somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবা

১৮ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন বয়স্ক মানুষের কথা বলছি,
আমি যখন শেষবার তাকে দেখেছিলাম, তখন তিনি ছিলেন মধ্যবয়স্ক। প্রায় ১৭টা বছর পার হয়ে গেল তাকে আর দেখিনা।
কোথায় আছে, ক্যমন আছে সেটাও জানিনা !!! তাকে বেশ মনে পড়ে, খুব দেখতে ইচ্ছে করে, জানতে ইচ্ছে করে তিনি ক্যমন আছেন ??

শিশু কালের কথাতো আর মনে নেই কিন্তু ছোটবেলায় দেখা কিছু ঘটনা, কিছু কথা, কিছু কিছু এখনও মনে আছে।

মাঝে মাঝে তাকে দেখতাম ক্লিন স্যভে, মাঝে মাঝে খোচা খোচা দাড়িতে । এক ধরনের চ্যাক শার্ট পড়তেন, সকালের পত্রিকাটা পড়তেন মাঝ বেলাতে তাও সেটা মোটা ফ্রেমের চশমা নাকে ঝুলিয়ে।
উনার মতো ওরকম মাথা ভর্তি চুল ঐ বয়সের কাউকে আমি আজও দেখিনি।

জানেন, উনি রসিক মানুষ ছিলেন। শুনেছি বন্ধুদের চোখের মধ্যমনি ছিলেন। বেঁচে থাকার জন্যে যতটুকু কাজ প্রয়োজন, ততটুকুই কাজ করতেন, ভাত মাছ খেতে ভালোবাসতেন, লুঙ্গী পড়তে ভালোবাসতেন, চা খেতে খেতে গল্প করতেন আর গল্পে গল্পে হাসতে মজা পেতেন। খুব সাধারন ছিলেন।

আমি যখন স্কুল থেকে বের হতাম, তাকে দেখতাম প্রচন্ড রোদে মাথায় ছাতা ধরে দাড়িয়ে থাকতো, প্রচন্ড বৃষ্টিতে দেখেছি চুপচুপে ভিজে যেতে।
বিকেলের আকাশে যখন রোদ লুকোচুরি খেলতো, তিনি তখন ছাদে দাড়িয়ে থাকতেন। বিকেলের ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পাহারা দিতেন নিজের মেয়েটির দুষ্ট ছুটাছুটিকে। মাগরিবের আযানের সাথে সাথেই কোলে তুলে বাড়ী নিয়ে আসতেন মেয়েটিকে।
জানালার রড ঘেসে রাতে চাদের আলো দেখতে দেখতে মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকতেন। হয়তো একেই বলে একজন মিডেল ক্লাস হ্যাপী বাবা !!

আমার কাছে তিনি ছিলেন একজন গবেষক। নানারকম চাঞ্চল্যকর প্রজেক্ট নিয়ে তিনি কাজ করেন। সন্তানের মানসিক ও শারিরীক বিকাশ সাধন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পণা তার গবেষনার মূল কাঠামো।
তিনি আবিস্কার করেছিলেন তার দুষ্ট মেয়েটি ভোর বেলায় স্কুল যাওয়ার আগে ব্রাশ করতে করতে বাথরুমে ঘুমাতো ক্যনো, মুখে খাবার নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা ভাতের স্বাদ, দুষ্ট মেয়েটির হাত পা কেটে ভেসে আসা রক্ত যখন হাত দিয়ে চেপে ধরতেন তখন তিনি আবিষ্কার করতেন রক্তের চঞ্চলতা, রক্তের উত্তপ্ততা !!

তিনি একজন কবি সাহিত্যিক। সন্তানের মুখে হাসি ফুটাতে কতোই না অপ্রকাশিত কাব্য গল্পের জন্ম দিতেন। তার সেই মেয়েটা এখনও অনেক গল্পের শেষটা জানতে পারিনি। বাবা তাকে বলে যায়নি গ্রামের ঐ পালিয়ে যাওয়া আলী আর আলেয়ার মিল হয়েছিল নাকি ?? মতলব হুজুর গ্রাম থেকে কানে ধড়ে কোথায় গিয়েছে ?? কুস্তিগির বল্লম আসলে কাকে ভালোবাসতো ?? খাদক খসরু ৩০ হাজার টাকার গরু খেয়ে বেচে ছিল কি না ?? !! সেই সন্তানের কাছে তার বাবা আজও পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত কবি !!

তিনি একজন খেলোয়াড়। টেনিস বল নিয়ে পাস পাস খেলা, ছাদের উপর ফুটবল, ক্রিকেট আর ব্যাডমিন্টন খেলা। বাবার সাথের কোন খেলাই যেন শেষ হয়েও শেষ হতোনা কারন মেয়েটি বলতো " বাবা তুমি চুরি করো, তোমার সাথে আমি আর খেলবোনা। " রাগ কমে গেলে আবার ডাকতো " বাবা এসো খেলি "। বোকা বাবা মেয়েটির কাছে বোকা থাকতেই যেন ভালোবাসতেন।
সন্তানের কাছে তার বাবা কখনই জিততে পারেনি। হেরে হেরেই মেয়ের কাছে তার বাবা হয়েছিলেন বিখ্যাত খেলোয়াড় !!

মেয়ে মিথ্যে বললে, তিনি হয়ে যেতেন পুলিশ। পড়াশুনার সময় তিনি হয়ে যেতেন একজন জ্ঞানী কট্টোর শিক্ষক। এরকম অনেক গুনের অধিকারী ছিলেন সেই মধ্যবয়স্ক লোকটি।

১৭টা বছর চলে গেল সেই মধ্য বয়স্ক লোকটি একেবারেই লা-পাতা !!
সেই মেয়েটিও আজ অনেক বড় হয়েগেছে।

সময় কারও জন্যেই থেমে থাকেনা কিন্তু কেউ কেউ সময় ধরেই দাড়িয়ে থাকে। সেই মেয়েটিকে নিয়ে আজ আর কেউ গবেষনা করেন না, বুকে জড়িয়ে গল্প শোনায় না, খেলার মাঝে চুরি করেনা আর শাসন করার জন্যে নেই ঘরে কোন দারোগা-পুলিশ !!!

আজ তার বাবাটি পাশে থাকলে বয়স্ক বুড়োদের মতো হয়ে যেত। সাদা পান্জাবী, মাথায় টুপী, নীল রংয়ের চ্যক চ্যক লুঙ্গী আর হাতে একটা লম্বা কালো রংয়ের লাঠি ....
নাহ্ এমনটা বোধয় তাকে দেখতাম না !!
আমার তো মনেহয় সে হতো এ যুগের মর্ডান বুড়ো। চুলে কালো কলপ দিয়ে, চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে, গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে হেলান দিয়ে আইফোনে কথা বলতেন।

মেয়েটি প্রতি ঈদেই তার মা'কে এখনো ফোনে বলে "মা বাবাকে কোন পান্জাবীতে বেশী মানাবে? বাবা কি দেশী মুরগী আনতে বলেছে? বাবা'র চশমা'র ফ্রেমটা এবার লুকিয়ে চেঞ্জ করতেই হবে !! পুরোন লুঙ্গীতে কিসের আনন্দ বাবা'র !!" মেয়েটি এই আফছোছেই শেষ হয়ে যায় যখন ভাবে নিজের উপার্জনের একটা টাকাও বাবা'র হাতে তুলে দিতে পারেনি কখনও। যখন মেয়েটি বিদেশে ছিলো।

বাবাকে বলতে দ্যখেনি কখনও "বাহ্, আমার মেয়েতো বেশ বড় হয়ে গেছে।" কখনও শুনতে পারেনি " বাবাদের আবদার "। তার সেই মেয়েটি পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে তার পায়ের কাছে রেখে দিত, যদি সতেরোটা বছর যুগের বুক চিড়ে একটাবার ফিরে আনা যেত।

এতক্ষন যার কথা আমি বলছিলাম, ১৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই মধ্য বয়স্ক লোকটিই আমার বাবা।

এই মানুষটি আমার বয়স্ককাল পর্যন্ত বিভিন্নরুপে বেঁচে থাকবেন আমার বুকের ভেতর, আমার কলিজার ভেতর !!!

বাবা আরেকটাবার তুমি কি আমায়,
জন্ম দিতে পারো !!!

কেউ বলোনা আমাকে যে আমার বাবা নেই
আজ এতো বছর পর ও এই কষ্ট টা আমি নিতে পারিনা!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×