তি বলতে ইসলামী নৈতিকতা ও মেীলিক মানবীয় চরিত্র উভয়ের প্রবল শক্তির সমন্বয় হবে, সেখানে বৈষয়িক জড়শক্তির সাংঘাতিক পরিমাণে অভাব হলেও নৈতিক শক্তিই জয়লাভ করবে এবং নিছক মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও বৈষয়িক জড়শক্তির ভিত্তিতে যে শক্তিসমূহ মস্তক উত্তোলন করবে তা নিশ্চিতরূপেই পরাজিত হবে। সুস্পষ্টরূপে বুঝার জন্য একটি হিসাবের অবতারণা করা যেতে পারে । মৌলিক মানবীয় চরিত্রের সাথে যদি একশত ভাগ বৈষিয়িক জড়শক্তি অপরিহার্য হয় তবে ইসলামী নৈতিকতা ও মৌলিক মানবীয় চরিত্রের পূর্ণ সমন্বয় হাওয়ার পর মাত্র ২৫ ভাগ বৈষয়িক জড়শক্তি উদ্দেশ্য লাভের জন্য যথেষ্ট হবে। অবশিষ্ট ৭৫ ভাগ জড়শক্তির অভাব কেবল ইসলামী নৈতিকতাই পূরণ করে দেবে। উপরন্তু নবী করীম (সা) এবং তার আসহাবেদের সমপরিমান ইসলামী নৈতিকতা হতে মাত্র শতকরা পাঁচ ভাগ জড়শক্তিই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এই নিগূঢ় তত্ত¡ ও সত্য বলা হয়েছে কুরআন মজীদের নিম্নলিখিত আয়াতেঃ -----“তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন পরম ধৈর্যশীল লোক হয় তবে তারা দু’শ’জনের উপর জয়ী হতে পারেবে।” এই শেষোক্ত কথাটিকে নিছক ‘অন্ধভক্তি ভিত্তিক ধারণা’ মনে করা ভুল হবে। আর আমি যেকোন মোজেযা বা কেরামতির কথা বলছি, তাও মনে করবেন না। বস্তুত এটা পরিষ্ফুট হতে পারে। এর কারণ যদি বর্তমান থাকে, তবে তা নিশ্চয়ই বাস্তবে রূপায়িত হবে। কিন্তু ইসলামী নৈতিকতা –যার মধ্যে মৌলিক মানবীয় চরিত্রও ওতপোতভাবে বিজড়িত রয়েছে –বৈষয়িক জড়শক্তির শতকরা ৭৫ভাগ বরং ৫০ ভাগ অভাব কিরূপে পূরূণ করে ; তা একটি নিগূঢ় রহস্য বটে। কাজেই সামনের দিকে অগ্রসর হাওয়ার পূর্বে এর বিশ্লেষণ হাওয়া একান্ত আবশ্যক। এই রহস্য হৃদয়ংগম করার জন্য সমসাময়িককালের আন্তর্জাতিক পরস্থিতির উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করাই যথেষ্ট । বিগত মহাযুদ্ধের সর্বাতœক বিপর্যয়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে জাপান ও জার্মানীর পরাজয় ঘটে। মৌলিক মানবীয় চরিত্রের দিক দিয়ে এই বিপর্যয়ের সংশ্লিষ্ট উভয় দলই প্রায় সমান । বরং সত্য কথা এই যে, কোন দিক দিয়ে জার্মান ও জাপান মিত্র পক্ষের মোকাবিলার আধিকতর মৌলিক মানবীয় চরিত্রের প্রমাণও উপস্থিত করেছে। জড়বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং এর বাস্তব প্রয়োজনের ব্যাপারেও উভয় পক্ষেই সমান ছিল। বরং সত্য কথা এই যে এই ক্ষেত্রে জার্মানীর শ্রেষ্ঠত্ব সর্বজন বিদিত। কিন্তু এতদসত্বেও কেবল একটি ব্যাপরেই এক পক্ষ অপর পক্ষ হতে অনেকটা অগ্রসর –আর তা হচ্ছে বৈষয়িক কার্যকারণের আনুকূল্য । এই জনশক্তির অপরাপর সকল পক্ষ অপেক্ষাই অনেকগুণ বেশী । বৈষয়িক জড় উপায় –উপাদান তার সর্বাপেক্ষা অধিক রয়েছে । এর ভৌগলিক অবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ঐতিহাসিক কার্যকারণ অপরাপর পক্ষের তুলনায় বহুগুন বেশী অনুকুল পরিস্থিতির উদ্ভব করে নিয়েছিল । ঠিক এজন্য মিত্রপক্ষ বিজয় মাল্যে ভূষিত হয়। আর এজন্যই যে জাতির জনসংখ্যা অপর্যাপ্ত , বৈষয়িক জড় উপায় উপাদান যার নিকট কম, তার পক্ষে অধিক জনসংখ্যা সমন্বিত ও বিপুল জাগতিক উপায়-উপাদান বিশিষ্ট জাতির মোকাবিলায় মস্তকোত্তলন করে দন্ডায়মান হাওয়া প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। মৌলিক মানবীয় চরিত্র প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে উত্থিত জাতি হয় জাতীয়তাবাদী হবে এবং পৃথিবীর অন্যান্য অংশও অধিকার করতে প্রয়াসী হবে, নতুবা তা এক সার্বজনীন আদর্শ ও নিয়ম বিধানের সমর্থক হবে এবং তা গ্রহণ করার জন্য দুনিয়ার অন্যান্য জাতি সমূহকেও আহŸান জানাবে। সে জাতির এ দু’টির যে কোন এক অবস্থা নিশ্চয়ই হবে । প্রথম অবস্থা হলো বৈষয়িক জড়শক্তি ও জাগতিক উপায়-উপানের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতি অপেক্ষা তার শ্রেষ্ঠ ও অগ্রসর হওয়া ভিন্ন প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়লাভ করার দ্বিতীয় কোন পন্থা আদৌ থাকতে পারে না । কারণ এই যে , যেসব জাতিকে সে প্রভত্ব ও ক্ষমতা লিপ্সার অগ্নিযজ্ঞে আতœাহুতি দিতে কৃতসংকল্প হয়েছে তারা অত্যন্ত তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে তার প্রতিরোধ করবে এবং তার পথরোধ করতে নিজেদের সমগ্র শক্তি নিয়োজিত করবে । কাজেই তখন আক্রমনকারী জাতির পরাজয়ের সম্ভবনা অনেক বেশি । কিন্তু উক্ত জাতির যদি দ্বিতীয় অবস্থা হয়- যদি উহা কোন সার্বজনীন আদর্শের নিশান বরদার হয়, ও মস্তিষ্ক প্রভাবান্বিত হওয়ার বিপুল সম্ভবনা রয়েছে। তখন জাতিকে প্রতিবন্ধকতার পথ হতে অপসৃত করতে খুব বেশী শক্তি প্রয়োগ করার আবশ্যক হবে না। কিন্তুু এখানে ভুললে চলবে না যে, মুষ্টিমেয় কয়েকটি মনোমুগ্ধকর নীতি - আদর্শই কখনো মানুষের মন ও মস্তিষ্ক প্রভাবান্বিত করতে পারে না । সে জন্য সত্যিকার সদিচ্ছা, সহানুভূতি, হিতাকাঙ্খা, সততা, সত্যবাদিতা , নিঃস্বার্থতা, উদারতা , বদান্যতা, সৌজন্য ও ভদ্রতা, এবং নিরপেক্ষ সুবিচার নীতি একান্ত অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, এই মহৎ গুণগুলোকে যুদ্ধ-সন্ধি, জয়- পরাজয়, বন্ধুতা শত্র“তা এই সকল প্রতিকূল পরিস্থতিতেই কঠিন পরীক্ষায় অত্যন্ত খাঁটি অকৃত্রিম ও নিষ্কলুষ প্রমাণিত হতে হবে । কিন্তু এরূপ ভাবধারার প্রত্যক সম্পর্ক রয়েছে উন্নত চরিত্রের উচ্চতম ধাপের সাথে এবং তার স্থান মৌলিক মানবীয় চরিত্রের অনেক ঊর্ধে। ঠিক এ কারণেই নিছক মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও বৈষয়িক শক্তির ভিত্তিতে উত্থিতে জাতি প্রকাশ্যভাবে জাতীয়তাবাদীই হোক কি গোপন জাতীয়তাবাদের সাথে কিছুটা সার্বজনীন আদর্শের প্রচার ও সমর্থন করার ছদ্মবেশ ধারণ করুক –একান্ত ব্যক্তিগত কিংবা শ্রেণীগত অথবা জাতীয় স্বার্থ লাভ করাই হয় তার যাবতীয় চেষ্টা –সাধানা ও দ্ব›দ্ব-সংগ্রামের চুড়ান্ত উদ্দেশ্য । বর্তমান সময় আমেরিকা , বৃটেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে ঠিক এই ভাবধারাই সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই ধরনের যুদ্ধ -সংগ্রামের ক্ষেত্রে অতি স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকটি জাতি প্রতিপক্ষের সামনে এক দুর্জয় দুর্গের ন্যায় হয়ে দাঁড়ায় এবং তার প্রতিরোধে স্বীয় সমগ্র নৈতিক ও বৈষয়িক শক্তি প্রয়োগ করে। তখন আক্রমাণকারী জাতির শ্রেষ্ঠতর জড়শক্তির আক্রমণে শক্র পক্ষকে সে নিজ দেশের চতুর্সীমার মধ্যে কিছূতেই প্রবেশ করতে দিবে না। কিন্তুু এই সময় এরূপ পরিবেশের মধ্যে এমন একটা মানবগোষ্ঠী যদি বর্তমান থাকে প্রথমত তা একটি জাতির লেকদের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকলেও কোন দোষ নেই---- যদি তা একই জাতি হিসেবে না উঠে একটি আদর্শবাদী জামায়াত হিসেবে দন্ডায়মান হয়, যা সকল প্রকার ব্যক্তিগত, শ্রেণীগত ও জাতীয় স্বার্থপরতার বহু ঊর্ধে থেকে বিশ্বমানবতাকে আমন্ত্রণ জানাবে যার সমগ্র চেষ্টা -সাধনার চরম লক্ষ্য হবে নির্দিষ্ট কতকগুলো আদর্শের অনুসরণের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবতার মুক্তিসাধন এবং সেই আদর্শে ও নীতিসমূহের ভিত্তিতে মানবজীবনের গোটা ব্যবস্থাার পুনপ্রতিষ্ঠা সাধন। ঐসব নীতি ও আদর্শের অনুসরনের মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবতার মুক্তিসাধন এবং সেই আদর্শ ও নীতিসমূহের ভিত্তিতে মানব জীবনের গোটা ব্যবস্থার পুনপ্রতিষ্ঠা সাধন। ঐসব নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে এই দল যে জাতি গঠন করবে, তাতে জাতীয়, ভৈাগলিক, শ্রেণীগত ও বংশীয় বা গোত্রীয় বৈষম্যের নাম গন্ধও থাকবে না। সকল মানুষই তাতে সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে এবং সকলেই সমান সুযোগ- সুবিধা লাভ করতে পরবে। এই নবপ্রতিষ্ঠিত জাতির মধ্যে নেতৃত্ব পথ নির্দেশকারী মর্যাদা কেবল সেই ব্যক্তি বা সেই মানব সমষ্টিই লাভ করতে পারবে, যারা সেই আদর্শ ও নীতির অনুসরন করে চলার দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা অগ্রসর ও শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত হবে। তখন তার বংশ মর্যদা বা আঞ্চলিক জাতীয়তার কোন তারতম্য বিচার করা হবে না এমনকি, এই নতুন সমাজে, এতদুর ও হতে পারে যে, বিজিত জাতির লোক ঈমান এনে নিজেকে অন্যান্যের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আদর্শানুসরণ এবং যোগ্যতার প্রসার করতে পারলে বিজয়ী তার সকল চেষ্টা ও যুদ্ধসংগ্রাম লব্ধ যাবতীয় ‘ফল’ তার পদতলে এনে ঢেলে দিবে এবং তাকে ‘নেতা’ রূপে স্বীকার করে নিজে ‘অনুসারী’ হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত হবে। এমন একটি আদর্শবাদী দল যখন নিজেদের আদর্শ প্রচার করতে শুরু করে, তখন এই আদর্শের বিরোধী লোকগণ তাদের প্রতিরোধ করতে উদ্যত হয়। ফলে উভয় দলের মধ্যে দ্ব›দ্ব শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এই দ্ব›েদ্বর তীব্রতা যতই বৃদ্ধি পায় আদর্শবাদী দল বিরুদ্ধবাদীদেও মেকাবিলার ততই উন্নত চরিত্র ও মহান মানবিক গুন মহাতেœর চরম পরাকাষ্টা প্রদর্শন করতে থাকে । সে তার কর্মনীতি দ্বারা প্রমান করে যে, মানব সমষ্টি-তথা গোটা সৃষ্টিজগতের কল্যাণ সাধন ভিন্ন তার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। বিরুদ্ধবাদীদের ব্যক্তি সত্ত¡া কিংবা তাদের জাতীয়তার সাথে এর কোন শক্রতা নেই। শক্রতা আছে শুধু তাদের গৃহীত জীবনধারা ও চিন্তা মতবাদের সাথে। তা পরিত্যগ করলেই তার রক্ত পিপাসু শক্রকেও প্রণভরা ভালবাসা দান করতে পারে। বুকের সঙ্গে মিলাতে পারে । পরন্তু সে আরও প্রমান করবে যে বিরুদ্ধ পক্ষের ধন -দৌলত কিংবা তাদের ব্যবসায় ও শিল্পপণ্যের প্রতিও তার কোন লালসা নেই, তাদের নৈতিক ও আধ্যাতিœক কল্যাণ সাধনাই একমাত্র কাম্য । তা লাভ হলেই যথেষ্ট। তাদের ধন -দৌলত তাদেরই সৌভাগ্যের কারণ হবে। কঠিন কঠোরতম পরীক্ষার সময়ও এই দল কোনরূপ মিথ্যা, প্রতারনা ও শঠতার আশ্্রয় নেবে না । কুটিলতা ষড়যন্ত্রের প্্রত্যুত্তরে তারা সহজ-সরল কর্মনীতিই অনুসরণ করবে । প্্রতিশোধ গ্্রহণের তীব্্র উত্তেজনার সময়ও অত্যাচার-অবিচার, উৎপীড়নের নির্মমতায় মেতে উঠবে না । যুদ্ধেও প্্রবল সংঘর্ষের কঠিন মুহূর্তেও তারা নিজেদের নীতি আদর্শ পরিত্যাগ করবেনা । কারণ সেই আদর্শের প্্রচার প্্রতিষ্ঠার জন্যই তো তার জন্ম । এজন্য সততা, সত্যবাদিতা, প্্রতিশ্্রুতি পূরণ, নির্মল আচার-ব্যবহার ও নিঃস্বার্র্থ কর্মনীতির উপর তারা দৃঢ়তার সাথে দাড়িয়ে থাকে । নিরপেক্ষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রথমত আদর্শ হিসেবে সততা ও ন্যায়বাদের যে মানদন্ড বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করেছিল, নিজেকে এর কষ্টিপাথরে যাচাই করে সত্য এবং খাঁটি বলে প্রমাণ করে দেয় । শত্র“ পক্ষের ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, জুয়াড়ী, নিষ্ঠুর ও নির্দয় সৈন্যদের সাথে এই দলের আল্লাহভীরু, পবিত্র চরিত্র মহান আত্মা, দয়ার্দ্র হৃদয় ও উদার উন্নত মনোবৃত্তি সম্পন্ন মুজাহিদদের প্রবল মোকাবিলা হয়, তখন এই দলের প্রত্যেক ব্যক্তিরই ব্যক্তিগত মানবিক ও গুণ-গরিমা প্রতিপক্ষের পাশবিক ও বর্বরতার উপর উজ্জল উদ্ভাসিত হয়ে লোকচক্ষুর সামনে প্রকটিত হতে থাকে। শত্র“ পক্ষের লোক আহত বা বন্দী হয়ে আসলে চতুর্দিকে ভদ্রতা, সৌজন্য, পবিত্রতা ও নির্মল মানসিক চরিত্রের রাজত্ব বিরাজমান দেখতে পায় এবং তা দেখে তাদের কলুষিত আত্মা ও পবিত্র ভাবধারার সংস্পর্শে কলুষমুক্ত হয়ে যায়। পক্ষান্তরে এই দলের লোক যদি বন্দী হয়ে শত্র“ পক্ষের শিবিরে চলে যায, সেখানে কার অন্ধকারাচ্ছন্ন পূতিগন্ধময় পরিবেশে এদের মনুষ্যত্বের মহিমা আরো উজ্জল ও চাকচিক্যপূর্ণ হয়ে উঠে। এরা কোন দেশ জয় করলে বিজিত জনগণ প্রতিশোধের নির্মম আঘাতের পরিবর্তে ক্ষমা করুণা পায়, কঠোরতা নির্মমতার পরিবর্তে সহানুভুতি ; গর্ব অহংকার ও ঘৃণার পরিবর্তে পায় সহিষ্ণুতা ও বিনয় ; ভর্ৎসনার পরিবর্তে সাদর সম্ভাষন এবং মিথ্যা প্রচারণার পরিবর্তে সত্যের মূলনীতিসমূহের বৈজ্ঞানিক প্রচার । আর এসব দেখে খুশিতে তাদের হূদয় মন ভরে উঠে। তারা দেখতে পায় যে, বিজয়ী সৈনিকরা তাদের নিকট নারীদেহের দাবী করে না, গোপন রহস্যের সন্ধান করার জন্যও এরা উদগ্রীব নয়, তাদের অর্থনৈতিক শক্তি সম্পদকে ধবংস করার চিন্তাও এদের নেই । তাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও সম্মান মর্যাদার উপর ও এরা হস্তপেক্ষ করে না । বিজত জনতা শুধু দেখতে পায়, এরা এক গভীর চিন্তায় নিমগ্ন এই জন্য যে বিজত দেশের – একটি মানুষেরও সম্মান বা সতীত্ব যেন নষ্ট না হয়, কারো ধনমাল যেন ধ্বংস না হয়, কেউ যেন সংগত অধিকার হতে বঞ্চিত না থেকে যায়, কোনরূপ অসচ্চরিত্রতা তাদের মধ্যে যেন ফুটে না উঠে এবং সামগ্রিক জুলুম - পীড়ন যেন কোনরূপেই অনুষ্ঠিত হতে না পারে। পক্ষান্তরে শক্র পক্ষ যথন কোন দেশে প্রবেশ করে, তখন সে দেশের সমগ্র অধিবাসী তাদের অত্যাচার, নির্মমতা ও অমানুষিক ধ্বংসলীলায় আর্তনাদ করে উঠে Ñএকটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়, এই ধরনের আদর্শবাদী জীহাদের সাথে জাতীয়তাবাদী যুদ্ধ সংগ্রামের কত আকাশ ষ্পর্শী পার্থক্য হয়ে থাকে । এই ধরনের লড়াইয়ে উচ্চতর মানবিকতা নগণ্য বৈষয়িক শক্তি -সামর্থ সহকারে ও শক্রপক্ষের লৌহবর্ম রক্ষিত পাশবিকতাকে যে অতি সহজেই প্রথম আক্রমণেই পরাজিত করবে তাতে আর সন্দেহ কি ? বস্তুত উন্নত নির্মল নৈতিকতার হাতিয়ার বন্দুক - কামানের গোলাগুলি অপেক্ষাও দূর পাল্লায় গিয়ে লক্ষ্যভেদ করবে । প্রচন্ড
আলোচিত ব্লগ
=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।
আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।