আড়মোড়া দিয়ে চোখ মেললাম।অভ্যাস বশত চোখ চলে গেল টেবিলে রাখা আমার ছোট্ট ঘড়িটার দিকে।৬টা বেজে ৫মিনিট।তাইতো এলার্ম বাজেনি।এত আগে কেন ঘুম ভাংলো বুঝলামনা।
রাতে ঘুম টা ভালো হয়নি।আমার সাধারনত এক ঘুমে সকাল হয়।কাল সারাটা রাত এপাশ ওপাশ করে প্রায় জেগেই কাটিয়ে দিয়েছি।ভোরের দিকে একটু চোখ লেগে এসেছিল বোধহয়।পরীক্ষার পূর্ব রাত্রি এতটা খারাপ যায়নি কখনো আমার।কি জানি হয় পরীক্ষাটা! উঠে পরলাম বিছানা ছেড়ে।ঘুম যখন ভেঙ্গেছেই আগেভাগেই বেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে হল।রেডি হয়ে,মা'র জোরাজুরিতে ভরপেট ভক্ষন করে বেরোলাম ব্যাগ নিয়ে।
আমার বাসা থেকে ভার্সিটি যাওয়া যায় ৪উপায়ে।সবচেয়ে সহজ উপায় হল বাসার সামনে থেকে রিকসা নিয়ে এক টানে চলে যাওয়া।সেটা বহুত ভাগ্যের ব্যাপার।আজ কপাল এতই সুপ্রসন্ন যে একটা খালি রিক্সা পেয়ে গেলাম,মামা ডেকে ভাড়া করতেই রাজি হোয়ে গেল!! আলহামদুলিল্লাহ টাইপ আনন্দ নিয়ে চড়ে বসলাম রিক্সায়। সকাল ৭টা,হাওয়ায় উড়তে উড়তে রিক্সা চলছে।আজ পরীক্ষাটা ভালো হবে আশা করছি।
মালিবাগ মোড়ে এসে রিক্সা থামলো।সামনে একটা বাস নষ্ট হোয়ে গিয়েছে বলে এক লেন দিয়ে সব গাড়ি যাচ্ছে ধীরে ধীরে। হঠাৎ দেখি রাস্তার পাশে একটা পরিচিত মুখ দাঁড়ানো! আরে! নিহা না! হ্যা,তাইত! কিছুদিন আগেও ওর সাথে আমার কড়া ঝগড়া হয়েছে।এইবারের ঝগড়াটা একটু বেশিদিনই স্থায়ী হচ্ছে।সাধারনত ২/৩দিনের মধ্যে আমরা আবার জানে জিগার দোস্ত হয়ে যাই।এইবারের মনমালিন্যটা একটু শক্তই বটে।
-এই নিহা,এইখানে কি করিস?
রিক্সা থামালাম ওর পাশে।
ও মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে নিলো আমাকে।স্বভাব বশত মুখ খানা শক্ত পোক্ত করে বললো,
-বাস নষ্ট হয়ে গেছে,রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
আমি এক সাইডে সরে গিয়ে বললাম,
-আয়,উঠে বস।
ও! ঝগড়ার সময় তাকে আবার ২বার রিকোয়েষ্ট করতে হয়!
আবার বললাম,
-আয় বাপ, উঠে বস। এমনে দাঁড়ায় থাকলে হল এ ঢুকতে লেট হয়ে যাবে।
সে ঠায় দাড়ানো।আরে! কি বিপদে পড়লাম!
-পরীক্ষা শেষ করে সাধ মিটিয়ে ঝগড়া করিছ।আমি কিচ্ছু বলবোনা।কথা দিলাম।দয়া করে রিক্সায় উঠ।
-আয়,ওঠ।এভাবে গো ধরে দাঁড়ায় থাকলে এইবার আর ফার্স্ট হতে পারবিনা।রিয়াদ বাজি মেরে দিবে।(ক্লাসের সেকেন্ড বয়)প্লিজ,উঠ।
-আমি তোর সাথে এক রিক্সায় যাবোনা।
হায় হায়,মেয়ে বলে কি!
তবুও হিম্মত নিয়ে বললাম,
-আচ্ছা যা,তুই আমার রিক্সা নিয়ে যা।আমি বাস এ আসছি পরে।তাও তুই পরীক্ষাটা সময়মত দে।
সে আমার দিকে সর্পিল নজর হেনে দিয়ে রিক্সায় চেপে বসলো।আমি মাথা নিচু করে মনে মনে হিসাব করছি, আমি কিভাবে যাবো তার।সে ডাক দিয়ে বললো,
-আয়,তুইও ওঠ।নইলে ভাড়া দিবে কে?
এই হল মেয়ে মানুষ!মজা করার ও টাইম বুঝেনা।
উঠলাম।রিক্সাওয়ালা মামাকে বললাম,
-মামা, লেট হইলে ফেল হইয়া যামু।জলদি চালাও।
আবার হাওয়ার বেগে রিক্সা ছুটতে লাগ্লো।এইবার আমার পাশে নিহা।হাওয়ার সাথে সাথে ওর চুলগুলিও উড়ছে এলোমেলো হয়ে।
কিন্তু ওর মুখটা গম্ভির।রাতে ওরো ভালো ঘুম হয়নি,বোঝা যাচ্ছে। এত্ত মায়াময় চেহারাটার এই গম্ভীরতা আমার আর সহ্য হচ্ছে না।ওর চোখ সামনের দিকে নিবিষ্ট।আমি তাকিয়ে রইলাম ওই নয়নের দিকে। কি ই বা এমন হত যদি আমি রাজি হয়ে যেতাম!
আমার আরেক ফ্রেন্ড সুমন বলছিল সেদিন,
-তুই তো নিহাকে পছন্দ করিস,বলে ফেললেই পারিস।
-কি বলিস আবোল তাবোল? তদের জন্য কি একটা ভালো ফ্রেন্ড ও বানাতে পারবোনা,নাকি?
সুমন বলল
-খুব তো বলিস বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর চোখে যে তোর জন্য গভীর মায়া খেলা করে সেইটা কি কখনো খেয়াল করেছিস?
-বন্ধুর জন্য দরদ দেখাতেই পারে।
-পারে।কিন্তু নিহা যে আলাদা একটা আবেগ দেখায় তোর প্রতি এইটা তুই বুঝতে পারিস না কেন?তোরা ২দিনের বেশি কেউ কারোসাথে কথা না বলে থাকতে পারিস না,তোর ক্লাস ওয়ার্ক গুলি নিহা করে দেয় অকপটে,কোথাও ঘুরতে গেলে নিহাকে ছাড়া তোর জমেই না, এক প্লেট এ ফুচকা না খেলে তোর খাওয়ার মজাই মাটি হয়ে যায়,নিহা ক্লাস এ আসছেনা শুনে তুইও বাহানা বানিয়ে ক্লাস মিস করিস........এসব কি তাহলে? বল?
-!!
-তুই এইসব মজার ছলে নিচ্ছিস,নিহা যে খুব গভির করে ভাবছে তা কেন বুঝতে পারছিস না? সেদিন তোকে বাচানোর জন্য স্যারের কাছে কত্তগুলা কথা শুনলো মুখ বুজে।এমনটা কয়টা বেস্ট ফ্রেন্ড করে,শুনি?
-করে কি করেনা আমি জানিনা।নিহার মত পড়ুয়া আর শক্ত টাইপের মেয়ের মধ্যে ওই সমস্ত ফিলিংস কাজ করেনা এইটা সিওর।
এই সময় নিহা সহ কয়েকটা ফ্রেন্ড এসে দাড়ালো।আমি ঝাপাত করে নিহাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম,
-কিরে,তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস?আমি নাকি বুঝিনা?
বাকি ফ্রেন্ডরা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। সবার দৃষ্টিতে জিজ্ঞাসা।
নিহা আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে উল্ট ঘুরে হেটে চলে গেল।আমি কেবল ২ফোটা জল চিকচিক করতে দেখলাম ওর চোখের তারায়।
সেই থেকে আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেল ও আমার ফোন রিসিভ করেনা।ক্লাস বন্ধ বলে দেখাও হয়না।পরীক্ষার যন্ত্রনায় এই সূক্ষ অভিমান ভুলে গিয়েছিলাম। আজ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সেই মায়া খুজছি,সেই ভালোবাসা খুজছি, যেটাকে নিজে না বুঝে অন্যের সামনে নিয়ে খেলা করেছি,তামাসা করেছি। এই কয়টা দিনে সেই উপলব্ধি ও করেছি যে,এই মেয়েটার সহচর্য ছাড়া আমার কোন কিছুই সম্পূর্ন হয়না।আমার এই পৃথিবীটার পূর্ন নির্জাস খুজে পাই আমি নিহার মাঝে।কেন যেন চশমা পরা এই মেয়ে টার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে মনের কোণে সবসময়,সকাল,দুপুর,রাত্রে।এই কয়টা দিন অনেক দোশারোপ করেছি নিজেকে।কতটা আঘাত করেছি আমার এই মায়াবতীকে তা টের পেয়েছি প্রতিটা ক্ষনে। কিন্তু তোকে যে বোঝাতে পারিনি,নিহা।তুই এখনো আমার উপোর অভিমান করে আসিস।একবার কি আমার দিকে সেই মায়াময় নজর টা ফেরাবি? তাহলে আমি মুখ ফুটে বলতাম...
আমাকে অবাক করে দিয়ে নিহা আমার দিকে তাকালো। বললো,
-ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
-ভালবাসা খুজছি।
-?
-নিহা,আমি তোকে ভালবেসেছিলাম অনেক আগে,যখন আমাদের বন্ধুত্ব সদ্য ফোটা মুকুলের মত ছিল,তখন।কিন্তু বুঝতে পেরেছি এই সাত টা দিনে যখন মুকুল ঝরে যাবার উপক্রম।তুই কি আমাকে আরেকটা বার কাছে টেনে নিবি?আমাকে আরেকটা বার সুযোগ দিবি.... ..
-আমিতো সেই সুযোগ কখনো কেড়ে নেইনি তোর কাছ থেকে! শুধু নিজেকে বোঝাতে চাচ্ছিলাম,আমি কতটা অচল তোকে ছাড়া।
নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম, নিহারে,আর কখনো তোর ওই মোলায়েম মনে আঘাত করবোনা আ্মি।আমার জীবন থাকতে না। তুই কেবল আমার পাশে থাকিস।
অনুভব করলাম আমার ঘাড়ে এলিয়ে পড়েছে নিহার মাথাটা। আমি শক্ত করে ওর হাত টা ধরলাম। এইবার আর ঝারা দিয়ে চলে যাওয়ার উপায় নেই,এই অভয়ে।
রিক্সা তখন ভার্সিটির কাছাকাছি।
**** **** **** ****
লেখাটা পুরোনো। কিছু এডিট করব বলে রেখে দিয়েছিলাম। তাও হচ্ছেনা।কোন ভাবেই মন মত বানাতে পারছিনা! কি হবে!!!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১১ রাত ৮:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




