somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুহম্মদ নূরুল হুদা’র শুক্লা শকুন্তলা’ : প্রাচ্য পুরাণের নবরূপায়ণ

০৮ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(৩০ সেপ্টেম্বর মুহম্মদ নূরুল হুদার ৬১ তম জন্মদিন উপলক্ষে আমাদের শুভেচ্ছা)

মুহম্মদ নূরুল হুদা’র শুক্লা শকুন্তলা’ : প্রাচ্য পুরাণের নবরূপায়ণ
তপন বাগচী


পুরাণের নবরূপায়ণ সাহিত্যের এক স্বীকৃত ও নন্দিত প্রথা। ‘কানু ছাড়া গীত নাই’ প্রবাদটির মধ্য দিয়েই পুরাণের নবরূপায়ণের লৌকিক স্বীকৃতি মেলে। প্রেমের গান মানেই কালার বাঁশি আর রাধার বিরহের সুর। বাংলা কবিতা ও গানে পুরাণের নানামাত্রিক ব্যবহার কারো অজানা নয়। এমন কোনো কবি নেই, যিনি জেনে বা না জেনে পুরাণের পূর্ণ কিংবা খণ্ডিত ব্যবহার করেননি। কেবল প্রাচ্য পুরাণ নয়, প্রতীচ্য পুরাণও হয়ে উঠেছে সচেতন কবির অন্বিষ্ট। এমনকি লৌকিক পুরাণ ব্যবহারেও বাংলা কবিতা সমৃদ্ধ হয়েছে। এছাড়া ঐতিহাসিক কিংবা সামাজিক বিষয়াদিও ব্যবহারের গুণে পুরাণের মর্যাদা পেয়ে গেছে। কবিতার অনুষঙ্গ হিসেবে পুরাণে ব্যবহৃত শব্দ, চরিত্র, আখ্যান প্রয়োগের পাশাপাশি কেউ কেউ সম্পূর্ণ পুরাণকাহিনীর নবনির্মাণ করেছেন। কাব্যনাট্যে এই উদ্যোগের ঘটনা বেশি লতি হলেও মালা-কবিতায় এর প্রয়োগ বেশি নেই। যে ক’জন নিষ্ঠাবান কবি এই ধরনের সচেতন প্রয়াস চালিয়েছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁদের শীর্ষ সারির একজন। ‘শুক্লা শকুন্তলা’ (১৯৮৩) তাই বাংলা কবিতার স্মরণীয় উদাহরণ।‘শুক্লা শকুন্তলা’ কবির খরযৌবনের সৃষ্টি। এর আগেই তাঁর কবিখ্যাতি জুটে গেছে। বলা যায়, প্রথম কাব্য ‘শোণিতে সমুদ্রপাত’ (১৯৭২) কাব্যের মাধ্যমেই তাঁর স্বীকৃতি আসে পাঠকের কাছ থেকে। এরপর ‘আমার সশস্ত্র শব্দবাহিনী’ (১৯১৭৫), ‘শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি’ (১৯৭৫), ‘অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী’ (১৯৮০) এবং ‘আমরা তামাটে জাতি’ (১৯৮১) কাব্যের মাধ্যমে মুহম্মদ নূরুল হুদা বাংলা কবিতায় তাঁর আসন নির্দিষ্ট করেছেন। ষাট ও সত্তর দশকে রচিত কবিতাগুলোই তাঁর সেই স্বীকৃতির মূল। এর পর তাঁর বাঁকবদলের পালা। তিনি চোখ ফেরালেন মহাকবি কালিদাসের দৃশ্যকাব্য ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’-এর দিকে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাষান্তরে এটি হয়ে উঠেছে প্রভাবসঞ্চারী এক গদ্যকাব্য। তারাই ধারাবাহিকতায় মুহম্মদ নূরুল হুদা রচনা করেছেন সনেটকাব্য ‘শুক্লা শকুন্তলা’।। ৩২টি চতুর্দশপদীতে তিনি পুনর্নিমাণ করেছেন ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলমে’র কাহিনী। পুনর্নিমাণ বলছি এই কারণে যে, তিনি শকুন্তলার কাহিনীর হুবহু রূপায়ণ করেননি, সেখান থেকে ভাববস্তু আহরণ করে তিনি সমকালের রসায়নে নতুন মণ্ড প্রস্তুত করেছেন।প্রথম সনেটে শকুন্তলার পরিচয় বিধৃত হয়েছে। শুক্ল পক্ষে জন্ম যার, সেই শুক্লা। আর রহস্যময় কুন্তল বা চুল যার, সে-ই শকুন্তলা। তার মায়ের নামে মেনকা। বাবার নাম বিশ্বামিত্র। শকুন্তলার জন্মের পর তাকে মালিনী নদীতীরে ফেলে যান মা মেনকা। পরে কণ্ব মুনি শকুন্তলাকে দেখতে পেয়ে নিজ কন্যার মতো লালন-পালন করে বড় করেন। ঋষি কন্বের তপোবনে সে থাকে। শৈশবে নদীতীরে পাখিরা [শকুন্ত] তাকে বন্য প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা করেছিল বলে তার নাম রাখা হয় শকুন্তলা। তিনি ছিলেন অপরূপা সুন্দরী। কন্বের তপোবনে হস্তিনাপুরের রাজা দুষ্মন্ত সেই শকুন্তলাকে দেখে মুগ্ধ হয়। মুগ্ধতা থেকে প্রণয়, তারপর পরিণয়। কিন্তু রাজা একসময় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়। অনেক ঘটনার পরে শকুন্তলাকে দেয়া অভিজ্ঞান দেখে ফের চিনতে পারে। তারপর মিলন। মোটা দাগে এই হচ্ছে শকুন্তলার কাহিনী। শকুন্তলার মা মেনকাকে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আখ্যা দিয়েছেন ‘স্বর্গবেশ্যা’ এবং ‘দেবীবেশ্যা’ নামে। কবির ভাষায়--

স্বর্গবেশ্যা নেমে এল রাজর্ষি-কুটিরে

অদিষ্ট মুদ্রায় জ্বেলে ভোগের আগুন

দগ্ধীভূত পশুপাখি শাল ও সেগুন

ঋষির মানবপলি গলে যায় ধীরে।(শু.শ. ২)
স্বর্গবেশ্যা নেমে এল রাজর্ষি-কুটিরে
অদিষ্ট মুদ্রায় জ্বেলে ভোগের আগুন
দগ্ধীভূত পশুপাখি শাল ও সেগুন
ঋষির মানবপলি গলে যায় ধীরে।
(শু.শ. ২)
ত্রিয় রাজা দুষ্মন্তের প্রণয়াকাক্সা জাগার মুহূর্তটিকে কবি বর্ণণা করেছেন চমৎকার রূপকে। তখন বৃরে বাকলে লাজুক নাড়া লাগে, অকালে লীলাপদ্ম ফোটে, ভ্রমর ডেকে ওঠে। কবির ভাষায়--
বৃষের বাকলে বাজে শর্মিন্দা ঠোকর
ত্রিয়ের ডান হাতে প্রণয়-স্পন্দন!
এই বনে যারা থাকে সবাই ব্র‏া‏‏হ্মণ‏
অকালে ফোটে কি লীলা, ডাকে কি ভ্রমর?
(শু.শ. ৪)
শকুন্তলার রূপ দেখে রাজা দুষ্মন্ত গলে য়ান। রূপের প্রাবল্য এমনই যে, ‘আগুন জ্বলে কামারশালায়’/লৌহপিণ্ড গলে যায়, যে রূপ জ্বালায়,/ যে-রূপে পুরুষমাত্র হয় অন্ধকূপ।’ এই রূপের স্পর্শে রাজার মহিমা পর্যন্ত খানখান হয়ে যায়। মুহম্মদ নূরুল হুদার কল্পনা এখানে কালিদাস কিংবা বিদ্যাসাগরের কল্পনাকেও ছাপিয়ে যেতে চায়। মৃগয়া থেকে স্বরাজ্যে ফিরে আসার তথ্য প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে কবি হস্তিনাপুরের যে পরিচয় উল্লেখ করেন, তাতে আদর্শ ধর্মরাজ্যের সংজ্ঞার্থ নিরূপিত হয়ে যায়--
ধর্মরাজ্যে ভয়ডর নেই কোনোদিন
রাজাপ্রজা একপ, ভেদাভেদহীন।
(শু.শ. ৮)
রাজা যখন রাজ্যে ফিরে তাঁর গান্ধর্ব-পরিণীতার কথা ভাবতে থাকেন, তাতে উঠে আসে তপোবননিবাসিনী নারীর পতিব্রতার কথা। তখনই রাজার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় আপ্তবাক্যÑ
যে নারী অস্থিরচিত্ত, সন্দেহের দাস
অলক্ষে নিয়তি তার করে সর্বনাশ।
(শু.শ. ৯)
এইচরণ কি কেবলই কবিত্বের প্রকাশ? দার্শনিকতাও কি এতে ভর করে না? তা না হলে চিরায়ত ভঙ্গিমায় এই অমোঘ পদ কী করে উচ্চারিত হয়? এরকম আরো কিছু পদ কবি রচনা করেছেন, যা শকুন্তলার উপাখ্যানকে ঘিরে আবর্তিত হলেও যে কোনো ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত ফসল বলে মান্য করা যায়। যেমন--
অতিথির নেই তিথি, হোক কালো-শাদা
তপোবনে জীবাজীবে নেই অমর্যাদা।
(শু.শ. ১০)
চোখগুলো অন্ধ হোক, মন যাক মরে
পুনর্বার জন্ম আমি চাই না কবরে।
(শু.শ. ১১)
পতির চেয়ে কি বড় বনের অতিথি?
এই প্র্রশ্নে ছিন্নভিন্ন নারীর প্রকৃতি।
(শু.শ. ১২)
ছলনা নারীর খেলা, পুরুষের নয়
কুহেলী কৌশল শুধু নারীর আশ্রয়।
(শু.শ. ২০)
শ্রম যদি ঘর্ম আর ঘর্ম যদি জল
মূল্যহীন শ্রম স্রেফ বিষাক্ত গরল।
(শু.শ. ২২)
মানুষ পরেছে এই জ্ঞানের অঙ্গুরী:
বিনাশ্রমে লব্ধ ধন আদপেই চুরি!
(শু.শ. ২৩)
মানুষ উন্মূল বৃ, থাকে না শিকড়ে
মানুষ কেবল বাঁধা স্নেহের নিগড়ে।
(শু.শ. ২৬)
মিলন-মুহূর্ত এলে কাঁপে তবু বাহু
নারী সত্য, সত্য নয় রমণীর রাহু।
(শু.শ. ২৭)
একচ্ছত্র জয় নেই, নেই কোনো জয়
বিজয়ী বিজিত কভু, বিজিত বিজয়ী।
(শু.শ. ২৯)
মানুষ জানে না তার মিলনের দিন
মানুষ কেবল শোধে সম্পর্কের ঋণ।
(শু.শ. ৩০)
প্রায় প্রতিটি কবিতার শেষের দুইচরণ এরকম বাণীবহ, এরকম স্মরণযোগ্য। জোড়চরণগুলো এমনই ইঙ্গিতময় যে তার ব্যাখ্যার অপো রাখে না। সনেটের আঙ্গিক গ্রহণ করেছেন বলেই, ভাবের নির্যাস এরকম প্রগাঢ়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। আর তা সম্ভবপর হয়েছে মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রকৃত কাব্যসিদ্ধি অর্জন করেছেন বলেই।
দুষ্মন্ত-শকুন্তলার কাহিনীতে ধর্মীয় প্রভাব না থাকলেও আশ্রম, ঋষি, তপোবন, রাজা, মৃগয়া প্রভৃতি অনুষঙ্গ থাকায় এবং কালিক বিচারে এই কাহিনীর প্রাচীনত্ব থাকায় একে প্রাচ্য পুরাণ হিসেবে বিবেচনা করতে বাধা নেই। বহুধা ব্যঞ্জনা থাকায় এর এই কাহিনীর ধ্রূপদী সাহিত্যের মর্যাদা পাচ্ছে। এই কাহিনী দেশে-কাল-ধর্মের ঊর্ধ্বে। হয়তো মুহম্মদ নূরুল হুদা সেই কারণেই এই কাহিনীকে তাঁর সনেটের উপজীব্য করেছেন। এর আগে কবির পয়ার কিংবা সনেট রচনার অভিজ্ঞতা থাকলেও ‘শুক্লা শকুন্তলা’র মতো এত তীব্রভাবে তার আওয়াজ শোনা যায়নি। কবি কি তাহলে বাঁকবদলের স্মারক হিসেবে বাংলা কবিতার সহস্র বছরের ঐতিহ্যকেই অঙ্গীকার করলেন? এই বিবেচনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
যেহেতু বিনির্মাণের প্রতি কবি জোর দিয়েছেন, তাই প্রাচীন বক্তব্যের সঙ্গে আধুনিক অনুষঙ্গের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। দুষ্মন্ত-শকুন্তলার প্রেমকাহিনী বলতে গিয়ে কবি শ্রমের কথা বলেছেন, ভ্রূণহত্যার কথা বলেছেন, কাল্পনিক দেবতার স্থলে মানুষের কথা বলেছেন। এখানেই কবির নিজস্বতা, এখানেই বিনির্মাণের মূল সূত্র লুকিয়ে আছে। অয়কুমার বড়াল যেমন দেববন্দনার চেয়ে মানববন্দনার গুরুত্ব দিয়েছেন, সেই একই ধারায় মুহম্মদ নূরুল হুদা, পুরাকালের পাত্রপাত্রীকে সমকালের মানব-মানবীর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।
বলাই বাহুল্য, চতুর্দশপদীর জন্য নির্ভরযোগ্য ছন্দ হচ্ছে অরবৃত্ত। শুক্লা শকুন্তলার ২৬টি অর্থাৎ বেশিরভাগ সনেটই অরবৃত্তে। ৮+৬ মাত্রার ৪+৪+৪+২ চরণে নির্মিত সনেটগুচ্ছের শরীর। তবে ১১-সংখ্যক সনেটের দ্বিতীয় চরণে ‘সঙ্গে’ পঞ্চম চরণে ‘কন্ব’ শব্দ ৩ মাত্রার মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যা অরবৃত্তের স্বাভাবিক রীতিবিরুদ্ধ। ২-মাত্রার শব্দকে ৩-মাত্রার মর্যাদা দেয়ার তেমন কোনো কারণ ঘটেনি বলেই আমাদের ধারণা। বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে হলেও এই নিরীক্ষা এড়ানো যেত। ছন্দো-নিরীক্ষার বয়স তখন পেরিয়ে এসেছেন মনে করেই আমাদের এই কিঞ্চিৎ আপে।
৬টি সনেট নির্মিত হয়েছে মাত্রাবৃত্তে। এই নিরীক্ষায় আমাদের পুরোপুরি সায় আছে। ১৪-সংখ্যক সনেটের মাত্রাবিন্যাস করলে দাঁড়ায়--
কূশের আঘাতে হৃদয়ের ত ৬+৬
যখন টাটানো রক্তজবা ৬+৫
তুমি তো জানো না হে সম্ভবা ৬+৫
হৃদয় তখন কার পদানত! ৬+৬

বিবশ যখন সোনার অঙ্গ ৬+৬
বিশ্ব যখন মধুর-বিষাদ ৬+৬
তুমি তো জানো না নিয়তি-নিষাদ ৬+৬
করে যায় কোন স্বপ্নভঙ্গ। ৬+৬

যে-স্মৃতি হৃদয়ে বৃত্তের মতো ৬+৬
যে স্মৃতি জড়ানো গণ্ডূষ-চুল ৬+৬
যে-স্মৃতি পরেছে সোনার আঙ্গুল ৬+৭
দুপুর যখন চন্দ্রাহত! ৬+৬

কাটে না তবুও স্বপ্নের ঘোর ৬+৬
বিস্মৃতি-নিশীথ হবে কি ভোর? ৭+৬
প্রথম অনুচ্ছেদে ৬-মাত্রার পাশে ৫-মাত্রার মিল বৈচিত্র্য এনেছে। দ্বিতীয় ও চতুর্থ অনুচ্ছেদ খুবই উপভোগ্য। তৃতীয় অনুচ্ছেদেও তৃতীয় চরণে ‘আঙ্গুল’ না লিখে ‘আঙুল’ লিখলে মাত্রাসাম্য রতি হতো। ছন্দের দোলা যেভাবে অনুভূত হচ্ছে তাতে আঙ্গুল পড়তে গেলে ১-মাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে যায়। আবার ‘চ+ন্+দ্+রা+হ+ত’ শব্দটি ব্যাকরণ মতো ৬ মাত্রা হলেও তিনটি ব্যঞ্জনবর্ণ মিলে ১টি যুক্ত বর্ণ গঠিত হওয়ায় স্বরশোষণ ঘটে। ফলে এটি ১-মাত্রা হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ায়। একে নিরীক্ষা হিসেবে মেনে নেয়া যায়। শেষ চরণে ‘বিস্মৃতি’কে ৪-মাত্রার মূল্য না দিয়ে উপায় থাকে না। যদিও শব্দের শুরুতে বসলে ‘স্মৃতি’ শব্দকে ২-মাত্রার বেশি দেয়ার সুযোগ নেই।
মাত্রাবৃত্তে রচিত ১৫-সংখ্যক সনেটে ‘অগ্নিগৃহে’ এবং ‘দৈববাণী’ শব্দদুটি ৬-মাত্রা বলে মেনে নিতে কান সায় দেয় না। ১৬-সংখ্যক সনেটে ‘বিদায় বনতোষিণী’-ও সঙ্গে ‘পূর্ণগর্ভা হরিণী’-র মিল দিতে গেলে ১-মাত্রা বেশি হয়ে যায়। ১৭ ও ১৮-সংখ্যক সনেট মাত্রাবৃত্তের নির্ভুল নির্মাণ। ২৮-সংখ্যক সনেটের প্রথম ১২ চরণ যথাযথ হলেও শেষ দুইচরণে একটু ব্যত্যয় ল করা যায়। কবি লিখেছেন--
পুরনো দিনের/ গর্ভে নতুন/ দিন ৬+৬+২
বয়সে পিতাও/ পুত্রের শাসনা/ধীন। ৬+৭+২
আরমা দেখতে পাই, কবিতা যখন অরবৃত্তে আছে, তখন তা সটান ও ঋজু। কিন্তু মাত্রাবৃত্তে কিছুটা এলিয়ে পড়ার দুর্বলতা লণীয়। এহ বাহ্য! ছন্দোবিচারে এই কাব্যেও শিল্পসাফল্য নির্ণয় করা যাবে না। তবু গোটা কাব্যই ছন্দে গাঁথা বলেই ছন্দের ব্যাপারে নজর না দিয়ে উপায় নেই।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, দুষ্মন্ত-শকুন্তলার প্রণয়কাহিনী সনেটে আঁটসাঁট গাঁথুনীতে রচনা করার এই প্রয়াস অবশ্যই অভিনব। এই কাব্য তাঁকে এনে দিয়েছে ব্যাপক স্বীকৃতি। ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থা কবিকে দিয়েছে ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’(১৯৮৩)-এর শিরোপা। একই কাব্যের জন্য তিনি পেয়েছেন যশোর সাহিত্যপরিষদ পুরস্কার (১৯৮৩) এবং আবুল হাসান কবিতা পুরস্কার (১৯৮৩)। বাংলা কবিতায় প্রাচ্য পুরাপণের নবরূপায়ণ হিসেবেও এর আদর্শমান চি‎হ্নিত। তিনটি গ্রহণযোগ্য পুরস্কার জিতে-নেওয়া ‘শুক্লা শকুন্তলা’ বাংলা কবিতায় এক গুরুত্বপূর্ণ কাব্যের নাম। এই কাব্য কেবল সমকালে নয়, ভাবীকালেও আদরণীয় হওয়ার যোগ্য।
. . . . . . . . . . .
ড. তপন বাগচী : কবি ও প্রাবন্ধিক, উপপরিচালক, বাংলা একাডেমী, ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:৪৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×