somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এম্বিয়েন্সঃ দ্য লংগেস্ট ফিল্ম দ্যাট ডাজ নট এক্সিস্ট

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম কথা- চলচ্চিত্রের সংজ্ঞা অনেকেই অনেকভাবে দিয়েছেন। প্রথমদিকের সংজ্ঞাটি ছিল এমন- পর্দায় অনেকগুলো স্থির ছবির প্রদর্শনী যা কিনা মানুষের সাধারণ চোখে বিভ্রম(ফি-ফেনোমেনন) তৈরী করবে এবং পুরো ব্যাপারটি চলমান থাকবে। তবে আধুনিক কলাকৌশলি এই সংজ্ঞার পরিবর্তন ঘটায়। আধুনিক সংজ্ঞাটি হলো- একটি পাঁচ মেশালি শিল্প যা কিনা কোন অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের নিজস্ব ভাবনা, গল্প এবং অনুভূতিগুলোর যোগাযোগ করার মাধ্যম। পৃথিবীতে অনেক ধরনের চলচ্চিত্র হয়। আভা-গার্দ তেমনি একটি ধরন। চলচ্চিত্র নামক এই শিল্প মাধ্যমটির অগ্রগতি হতনা যদি কিছু এক্সপেরিমেন্টালিস্ট এ জগতে না আসত। এক্সপেরিমেন্ট করতে যেয়ে কিছু নির্মাতারা পাগল হিসেবেই আখ্যায়িত হয় শেষ পর্যন্ত। কিন্তু, সেই ‘পাগল’ খেতাব পাওয়াটাও অনেক মানুষের ভাগ্যে মেলেনি সারাজীবন চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করে। Anders Weberg তেমনি একজন পাগলা-নির্মাতা। এতক্ষণে তার নাম হয়ত কেউ চিনেনি। কিন্তু, চেনা হবে- যেদিন এই ব্যাক্তি এই গ্রহের সবচেয়ে দীর্ঘ চলচ্চিত্রটি নির্মান করবেন।



চলচ্চিত্রের নাম ‘এম্বিয়েন্স’- একটি চলচ্চিত্রের টিজার যখন ৭২ মিনিট হয় তখন ভাবতেই ঘুম পায় অথবা আশা ছাড়িয়ে যায়। যেখানে একটি ৭২ মিনিটের পূর্নদৈর্ঘ্য সিনেমা হয়- সেখানে ২০১৪ সালে এম্বিয়েন্স নামক এই সিনেমাটির এই দীর্ঘ টিজার বের হয়। ব্যাপারটি তখনি সিনেমা কুতুবদের টনক নাড়িয়েছে। এমন কিম্ভুতকিমাকার ঘটনা যে ব্যাক্তি ঘটালো সে আসলে কে? তার নাম এন্ডার্স ওয়েবার্গ। চলচ্চিত্র নামক এই শিল্পটির সাথে জড়িত অনেকদিন ধরেই সুইডিশ এই নির্মাতা। তিনি বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্টাল চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন যেইগুলো বিভিন্ন দেশের ফেস্টিভ্যাল, গ্যালারি এবং মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি ২০০৯ সালে ০৯০৯০৯ নামক ৯ ঘন্টার একটি চলচ্চিত্র নির্মান করেন যা কিনা খুবই প্রশংসিত হয়। কিন্তু, সমস্যা হলো তার মতন নির্মাতারা সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত থেকেই যায়। কিন্তু, নিঃশব্দে কাজ করে যায় নতুন কোন মাত্রার যোগে। এম্বিয়েন্স সিনেমাটি রিলিজ পাবে ২০২০ সালে। তার আগে ২০১৬ সালে তিনি একটি ৭ ঘন্টা ২০ মিনিটের ট্রেইলার রিলিজ করে। একইভাবে, ২০১৮ সালে ৭২ ঘন্টার একটি ফাইনাল ট্রেইলার রিলিজ করবে। এই সিনেমাকে তিনি ‘এক্সপেরিমেন্ট সিনেমা’ না বলে ‘পারসোনাল সিনেমা’ বলেছেন। শোনা যায় এই চলচ্চিত্রটি তিনি ক্লাসিক সিনেমার রিমেক করার প্রতিবাদ হিসেবে বানাচ্ছেন। চলচ্চিত্রটি যেই লোকেশানে নির্মান হচ্ছে সেই যায়গায় ফিল্ম মাস্টার ইংগমার বার্গম্যানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘দ্য সেভেনথ সিল’ এর কিছু অংশ দৃশ্যায়িত হয়েছিল।



এম্বিয়েন্স সিনেমাটি ৭২০ ঘন্টার একটি চলচ্চিত্র হবে যা টোটাল ১ মাস ধরে প্রদর্শিত হবে। অর্থাৎ, ২৪ ঘন্টা ধরে ৩০ দিনে টোটাল ৭২০ ঘন্টা। এক মাস ধরে এই চলচ্চিত্রের দর্শককে সিনেমা দেখতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো- এই সিনেমার দেখানোর পরই একটি এবং শেষ কপিটি নষ্ট বাঁ মুছে ফেলা হবে। যার অর্থ দাঁড়ায় the longest film that does not exist. এই ঘটনা ঘটানোর মূল কারন তিনি বলেছেন ‘এটি একটি চলচ্চিত্র যা কিনা সৃতি, স্বপ্ন যেসবের ভেতর দিয়ে আমি আমার জীবন অতিবাহিত করেছি। মুলত একটি সৃতিকথা। কিন্তু, বাস্তবে কি হয় সেই সৃতিগুলো থেকে যায় মানুষের মাঝে আর আমরা মরে যাই। ঠিক তেমনি এই চলচ্চিত্রে আমি যা দেখাবো তা দর্শকের মাঝে আবছা সৃতি হিসেবে থেকে যাবে। তারপর চলচ্চিত্রটি ধ্বংস হবে।’

শেষ কথাঃ নির্মাতার মতে এখন পর্যন্ত অশিস শর্মা নামক এক ফিল্ম-গোঅর প্রায় ১২০ ঘন্টা ২৩ মিনিট একটানা বসে ৪৮ টি ফিল্মের প্রতিটিটে মাত্র ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে দেখেছেন। আর সেখানে ৭২০ ঘন্টা। দর্শকদের সুবিধার্তে হয়ত বিশাল আয়োজন করা হবে বলে সবাই মনে করছেন। নির্মাতা এখন পর্যন্ত ৪২০ ঘন্টার ফুটেজ বানিয়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮ ঘন্টার ফুটেজ ডেলিভারি দিয়ে সেখানে থেকে ১ ঘন্টা এডিট করছেন বলে জানিয়েছেন। যার মানে হচ্ছে এটি কোন বানিজ্যিক সিনেমা না হলেও এর পেছনে প্রায় ৮ বছর সময় এবং শ্রম তিনি ক্লান্তহীনভাবে দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন এটিই নাকি তার শেষ সিনেমা। যেখানে আমরা কয়জন তার নাম জানি? এই ব্যাপারেও তিনি একটি উক্তি দিয়েছেন ‘আমি হয়ত এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত অপরিচিত নির্মাতা।’

২০১৬ সালের বের হওয়া এম্বিয়েন্সের ট্রেইলার লিঙ্ক- এম্বিয়েন্স ট্রেইলার
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×