somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাগো নারী,জাগো বহ্নিশিখা

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেককাল আগের কথা।ক্যাম্পাসে তখন চলছে প্রস্থর যুগ।আদিম আদিম সব কাজ কারবার হচ্ছে এখানে।শহর থেকে ক্যাম্পাস অবধি বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে কাপ্তাই রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৎকালীন আধুনিক বাস ‘পদ্মা’ ও ‘যমুনা’।ফটোস্ট্যাট নেই,সাইন্টেফিক ক্যালকুলেটর নেই,তখনো মলিন হয়নি রশিদ স্যারের চোথা।নতুন শহীদ মিনারের স্বপ্ন ছাত্ররা দেখতে শেখে নি,‘ক্যাফেটেরিয়া’ শব্দটি তখনো উচ্চারিত হতো না শিক্ষার্থীদের মুখে।শহর থেকে দূরে মনোরম জংলী পরিবেশে থেকে ক্যাম্পাসবাসীদের মনেও ভর করেছে বুনো অন্ধকার।জীবনযাত্রা সীমাবদ্ধ ছিলো গুটিকয় আটেনড্যান্সতাড়িত ক্লাস,হল,আড্ডা,খেলাধুলার মাঝে।সেই দাহকালে মেয়েরা গবেষণার কান্ডারী হবে,ডিবেটের মঞ্চ কাঁপানো তার্কিক হবে কিংবা পথে নামবে সাহসী সাংবাদিকতার তা ভাবাও যেতো না।বরং শ্বাপদ-সংকুল পরিবেশে আপন ক্যাম্পাসেও ত্রস্ত বিচরণ করতে হতো তাদের।
আমাবস্যা কাটতে শুরু করে ২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত হবার পরে।নতুন উদ্দীপনা,সম্ভাবনা,আগ্রহ,উচ্ছ্বাসের বান ডাকে শিক্ষার্থীদের মাঝে।তর তর করে বেড়ে উঠে ছাত্র সংগঠনগুলো।মেয়েরা এগিয়ে আসে যুক্তি দিয়ে শুদ্ধ আত্মার গান গাইতে,মধ্যযুগীয় ভাবনার অচলায়তন ভাংতে।আস্তে আস্তে সমৃদ্ধ হতে থাকে আমাদের গবেষণা সংগঠন এবং সাংবাদিকতার চর্চা।ক্যাম্পাসের নারী সমাজের দৃপ্ত পদদ্ধনি দেখতে পাই সে মিছিলেও।আজকে আর কেউ বলে না বা বলার সাহস পায় না মেয়েদের দ্বারা গবেষণা কর্মকাণ্ড হবে না,কিংবা দিতে পারবে না তাদের মুখস্থসর্বস্য মস্তিষ্কের অপবাদ।সদ্য আয়োজিত RMA-ROBORACE এ আমরা দেখেছি নারী শক্তির জয়জয়কার।আমাদের আশা,ভরসা নিয়ে এগিয়ে যায় শুধুমাত্র দুইটা নারী দল।আপন শক্তিতে জ্বলে উঠা এসব নতুন দিনের সৈনিকদের স্যালুট।
প্রকৌশলবিদ্যা মানে শুধু ছেলেদের আগ্রহের বিষয় এমন সেকেলে চিন্তা তুলে রাখার দিন এসেছে।আবার এখনকার প্রকৌশলী মেয়েরা উচ্চশিক্ষার আশায় পড়ালেখা করে রান্নাঘরে ডেগ-ডেকচি গুতাবে এমন পরিকল্পনাও ভগ্নপ্রায়।প্রতিজন শিক্ষার্থীদের পিছনে সরকারে চার বছরে খরচ প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা।এ টাকা আসে গরীব জনগণের রুগ্ন শুকনো হাত ছুঁইয়ে(ধনীরা তো কর দেয় না,দিলেও তারা হয় ঘুষখোর না হয় ঋণখেলাপী!!)।তাই বিবেকবান মনুষ্যমাত্রই উচিত এ ঋণের দায় মাথায় নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি প্রকৌশল আদর্শে দীক্ষিত করা।আশার বিষয় মনে হয় ক্যাম্পাসের নারীসমাজের সে বিবেক জাগ্রত হচ্ছে।জাগ্রত সে নারীবাহিনী ভাংবে নিজেদের হলে সান্ধ্য আইনের শৃঙ্খল,আরও ভয়শূন্য চিত্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে পুরুষের পাশাপাশি,বুঝে নেবে আপন অধিকার।।।
আমাদের ল্যাবে তুমুল আলোচনা চলছে গাড়ির ডিজাইন নিয়ে।আলোচনাকারীদের মধ্যে ছেলেদের সাথে সমান অংশগ্রহণ মেয়েদের।হঠাৎ পরিদর্শনে আসা এক জাপানী তো দেখে অবাক।একটার পর একটা প্রশ্ন,এই মেয়েরা ডিজাইন করছে? এরা গাড়ি বানাবে?এরা গাড়ি চালাবে?আমরা সহাস্যে উপরে নিচে মাথা দুলাচ্ছিলাম।স্বীকার করলেন অন্য কোনো ক্যাম্পাসে মেয়ে উপস্থিতি ছিলো না।একবার উনাকে বললাম এই আমাদের WOMAN POWER…চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে ভদ্রলোক ওদেরকে ENGINE বলে সম্বোধন করলেন।তারপর মহা উৎসাহে গ্রুপ ফটো-সেশনের সময় উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি উপলব্ধি করলাম বাংলাদেশের সমাজ সম্বন্ধে এক অন্যরকম ধারণা নিয়ে দেশের প্লেন ধরবেন এই ভদ্রলোক।কারণে একটা সমাজ কতটা উন্নত তা বুঝা যায় সে সমাজের নারী স্বাধীনতা দেখে।
এতো অগ্রগতির সাথেও পায়ে পায়ে এখনো চর্চা হচ্ছে মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক কিছু বর্বরতার।মানবিকতার এই অধঃপতনে আমরা ক্ষুব্ধ হই না হতাশ হই কারণ আমরা জানি সভ্যতা কখনো বর্বরতা,বীভৎসতা,আমানবিকতাকে প্রশ্রয় দেয় না।সে ছুঁড়ে ফেলে দেয় কালের অন্ধকারে আর নতুন দিনের মানুষদের মুখ ঘৃণায় কুঁচকে উঠে তাদের নাম উচ্চারণে।
নারী তুমি তুলনাহীন,নারী তুমি প্রীতিলতা,নারী তুমি বহ্নিশিখা।তোমার সর্বজয়ী এ আগুন ছড়িয়ে পড়ুক সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে।জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাক আমাদের তথা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরুষতান্ত্রিক অবদমন কামনা...
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৪১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×