somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সব আগ্রাসনই আবিষ্কার, সব হত্যাকান্ডই সভ্যতা !

১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

...কলম্বাস আমেরিকায় পৌছানোর সময়ে আদি আমেরিকানদের যেসব অঞ্চলে সে সময়কার উন্নত সভ্যতা ছিল সেগুলো হলো আন্দাজ-- এর "ইনকা", গুয়েতামালার "মায়া", মধ্য মেক্সিকোর "আজটেক"। বলাই বাহুল্য যে, এসব সভ্যতা ইউরোপ থেকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠেছিল ও বিকশিত হয়েছিলো। কৃষি উৎপাদন, বস্ত্র উৎপাদন উৎপাদন ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান পশ্চাৎপদ ছিল না।
উদ্ভিদ--এর চারশত প্রজাতি তখন তাদের জানা ছিল যেগুলো সেসময়কার এশিয়া বা ইউরোপে জানা ছিল না। উন্নয়নের মধ্য দিয়ে অনেক ভ্রাম্যমান- যাযাবর গোষ্ঠী ধীরে ধীরে স্থায়ী বসতি শুরু করে এবং সভ্যতা গড়ে উঠতে থাকে। হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, মৃৎশিল্প এর মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, "মায়া" দের মধ্যে গণিত ও জোতির্বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান ছিল অধিকতর উন্নত। ইউরোপীয় বা এশীয়দের মতো তাদের গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু, ঘোড়া, শুয়োর ছিলনা। তাদের ছিলো কুকুর , টার্কি, এবং গিনিপিগ। তাদের জানা ছিল না লোহার ব্যবহার এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ যে তাদের ছিল না আগ্নেয়াস্ত্র। ঘোড়া এবং আগ্নেয়াস্ত্র ইউরোপীয়দের বিজয় সুনিশ্চিত করবার অন্যতম অবলম্বন ছিল।
কলম্বাস প্রথম যেখানে নামেন তা পুরনো ঐতিহাসিকদের কাছে পরিচিত ছিল "হিস্পাহানীওয়ালা" নামে, এখন যা "হাইতি" এবং "ডোমিনিক্যান প্রজাতি" নামে পরিচিত। ১৫৫২ সালে ডি লাস কেসাস নামে একজন স্পেনীয় "ব্রিফ একাউন্ট অব দ্য ডেস্ট্রাকশন অব ইন্ডিজ" নামে যে পুস্তিকা প্রকাশ করেন তার সুত্র ধরে একজন আদি আমেরিকান হ্যান কলিং ইতিহাসের পুনর্লিখনে সচেষ্ট হয়েছেন এখন। কেসাস লিখেছেন, "স্পেনীয়রা এই ভূখন্ডে নামার সঙ্গে সঙ্গে যেরকম বন্যজন্তুর মত নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছিল তার সাথে আদিবাসীদের কোন পূর্বপরিচয় ছিল না।"
হ্যান কলিং আরও জানাচ্ছেন, কলম্বাস ইউরোপে স্বর্ণ পাহাড় নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি এবং তার উত্তরসূরীরা একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। ১৪৯৩ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে হিস্পানীওয়ালা জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়।
শুধু এই অঞ্চলে ঐ সময়ে নিহত শিশু, বয়স্ক, নারী, পুরুষ মিলে মতান্তরে দেড় লাখ থেকে ৫ লাখ দাঁড়ায়। দ্বীপের জনসংখ্যা মোটামুটি শেষ করার পর অন্যান্য দ্বীপে অভিযান চালান হয়। যেগুলোর মধ্যে প্রথমে আসে কিউবা, জ্যামাইকা, এবং সান জুয়ান (পরে যার নাম হয়েছে পুয়ের্টোরিকো) হত্যাকান্ড এবং দাস সংগ্রহ এক সঙ্গে চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ম্যাচাচুচেটস উপত্যকার গভর্ণরের কাছে প্রতি একজন পুরুষের মাথার জন্য ৮০ পাউন্ড এবং নারীর জন্য ২০ পাউন্ড পাওয়া যেত। এছারা ইউরোপীয়দের আনা, আদি আমেরিকানদের অজানা-- বসন্ত, যক্ষা ও সিফিলিস রোগে-মহামারীতে বহু মানুষ মরেছেন।
ইউরোপীয় "সভ্যতা" আমেরিকা "আবিষ্কার" করেই ক্ষান্ত হয়নি। সেখানকার জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রাচীন সমৃদ্ধ সভ্যতা ধ্বংস, মানুষকে হত্যা কিংবা দাসে পরিণত করেছে। একজন মার্কিন ছাত্র সঠিকভাবেই সাম্প্রতিক (এই বইটি ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত) উপসাগরীয় যুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেনঃ "এই ঘটনা কলম্বাসের আবিষ্কারেরই ধারাবাহিকতা। এদের কাছে সব আগ্রাসনই আবিষ্কার। সব হত্যাকান্ডই সভ্যতা।"
নিউইয়র্কে প্রাকৃ্তিক ইতিহাস মিউজিয়ামে একটি ছবি আছে, বেশ বড় করে বাঁধানো। ম্যানহাটানে আটলান্টিকের ধারে একজন ইউরোপীয় ক্যাপ্টেন দঁড়ানো, দূরে আটলান্টিকের তীরে জাহাজ নোঙর করা, মালামাল নামাচ্ছে আদি আমেরিকানরা, প্রায় উলংগ নারী-পুরুষ। স্থানে স্থানে সৈ্নিক অস্ত্র হাতে। ক্যাপ্টেনের পেছনে একটি দূর্গের ছবি। একজন আদি আমেরিকান, সর্দার ধরনের, হাত জোড় করে তাকে কর দিচ্ছে। সশস্ত্র সৈনিকদের নিরস্ত্র জনগনের উপর বিজয়ের এই ছবি সৃষ্টি হয়েছে ১৪৯২ এর বেশ কিছু পর, যে ছবিকে মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে "শান্তি প্রতিষ্ঠার" একটি স্মারক হিসেবে ! ...

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
"কলম্বাসের আমেরিকা "আবিষ্কার" এবং বহুজাতিক মানুষেরা" থেকে নেওয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×