somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন তারা আমাদের ঘৃণা করে ?

১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবং আবারও, গাজায় নরকের দরজা খুলে দিয়েছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ৪০ জন শরনার্থী এবং অন্য জায়গায় তিন জনকে তারা হত্যা করেছে। যে সেনাবাহিনী নিজেকে "নৈতিক বাহিনী" বলে তাদের জন্য এক রাতের অভিযানে এটাই বা কম কী ? তাদের তো এটাই করার কথা। তাহলে কেন আমরা অবাক হচ্ছি ?

আমরা কি ১৯৮২ সালের লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কথা ভুলে গেছি। তখন ১৭ হাজার ৫০০ মানুষকে তারা হত্যা করেছিল। এদের বেশির ভাগই ছিল নিরীহ জনসাধারণ। ঐ বছরই লেবাননের শাবরা-শাতিলা শরণার্থী শিবিরের গণহত্যায় ১ হাজার ৭০০ নিরীহ মানুষ খুন হন। ১৯৯৬ সালের কানা গণহত্যায় নিহত হয় ১০৬ জন লেবাননি। এরাও ছিল জাতিসংঘ আশ্রিত এবং নিহতের অর্ধেকই ছিল শিশু। ২০০৬ সালে তারা লেবাননের মারওয়াহিন গ্রামের অধিবাসীদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। সবাই তা মেনে নিয়ে পথে নামলে হেলিকপ্টার থেকে তাদের গুলি করে মারা হয়। ২০০৬ সালের লেবানন আগ্রাসনেও তাদের হাতে নিহত হন ১০০০ জন। তারা তো বেসামরিক লোকই ছিল, না কী ?

আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, যখন পাশ্চাত্যের প্রায় সব নেতা, অনেক অনেক প্রেসিডেন্ট, অনেক অনেক প্রধানমন্ত্রী এবং অনেক সাংবাদিক, সম্পাদকও ইসরায়েলি মিথ্যাচারের কাছে আত্মা বিক্রি করে বসে আছে। "ইসরায়েল বেসামরিক মৃত্যু এড়াতে অতি সচেষ্ট", গাযায় গণহত্যা শুরুর আগের দিনও বলছিলেন একজন ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত। আর যে রাষ্ট্রপ্রধানরা এই বুলি আউড়ে যাচ্ছেন, পরিষ্কারভাবে তাঁদের উদ্দেশ্য যুদ্ধবিরতির চাপ এড়ানো। ইসরায়েলের সাফাই গাওয়া এই নেতাদের হাতও লেগে রয়েছে ফিলিস্তিনি গণহত্যার রক্ত। জর্জ বুশ যদি দুইদিন আগেও সাহস করে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতো, তাহলেও অন্তত শতটি জীবন রক্ষা পেত। বেঁচে থাকত ঐ সব নারী ও শিশু।

যা ঘটছে তা কেবল লজ্জাজনকই নয়, মর্মান্তিক। কেবল যুদ্ধাপরাধ দিয়ে কি এই অপরাধকে পরিমাপ করা সম্ভব ? একই কাজ যদি হামাস করত, তাকে আমরা কি নাম দিতাম ? কী ব্যবস্থা নিতাম তার বিরুদ্ধে ? আমি ত্যক্ত বিরক্ত। অথচ ইসরায়েল বলছে, তারা নাকি আমাদের "সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ" লড়ে যাচ্ছে। তারা দাবি করে, গাজায় তারা নাকি আমাদের হয়েই লড়ছে, আমাদের পশ্চিমা মূল্যবোধ রক্ষার জন্য, আমাদের পাশ্চাত্যের নিরাপত্তার জন্য, আমাদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য। তাই যদি হয়, গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তার দায় আমাদেরও।

আমাদের চখের সামনেই লেবাননের শাবরা-শাতিলায় ইসরায়েলের ডানপন্থী ফ্যালাজিস্ট মিলিশিয়ারা গণহত্যা চালায়। ইসরায়েলের নিজেদের তদন্ত প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সুযোগ করে দিয়েছিল। এ নিয়ে ইসরায়েলকে নিন্দা করা হলে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনেশিম বেগিন উল্টো বিশ্বকে দোষারোপ করে। ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ শিবির কানায় বোমাবর্ষন করার সময়ও ইসরায়েল বলেছিলো যে, সেখানে নাকি হিযবুল্লাহ যোদ্ধারা লুকিয়ে ছিল। এটা ছিলো ডাহা মিথ্যা। লেবানন আগ্রাসনে ১ হাজার জন নিহত হওয়ার দায়ও নাকি হিযবুল্লাহর, ইসরায়েল দাবি করে, নিহত শিশুদের লাশ নাকি কবর থেকে তুলে এনে ধ্বংসস্তুপের ভিতর রাখা হয়েছিল। এটাও সম্পুর্ণ মিথ্যা। মারওয়াহিন গণহত্যাকে তারা স্বীকারই করে না। অথচ সেখানে গ্রামবাসীকে পালাতে বলে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই হতভাগ্য শিশুদের দেখিয়ে নিজেকে নিজেদের বেসামরিক জনগন প্রমান করতে গিয়েছিলো, ঘাতকেরা তাদেরও হত্যা করে।

১২ বছর আগে এভাবেই ইসরায়েলি হেলিকপ্টার ফিলিস্তিনি এ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালিয়ে নিরপরাধ নাগরিকদের হত্যা করে। অজুহাত সেই একই, এ্যাম্বুলেন্সে নাকি হামাসের গেরিলা ছিলো। এটাও ভুয়া কথা। আমি নিজে এসব ঘটনার খবর সংগ্রহ করেছিলাম। আমি বিস্তারিত অনুসন্ধান করেছি, বেঁচে থাকা সাক্ষীদের কথা শুনেছি। সেসব তথ্য ফাঁস করায় এখন ইসরায়েলের কাছে আমাদের পরিচয় হয়েছে "ইহুদিবিদ্বেষী"।

নিচের কথাগুলো নিয়েও আমার কোন সন্দেহ নেইঃ গাজা হামলা নিয়েও আবার মিথ্যার ফুলঝুরি ছুটতে দেখব। সব দোষ চাপানো হবে হামসের ঘাড়ে। তাদের দোষ নিশ্চয়ই রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল যা বলে সেগুলো নয়। এবারও বলা হবে, লাশগুলো নিশ্চয়ই কবর থেকে তুলে আনা। আবারও "ইহুদিবিদ্বেষী" গালি শুনতে হবে আমাদের। আর আমাদের নেতারা "ধরি মাছ, না ছুঁই পানি" করে আবারও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি এড়ানোর সুযোগ করে দেবেন, সুযোগ করে দেবেন ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার। তাঁরা বলবেন যে, হামাসই প্রথমে যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গেছে। এটাও নির্জলা মিথ্যা কথা। ইসরায়েলই প্রথম ১৮ মাস অবরোধ দিয়ে, গত ৪ ঠা নভেম্বরের বোমাবর্ষনে ৪ জন ফিলিস্তিনি হত্যা করে এবং পুনরায় ১৭ নভেম্বরে আরও আরও ফিলিস্তিনিকে বোমাবর্ষনে খুন করার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লংঘন করেছে।

অবশ্যয়ই, ইসরায়েলিদেরও নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে। গত ১০ বছরে নিহত হয়েছে ২০ জন ইসরায়েলি। কিন্তু গত ১ সপ্তাহেই নিহত হয়েছে ৯০০ ফিলিস্তিনি। ১৯৪৮ সাল থেকে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা যোগ করলে কত হয় ? এর শুরু দায়ের ইয়াসিন গণহত্যা দিয়ে। তারপরই দলে দলে ফিলিস্তিনি প্রান রক্ষায় বিদেশে উদ্বাস্তু হওয়া শুরু করে। আজ সেই অঞ্চলে ইসরায়েল কায়েম হয়েছে। আরবে যা ঘটে চলেছে তা পরিষ্কারভাবেই ঔপনিবেশিকতা, দখলদারিত্ব ও গণহত্যা। এর সংগে একমাত্র তুলনীয় বসনিয়া-কসোভোর গণহত্যা। আজকের একজন আরব যখন সার্বক্ষণিক মৃত্যু, আক্রমন, নির্যাতনের মধ্যে থাকে, যখন চোখের সামনে তার স্বজাতি নিধন দেখে, তার লক্ষ্য কিন্তু একা ইসরায়েল নয়, গোটা পাশ্চাত্য। আমরা বলতে পারি, আমাদের কী দোষ ? কিন্তু আমরা কি জানতে চেয়েছি, কেন তারা আমাদের ঘৃ্না করে ? এখন আমরা বলতে পারিনা যে, এর উত্তর জানা নেই।

রবার্ট ফিস্ক
ব্রিটেনের দি ইন্ডেপেন্ডেন্ট- এর মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×