somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয় বিড়ম্বনা এবং একটি অল্পবয়সী প্রেমের মৃত্যু

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় বাথরুমের ছিটকানী লাগাতে আমি প্রচন্ড ভয় পেতাম ....

যদি বাথরুমের ঐ ছোট্ট জানালা দিয়ে ভূত চলে আসে ... যদি ঐ কমটের ফুটো দিয়ে বড় একটা সাপ উঠে আসে ... যদি মুখ ধুতে যেয়ে বেছিনের ভেতর আমার চোখ খুলে পড়ে যায় .... যদি গোসল করার সময় মাথার উপরের ঝর্না দিয়ে পানির জায়গায় ঝর ঝর করে লাল রক্ত আসে ...

অদ্ভুত সব ভয় .... ক্যন আমার বাসার বাথরুম কি জঙ্গলে নাকি ??? কিন্তু এই সকল ভয়ের জন্যে আমি নিজে দায়ী ছিলাম না, আমার আম্মু-আব্বু দায়ী ছিলেন ....

আমি ছোট মানুষ বাথরুমের দরজা লাগিয়ে যদি আর খুলতে না পারি বা পা পিছলে পড়ে যাই তাহলে কি হবে ... ?? তাই আমাকে এসব ভয় দিয়ে দরজা খোলা রাখতে বলা হতো ..... আজ এতো বড় হয়েও সেই অভ্যাসটা এখনও মাঝে মাঝে দেখা দেয় আমার মাঝে .... প্রায়ই মনের অজান্তে দরজা খুলে রেখে আমি এখনও বাথরুমে থাকি ....

চার পাঁচ বছর আগের কথা .... এক বিয়ের অনুষ্ঠানে সারাটা সময় ধরে এক সুন্দরী মেয়ের সাথে চোখে চোখে খুব দুষ্টামী করলাম .... মায়ের পাশে বসেই মেয়েটা আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে .... মাথা নীচু করে মুঁচকী মুঁচকী হাসে .... একটু পর পর ব্যাগ থেকে আয়নাটা বেড় করে নিজেকে দেখে .... আমিও নিজেকে স্থির রাখতে পারছিনা .... বিয়ে বাড়ী না হয়ে এটা যদি খোলা ময়দান হতো, ওর হাত ধরে নেচে নেচে লাফিয়ে বেড়াতাম .... একটা সময় চোখের ইশাড়ায় মোটামোটি বেশ ভালো রকমের গ্রীন সিগন্যাল পেলাম .... মনে মনে ভাবলাম, বিদায়কালে মেয়েটার ফোন নাম্বারটা চেয়ে নেব ... কিন্তু ছেলে আর মেয়েদের খাওয়ার জায়গাটা আলাদা করায় মেয়েটাকে একটা সময় আমি হারিয়ে ফেলি .... খুব দ্রুত খাওয়াটা শেষ করে আমি আগের জায়গায় চলে যাই .... মেয়েটা সেখানে নেই ... মেয়েটাকে খুঁজতে থাকি ... এতো এতো মানুষের মাঝে মেয়েটাকে আর খুঁজে পেলাম না ... ও হয়তো চলে গেছে ....

বুক ভরা হতাশা নিয়ে কোনার একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে যখন ফ্যানের বাতাস খাচ্ছি হঠাৎ পেটটা মোচড় মেরে উঠলো .... প্রকৃতির প্রবল ডাকে আনমনে দৌড়ে যেয়ে একটা বাথরুমে ঢুকে পড়ি .... জাষ্ট কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাথরুমের সেই দরজাটা কে যেনো টান দিয়ে ধপাস্ করে খুলে ফেললো .... ওমা, এই তো সেই মেয়ে ... আমিও আঁকাবাকা হয়ে লাফ দিয়ে এক পাশের দেয়ালের সাথে চ্যাপটা হয়ে লেগে গেলাম .... সাথে সাথে বোকার মতো একটা হাসি দিয়ে ওকে বললাম, " তোমার নাম কি ? কোথায় ছিলে এতোক্ষন ?? " কানের পর্দায় এসে একটা শব্দই শুধু আঘাত করলো, " অসভ্য " .....

বাথরুম থেকে বেড় হবার পথে দরজার গায়ে লিখা দেখলাম, " লেডিস টয়লেট " .......

ঐদিন সেই মেয়েটার সাথে কিছুতেই আর চোখে চোখ মেলাতে পারলাম না ...... সত্যিই বেশ লজ্জা লাগছিল ... এক তো লেডিস টয়লেট এর উপর দরজা না লাগিয়েই .... উফ্ ..

অস্থির এই মনটা এরপরও ওর সাথে কথা বলার লোভ সামলাতে পারছেনা .... আমার এক ভাবীকে দিয়ে ওর নাম্বার চাইতে পাঠালাম ..... মোটা ভাবীটা গেলোতো ওর কাছে ক্যালাইতে ক্যালাইতে কিন্তু আসলো মুখ বাঁকা করে ....

কি হয়েছে ভাবী ???

ও বললো, যে সব মানুষ নাকি বাথরুমের দরজা লাগাতে জানেনা তাদের ও ফোন নাম্বার দেয় না ... কি হয়েছে আসলে বলতো ... ??

না ... কিচ্ছু হয়নি ভাবী ... ও অনেক দুষ্টতো তাই দুষ্টোমী করেছে ...

দেখতে দেখতে কতোগুলো বছর কেটে গেলো কিন্তু সেদিনের পর সেই মেয়েটাকে আজও আমি দেখিনি ... ফোন নাম্বার তো দূরের কথা মেয়েটার নামটাও আমার জানা হলো না .... যদি থুরথুরে বুড়ী না হয়ে থাকে তাহলে আজও হয়তো ওকে দেখলে আমি চিনতে পারবো ....
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×