জীবিকার জন্য বরাক নদীর উপর ভর করেন অনেকই
উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য মনিপুরে বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখে ওই অঞ্চলের সবথেকে বড় নদীবাঁধ তৈরীর যে পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার, তা নিয়ে সেদেশে দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে বিতর্ক চলছে৻ এক দিকে যেমন রয়েছে আদিবাসীদের জমি হারানোর আশঙ্কা, তেমনই পরিবেশের ওপরেও ব্যপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৻
আসাম রাজ্যের কাছাড়ের বেশীর ভাগ মানুষ আবার চাইছেন টিপাইমুখ বাঁধ তৈরী হোক৻ বাঁধের পক্ষে – বিপক্ষে এই দ্বন্দ্ব আবার জন্ম দিতে পারে জাতিগত সমস্যার৻ অন্যদিকে, টিপাইমুখে প্রস্তাবিত বাঁধ নিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে চলছে তুমুল বিতর্ক৻
এই বিতর্কের মধ্যেই বুধবার টিপাইমুখ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদল৻ তবে খানরাপ আবহাওয়ার কারনে তাঁরা প্রস্তাবিত বাঁধের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবতরন এই বিতর্কের মধ্যেই বুধবার টিপাইমুখ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদল৻ তবে খানরাপ আবহাওয়ার কারনে তাঁরা প্রস্তাবিত বাঁধের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবতরন করতে পারেননি৻ তবে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে তাঁদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছিলো৻
বার যানা যাক টিপাইমুখে গিয়ে অমিতাভ ভট্টশালী কি দেখতে পেলেন ....
আসাম-মনিপুর সীমান্ত লাগোয়া গঞ্জ ফুলেরতল ঘাট থেকে মোটরচালিত দেশী নৌকোয় চেপে বরাক নদীতে উজান পথে প্রায় তেরো ঘন্টা গেলে পৌঁছন যাবে টিপাইমুখে.. যাত্রাপথের দুধারেই পাহাড় আর ঘন জঙ্গল৻ আর টিপাইমুখ গ্রামে পৌঁছনর ঠিক আগেই, একটা বাঁকে তৈরী হবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবথেকে বড় নদী বাঁধ – যেটার পরিকল্পনা করা হয়েছিল কয়েক দশক আগেই৻
টিপাইমুখটা আসলে নাগাল্যান্ড থেকে আসা বরাক আর বার্মা থেকে আসা থুইভাই নদীর সঙ্গমস্থল৻ যদিও স্থানীয় মানুষরা বলছিলেন, “এই জায়গাটার প্রাচীন নাম হল রংলেভাইসু৻ কাছাড় থেকে বাংলাভাষী যে সব ব্যবসায়ীরা বহু যুগ ধরে এখানে আসেন – মূলত আদা, কাঠ বা বাঁশ কিনতে, তাঁদের মুখে থুইভাই নদীটা টিপাই হয়ে গেছে, আর টিপাইয়ের মুখের গ্রাম - টিপাইমুখ হয়ে গেছে”৻
ভারত সরকার ভাবছে এই বাঁধ দিয়ে একদিকে যেমন বরাক নদীর প্রতিবছরের সমস্যা – ভয়াবহ বন্যাকে নিয়ন্ত্রন করা যাবে, একই সঙ্গে দেড়হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত তৈরী করারও কথা রয়েছে এই বাঁধ থেকে.. কিন্তু বাঁধের গ্রাউন্ড জিরো, টিপাইমুখের সাধারন মানুষ এই বিশাল সরকারী পরিকল্পনা নিয়ে কী ভাবছেন?
টিপাইমুখের বাসিন্দারা বলছেন যে বাঁধ তৈরী হলে গ্রামের প্রায় পুরোটাই জলে ডুবে যাবে.. ঘরবাড়ি, জুম চাষের জমি, বন-জঙ্গল – সব.. আর এই বন থেকে কাঠ কেটে বা বাঁশ কেটে – জুম চাষ করেই তাঁরা বেঁচে থাকেন.. সব কিছু জলে ডুবে গেলে বাঁচাই মুশ্কিল হয়ে পড়বে…
“এছাড়াও এই গ্রামেই আমাদের পূর্বপুরুষদের কবর দেওয়া হয়েছে .. ওই জায়গাটা মাড় জনজাতির মানুষদের কাছে খুবই প্রিয় আর পবিত্র.. বাঁধের জলে গ্রামটা ডুবে গেলে তো কবরস্থানটাও ডুবে যাবে.. চিরকালের মতো হারাতে হবে পূর্বপুরুষদের চিহ্ন.. তাই বাঁধের পরিকল্পনা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন.. যদি অন্য জায়গায় পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হয়, বা অনেক টাকা ক্ষতিপূরন দেওয়া হয়, তবুও জায়গা – জমি, বাপ-মায়ের কবর হারানো মেনে নেওয়া কঠিন,” বলছিলেন টিপাইমুখের বাসিন্দারা৻
বেশীরভাগ বাসিন্দাই যদিও বাঁধের বিরোধীতা করছেন, তার মধ্যেও কিন্তু কয়েকজন বলছেন যে সরকার যদি উপযুক্ত ক্ষতিপূরন দেয় আর পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি পালন করে, তাহলে তাঁরা বাঁধের পক্ষে দাঁড়াতেও পারেন৻
এক আদিবাসী যুবক লালরিংলিয়েনের কথায়, “সরকার যদি প্রতিশ্রুতি দেয় যে গ্রামের মানুষের পুনর্বাসন দেওয়া হবে, উপযুক্ত প্রশিক্ষন দেওয়া হবে .. জীবিকার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে, তাহলে বাঁধের ব্যাপারে সম্মতি জানানো যেতে পারে.. কিন্তু সরকার তো সেগুলো স্পষ্ট করে কিছুই বলছে না৻”
শুধু টিপাইমুখ নয়, বরাক বা তার উপনদীগুলোর অববাহিকা অঞ্চলের আদিবাসী সমাজগুলো বিশেষত জমির প্রশ্নে নিবিড়ভাবে আবদ্ধ, যেখানে গ্রামের জমির মালিকানা কোনও ব্যক্তির নয়; সেটা গোটা গ্রামের যৌথ সম্পত্তি৻
মনিপুরের তামেংলং জেলার খংসাং এলাকার জেলিয়াংরং-নাগা উপজাতির এক বৃদ্ধ কৃষক - বমগাইজাং গ্রামের থুকজুয়ানাঙ তাঁদের স্থানীয় রংমেই ভাষায় বলছিলেন “ আমাদের গ্রামের জমিটা খুবই ঊর্বর৻ অনেক রকমের ফসল সেখানে আমরা ফলাই - যাতে গোটা পরিবার পালন তো হয়েই, উপরন্তু বাড়তি ফসল বাজারে বিক্রী করে সংসার ভালোই চলে যায়৻
একজন টিপাইবাসীর সাথে আলাপ করছেন প্রতিবেদক
এই জায়গাগুলো পুরুষানুক্রমে তাঁদের হাতে এসেছে..কারও একলার মালিকানার জমি নয় এগুলো.. গোটা জিলিয়াংরং সমাজের দায়িত্ব এই জমি রক্ষা করা যে দায়িত্ব পূর্বপুরুষেরা আমাদের ওপরেই দিয়ে গেছেন..এর মূল্য টাকা দিয়ে মাপা যায় না.. তাই সরকার যতই ক্ষতিপূরন দিক না কেন, টিপাইমুখ বাঁধ করে জিলিয়াংরংদের জায়গা-জমি জলের তলায় চলে যাবে, তা কিছুতেই হতে দেওয়া হবে না ৻“
মাড়, নাগা বা কুকি উপজাতির মানুষদের যেখানে বসবাস, টিপাইমুখের সেই উজানপথে যখন বেশীরভাগ মানুষই বাঁধ তৈরীর বিরোধীতা করছেন, তখন আসামের শিলচরের জাতীয় কংগ্রেস দলের শক্তিশালী নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেব বলছিলেন টিপাইমুখে বরাকনদীর বাঁধ তৈরী হলে বরাক উপত্যকার মানুষ কতটা লাভবান হবেন৻
“একদিকে যেমন বরাকের মানুষের প্রতিবছরের সমস্যা – ভয়াবহ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবেন, কৃষকরা তাঁদের ফসল রক্ষা করতে পারবেন, তেমনই বাঁধ তৈরী হওয়ার পরে নৌ-চলাচলের পথও সুগম হবে৻ বরাকের মানুষের দীর্ঘদিনে স্বপ্ন এই বাঁধটা৻
''কিন্তু পরিকল্পনাটা নিয়ে যখন অনেকটা এগনো হয়েছে, তখন, দূর্ভাগ্যবশত মনিপুর আর বাংলাদেশের কিছু মানুষ এর বিরোধীতা করতে শুরু করেছেন৻ ভারতের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে এ নিয়ে একটা সমঝোতায় আসা৻ এতে বাংলাদেশের নদীপথ দিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা খুবই সহজ হয়ে যাবে, জিনিষের দামও কমবে৻ উপকৃত হবে দুই দেশই৻“
সরকারের দেখানো উন্নয়নের, উন্নততর জীবনযাত্রার স্বপ্ন কিন্তু সমতলের বরাক উপত্যকার অনেক সাধারন মানুষই দেখতে শুরু করেছেন৻ তাঁরা মনে করছেন যে টিপাইমুখ বাঁধ তাঁদের রক্ষা করবে প্রতিবছরের বন্যার যন্ত্রনা থেকে, আর তাঁদের ঘরে ঘরে আসবে বিদ্যুত৻
বরাক উপত্যকার বেশীরভাগ সাধারন মানুষ বাঁধের স্বপক্ষে দাঁড়ালেও, এঁদেরই মধ্যে কেউ কেউ কিন্তু বাঁধের বিরোধীতাও করছেন৻ তাঁরা বলছেন, শুধু বরাক নদীতে বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন করা যাবে না৻ এঁরা প্রশ্ন তুলেছেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুত পরিমান নিয়েও৻
শিলচর শহরের এক পরিবেশকর্মী পীযুষকান্তি দাস বলছিলেন, “ নদীর যে জায়গায় বাঁধটা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে মূল নদীর মাত্র কুড়ি শতাংশ জল প্রবাহিত হয়৻ বাকি আশি শতাংশ জল থাকে বাঁধের ভাটি অঞ্চলে৻ আর এই অঞ্চলে বরাকের উপনদী – জিরি, চিরি, মধুরা, প্রভৃতি নদীর জলেই কিন্তু বরাক বছরের পর বছর ভেসে যায় বন্যায়৻
''তাই এই ছোট নদীগুলোকে আটকাতে না পারলে টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বন্যা সমস্যার সমাধান হবে না৻ আর বিদ্যুত উত্পাদনের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও কী পরিমানে বিদ্যুত্ তৈরী হবে, সন্দেহ আছে তা নিয়েও – কারন দেড়হাজার মেগাওয়াট ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি ওই জল বিদ্যুত্ প্রকল্পের৻ সব প্রকল্পেই ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটির এক তৃতীয়াংশ বা এক চতুর্থাংশ বিদ্যুত্ তৈরী করা হয়ে থাকে৻ টিপাইমুখের থেকে তাহলে কী সুবিধা হবে আমাদের?“
অন্যদিকে বরাক দিয়ে নৌকা চালিয়ে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন, সেই মাঝিদের অনেকেরই আশঙ্কা যে বাঁধ তৈরী হওয়ার পরে নদীতে পর্যাপ্ত জল থাকবে কী না, তা নিয়ে এক মাঝি সুধন দাস বলছিলেন, “বাঁধটা হলে তো আমাদের লাভ কিছু দেখি না৻ উল্টে ক্ষতি হওয়ারই আশঙ্কা৻ এমনিতেই শুখা মরশুমে আমরা নৌকা চালাতে পারি না৻ বাঁধ হলে তো সেই জল আরও কমে যাবে৻ আমাদের তো কোনও কাজই থাকবে না৻”
জলপ্রবাহ কমে যাওয়ার এই আশঙ্কাকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে চান নি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক – নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন বা নিপকোর কার্যনির্বাহী পরিচালক মৃণাল ডেকা৻
তথ্য দিয়ে মি ডেকা বলছিলেন, “বাঁধের জলাধারের যে হিসাব আমরা করেছি, সেটা দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে বর্ষার সময়ে যেমন জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমান নিয়ন্ত্রিত হবে, যাতে বন্যা না হয়, আর সেই জমিয়ে রাখা জল শুখা মরশুমে ছাড়া হবে, যাতে নাব্যতা বজায় থাকে৻ এই তথ্য আমরা ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছেও পাঠিয়ে দিয়েছি৻”
টিপাইমুখের বাঁধের ফলে একের পর এক গ্রাম ডুবে গেলে পূর্বপুরুষের স্মৃতি, আদিবাসী সমাজের ঐতিহ্যের সঙ্গেই চিরকালের মতো হারিয়ে যাবে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ – পশু-পাখি.. যার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু বিপন্ন প্রজাতিও.. বলছিলেন মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার, পরিবেশবিজ্ঞানী .আর কে রঞ্ইন্দো-বার্মা রেঞ্জের এই বনাঞ্চল অন্যতম বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট..এখানকার জীববৈচিত্র অত্যন্ত সংবেদনশীল.. এখানে রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ আর প্রাণী – যার মধ্যে আছে বহু বিপন্ন প্রজাতিও‘‘, বলছিলেন আর কে রঞ্জন৻
‘‘বাঁধের জলাধার যেখানে তৈরী হবে, সেখানে এই বনাঞ্চল জলমগ্ন হবে, আর চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবে ওইসব বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ আর প্রাণী.. বাঙালীদের প্রিয় ইলিশ মাছেরও প্রজনন ক্ষেত্র কিন্তু বরাক নদীর এই অঞ্চলটা.. প্রজননের জন্য ইলিশ মাছ উজানপথে এখানেই আসে.. সেখানে যদি জল কমে যায়, তাহলে ইলিশও কমে যাবে”৻
বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন যে বাঁধ তৈরীর পরিকল্পনা যারা করেছে, সেই নিপকো সংস্থা কখনোই এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে নি.. তারা চেষ্টা করেছে কিছু বইপত্র থেকে এখানকার জীববৈচিত্রের ওপরে তথ্য যোগাড় করতে.. আর সেই সব তথ্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয় নি৻
একদিকে যেমন আশঙ্কা রয়েছে বাঁধ তৈরীর ফলে টিপাইমুখের উজানের বিস্তীর্ন এলাকা জলের তলায় চলে যাওয়ার, তেমনই ভূবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ভূমিকম্প প্রবন এই এলাকায় এত বড়ো একটা বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়েও৻
মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোইবাম ইবোতম্বি বলছিলেন সেই প্রসঙ্গে, “ ইন্দো-বার্মা পর্বতমালার যেখানে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরীর পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটা ভূবিজ্ঞানের দিক থেকে খুবই স্পর্শকাতর.. এই অঞ্চেলের ভূমি-গঠনের যা অবস্থা, তাতে দেখা যায় যে ভারতীয় প্লেট বর্মীয় প্লেটের নীচে ঢুকে গেছে..যার ফলে সবসময়েই এখানে ভূগর্ভের ভেতরে অস্বাভাবিক মাত্রায় শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে.. সেকারনেই এই জায়গাটা অত্যন্ত ভূমিকম্প প্রবন”৻
ভূমিকম্প বিশারদরা বলছেন, টিপাইমুখেই একটা ফল্ট জোন রয়েছে. যার নাম বরাক-মাগরু ফল্ট জোন.. এখানে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রটা ভূপৃষ্ঠের থেকে খুব গভীরে নয়, তাই একটু বড়ধরনের ভূমিকম্প হলেই এই অঞ্চলে ব্যপক বিপর্যয় দেখা যাবে যার সঙ্গে যুক্ত হবে বাঁধের জলাধার থেকে তৈরী হওয়া বিপুল জলজ-স্থিতি শক্তি৻ আর ভূমিকম্পে যদি টিপাইমুখ বাঁধ কখনোও ভেঙ্গে যায়, তাহলে বরাক নদীর ভাটি এলাকা বীভৎসভাবে ধ্বংস হবে৻
টিপাইমুখ বাঁধ তৈরীর পরিকল্পনা করেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারী সংস্থা, সেই নিপকো বলছে যে তারা বাঁধের নকশা তৈরীর সময়েই একদিকে যেমন বিবেচনা করেছে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে, তেমনই প্রকৌশলীরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন ভূমিকম্পের সম্ভাবনার ওপরেও৻ বলছিলেন টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক নিপকোর কার্যনির্বাহী পরিচালক মৃণাল ডেকমনিপুরের পাহাড়ী পথে বরাক
টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে উজান আর ভাটি এলাকার মানুষের মধ্যে যে মতামতের ফারাক রয়েছে, সেটা স্পষ্ট… এটাও পরিষ্কার, যে রয়েছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব.. আর এই দ্বন্দ্ব কিন্তু জন্ম দিতে পারে আরও একটা বড় জাতিগত বিভেদের.. টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলনকারীরা বলছেন, ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বাঁধকে কেন্দ্র করে জটিল সমস্যার সৃষ্টি আগেও হয়েছে, টিপাইমুখের ক্ষেত্রেও তা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে.. সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না ৻
মি. রামানন্দের কথায়, “যখনই বাঁধ বা এধরনের তথাকথিত উন্নয়ন পরিকল্পনার কারনে বড় সংখ্যায় মানুষকে উচ্ছেদ হতে হয়, তখনই উচ্ছেদ হওয়া জনগোষ্ঠীকে যেখানে পুনর্বাসিত করা হয়, সেই জায়গার পুরনো বাসিন্দাদের সঙ্গে নতুন মানুষদের একটা সংঘাত তৈরী হয়৻
‘‘উত্তরপূর্বাঞ্চলে জাতিগোষ্ঠীগুলির বসবাসের সীমানা এতটাই কঠোরভাবে নির্ধারিত, আর আদিবাসী সমাজ এতটাই নিবিড়, যে নতুন মানুষকে মেনে নিতে পারেন না আদি বাসিন্দারা.. তাঁদের মধ্যে একটা আশঙ্কা কাজ করে এটা অরুণাচল প্রদেশে দেখা গেছে – যেখানে (বাংলাদেশে) কাপতাই নদীর বাঁধ তৈরীর সময়ে উচ্ছেদ হওয়া চাকমাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে.. স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে তাদের ব্যাপক বিরোধ তৈরী হয়েছে সেখানে৻
‘‘রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিষয়টা.. টিপাইমুখ থেকেও যাঁদের উচ্ছেদ করা হবে, তাঁদের যেখানেই পুনর্বাসন দেওয়া হোক না কেন, সেটা তো অন্য কোনও জনগোষ্ঠীর জায়গা.. তারা যদি উচ্ছেদ হওয়া মাড় বা জেলিয়াংরং নাগা বা কুকিদের মেনে না নেয়?.. তখন তো উত্তরপূর্ব ভারতে আরও একটি জাতি সমস্যা তৈরী হবে.. আর এই গোটা ব্যাপারটা কিন্তু স্থানীয় মানুষদের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে.. স্থানীয় মানুষের কোনও মতামত নেওয়া হয় নি”৻
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




