প্রথম পর্বঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link
ফাহমিদা আপার ঝাড়ি খেয়ে সেবারই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম, আর কাউকে ভয় দেখাব না। প্রতিজ্ঞামতো নিরিবিলি থাকি। কাউকে ঘাঁটাতে যাই না। কিন্তু ঐ যে, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। শিল্পী নামের একটা মেয়ে আসলো ভূতের কিল খেতে। মেয়েটা নিজেকে জাহির করতে খুব পছন্দ করে। আমাকে এসে বলল,
-দেখি, আমাকে একটু ভয় দেখা তো।
বলেই খিক খিক করে হাসতে লাগল। আমি কোন রকমে মেজাজ শান্ত রেখে বললাম,
-যা তো। আমি ভালো হয়ে গেছি। আর কাউকে ভূতের গল্পও বলব না, ভয়ও দেখাব না।
কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা। তাকে ভয় দেখাতেই হবে। ভয় দেখানো ছাড়া সে আমার পিছু ছাড়বে না। আসলে তার ধারনা ছিল সে খুবই সাহসী, আর কেউ তাকে ভয় দেখাতে পারবে না।
-ভয় দেখাতে পারলে তখন কী হবে?
-তোকে একটা চকোবার খাওয়াব। শুধু চকোবার না, ভালো চকোলেটও খাওয়াব।
-ওকে।
ভালো চকোলেট আর চকোবারের লোভে আমি শিল্পীকে ভয় দেখাতে রাজী হয়ে গেলাম। চকোলেট, আইসক্রীম, রসমালাই এই জাতীয় খাবারগুলোর প্রতি আমার একটা বিশেষ দুর্বলতা ছিল। এগুলোর লোভ সামলানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এখনো মনে পড়ে, বাবা কত দিন রসমালাই এনে আমার মান ভাঙিয়েছিলেন। একবার মা’র সাথে রাগ করে পাক্কা দুদিন ভাত খাইনি। বাবা জেনে গেলেন কথাটা। সেদিন রাতে পেটে প্রচণ্ড ক্ষিদে নিয়ে শুয়েছি। একটু পর মাথার কাছে এসে বাবা বসলেন। আস্তে করে আমাকে ডাকতেই জেগে গেলাম। আসলে ঘুমও আসছিল না। চোখ মেলে দেখি বাবার হাতে রসমালাইয়ের বাটি। দেখেই হামলে পড়লাম। চামচ ছাড়াই ছোট ছোট ছানার মিষ্টিগুলো গপাগপ খেতে শুরু করলাম। হঠাত মনে হল, আরে! আমি তো রাগ করেছি। কিন্তু ততোক্ষণে হাসির রোল পড়ে গেছে। যাই হোক, রাজী তো হলাম। কিন্তু ভয়টা দেখাব কীভাবে। আমি শিল্পীকে বললাম,
-আজ না। অন্য এক দিন।
-কবে?
-আমি তোকে জানাব।
-ওকে।
সেদিন রাতে ডাইনিং হল-এ সব শেষের ব্যাচে শিল্পী বসল। আমি আর শিল্পী এক সাথেই ভাত খেলাম। ভাত খেতে খেতে একটা ভূতের গল্পও করলাম। গল্পটা এরকম-
“অনেক বছর আগে আমার এক চাচী এই কলেজের ছাত্রী ছিলেন। উনিও হল-এ থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। চাচী এক রাতে হঠাত ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলেন, তাঁর এক বান্ধবী শূণ্যে ঝুলে আছে। মৃত। দেহটি রক্তাক্ত। মাথা থেতলে মগজ বের হয়ে এসেছে। বেসিনের ওপর টপ টপ করে রক্ত পড়ছিল। এই দেখে আমার চাচী অজ্ঞান হয়ে গেলেন। উনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। রাতে ঘুমুলেই সেই বান্ধবীকে স্বপ্নে দেখতেন। সেই বান্ধবী নাকি স্বপ্নে চাচীর সামনে কালী দেবীর বেশে আসত”।
গল্পটা তো বানিয়েই বলেছিলাম। হরর মুভি দেখতাম খুব। ওসব গল্প বানানোই তো সোজা আমার জন্য। খুব সাদামাটা গল্প, কিন্তু আমার বলার ভঙ্গীতে হয়তো কিছু একটা ছিল। শিল্পীকে কেমন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। অজ পাড়া গাঁয়ের একটি স্বল্পশিক্ষিত হিন্দু পরিবার থেকে আসা শিল্পী মনে হয় আমার গল্পটা বিশ্বাস করে ফেলেছিল। তাছাড়া গল্পে কালী দেবীর উপস্থিতিটাও তাকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। দেবী নিয়ে মিথ্যে গল্প বলব এটা হয়তো সে ভাবে নি। এটা আমার এখন মনে হয়, কিন্তু তখন এতো কিছু চিন্তা করি নি। আমার শুধু এটুকুই মনে হচ্ছিল যে শিল্পী কিছুটা হলেও ভয় পেয়েছে। খাওয়া শেষে শিল্পী বেসিনের দিকে এগিয়ে গেল। আমি শিল্পীর পেছন পেছন। তখন হঠাত ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। আমিও তাকে ভয় দেখানোর মওকা পেয়ে গেলাম। আমি শিল্পীর ঠিক পেছনেই ছিলাম। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে মোমবাতি দিয়ে যাওয়ার নিয়ম বুয়াদের। কিন্তু মোমবাতি আসতে দেরী হচ্ছিল দেখে আমরা হাতড়ে হাতড়ে বাইরে কলতলায় চলে এলাম। শিল্পী নিজে কল চেপে নিজেই প্লেট ধুয়ে নিল। ভীষণ রকমের চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত। প্লেট ধোয়া শেষে আমার দিকে তাকিয়েই সে আঁউক করে এক চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি কিছুই করিনি। শুধু বড় করে জিহ্বাটা বের করে তার তাকানোর অপেক্ষায় স্থির দাঁড়িয়ে ছিলাম। শিল্পী প্লেট ফেলে ছুটে পালাল। সে যে ভালোই ভয় পেয়েছিল তার প্রমাণ হল সেদিন তার গায়ে জ্বর এসে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো হোস্টেল সুপারের কাছে কেউ নালিশ করে নি। করবে কেন, শিল্পী কেন ভয় পেয়েছিল সে কথা তো কাউকেই বলেনি। তার প্রেস্টিজেরও ব্যাপার ছিল তো।
শর্ত অনুযায়ী শিল্পীর কাছে আমার ভালো চকোলেট আর আইসক্রীম পাওনা ছিল। কিন্তু ভালো চকোলেটের দামওতো ভালো। এদিকে ওদের আর্থিক অবস্থা মনে হয় অত ভালো ছিল না। জেলা শহরের একটি কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করাটাও তার জন্য কষ্টের ছিল। তাই আমি একটা মনচেরী মিল্ক ক্যান্ডি খেয়েই দাবী ছেড়ে দিলাম। ক্যান্ডিটা তখন খুব জনপ্রিয় ছিল।
এরপর অবশ্য আমি নিজেই একদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিভাবে ভয় পেয়েছিলাম সে কথা অন্য একদিন অন্য কোন গল্পে বলব। আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
শেষ পর্ব দেখতে-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৬