এভারেস্ট বিষয়ে বাঙালির এবার রেস্ট নেওয়া উচিত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
(ছবিতে ব্রজেন দাশের সঙ্গে কিংবদন্তী মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে দেখা যাচ্ছে)
কথাটা এ কারণেই বলা যে, ভালো কম বলেই সেটা ভালো। কোনো কিছু সহজলভ্য হলে সেটা সস্তা হয়ে যায়। এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মুসা ইব্রাহীম ইতিহাসে যে সম্মান এবং স্থান পাবেন পরবর্তীজন তা পাবেন না সেটাই স্বাভাবিক। অথচ সম্প্রতি যারা এভারেস্ট জয় করলেন তারা প্রত্যেকেই তাদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। প্রাণোচ্ছল তারুণ্যে তারা প্রত্যেকেই তাদের এ অসীম সাহসী কর্ম দিয়ে আমাদের হূদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছি এ দেশের তরুণেরা আরও দুর্গম, দুর্ভেদ্য কিছু জয় করার ক্ষমতা রাখে। এখন সময় এসেছে সেই দুর্গমকে জয় করার। দেশের পতাকাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার। হয়তো সে প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এজন্য স্বাগতম এবং সাধুবাদ দুটোই তাদের প্রাপ্য। এ অভিনন্দন ব্রজেন দাশেরও প্রাপ্য ছিল। পাঠক একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, স্মৃতির অতলে ব্রজেন দাশকে আমরা কীভাবে হারিয়ে ফেলেছি! অথচ তিনিও একদা ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে রেকর্ড গড়ে দেশের জন্য সন্মান বয়ে এনেছিলেন।
ব্রজেন দাশ ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। অথচ পরের বছর ১৯৫৬ সালে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অলিম্পিকে তাকে পাঠানো হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী ছিলেন বলেই এ উপেক্ষা। এই অপমানজনক পরিস্থিতিই তাকে অলিম্পিকে অংশ না নিয়েও সমতুল্য সম্মান ও সাফল্য অর্জনের চিন্তায় বাধ্য করে এবং তিনি মনস্থ করেন, ইংলিশ চ্যানেল তাকে সাঁতরে অতিক্রম করতে হবেই। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুরে তিনি সাঁতরে যান ১৯৫৮ সালের মার্চে। পাঠক এখানে একমত হবেন যে, তখন কিন্তু বিজ্ঞান এতোটা উন্নত ছিল না। সাঁতারের আধুনিক সরঞ্জাম অপ্রতুল ছিল। এখন যে কারণে এভারেস্ট জয়ীদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। যাই হোক জুনের শেষদিকে ব্রজেন দাশ বিলেতে গিয়ে পৌঁছেন। সেবার ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের সাঁতার প্রতিযোগিতায় মোট ২৩টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। সাঁতারুদের মধ্যে মেয়েও ছিলেন পাঁচজন। ভারতবর্ষীয় উপমহাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন একমাত্র ব্রজেন দাশ। তিনি ছিলেন ১৯নং প্রতিযোগী। ১৯৫৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রায় মধ্যরাতে সাঁতার শুরু হয়। ইংলিশ চ্যানেল এমনিতেই অশান্ত থাকে, সেদিন ছিল প্রচন্ড কুয়াশা। ফ্রান্সের তীর থেকে সাঁতরে ইংল্যান্ডের তীরে এসে উঠতে হবে। প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছিল পরদিন বিকাল বেলা এবং ব্রজেন দাশ প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। সর্বমোট ছয়বার তিনি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০ ও ১৯৬১ সালে, অর্থাত্ চার বছরে। ১৯৬১ সালের সাঁতারে তিনি বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করেছিলেন। এর আগে ১০ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের আগে কেউ চ্যানেল অতিক্রম করতে পারেননি, ব্রজেন দাশ করেছিলেন ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটে। যে মানুষটিকে সাঁতার হারাতে পারেনি অথচ সেই মানুষটিকেই আমরা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে ফেলেছি। এখন এই কর্পোরেট যুগে মন থেকে মুছে যেতে আরও সময় কম লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। সেজন্যই বলছি এভারেস্ট বিষয়ে বাঙালির এবার রেস্ট নেওয়া উচিত। কেননা আরও অনেক জিনিস বাঙালির জয়ের অপেক্ষায় আছে এবং আমরা তা করবো।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!
হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।